শাহসুফি ছামান উল্লাহ আল মস্তানজির সমাধিতে

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : সারা বিশ্বের ত্রুটিহীন শ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু দিন ১২ রবিউল আউয়াল টাঙ্গাইলে ছিলাম। টাঙ্গাইল জেলা ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন কমিটি মুক্তিযোদ্ধা পৌর উদ্যানে নবী করিম (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু দিনে চমৎকার আয়োজন করেছিল। কমবেশি নানা জায়গা থেকে লোকজন এসেছিল, মুসুল্লিরাও এসেছিল। অনেকক্ষণ তাদের হামদ-নাত ও বক্তৃতা শুনেছি। সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য রসুল (সা.)-এর চাইতে শ্রেষ্ঠ কোনো মানুষ নেই। মহাবিশ্বের নবীজিই প্রধান নেতা। কেন জানি না, মুসলিম জাহান কিছুটা ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ। ইমানের জোর অনেকেরই কমে গেছে। তবু করোনায় আক্রান্ত দেশে নবী করিম (সা.)কে নিয়ে অনুষ্ঠান অবশ্যই অনেকটা উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। ভালো লেগেছে। নানা দলে নানা মতে বিভক্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যদি আল্লাহর প্রতি আরেকটু নিষ্ঠ পাকা ইমানদার হতে পারত তাহলে অনেক ভালো হতো। মহান আল্লাহ যেখানে নিজে বলেছেন, যারা আমার কালাম নিয়ে ব্যবসা করবে আমি তাদের অবশ্যই জাহান্নামে পাঠাব। তার পরও কত শত শত আলেম নামে অনেক বদকার আল্লাহর কালাম নিয়ে ব্যবসা করে। আল্লাহ বলেছেন, বিয়েশাদিতে যারা মেয়ের বাড়ি থেকে পণ নেবে তাদের জন্য আমি জাহান্নাম নির্ধারণ করে রেখেছি। ভালো করে তলিয়ে দেখলে মেয়ের বাড়ি থেকে পণ নেওয়া ছেলের বিয়ে শরিয়তমতো বৈধ হয় না, যদিও মেয়ের বিয়ে বৈধতা পায়, আমরা কেউ ভেবে দেখি না। চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) মা ফাতেমাকে বিয়ে করেছিলেন। নিজের যুদ্ধসাজ বর্ম বিক্রি করে বিয়ের জন্য যা যা প্রয়োজন তা কিনেছিলেন এবং তখনকার প্রথা অনুযায়ী মেয়ের বাবা রসুলে করিম (সা.)-কে যতটা যা দেওয়া প্রয়োজন দিয়েছিলেন। আমরা সেই মুসলমান কেন কীভাবে দুর্বল ইমানের ভাগিদার হলাম ভেবে পাই না। তাই এবার দীর্ঘ সময় ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান শুনে বেশ ভালো লেগেছে।

৯ অক্টোবর ১২ রবিউল আউয়াল আমার এক প্রিয় মানুষ হজরত শাহসুফি ছামান উল্লাহ আল মস্তানজির মৃত্যুবার্ষিকী। জনাব শাহসুফি ছামান উল্লাহ সখিপুরের হতেয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়ির মানুষ। তিনি প্রায় ১২ বছর মাটি খুঁড়ে গর্ত করে জঙ্গলে কাটিয়েছেন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া ছাড়া কখনো সেই গভীর গর্ত থেকে বের হতেন না। আমি এমন বাকসিদ্ধ মানুষ দ্বিতীয়টি দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন সারা দেশ জ্বলছিল আমরা জীবনপণ সংগ্রাম করে টাঙ্গাইলের সখিপুর-কালিয়াকৈর, ময়মনসিংহের ভালুকা-ত্রিশাল-মুক্তাগাছা বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্তিযুদ্ধের সূচনা থেকেই মুক্ত করে ফেলেছিলাম। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে হতেয়ায় ফুলবাড়িয়া-কালিয়াকৈরের ১৩৮ জন রাজাকার চেয়ারম্যান আক্কেল আলী শিকদারের চেষ্টায় অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছিল। সেখানেই আমার শাহসুফি ছামান উল্লাহর সঙ্গে প্রথম দেখা। দুই পাট্টা লালসালু পরা ছাড়া উদাম গা, হাতে লাঠি আর খমক। খমক বাজাতেন আর এটাওটা গান গাইতেন। সবই নিজের রচিত। যুদ্ধের সময় এক অসাধারণ গান বেঁধেছিলেন-‘আহা! এবার এমন হারিগিলারে কেরা দিল মাদবরী

