শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহজ একটি উপায়

প্রায়শই মা-বাবা শিশুর মাত্রারিক্ত আবেগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। বিষয়টিকে তারা অস্বাভাবিক মনে করে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ সময় এমন কিছু করেন (যেমন- উপেক্ষা করা, জোর করা, উপহাস করা, মারধর করা) যা যুক্তির মধ্যে পড়ে না, এবং ক্ষতিকর। উল্টো শিশুর মধ্যে নানা ধরনের আচরণগত ত্রুটি দেখা দেয়। না জানার কারণেই এ ব্যাপারটি ঘটে।  

 

শিশু মনে আবেগের ঝড় উঠবে, এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, ঈর্ষা, চিৎকার, চেচামেচি, দুঃখ-হতাশা, কান্নাকাটি, জেদ করা, বায়না ধরা, বিরক্ত করা, দুষ্টামি করা ইত্যাদি তার অপরিণত মস্তিষ্ক এবং আবেগের ফল। এগুলো শিশু জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আপনি চাইলেই তা বন্ধ করতে পারবেন না। তবে আপনি যদি মাথা ঠান্ডা রেখে কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে শিশুকে চালিত করা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণের অনেক কৌশল আছে। আজ আমরা একটি সহজ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোকপাত করবো।

প্রক্রিয়াটির নাম- Name it, and Tame it. অর্থাৎ শিশুর আবেগকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে, একে বশ করা। শিশু মনে যখন আবেগের ঝড় উঠে, তখন শিশুকে যদি তা ধরিয়ে দিতে পারেন, তাহলে সে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবে। এর জন্যে আপনাকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। রাতারাতি ফল আশা করবেন না।

আপনার কাজ হলো- শিশুর আবেগের মধ্যে কোনটা রাগ, কোনটা ঈর্ষা, কোনটা বিরক্তি, কোনটা আনন্দ, কোনটা হতাশা, কোনটা ভয়, কোনটা দুঃখ- সেটা তাকে বয়স অনুযায়ী ধরিয়ে দেয়া। শিশুর প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই এই আবেগগুলোকে ধরিয়ে দিতে হবে। শুধু শিশুর জীবনে নয়, চারপাশের মানুষের আবেগকেও যদি শিশুর কাছে চিহ্নিত করে দিতে পারেন, এটাও খুব কাজে দেয়। আসলে যে শিশু নিজের আবেগ কে চিহ্নিত করতে বা বুঝতে (verbalize) পারে, আবেগের উপর তার নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকে।

 

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। যেমন ধরুন- আপনার দুই সন্তান। দুজন কে দুটি খেলনা কিনে দিলেন। কিন্তু প্রথম জন তাতে নারাজ। আরেকজনের খেলনাও তার লাগবে। এ নিয়ে সে কান্নাকাটি করছে।

 

তাকে কাছে নিয়ে বলুন- ঐ খেলনাটির জন্য তুমি মন খারাপ করেছ?

শিশু উত্তর দিবে- হ্যাঁ

তারপর বলুন- তুমি ভাবছো, তার সেই খেলনাটি আছে, কিন্তু আমার নেই?

শিশু উত্তর দিবে- হ্যাঁ।

তারপর বলুন- তুমি কী জানো, তোমার এই আবেগকে কী বলা হয়?

শিশু নিশ্চুপ।

তারপর বলুন- এই আবেগকে “সূক্ষ্ম ঈর্ষাবোধ“ বলা হয়। তোমার মধ্যে এখন এই ঈর্ষা কাজ করছে।

তাকে আবার বলুন- তুমি যদি তোমার ভাইয়ের খেলনাটা নিয়ে নাও, তাহলে সে খেলবে কী দিয়ে?

ততক্ষণে দেখবেন আপনার সন্তান কিছুটা শান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রথমে তার দাবিটাকে বুঝার চেষ্টা করবো, তারপর ধীরে ধীরে তার এই নেতিবাচক আবেগটিকে ধরিয়ে দিবো। এবং সবশেষে সমমর্মিতা সৃষ্টির চেষ্টা করব।

এভাবে কিছুদিন চর্চা করলে একটা সময় আসবে শিশু তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। আপনার শিশুর ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।

লেখক

প্যারেন্টিং বিষয়ক গবেষক

 

[email protected]   সূএ: সমকাল

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে তারেক রহমানকে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ

» ড. ইউনূসের ৫ মামলা বাতিলের রায়ে আইনি দুর্বলতা পায়নি আপিল বিভাগ

» রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত : সারজিস আলম

» চলচ্চিত্র শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে : নাহিদ ইসলাম

» গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে পাশের একটি দেশ অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করছে : এম সাখাওয়াত

» নারী দিবসকে সামনে রেখে আসছে ‘স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা-সিজন টু’

