ছবি সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্ট :সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ২০১৩ সাল ছিল আওয়ামী লীগের (আ.লীগ) জন্য ‘ইয়ার জিরো’। এ বছরেই দুইটি বড় গণহত্যা, সপ্তাহব্যাপী ‘চেতনা’ আন্দোলন, নজিরবিহীন নির্বাচনী কারচুপি এবং সমন্বিতভাবে এক ডজনেরও বেশি বিরোধী দলের কর্মীর গুমের ঘটনা ঘটে। বছর শেষে, আ.লীগ নিশ্চিত হয় যে তারা তাদের শাসন দীর্ঘায়িত করার ‘নিখুঁত ফর্মুলা’ খুঁজে পেয়েছে।
তিনি বলেন, শাহবাগ আন্দোলন ছিল সে ফর্মুলারই অংশ। প্রতিটি গণমাধ্যম এই আন্দোলনকে ব্যাপকভাবে সমর্থন জানায়। হাজার হাজার সরকারপন্থী আন্দোলনকারী রাস্তায় নেমে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে রায়ের পরিবর্তন করতে বাধ্য করে। এর ফলে বিরোধী দলীয় ইসলামী নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এই প্রথমবারের মতো, দেশের সর্বোচ্চ আদালত জনতার চাপে রায় পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
তিনি আরো বলেন, শাপলা চত্বর এবং মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর যে সহিংসতা হয়েছিল, তা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। হেফাজত ও জামায়াতপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞে মানবাধিকারকর্মীদের বড় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। পশ্চিমা বিশ্বও এতে নীরব ছিল। আওয়ামী লীগপন্থী ব্যক্তিরা এটাকে ‘প্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতে থাকে।
তিনি বলেন, এই গণহত্যার ফলে আওয়ামী লীগ ‘সঠিক’ অবস্থানে পৌঁছায় বিশ্বব্যাপী চলমান ‘ওয়ার অন টেরর’ (সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ) এর আলোকে। শেখ হাসিনা সরকার এটি কাজে লাগিয়ে নিজেদের ‘সেক্যুলার চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। পশ্চিমা বিশ্ব ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় চোখ বন্ধ করে রাখে। কেবল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কিছুটা প্রতিক্রিয়া জানায়।
পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের এক মাস আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী কারচুপি করেন। আইন ব্যাখ্যার ‘চাতুর্যপূর্ণ’ প্রয়োগের মাধ্যমে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। একই দিনে এক ডজনের বেশি বিএনপি কর্মী গুম হয়ে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন। গণমাধ্যম ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এই ