শিশুদের হার্টের রোগ কাওয়াসাকি ডিজিজ

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন :শিশুদের বিভিন্ন রকমের হার্টের অসুবিধার কথা শুনেছি যেমন শিশুদের জন্মগত হার্টের অসুখ, শিশুদের বাতজ্বরজনিত হার্টের অসুখ। বর্তমানে বাতজ্বরজনিত হার্টের অসুখ অনেকাংশেই কমে এসেছে। কিন্তু আমরা বেশ কিছুদিন ধরে নতুন একটা হার্টের অসুখ দেখতে পারছি। যা দিন দিন বেশি করে শনাক্ত করতে পারছি। শিশুদের নতুন এই রোগটির নাম কাওয়াসাকি ডিজিজ।

 

জাপানি এক চিকিৎসক ডা. তমিসাকু কাওয়াসাকি ১৯৬৭ সালে সর্ব প্রথম এই রোগ শনাক্ত করেন। এবং পরবর্তীতে উনি একটি জার্নালে এই রোগ সম্পর্কে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। কাওয়াসাকি ডিজিজ এই রোগটি আসলে একটি রক্ত নালির রোগ। এবং এটি একটি বিরল রোগ। কিন্তু বর্তমানে শিশুদের জন্মগত হার্টের রোগ, বাতজ্বরজনিত হার্টের রোগ এর পরেই এই রোগটির স্থান বলে পরিগণিত হয়েছে।

 

আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের চারপাশে দিনদিন এই রোগটির রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত ৫ বছরের নিচের শিশুদের দুই-তিন বছরের মধ্যে এই রোগটি বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই রোগে সাধারণত ছেলে শিশুরায় বেশি আক্রান্ত হয়।

 

এই রোগের বিস্তারের একটা সময়কাল আছে। সাধারণত শীতের শেষে ও বসন্তের সময় কালে এই রোগটি আমরা বেশি শনাক্ত করতে পারি। এই রোগটি একটি বিশেষ বয়সের রোগ এবং একটি বিশেষ সময়ে দেখতে পাওয়া যায়।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগটির দেখা যায় তবে এসিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এটি বেশি মাত্রায় দেখা যায়। যেমন জাপানে এই রোগটি সব থেকে বেশি পরিমাণে দেখা যায়, তার পরে তায়ওয়ান কোরিয়াতেও এই রোগটি দেখতে পায়া যায়। পাশাপাশি আমরা যদি উন্নতবিশ্বে ইউরোপ আমেরিকার দিকে তাকায় সেখানেই এই রোগটি বেশ ব্যাপক হারে শনাক্ত হচ্ছে।

রোগটির কারণ কী 

কারণ হিসাবে যে বিষয়টি আসছে সেটা হচ্ছে শরীরের প্রোটিন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে। কখনো কখনো কোন কোন জীবাণুর প্রভাবের কারণেও এই রোগটি দেখা যায়। এবং একই সঙ্গে জেনেটিক কারণেও এই রোগটিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

 

কীভাবে এই রোগটি শনাক্ত করা যায়

এই রোগটির মূল বিষয় হচ্ছে অবশ্যই শরীরে জ্বর থাকবে, জ্বর ০৫ দিনের বেশি স্থায়ী হবে এবং আরও কিছু লক্ষন সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশ পেলেই আমরা মনে করতে পারি শিশুটি হয়তোবা কাওয়াসাকি ডিজিজে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। আমরা যদি উপর থেকে দেখি, জ্বরের সাথে প্রথমেই যে জিনিসটি দেখব তা হলো তার চোখগুলো লালচে হয়ে গেছে, তবে সেখানে কোনো পুঁজ থাকবে না। ঠোঁটগুলো লাল, ফাঁটা ফাঁটা, জিহ্বাটাও বেশ লালচে দেখা যায়। এবং এত লালচে যে দেখলে মনে হবে যেন স্ট্রবেরির মতো।

 

গলার পেছনটা বেশ লালচে হয়ে দগদগে হয়ে থাকে। একই সঙ্গে গলার চারপাশে যে লসিকা গ্রন্থিগুলো আছে সেগুলো একটু ফুলে যেতে দেখব। যে কোনো এক সাইট, ডান অথবা বাম সাইট বেশ ফুলে থাকে। যেটার সাইজ প্রায় ১.৫ সেন্টিমিটারের বেশি হতে পারে। শরীরজুড়ে এক ধরনের ফুসকুটি বা র‌্যাশ বামরা বুকে পেটে হাতে দেখতে পাব। তার হাত পাগুলো একটু ফোলা ফোলা বেশ লালচে হয়ে দেখা যায়।