আহা! সেই দুঃখে যে আমি মরি॥ ওই

এবার দেখি, কত খাটাশবাবু দারোগা

শিয়ালপন্ডিত দফাদার

কত বিলাই পাইছে চকিদারি॥ ওই

আবার কত ঘরের কোনায় শুনি কানাকানি

দল পাকাইয়া করে হানাহানি,

কত যে গুজব লইয়া করে টানাটানি।’

 

প্রথম দেখার সময় স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন। আমাকেও যে তিনি খুব বেশি পরোয়া করছিলেন তেমন নয়। কিন্তু তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। টুকটাক এটাওটা গাইছিলেন। খাওয়ার সময় লোকটিকে সম্মান করে খেতে বসিয়েছিলাম। স্বাভাবিক খাবার খেয়েছিলেন। হতেয়া বাজার আর রাজাবাড়ি খুব একটা দূরে নয়। তাই আশপাশের সবাই তাকে চিনত। অনেক লোক তাকে ভীষণ মান্য করত। জুলাইয়ে শাহসুফি ছামান উল্লাহর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভীষণ আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। দেখা হওয়ার আগেও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর চলাফেরা, গানবাজনা সবই ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার ১০-১২ দিন পর আমাদের পাথরঘাটা ঘাঁটির পতন হয়েছিল। সেখানে তিনি গিয়েছিলেন। পাথরঘাটা থেকে পিছিয়ে প্রায় ৪-৫ মাইল উত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছিল, ঘাঁটি গেড়েছিল। সেখানে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা নাচানাচি করেছিলেন, হুংকার ছেড়েছিলেন-

‘আরে তোরা সব জয়ধ্বনি কর,

তোরা সব জয়ধ্বনি কর।

মার লাথি, ভাঙ ছাতি, আছে যত রাজাকর

উদ্ধার কর শেখ মুজিবর।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’

এরপর আগস্টে আমি গুলিবিদ্ধ হই। কিছু সময়ের জন্য কাদেরিয়া বাহিনী ভেঙে খানখান হয়ে যায়। আমি ভারত সীমান্তে যে রাস্তা দিয়ে গারো পাহাড়ের তুরার কাছাকাছি গিয়েছিলাম ঠিক একই রাস্তা দিয়ে আনোয়ারুল আলম শহীদ, বড়চওনার ইদ্রিস কমান্ডার, সৈয়দ নুরু, ফারুকসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আমাকে অনুসরণ করে সীমান্ত পর্যন্ত গিয়েছিল। তারপর নানা কারণে তারা আর সীমান্ত পার না হয়ে সখিপুরে ফিরে আসে। বড়চওনার ইদ্রিসের মায়ের জিম্মায় কিছু অস্ত্র এবং অর্থ রেখে তারা বাহিনী পুনর্গঠন শুরু করে। প্রথমেই সাইক্লোস্টাইল করা কাগজে বিজ্ঞপ্তি দেয়। আনোয়ারুল আলম শহীদের দফতরে আমার স্বাক্ষর করা যে সাইক্লোস্টাইল পেপার ছিল তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সাধারণ মানুষকে ভয় না পেয়ে আমার পক্ষ থেকে সংগঠিত হতে অনুরোধ জানানো হয়। দুবার বিজ্ঞপ্তি প্রচারেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে যায়। তারা হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জনসাধারণ আগের মতো সুসংগঠিত হয়ে ওঠে। স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের কাজ শুরু করে। আগস্টের ১৬ তারিখ থেকে ভেঙে পড়া হীনবল কাদেরিয়া বাহিনী আবার নতুন উদ্যমে তৈরি হয়ে যায়। সেপ্টেম্বরের ৫-৭ তারিখের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অনেকটা সুস্থ হয়ে আমি ফিরি ২০-২২ সেপ্টেম্বরে। মাঝখানের ১৫-১৬টা দিন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতীয় সীমানায় যে কর্মচাঞ্চল্য তার অনেক কিছু দেখতে পাই এবং অনুপ্রাণিত হই। বিশেষ করে তুরার সাতমাইলে রওশন আরা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের যে প্রশিক্ষণ হচ্ছিল সে প্রশিক্ষণ শিবির দেখে মনে বড় আশা জাগে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন তাদের অনেক জেনারেলের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। লে. জেনারেল অরোরা, মেজর জেনারেল গিল, ওভান, বি এন সরকার, ব্রিগেডিয়ার সানসিং- এ রকম আরও অনেকের সঙ্গে কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা হয়। একসময় মনে হয় আমার গুলিবিদ্ধ হওয়াটাও আল্লাহর দান। গুলিবিদ্ধ হয়ে ভারত সীমান্তে না গেলে ভারতীয় পরিকল্পনার আগামাথা কিছুই জানতাম না। শেষের পর্ব যে নিখুঁতভাবে শেষ হয়েছে বা পরিচালিত হয়েছে তা সম্ভব ছিল না।

