শিশুরা যদি নাক ডাকে

 অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু :নাক ডাকা সমস্যার সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত, যা শিশুদের মাঝেও দেখা যেতে পারে। শিশু যদি নিয়মিত নাক ডাকে তবে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

 

শিশুদের নাক ডাকার কারণ : ঠাণ্ডা লেগে বা অ্যালার্জিজনিত নাক বন্ধ/জ্যাম হয়ে যাওয়া।

 

* টনসিল ও নাকের পেছনে গলার ওপর দিকে এডিনয়েড গ্রন্থি প্রদাহ বা সংক্রমণে বড় হয়ে গেলে শ্বাসকষ্ট বা নাকে শব্দ হয়। * দুই নাকের মধ্যবর্তী পর্দা বেশি বেঁকে থাকলেও নাকে শব্দ হয়। জন্মগতভাবেই এমন থাকতে পারে। * সাইনাস সমস্যায় বা প্রদাহে।
* স্থূল শিশুদের নাক ডাকে, যাদের গলায় বায়ু চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে।
* থাইরয়েডের সমস্যা ও গ্রোথ হরমোনের আধিক্যজনিত রোগে। (অ্যাক্রোমেগালি)।

 

স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি : শিশুর ঘুমের সময় শ্বাসনালিতে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, এতে পুনঃপুন স্বল্পকালীন শ্বাসরোধ হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। একে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলে। ফলে দিনের বেলায় ক্লান্তিভাব থাকে এবং শিশু খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়। তীব্র মাথা ব্যথায় ভোগে। শিশু কোনো কাজে/ স্কুলে মনোসংযোগ করতে পারে না ফলে শেখায় সমস্যা হয় এবং মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সমস্যার সমাধান না করলে শিশু হাবাগোবা হয়ে যেতে পারে। শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

 

রোগ নির্ণয় : রোগের ইতিহাস * নাক ডাকা কতটা মারাত্মক? * নাক ডাকা কি ঘুমের মধ্যে শারীরিক অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নাকি যেকোনো অবস্থানেই নাক ডাকেন? *রোগী কতদিন থেকে নাক ডাকে?

 

* OSA-এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ক্লিনিক্যাল বৈশিষ্ট্য / লক্ষণ রয়েছে কি? * প্রতি রাতে নিয়মিত শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া * হরমোনজনিত সমস্যা অথবা অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস অথবা হাইপো থাইরয়ডিজম।

 

পরীক্ষা-নিরীক্ষা : নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিশুকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করে দেখবেন এবং প্রয়োজন হলে কিছু পরীক্ষা করাবেন যেমন-* এক্স-রে এডেনয়েড * নাকের ও কণ্ঠনালির অ্যান্ড্রোস্কপি * থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা * পলিসমোগ্রাফি-স্লিপ ল্যাবে রাতে ঘুমন্ত রোগীর শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, ইইজি, ইএমজি, ইওজি, শ্বাস-প্রশাসের ধরন ইত্যাদি মনিটর করা হয়।

সমস্যার ঘরোয়া সমাধান :

* অ্যালার্জি বা ঠাণ্ডা লাগা থেকে প্রতিরোধ করুন।* বিছানার মাথার দিক কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে রাখা উচিত। * চিৎ না হয়ে বরং এক কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

 

* এ ছাড়া মনে রাখবেন, ঘুমানোর আগে বেশি ভরপেট না-খাওয়া ভালো।

 

চিকিৎসা : নাক বাঁকা, এডিনয়েড, টনসিল বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে অপারেশন করে নিন। * ঘুমের সময় CPAP/ BIPAP মেশিন ব্যবহার। তাই শিশুদের নাক ডাকার বিষয়ে আমাদের যত্নবান ও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ, সিলেট।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জেলের জালে ধরা পড়ল ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের কাতলা,বিক্রি ৪৪ হাজার

» অবৈধ অভিবাসন রোধে ইইউ’র সহযোগিতা চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» শিবির প্যানেলের চার নারী প্রার্থীই বিজয়ী

» “দুর্জন যে বিদ্বান হলেও সর্বদা পরিত্যাজ্য”: গণেশ

» ডাকসুতে ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করেছে শিবির: মির্জা আব্বাস