 

আমরা এই বিরল রোগটি নিয়ে কেন কথা বলছি। আমরা কিন্তু শুরুতেই বলেছি বর্তমানে শিশুদের এটি অন্যতম একটি হার্টের রোগ। হার্টের কী ধরনের জটিলতা করে যার কারণে এই রোগ সম্পর্কে আমাদের সম্মুখ ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমরা আগেই বলেছি, এটা একটা রক্তনালির রোগ। হার্টের যে করোনারি রক্তনালি আছে, সেই রক্তনালিগুলো ফুলেফেঁপে গিয়ে ছিঁড়ে যেতে পারে, অনেক সময় রক্ত প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। যার কারনে হার্টের মধ্যে বিভিন্ন রকমেন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

 

পাশাপাশি হার্টের যে বিভিন্ন মাংসপেশি আছে যেমন আমরা বলি পেরিকাডায়টিস। হার্টের বাইরের যে আবরণ এখানেও কিন্তু ফুলে যেয়ে পানি জমতে পারে, আমরা বলি মায়োকাডাইটিস হার্টের যে বিভিন্ন মাংসপেশি সেখানেও আক্রান্ত করে নাড়ির যে গতি আছে সেখানে নাড়ির গতির অসমঞ্জস্যতা তৈরি করে। আমরা এটাকে বলি এরিগনা তৈরি করে। হার্টের যে একদম ভিতরের লেয়ার, আমরা বলি এন্ডোকার্ডায়টিস, সেখানে যে বিভিন্ন ভাল্ব থাকে সেখানেও সে বিভিন্ন রকমের প্রদাহের কারণ সৃষ্টি করে। হার্টের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে সে প্রভাব বিস্তার করে না। হার্টের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশেও এর প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়।

এই রোগের চিকিৎসা কি বা কিভাবে শনাক্ত করব

এই রোগের যে লক্ষণগুলো আমরা আগেই বলেছি সেগুলো যদি কারও শরীরে এই লক্ষনগুলো প্রকাশ পায় তাহলে কিন্তু আমরা সহজেই এই রোগটি শনাক্ত করতে পাব। এই রোগের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরিক্ষা আছে যে পরীক্ষা নিরিক্ষাগুলো করে আমরা জানতে পারি যেয এই রোগটি অন্য কোনো ইনফেকশন না অন্য কোন ভাইরাস জনিত রোগ না সেটা আমরা পৃথক করতে পারবো। তারপরে সেক্ষেত্রে আমরা জরুরিভাবে আমরা হার্টের ইকো পরীক্ষা করে তার করোনারী ভেসেল, হার্টের বিভিন্ন যে লেয়ারগুলো আমরা আলোচনা করলাম সেগুলো আক্রান্ত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমরা পরিপূর্ণ ধারনা পেতে পারবো।

এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি 

এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল। চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয় বহুল হলেও এই রোগের চিকিৎসার বিকল্প কোন পদ্ধতি নাই যেটা। এই দাদী ওষুধটার নাম হচ্ছে ইন্টার ভেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন। এই ওষুধটি একবারই প্রযোগ করা হয় এবং এতে করে সারা জীবনের জন্য এই রোগটি তার মধ্যে থেকে ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগের বেশি।

 

কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এই দামী ওষুধ দেওয়ার পরেও রোগটি তার শরীরে থেকে যায়। তখন দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কটিড স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন এবং কিছু কিছু বায়োলজিক্যাল ওষুধ প্রচলিত আছে যেগুলো দিলে আমাদের শিশু পুরোপুরি ভাবে পরিত্রাণ পেতে পারে। চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয় বহুল হলেও আমরা বারবার বলছি এই রোগটি আমাদের শিশুদের বাকি জীবনজুড়ে হার্টের বিভিন্ন রকম অসুবিধা ও জটিলতা নিয়ে জীবন পার করবে। তাই এই রোগটি শনাক্ত হলে আমাদের শিশুদের এই ওষুধ দিয়েই আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে।

 