 

সব দেশের সেনাবাহিনী প্রতিদিন যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়, শত্রুবাহিনীকে কী করে পরাজিত করা যাবে, কী করে জয়ী হওয়া যাবে রাতদিন তার প্রশিক্ষণ, রাতদিন একই চিন্তাভাবনা, প্রতিদিন নতুন নতুন বিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহ করে শত্রুবাহিনীকে পরাভূত করা। তবে শক্তিশালী কোনো শত্রুবাহিনীকে একেবারে ধ্বংস বা নির্মূল করে বিজয় অর্জনে তেমন কোনো মাহাত্ম্য নেই। নেতৃত্বের কর্তৃত্বের মাহাত্ম্য শত্রুপক্ষের যত কম জীবনহানি ঘটিয়ে শত্রুকে পরাভূত করার মধ্যে বীরত্ব নির্ভর করে। বিপুল ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে কেউ খুব বেশি গৌরব বা গর্ব করতে পারে না। সেজন্য শত্রুর চরম ধ্বংস যুদ্ধ বিজয়ের পরম গৌরব নয়, পরম গৌরব শত্রুর বিপুল শক্তি অস্ত্র থাকার পরও তাকে অকেজো করে দেওয়া, শত্রুর শক্তি কাজে লাগতে না দেওয়া। যেমনটা মুক্তিযুদ্ধে আমরা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে করতে সক্ষম হয়েছিলাম। হাজার হাজার লাখো কামানের গোলায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা শহর যদি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতো, ৯৫ হাজার পাকিস্তান হানাদারের ৬০-৭০ হাজার মারা যেত তাহলে ষোল আনা বিজয়ের আনন্দ আমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারতাম না। পাকিস্তান হানাদাররা নয় মাস তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে, সৈন্যবল, অস্ত্রবল কোনো কিছুতেই পেছনে থাকেনি। অথচ ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের হাতে ধরা পড়ে যখন জীবন ভিক্ষা চেয়ে আত্মসমর্পণ করে তখন তাদের সব অস্ত্রই অকেজো হয়ে পড়েছিল। কোনো কিছুই কাজে লাগাতে পারেনি। এটাই হলো যুদ্ধজয়ের সবচাইতে গৌরবোজ্জ্বল সার্থকতা।

 

