বাচ্চাদের উচ্চারণজনিত সমস্যাকে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। সচেতনতার সঙ্গে প্রথমেই মা বাবার উচিত বাচ্চাদের যদি কথা বলার সময় কোনো কিছু অস্বাভাবিক লাগে, তা লক্ষ্য করতে হবে এবং বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ আপনারা নিজেরাই বাচ্চাকে সবচাইতে ভালো বুঝবেন। এ সমস্যা আমরা স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে সমাধান করি।
স্পিচ থেরাপি কি?
স্পিচ থেরাপি হলো একটি ভাষা, হস্তক্ষেপের পদ্ধতি যা কোনো শিশুর কথা উন্নত করতে, তাদের বাক্য নির্ণয় করার ক্ষমতা এবং দুর্বল কথা বা উচ্চারণে, অপ্রয়োজনীয়তা (শব্দ, শব্দ বা বাক্যাংশের পুনরাবৃত্তি) এবং শব্দবিজ্ঞান এবং উচ্চারণে ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে ওঠার দিকে সহায়তা করে ও মনোনিবেশ করে। এই থেরাপিটি একটি শিশুকে মৌখিক এবং অমৌখিক ভাষার মাধ্যমে আরও ভালোভাবে প্রকাশ করতে সহায়তা করে।
কেন স্পিচ থেরাপির প্রয়োজন
– বক্তব্য এবং সাবলীলতা শব্দ, শব্দ এবং বাক্য গঠন করতে। দেখা যায় কথা বা উচ্চারণ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুরা শব্দ উচ্চারণ করতে এবং সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে না। স্পিচ থেরাপির উদ্দেশ্য হলো- শব্দকে আরও ভালোভাবে বোঝাতে এই অসুবিধা নিয়ে কাজ করা।
– স্পিচ থেরাপি বাচ্চাদের স্পষ্টভাবে শব্দ উচ্চারণ করতে এবং পিচ ও ভলিউম নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
– দেখা যায় যেসব শিশুরা কথা বা উচ্চারণ জনিত অসুস্থতায় আছে তাদের শব্দ, বাক্য এবং লিখন ব্যবহার করে অন্যকে বার্তা দিতে অসুবিধা হয়। তারা একটি বাক্যে ব্যাকরণ সঠিকভাবে এবং সঠিক শব্দ ব্যবহার করতে এবং ঘটনা বর্ণনা করার জন্যও কাজ করে। স্পিচ থেরাপির লক্ষ্য এই বিষয়গুলো সমাধান করা।
কখন স্পিচ থেরাপি দেয়া প্রয়োজন
– কথা বলা স্পষ্ট না হওয়া বা আপনার শিশু কী বলেছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়। শিশু শব্দ উচ্চারণ করতে বা তাদের চিন্তাভাবনাগুলোকে শব্দগুলোতে অনুবাদ করতে সমস্যা হয়।
– বাচ্চার কথায় তোতলামি, পুনরাবৃত্তি, দীর্ঘায়িতকরণ এবং কখনো বিরক্ত বোধ করে।
– শিশু কেবল দুটি থেকে তিন-শব্দের বাক্যের চেয়ে মামা, পাপা জাতীয় মাত্র একটি বা দুটি শব্দ উচ্চারণ করে।
– যদি মনে করেন আপনার শিশুটি বন্ধুত্ব তৈরি করা, সরাসরি যোগাযোগ করা, খেলার দক্ষতা শেখার এবং অন্যের সঙ্গে মিশার বা থাকার মতো সামাজিক দক্ষতায় গড়ে ওঠেনি।
উচ্চারণ সমস্যায় যে বয়সের ধাপগুলো লক্ষণীয়
১২ মাস বা ১ (এক) বছরের মধ্যে:
১ বছর বয়সেও শিশু যখন অস্ফুট বাক্য বলে না বা অন্যদের কথার সঙ্গে সঙ্গে তা অনুকরণ করার চেষ্টা করে না বা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না
বাচ্চা যদি বাবা, পাপা, ডাডা ইত্যাদি জাতীয় শব্দ উচ্চারণ না করে। যদি কোনোরকম ইঙ্গিত না করে- যেমন, হাত বা মাথা নাড়ানো বা আঙুলের সাহায্যে কোন কিছু নির্দেশ করা, ‘না’ বা ‘টাটা’ জাতীয় শব্দ বুঝতে না পারা বা তাতে সাড়া না দেয়।
১৮ মাসের মধ্যে:
১৮ মাস বয়সেও যদি সে অন্তত ৬টি শব্দ বলতে না পারে। শরীরের কোনো অঙ্গের নাম বললে যদি তা নির্দেশ করতে না পারে
১৯-২৪ মাসের মধ্যে:
যদি এ সময়ের মধ্যে বাচ্চার শব্দভাণ্ডার দ্রুত বাড়তে না থাকে (অন্তত প্রতি সপ্তাহে ১টি নতুন শব্দ না শেখে)
২৪ মাস বা ২ (দুই) বছরের মধ্যে:
২ বছর বয়সেও যদি সে খুব অল্প শব্দ বলতে পারে এবং যদি সে খুব একটা কথা না বলে, কোনো কিছু নির্দেশ করলে যদি সাড়া না দেয়। কারো কথা বা আচরণ যদি নকল না করে। বইয়ে বা কোন ছবি দেখিয়ে নাম বললে যদি তা নির্দেশ করতে না পারে।
৩ বছর বয়সে
৩ বছর বয়সেও যদি তার উচ্চারণগুলো অন্যরা বুঝতে না পারে তখন শিশুর সাহায্য প্রয়োজন বলে ধরে নিতে হবে। কোনো শব্দ অর্ধেক উচ্চারণ করা, যেমন-মোবাইলকে ‘মোবাই’ বলা।
পিতামাতার করণীয়:
আপনার সন্তানের কথা বা উচ্চারণ সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারবেন না। বাচ্চা যদি দেখেন হাঁটাহাঁটি করছে না তবে তাদের চাপ দিবেন না। পরিবর্তে, নিচের টিপস অনুসরণ করুন।
– বাচ্চার কথোপকথনকে উৎসায়িত করুন সন্তানকে চিন্তাভাবনা করার মতো বিষয়গুলো সাবলীলভাবে জিজ্ঞাসা করুন। বাচ্চার কথা মনোযোগ সহকারে শুনুন। বাচ্চা তাদের বাক্য বা কথাগুলো পূর্ণ করতে সময় নিচ্ছে কিনা তাও মনোযোগ সহকারে শুনুতে হবে।
– আপনার শিশু এবং তাদের বন্ধুরা বা ভাইবোনদের একসঙ্গে পান এবং একটি বৃত্ত বা পরিবেশ তৈরি করুন। যাতে বাচ্চারা একে অপরের সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে। অন্য বাচ্চার শুদ্ধ উচ্চারণেও আপনার বাচ্চা অনুকূল পরিবেশে কথা বলতে মানিয়ে নিতে পারবে।
– বাচ্চাকে কিছু আকর্ষণীয় গল্পের বই বা ছবির বই কিনে দিতে পারেন। বা আপনার সন্তানের পক্ষে আগ্রহী এমন কিছু নিউজ বেছে নিন এবং তাদেরকে উচ্চস্বরে এটি পড়তে বলুন। এটিকে দু’বার বা তিনবার পুনরাবৃত্তি করতে বলুন। এই জাতীয় কর্মগুলো বাচ্চার ভাষা দক্ষতার পাশাপাশি কথা বলার জন্য সহায়তা করে।
লেখক: নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন
চেম্বার: ENT Care Center
রোড-৩৫, হাউজ-৩৮/এ (সানমার টাওয়ার-২, ল্যাব এইডের পাশে),
লেভেল-১৩, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল-০১৭২৭-০৪৬৭১৫, ০১৭১১৫৪২৮০০। সূত্র: মানবজমিন