» ইসলামপুরে এমএ সামাদ পারভেজ মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপন

» দুর্দান্ত ব্যাটারি লাইফে নিশ্চিন্তে চার বছর, উন্মোচিত হল নতুন অনার এক্স৫বি প্লাস

» দেশের প্রথম ‘অনলাইন বাণিজ্য মেলা’ শুরু করলো রকমারি

» জুলাই ঘোষনাপত্রের পক্ষে লক্ষ্মীপুরে লিফলেট বিতরণ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহজ একটি উপায়

প্রায়শই মা-বাবা শিশুর মাত্রারিক্ত আবেগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। বিষয়টিকে তারা অস্বাভাবিক মনে করে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ সময় এমন কিছু করেন (যেমন- উপেক্ষা করা, জোর করা, উপহাস করা, মারধর করা) যা যুক্তির মধ্যে পড়ে না, এবং ক্ষতিকর। উল্টো শিশুর মধ্যে নানা ধরনের আচরণগত ত্রুটি দেখা দেয়। না জানার কারণেই এ ব্যাপারটি ঘটে।  

 

শিশু মনে আবেগের ঝড় উঠবে, এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, ঈর্ষা, চিৎকার, চেচামেচি, দুঃখ-হতাশা, কান্নাকাটি, জেদ করা, বায়না ধরা, বিরক্ত করা, দুষ্টামি করা ইত্যাদি তার অপরিণত মস্তিষ্ক এবং আবেগের ফল। এগুলো শিশু জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আপনি চাইলেই তা বন্ধ করতে পারবেন না। তবে আপনি যদি মাথা ঠান্ডা রেখে কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে শিশুকে চালিত করা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণের অনেক কৌশল আছে। আজ আমরা একটি সহজ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোকপাত করবো।

প্রক্রিয়াটির নাম- Name it, and Tame it. অর্থাৎ শিশুর আবেগকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে, একে বশ করা। শিশু মনে যখন আবেগের ঝড় উঠে, তখন শিশুকে যদি তা ধরিয়ে দিতে পারেন, তাহলে সে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবে। এর জন্যে আপনাকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। রাতারাতি ফল আশা করবেন না।

আপনার কাজ হলো- শিশুর আবেগের মধ্যে কোনটা রাগ, কোনটা ঈর্ষা, কোনটা বিরক্তি, কোনটা আনন্দ, কোনটা হতাশা, কোনটা ভয়, কোনটা দুঃখ- সেটা তাকে বয়স অনুযায়ী ধরিয়ে দেয়া। শিশুর প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই এই আবেগগুলোকে ধরিয়ে দিতে হবে। শুধু শিশুর জীবনে নয়, চারপাশের মানুষের আবেগকেও যদি শিশুর কাছে চিহ্নিত করে দিতে পারেন, এটাও খুব কাজে দেয়। আসলে যে শিশু নিজের আবেগ কে চিহ্নিত করতে বা বুঝতে (verbalize) পারে, আবেগের উপর তার নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকে।

 

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। যেমন ধরুন- আপনার দুই সন্তান। দুজন কে দুটি খেলনা কিনে দিলেন। কিন্তু প্রথম জন তাতে নারাজ। আরেকজনের খেলনাও তার লাগবে। এ নিয়ে সে কান্নাকাটি করছে।

 

তাকে কাছে নিয়ে বলুন- ঐ খেলনাটির জন্য তুমি মন খারাপ করেছ?

শিশু উত্তর দিবে- হ্যাঁ

তারপর বলুন- তুমি ভাবছো, তার সেই খেলনাটি আছে, কিন্তু আমার নেই?

শিশু উত্তর দিবে- হ্যাঁ।

তারপর বলুন- তুমি কী জানো, তোমার এই আবেগকে কী বলা হয়?

শিশু নিশ্চুপ।

তারপর বলুন- এই আবেগকে “সূক্ষ্ম ঈর্ষাবোধ“ বলা হয়। তোমার মধ্যে এখন এই ঈর্ষা কাজ করছে।

তাকে আবার বলুন- তুমি যদি তোমার ভাইয়ের খেলনাটা নিয়ে নাও, তাহলে সে খেলবে কী দিয়ে?

ততক্ষণে দেখবেন আপনার সন্তান কিছুটা শান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রথমে তার দাবিটাকে বুঝার চেষ্টা করবো, তারপর ধীরে ধীরে তার এই নেতিবাচক আবেগটিকে ধরিয়ে দিবো। এবং সবশেষে সমমর্মিতা সৃষ্টির চেষ্টা করব।

এভাবে কিছুদিন চর্চা করলে একটা সময় আসবে শিশু তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। আপনার শিশুর ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।

লেখক

প্যারেন্টিং বিষয়ক গবেষক

 

[email protected]   সূএ: সমকাল

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com