আমার জীবনে পীর-মুরশিদদের সম্মান আছে, ভক্তি আছে, শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু আমি কোনো ফকির বা পীর-মুরশিদের মুরিদ হতে যাইনি। ধর্মীয় বিষয় মানবতার ক্ষেত্রে যদি সামান্য জ্ঞানও অর্জন করে থাকি তা শুধু বইপুস্তকে নয়, মা থেকে, বাবা থেকে, বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী থেকে যা পাওয়ার অনুশাসন পেয়েছি আর যা পেয়েছি তা আমার নেতা-পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনে ৯ অক্টোবর ১২ রবিউল আউয়াল তক্তারচালায় শাহসুফি ছামান উল্লাহ মস্তানজির যে মাজারে গিয়েছিলাম সেই ছামান উল্লাহর কাছ থেকে। বাহ্যিক লেখাপড়া তাঁর খুব একটা ছিল না। কিন্তু কোরআন সম্পর্কে, ধর্ম সম্পর্কে ধর্মের নিগূঢ় রহস্য সম্পর্কে যা শিখেছি জেনেছি তার সবই শাহসুফি ছামান উল্লাহর কাছ থেকে। তাঁর দুটো বিষয়ের উত্তর এখনো খুঁজে পাই না। এক. তাঁর মৃত্যুর দিনক্ষণ, দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দুই মাস আগে হিসাব করলেই বের করতে পারব কবে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলেন। আমার যতটা মনে পড়ে ৬০-৬২ দিন আগে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-’৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শাহসুফি ছামান উল্লাহ মস্তানজির ঢাকা-টাঙ্গাইল মিলে ছয়-সাত বার দেখা হয়েছে। ’৭৫-এ জুনের প্রথম দিকে দেখা ছিল তাঁর শেষ দেখা। বর্তমান গণভবনে ছামান ফকিরকে যখন নিয়ে গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে তখন ছয়-সাত জন মন্ত্রী, কয়েকজন নানা পদের অফিসার ও আট-নয় জন নেতা ছিলেন। অনেক রকম কথা হচ্ছিল। শাহসুফি ছামান উল্লাহকে নিয়ে ঘণ্টাখানেক সেখানে ছিলাম। এমন কোনো আনন্দের কথা নেই যা আলোচনা হচ্ছিল না। দু-চার-ছয় মাসে বঙ্গবন্ধুকে অমন উৎফুল্ল দেখিনি। হঠাৎই একসময় আমার কাঁধে ঝাঁকি দিয়ে বলছিলেন, ‘এই যে বঙ্গপীর, বঙ্গবন্ধু কোথায়? আমি তো তারে দেখতে পাচ্ছি না।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর পাশেই ছিলেন। হাত ধরে টেনে তুলে বুক মিলিয়ে ছিলেন এবং বেশ কয়েকবার বলছিলেন, ‘এই যে আমি আপনাকে ধরে আছি।’ তবু তিনি বলছিলেন, ‘বঙ্গপীর বঙ্গবন্ধুকে দেখছি না কেন?’ পীরের কথা শুনে বঙ্গবন্ধুসহ অনেকেই হেসেছিলেন। আমি হেসেছিলাম কি না বলতে পারব না। চলে আসার পথে গাড়িতেও জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বঙ্গবন্ধু আপনাকে ধরে থাকল তার পরও কেন তাঁকে দেখতে পেলেন না? বাচ্চারা যেমন রাগ করে ঝেংটি দিয়ে মা-বাবাকে কোনো কথা বলে তেমনি বলেছিলেন, ‘দেখতে না পেলে কী করে বলব বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখতে পেয়েছি।’ নেতা-পিতার মৃত্যুর ৬০-৬২ দিন আগে শাহসুফি ছামান উল্লাহ তাঁর রুহানি দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাননি। এটা কী করে সম্ভব ছিল আজও ভেবে পাই না। অন্যদিকে তাঁর মৃত্যুর দিনক্ষণ আমাকে বলেছিলেন, ‘বডি চেঞ্জ, খাঁচা বদল’। তক্তারচালার নবীন একসময় হতেয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন; তার কাছে জায়গা চেয়েছিলেন কবরের জন্য। সে ১০ ডেসিমল জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার পরদিন শাহসুফি ছামান উল্লাহ ইহলোক ত্যাগ করেন এবং সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। পরে পীরের মাজারের পাশে আমিও এক-দেড় একর জায়গা কিনেছিলাম। প্রয়োজনীয় সম্পত্তি এখনো মাজারকে লিখে দেওয়া হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি যতটা দরকার ততটা লিখে দেব। করোনায় দু-তিন বছর ফকিরের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়নি। তাই এতদিন পর মাজারে গিয়ে হাজারো মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে বেশ ভালো লেগেছে। আল্লাহ তাঁকে বেহেশতবাসী করুন।

 

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com     সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের এসেছে: মাসুদ সাঈদী

» নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

» অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ চারজন মাদক চোরা কারবারি আটক

» সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব, যা জানালেন বদিউল আলম

» ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান মঈন খানের

» কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়: আইজিপি

» সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময়ে জান্নাত! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

» বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পট লোন পেলেন সিলেটের সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা

» ‘ইউসিবি নাইট’ আয়োজনে গ্রাহক ও অংশীদারদের অব্যাহত সহযোগিতার স্বীকৃতি

» ইসলামপুর ওয়ার্ড কৃষক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শাহসুফি ছামান উল্লাহ আল মস্তানজির সমাধিতে

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : সারা বিশ্বের ত্রুটিহীন শ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু দিন ১২ রবিউল আউয়াল টাঙ্গাইলে ছিলাম। টাঙ্গাইল জেলা ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন কমিটি মুক্তিযোদ্ধা পৌর উদ্যানে নবী করিম (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু দিনে চমৎকার আয়োজন করেছিল। কমবেশি নানা জায়গা থেকে লোকজন এসেছিল, মুসুল্লিরাও এসেছিল। অনেকক্ষণ তাদের হামদ-নাত ও বক্তৃতা শুনেছি। সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য রসুল (সা.)-এর চাইতে শ্রেষ্ঠ কোনো মানুষ নেই। মহাবিশ্বের নবীজিই প্রধান নেতা। কেন জানি না, মুসলিম জাহান কিছুটা ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ। ইমানের জোর অনেকেরই কমে গেছে। তবু করোনায় আক্রান্ত দেশে নবী করিম (সা.)কে নিয়ে অনুষ্ঠান অবশ্যই অনেকটা উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। ভালো লেগেছে। নানা দলে নানা মতে বিভক্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যদি আল্লাহর প্রতি আরেকটু নিষ্ঠ পাকা ইমানদার হতে পারত তাহলে অনেক ভালো হতো। মহান আল্লাহ যেখানে নিজে বলেছেন, যারা আমার কালাম নিয়ে ব্যবসা করবে আমি তাদের অবশ্যই জাহান্নামে পাঠাব। তার পরও কত শত শত আলেম নামে অনেক বদকার আল্লাহর কালাম নিয়ে ব্যবসা করে। আল্লাহ বলেছেন, বিয়েশাদিতে যারা মেয়ের বাড়ি থেকে পণ নেবে তাদের জন্য আমি জাহান্নাম নির্ধারণ করে রেখেছি। ভালো করে তলিয়ে দেখলে মেয়ের বাড়ি থেকে পণ নেওয়া ছেলের বিয়ে শরিয়তমতো বৈধ হয় না, যদিও মেয়ের বিয়ে বৈধতা পায়, আমরা কেউ ভেবে দেখি না। চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) মা ফাতেমাকে বিয়ে করেছিলেন। নিজের যুদ্ধসাজ বর্ম বিক্রি করে বিয়ের জন্য যা যা প্রয়োজন তা কিনেছিলেন এবং তখনকার প্রথা অনুযায়ী মেয়ের বাবা রসুলে করিম (সা.)-কে যতটা যা দেওয়া প্রয়োজন দিয়েছিলেন। আমরা সেই মুসলমান কেন কীভাবে দুর্বল ইমানের ভাগিদার হলাম ভেবে পাই না। তাই এবার দীর্ঘ সময় ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান শুনে বেশ ভালো লেগেছে।

৯ অক্টোবর ১২ রবিউল আউয়াল আমার এক প্রিয় মানুষ হজরত শাহসুফি ছামান উল্লাহ আল মস্তানজির মৃত্যুবার্ষিকী। জনাব শাহসুফি ছামান উল্লাহ সখিপুরের হতেয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়ির মানুষ। তিনি প্রায় ১২ বছর মাটি খুঁড়ে গর্ত করে জঙ্গলে কাটিয়েছেন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া ছাড়া কখনো সেই গভীর গর্ত থেকে বের হতেন না। আমি এমন বাকসিদ্ধ মানুষ দ্বিতীয়টি দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন সারা দেশ জ্বলছিল আমরা জীবনপণ সংগ্রাম করে টাঙ্গাইলের সখিপুর-কালিয়াকৈর, ময়মনসিংহের ভালুকা-ত্রিশাল-মুক্তাগাছা বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্তিযুদ্ধের সূচনা থেকেই মুক্ত করে ফেলেছিলাম। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে হতেয়ায় ফুলবাড়িয়া-কালিয়াকৈরের ১৩৮ জন রাজাকার চেয়ারম্যান আক্কেল আলী শিকদারের চেষ্টায় অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছিল। সেখানেই আমার শাহসুফি ছামান উল্লাহর সঙ্গে প্রথম দেখা। দুই পাট্টা লালসালু পরা ছাড়া উদাম গা, হাতে লাঠি আর খমক। খমক বাজাতেন আর এটাওটা গান গাইতেন। সবই নিজের রচিত। যুদ্ধের সময় এক অসাধারণ গান বেঁধেছিলেন-‘আহা! এবার এমন হারিগিলারে কেরা দিল মাদবরী