এই রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার একটি সুনির্দিষ্ট সময় কাল ধরে এই রোগের জন্য ফলোআপ করতে হবে। এই ফলোআপের উদ্দেশ্য হলো এই রোগের কারনে তার হৃদযন্ত্রের কারনে কোন জটিলতা রেখে গেল কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করা। সেই পর্যবেক্ষণ কাল আমাদের প্রায় এক বছরজুড়ে ফলোআপ করতে হবে এবং ফলোআপ শেষে যে বিষয়টা আসবে সেটা হলো সে সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে গেছে।

 

এই চিকিৎসার কারণে তার প্রাত্যহিক জীবনে কোনো ব্যত্যয় হবে না, তার স্কুল, তার লেখাপড়া, খেলাধুলাই কোনো অসুবিধা হবে না। কিছু টিকা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা থাকে সেটা আপনার চিকিৎসকই আপনাকে অবহিত করবেন যে কি কি টিকা কতদিন পর্যন্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এত সময় আমরা কাওয়াসাকি রোগ সম্পর্কে জানলাম। যা বর্তমানে শিশুদের হার্টের একটি অন্যতম রোগ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে এবং দিন দিন শনাক্তের হারও বাড়ছে।

 

যদিও এই রোগের চিকিৎসা অত্যান্ত ব্যয় বহুল। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসার ফলে শিশুটি হৃদযন্ত্রজনিত জটিলতা থেকে বেঁচে থাকবে এবং তার পরবর্তী জীবন সে স্বাচ্ছন্দ্যে পার করতে পারবে। সুতরাং এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন থাকি, সতর্ক হয় এবং দ্রত শনাক্ত করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেয়।

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, বিভাগীয় প্রধান, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা। হটলাইন: ১০৬৭২  সূএ :বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রমজানে মেট্রোরেলে ২৫০ মিলি পানি নেওয়া যাবে

» রাতে স্বামীর জন্মদিন উদযাপন, সকালে নদীতে মিলল গৃহবধূর মরদেহ

» ‘এক মাসের মধ্যে রোডম্যাপ না দিলে রাজনৈতিক শক্তিগুলো পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে’

» রমজানে দিনে হোটেল বন্ধ রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের

» ঋতাভরীর স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ ভক্তরা

» ইনজুরি জয় করে দেড় বছর পর ব্রাজিলের স্কোয়াডে নেইমার

» চায়নিজ রাইফেলের ৩০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

» কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় দাবানলের মুখোমুখি জাপান

» ট্রেনে ছিনতাইকালে আটক ২

» হোয়াটসঅ্যাপে রমজানের স্টিকার যেভাবে পাঠাবেন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শিশুদের হার্টের রোগ কাওয়াসাকি ডিজিজ

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন :শিশুদের বিভিন্ন রকমের হার্টের অসুবিধার কথা শুনেছি যেমন শিশুদের জন্মগত হার্টের অসুখ, শিশুদের বাতজ্বরজনিত হার্টের অসুখ। বর্তমানে বাতজ্বরজনিত হার্টের অসুখ অনেকাংশেই কমে এসেছে। কিন্তু আমরা বেশ কিছুদিন ধরে নতুন একটা হার্টের অসুখ দেখতে পারছি। যা দিন দিন বেশি করে শনাক্ত করতে পারছি। শিশুদের নতুন এই রোগটির নাম কাওয়াসাকি ডিজিজ।

 

জাপানি এক চিকিৎসক ডা. তমিসাকু কাওয়াসাকি ১৯৬৭ সালে সর্ব প্রথম এই রোগ শনাক্ত করেন। এবং পরবর্তীতে উনি একটি জার্নালে এই রোগ সম্পর্কে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। কাওয়াসাকি ডিজিজ এই রোগটি আসলে একটি রক্ত নালির রোগ। এবং এটি একটি বিরল রোগ। কিন্তু বর্তমানে শিশুদের জন্মগত হার্টের রোগ, বাতজ্বরজনিত হার্টের রোগ এর পরেই এই রোগটির স্থান বলে পরিগণিত হয়েছে।

 

আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের চারপাশে দিনদিন এই রোগটির রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত ৫ বছরের নিচের শিশুদের দুই-তিন বছরের মধ্যে এই রোগটি বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই রোগে সাধারণত ছেলে শিশুরায় বেশি আক্রান্ত হয়।

 