» সবার আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দাবি করেছে জামায়াত: মাসুদ সাঈদী

» গভীর ষড়যন্ত্রের ফল হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন : প্রিন্স

» গণেশ লুঙ্গির আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিপ্লবী নয় :বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়

» ডাকসু বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানালেন সাবেক ভিপি নুর

» ডাকসু নির্বাচন জাতীয় ভোটের প্রতিফলন না: মান্না

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শিশুরা যদি নাক ডাকে

 অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু :নাক ডাকা সমস্যার সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত, যা শিশুদের মাঝেও দেখা যেতে পারে। শিশু যদি নিয়মিত নাক ডাকে তবে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

 

শিশুদের নাক ডাকার কারণ : ঠাণ্ডা লেগে বা অ্যালার্জিজনিত নাক বন্ধ/জ্যাম হয়ে যাওয়া।

 

* টনসিল ও নাকের পেছনে গলার ওপর দিকে এডিনয়েড গ্রন্থি প্রদাহ বা সংক্রমণে বড় হয়ে গেলে শ্বাসকষ্ট বা নাকে শব্দ হয়। * দুই নাকের মধ্যবর্তী পর্দা বেশি বেঁকে থাকলেও নাকে শব্দ হয়। জন্মগতভাবেই এমন থাকতে পারে। * সাইনাস সমস্যায় বা প্রদাহে।
* স্থূল শিশুদের নাক ডাকে, যাদের গলায় বায়ু চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসে।
* থাইরয়েডের সমস্যা ও গ্রোথ হরমোনের আধিক্যজনিত রোগে। (অ্যাক্রোমেগালি)।

 

স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি : শিশুর ঘুমের সময় শ্বাসনালিতে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, এতে পুনঃপুন স্বল্পকালীন শ্বাসরোধ হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। একে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলে। ফলে দিনের বেলায় ক্লান্তিভাব থাকে এবং শিশু খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়। তীব্র মাথা ব্যথায় ভোগে। শিশু কোনো কাজে/ স্কুলে মনোসংযোগ করতে পারে না ফলে শেখায় সমস্যা হয় এবং মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সমস্যার সমাধান না করলে শিশু হাবাগোবা হয়ে যেতে পারে। শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

 

রোগ নির্ণয় : রোগের ইতিহাস * নাক ডাকা কতটা মারাত্মক? * নাক ডাকা কি ঘুমের মধ্যে শারীরিক অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নাকি যেকোনো অবস্থানেই নাক ডাকেন? *রোগী কতদিন থেকে নাক ডাকে?

 

* OSA-এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ক্লিনিক্যাল বৈশিষ্ট্য / লক্ষণ রয়েছে কি? * প্রতি রাতে নিয়মিত শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া * হরমোনজনিত সমস্যা অথবা অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস অথবা হাইপো থাইরয়ডিজম।

 

পরীক্ষা-নিরীক্ষা : নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিশুকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করে দেখবেন এবং প্রয়োজন হলে কিছু পরীক্ষা করাবেন যেমন-* এক্স-রে এডেনয়েড * নাকের ও কণ্ঠনালির অ্যান্ড্রোস্কপি * থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা * পলিসমোগ্রাফি-স্লিপ ল্যাবে রাতে ঘুমন্ত রোগীর শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, ইইজি, ইএমজি, ইওজি, শ্বাস-প্রশাসের ধরন ইত্যাদি মনিটর করা হয়।

সমস্যার ঘরোয়া সমাধান :

* অ্যালার্জি বা ঠাণ্ডা লাগা থেকে প্রতিরোধ করুন।* বিছানার মাথার দিক কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে রাখা উচিত। * চিৎ না হয়ে বরং এক কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

 

* এ ছাড়া মনে রাখবেন, ঘুমানোর আগে বেশি ভরপেট না-খাওয়া ভালো।

 

চিকিৎসা : নাক বাঁকা, এডিনয়েড, টনসিল বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে অপারেশন করে নিন। * ঘুমের সময় CPAP/ BIPAP মেশিন ব্যবহার। তাই শিশুদের নাক ডাকার বিষয়ে আমাদের যত্নবান ও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ, সিলেট।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com