আহা! সেই দুঃখে যে আমি মরি॥ ওই

এবার দেখি, কত খাটাশবাবু দারোগা

শিয়ালপন্ডিত দফাদার

কত বিলাই পাইছে চকিদারি॥ ওই

আবার কত ঘরের কোনায় শুনি কানাকানি

দল পাকাইয়া করে হানাহানি,

কত যে গুজব লইয়া করে টানাটানি।’

 

প্রথম দেখার সময় স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন। আমাকেও যে তিনি খুব বেশি পরোয়া করছিলেন তেমন নয়। কিন্তু তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। টুকটাক এটাওটা গাইছিলেন। খাওয়ার সময় লোকটিকে সম্মান করে খেতে বসিয়েছিলাম। স্বাভাবিক খাবার খেয়েছিলেন। হতেয়া বাজার আর রাজাবাড়ি খুব একটা দূরে নয়। তাই আশপাশের সবাই তাকে চিনত। অনেক লোক তাকে ভীষণ মান্য করত। জুলাইয়ে শাহসুফি ছামান উল্লাহর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভীষণ আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। দেখা হওয়ার আগেও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর চলাফেরা, গানবাজনা সবই ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার ১০-১২ দিন পর আমাদের পাথরঘাটা ঘাঁটির পতন হয়েছিল। সেখানে তিনি গিয়েছিলেন। পাথরঘাটা থেকে পিছিয়ে প্রায় ৪-৫ মাইল উত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছিল, ঘাঁটি গেড়েছিল। সেখানে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা নাচানাচি করেছিলেন, হুংকার ছেড়েছিলেন-

‘আরে তোরা সব জয়ধ্বনি কর,

তোরা সব জয়ধ্বনি কর।

মার লাথি, ভাঙ ছাতি, আছে যত রাজাকর

উদ্ধার কর শেখ মুজিবর।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’

এরপর আগস্টে আমি গুলিবিদ্ধ হই। কিছু সময়ের জন্য কাদেরিয়া বাহিনী ভেঙে খানখান হয়ে যায়। আমি ভারত সীমান্তে যে রাস্তা দিয়ে গারো পাহাড়ের তুরার কাছাকাছি গিয়েছিলাম ঠিক একই রাস্তা দিয়ে আনোয়ারুল আলম শহীদ, বড়চওনার ইদ্রিস কমান্ডার, সৈয়দ নুরু, ফারুকসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আমাকে অনুসরণ করে সীমান্ত পর্যন্ত গিয়েছিল। তারপর নানা কারণে তারা আর সীমান্ত পার না হয়ে সখিপুরে ফিরে আসে। বড়চওনার ইদ্রিসের মায়ের জিম্মায় কিছু অস্ত্র এবং অর্থ রেখে তারা বাহিনী পুনর্গঠন শুরু করে। প্রথমেই সাইক্লোস্টাইল করা কাগজে বিজ্ঞপ্তি দেয়। আনোয়ারুল আলম শহীদের দফতরে আমার স্বাক্ষর করা যে সাইক্লোস্টাইল পেপার ছিল তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সাধারণ মানুষকে ভয় না পেয়ে আমার পক্ষ থেকে সংগঠিত হতে অনুরোধ জানানো হয়। দুবার বিজ্ঞপ্তি প্রচারেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে যায়। তারা হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জনসাধারণ আগের মতো সুসংগঠিত হয়ে ওঠে। স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের কাজ শুরু করে। আগস্টের ১৬ তারিখ থেকে ভেঙে পড়া হীনবল কাদেরিয়া বাহিনী আবার নতুন উদ্যমে তৈরি হয়ে যায়। সেপ্টেম্বরের ৫-৭ তারিখের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অনেকটা সুস্থ হয়ে আমি ফিরি ২০-২২ সেপ্টেম্বরে। মাঝখানের ১৫-১৬টা দিন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতীয় সীমানায় যে কর্মচাঞ্চল্য তার অনেক কিছু দেখতে পাই এবং অনুপ্রাণিত হই। বিশেষ করে তুরার সাতমাইলে রওশন আরা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের যে প্রশিক্ষণ হচ্ছিল সে প্রশিক্ষণ শিবির দেখে মনে বড় আশা জাগে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন তাদের অনেক জেনারেলের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। লে. জেনারেল অরোরা, মেজর জেনারেল গিল, ওভান, বি এন সরকার, ব্রিগেডিয়ার সানসিং- এ রকম আরও অনেকের সঙ্গে কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা হয়। একসময় মনে হয় আমার গুলিবিদ্ধ হওয়াটাও আল্লাহর দান। গুলিবিদ্ধ হয়ে ভারত সীমান্তে না গেলে ভারতীয় পরিকল্পনার আগামাথা কিছুই জানতাম না। শেষের পর্ব যে নিখুঁতভাবে শেষ হয়েছে বা পরিচালিত হয়েছে তা সম্ভব ছিল না।