এই রোগের বিস্তারের একটা সময়কাল আছে। সাধারণত শীতের শেষে ও বসন্তের সময় কালে এই রোগটি আমরা বেশি শনাক্ত করতে পারি। এই রোগটি একটি বিশেষ বয়সের রোগ এবং একটি বিশেষ সময়ে দেখতে পাওয়া যায়।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগটির দেখা যায় তবে এসিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এটি বেশি মাত্রায় দেখা যায়। যেমন জাপানে এই রোগটি সব থেকে বেশি পরিমাণে দেখা যায়, তার পরে তায়ওয়ান কোরিয়াতেও এই রোগটি দেখতে পায়া যায়। পাশাপাশি আমরা যদি উন্নতবিশ্বে ইউরোপ আমেরিকার দিকে তাকায় সেখানেই এই রোগটি বেশ ব্যাপক হারে শনাক্ত হচ্ছে।

রোগটির কারণ কী 

কারণ হিসাবে যে বিষয়টি আসছে সেটা হচ্ছে শরীরের প্রোটিন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে। কখনো কখনো কোন কোন জীবাণুর প্রভাবের কারণেও এই রোগটি দেখা যায়। এবং একই সঙ্গে জেনেটিক কারণেও এই রোগটিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

 

কীভাবে এই রোগটি শনাক্ত করা যায়

এই রোগটির মূল বিষয় হচ্ছে অবশ্যই শরীরে জ্বর থাকবে, জ্বর ০৫ দিনের বেশি স্থায়ী হবে এবং আরও কিছু লক্ষন সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশ পেলেই আমরা মনে করতে পারি শিশুটি হয়তোবা কাওয়াসাকি ডিজিজে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। আমরা যদি উপর থেকে দেখি, জ্বরের সাথে প্রথমেই যে জিনিসটি দেখব তা হলো তার চোখগুলো লালচে হয়ে গেছে, তবে সেখানে কোনো পুঁজ থাকবে না। ঠোঁটগুলো লাল, ফাঁটা ফাঁটা, জিহ্বাটাও বেশ লালচে দেখা যায়। এবং এত লালচে যে দেখলে মনে হবে যেন স্ট্রবেরির মতো।

 

গলার পেছনটা বেশ লালচে হয়ে দগদগে হয়ে থাকে। একই সঙ্গে গলার চারপাশে যে লসিকা গ্রন্থিগুলো আছে সেগুলো একটু ফুলে যেতে দেখব। যে কোনো এক সাইট, ডান অথবা বাম সাইট বেশ ফুলে থাকে। যেটার সাইজ প্রায় ১.৫ সেন্টিমিটারের বেশি হতে পারে। শরীরজুড়ে এক ধরনের ফুসকুটি বা র‌্যাশ বামরা বুকে পেটে হাতে দেখতে পাব। তার হাত পাগুলো একটু ফোলা ফোলা বেশ লালচে হয়ে দেখা যায়।

 

আমরা এই বিরল রোগটি নিয়ে কেন কথা বলছি। আমরা কিন্তু শুরুতেই বলেছি বর্তমানে শিশুদের এটি অন্যতম একটি হার্টের রোগ। হার্টের কী ধরনের জটিলতা করে যার কারণে এই রোগ সম্পর্কে আমাদের সম্মুখ ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমরা আগেই বলেছি, এটা একটা রক্তনালির রোগ। হার্টের যে করোনারি রক্তনালি আছে, সেই রক্তনালিগুলো ফুলেফেঁপে গিয়ে ছিঁড়ে যেতে পারে, অনেক সময় রক্ত প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। যার কারনে হার্টের মধ্যে বিভিন্ন রকমেন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

 

পাশাপাশি হার্টের যে বিভিন্ন মাংসপেশি আছে যেমন আমরা বলি পেরিকাডায়টিস। হার্টের বাইরের যে আবরণ এখানেও কিন্তু ফুলে যেয়ে পানি জমতে পারে, আমরা বলি মায়োকাডাইটিস হার্টের যে বিভিন্ন মাংসপেশি সেখানেও আক্রান্ত করে নাড়ির যে গতি আছে সেখানে নাড়ির গতির অসমঞ্জস্যতা তৈরি করে। আমরা এটাকে বলি এরিগনা তৈরি করে। হার্টের যে একদম ভিতরের লেয়ার, আমরা বলি এন্ডোকার্ডায়টিস, সেখানে যে বিভিন্ন ভাল্ব থাকে সেখানেও সে বিভিন্ন রকমের প্রদাহের কারণ সৃষ্টি করে। হার্টের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে সে প্রভাব বিস্তার করে না। হার্টের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশেও এর প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়।