 

সব দেশের সেনাবাহিনী প্রতিদিন যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়, শত্রুবাহিনীকে কী করে পরাজিত করা যাবে, কী করে জয়ী হওয়া যাবে রাতদিন তার প্রশিক্ষণ, রাতদিন একই চিন্তাভাবনা, প্রতিদিন নতুন নতুন বিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহ করে শত্রুবাহিনীকে পরাভূত করা। তবে শক্তিশালী কোনো শত্রুবাহিনীকে একেবারে ধ্বংস বা নির্মূল করে বিজয় অর্জনে তেমন কোনো মাহাত্ম্য নেই। নেতৃত্বের কর্তৃত্বের মাহাত্ম্য শত্রুপক্ষের যত কম জীবনহানি ঘটিয়ে শত্রুকে পরাভূত করার মধ্যে বীরত্ব নির্ভর করে। বিপুল ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে কেউ খুব বেশি গৌরব বা গর্ব করতে পারে না। সেজন্য শত্রুর চরম ধ্বংস যুদ্ধ বিজয়ের পরম গৌরব নয়, পরম গৌরব শত্রুর বিপুল শক্তি অস্ত্র থাকার পরও তাকে অকেজো করে দেওয়া, শত্রুর শক্তি কাজে লাগতে না দেওয়া। যেমনটা মুক্তিযুদ্ধে আমরা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে করতে সক্ষম হয়েছিলাম। হাজার হাজার লাখো কামানের গোলায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা শহর যদি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতো, ৯৫ হাজার পাকিস্তান হানাদারের ৬০-৭০ হাজার মারা যেত তাহলে ষোল আনা বিজয়ের আনন্দ আমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারতাম না। পাকিস্তান হানাদাররা নয় মাস তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে, সৈন্যবল, অস্ত্রবল কোনো কিছুতেই পেছনে থাকেনি। অথচ ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের হাতে ধরা পড়ে যখন জীবন ভিক্ষা চেয়ে আত্মসমর্পণ করে তখন তাদের সব অস্ত্রই অকেজো হয়ে পড়েছিল। কোনো কিছুই কাজে লাগাতে পারেনি। এটাই হলো যুদ্ধজয়ের সবচাইতে গৌরবোজ্জ্বল সার্থকতা।

 

আমার জীবনে পীর-মুরশিদদের সম্মান আছে, ভক্তি আছে, শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু আমি কোনো ফকির বা পীর-মুরশিদের মুরিদ হতে যাইনি। ধর্মীয় বিষয় মানবতার ক্ষেত্রে যদি সামান্য জ্ঞানও অর্জন করে থাকি তা শুধু বইপুস্তকে নয়, মা থেকে, বাবা থেকে, বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী থেকে যা পাওয়ার অনুশাসন পেয়েছি আর যা পেয়েছি তা আমার নেতা-পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনে ৯ অক্টোবর ১২ রবিউল আউয়াল তক্তারচালায় শাহসুফি ছামান উল্লাহ মস্তানজির যে মাজারে গিয়েছিলাম সেই ছামান উল্লাহর কাছ থেকে। বাহ্যিক লেখাপড়া তাঁর খুব একটা ছিল না। কিন্তু কোরআন সম্পর্কে, ধর্ম সম্পর্কে ধর্মের নিগূঢ় রহস্য সম্পর্কে যা শিখেছি জেনেছি তার সবই শাহসুফি ছামান উল্লাহর কাছ থেকে। তাঁর দুটো বিষয়ের উত্তর এখনো খুঁজে পাই না। এক. তাঁর মৃত্যুর দিনক্ষণ, দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দুই মাস আগে হিসাব করলেই বের করতে পারব কবে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলেন। আমার যতটা মনে পড়ে ৬০-৬২ দিন আগে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-’৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শাহসুফি ছামান উল্লাহ মস্তানজির ঢাকা-টাঙ্গাইল মিলে ছয়-সাত বার দেখা হয়েছে। ’৭৫-এ জুনের প্রথম দিকে দেখা ছিল তাঁর শেষ দেখা। বর্তমান গণভবনে ছামান ফকিরকে যখন নিয়ে গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে তখন ছয়-সাত জন মন্ত্রী, কয়েকজন নানা পদের অফিসার ও আট-নয় জন নেতা ছিলেন। অনেক রকম কথা হচ্ছিল। শাহসুফি ছামান উল্লাহকে নিয়ে ঘণ্টাখানেক সেখানে ছিলাম। এমন কোনো আনন্দের কথা নেই যা আলোচনা হচ্ছিল না। দু-চার-ছয় মাসে বঙ্গবন্ধুকে অমন উৎফুল্ল দেখিনি। হঠাৎই একসময় আমার কাঁধে ঝাঁকি দিয়ে বলছিলেন, ‘এই যে বঙ্গপীর, বঙ্গবন্ধু কোথায়? আমি তো তারে দেখতে পাচ্ছি না।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর পাশেই ছিলেন। হাত ধরে টেনে তুলে বুক মিলিয়ে ছিলেন এবং বেশ কয়েকবার বলছিলেন, ‘এই যে আমি আপনাকে ধরে আছি।’ তবু তিনি বলছিলেন, ‘বঙ্গপীর বঙ্গবন্ধুকে দেখছি না কেন?’ পীরের কথা শুনে বঙ্গবন্ধুসহ অনেকেই হেসেছিলেন। আমি হেসেছিলাম কি না বলতে পারব না। চলে আসার পথে গাড়িতেও জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বঙ্গবন্ধু আপনাকে ধরে থাকল তার পরও কেন তাঁকে দেখতে পেলেন না? বাচ্চারা যেমন রাগ করে ঝেংটি দিয়ে মা-বাবাকে কোনো কথা বলে তেমনি বলেছিলেন, ‘দেখতে না পেলে কী করে বলব বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখতে পেয়েছি।’ নেতা-পিতার মৃত্যুর ৬০-৬২ দিন আগে শাহসুফি ছামান উল্লাহ তাঁর রুহানি দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাননি। এটা কী করে সম্ভব ছিল আজও ভেবে পাই না। অন্যদিকে তাঁর মৃত্যুর দিনক্ষণ আমাকে বলেছিলেন, ‘বডি চেঞ্জ, খাঁচা বদল’। তক্তারচালার নবীন একসময় হতেয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন; তার কাছে জায়গা চেয়েছিলেন কবরের জন্য। সে ১০ ডেসিমল জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার পরদিন শাহসুফি ছামান উল্লাহ ইহলোক ত্যাগ করেন এবং সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। পরে পীরের মাজারের পাশে আমিও এক-দেড় একর জায়গা কিনেছিলাম। প্রয়োজনীয় সম্পত্তি এখনো মাজারকে লিখে দেওয়া হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি যতটা দরকার ততটা লিখে দেব। করোনায় দু-তিন বছর ফকিরের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়নি। তাই এতদিন পর মাজারে গিয়ে হাজারো মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে বেশ ভালো লেগেছে। আল্লাহ তাঁকে বেহেশতবাসী করুন।

 

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com     সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com