এই রোগের চিকিৎসা কি বা কিভাবে শনাক্ত করব

এই রোগের যে লক্ষণগুলো আমরা আগেই বলেছি সেগুলো যদি কারও শরীরে এই লক্ষনগুলো প্রকাশ পায় তাহলে কিন্তু আমরা সহজেই এই রোগটি শনাক্ত করতে পাব। এই রোগের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরিক্ষা আছে যে পরীক্ষা নিরিক্ষাগুলো করে আমরা জানতে পারি যেয এই রোগটি অন্য কোনো ইনফেকশন না অন্য কোন ভাইরাস জনিত রোগ না সেটা আমরা পৃথক করতে পারবো। তারপরে সেক্ষেত্রে আমরা জরুরিভাবে আমরা হার্টের ইকো পরীক্ষা করে তার করোনারী ভেসেল, হার্টের বিভিন্ন যে লেয়ারগুলো আমরা আলোচনা করলাম সেগুলো আক্রান্ত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমরা পরিপূর্ণ ধারনা পেতে পারবো।

এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি 

এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল। চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয় বহুল হলেও এই রোগের চিকিৎসার বিকল্প কোন পদ্ধতি নাই যেটা। এই দাদী ওষুধটার নাম হচ্ছে ইন্টার ভেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন। এই ওষুধটি একবারই প্রযোগ করা হয় এবং এতে করে সারা জীবনের জন্য এই রোগটি তার মধ্যে থেকে ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগের বেশি।

 

কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এই দামী ওষুধ দেওয়ার পরেও রোগটি তার শরীরে থেকে যায়। তখন দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কটিড স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন এবং কিছু কিছু বায়োলজিক্যাল ওষুধ প্রচলিত আছে যেগুলো দিলে আমাদের শিশু পুরোপুরি ভাবে পরিত্রাণ পেতে পারে। চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয় বহুল হলেও আমরা বারবার বলছি এই রোগটি আমাদের শিশুদের বাকি জীবনজুড়ে হার্টের বিভিন্ন রকম অসুবিধা ও জটিলতা নিয়ে জীবন পার করবে। তাই এই রোগটি শনাক্ত হলে আমাদের শিশুদের এই ওষুধ দিয়েই আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে।

 

এই রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার একটি সুনির্দিষ্ট সময় কাল ধরে এই রোগের জন্য ফলোআপ করতে হবে। এই ফলোআপের উদ্দেশ্য হলো এই রোগের কারনে তার হৃদযন্ত্রের কারনে কোন জটিলতা রেখে গেল কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করা। সেই পর্যবেক্ষণ কাল আমাদের প্রায় এক বছরজুড়ে ফলোআপ করতে হবে এবং ফলোআপ শেষে যে বিষয়টা আসবে সেটা হলো সে সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে গেছে।

 

এই চিকিৎসার কারণে তার প্রাত্যহিক জীবনে কোনো ব্যত্যয় হবে না, তার স্কুল, তার লেখাপড়া, খেলাধুলাই কোনো অসুবিধা হবে না। কিছু টিকা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা থাকে সেটা আপনার চিকিৎসকই আপনাকে অবহিত করবেন যে কি কি টিকা কতদিন পর্যন্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এত সময় আমরা কাওয়াসাকি রোগ সম্পর্কে জানলাম। যা বর্তমানে শিশুদের হার্টের একটি অন্যতম রোগ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে এবং দিন দিন শনাক্তের হারও বাড়ছে।

 

যদিও এই রোগের চিকিৎসা অত্যান্ত ব্যয় বহুল। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসার ফলে শিশুটি হৃদযন্ত্রজনিত জটিলতা থেকে বেঁচে থাকবে এবং তার পরবর্তী জীবন সে স্বাচ্ছন্দ্যে পার করতে পারবে। সুতরাং এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন থাকি, সতর্ক হয় এবং দ্রত শনাক্ত করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেয়।

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, বিভাগীয় প্রধান, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা। হটলাইন: ১০৬৭২  সূএ :বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com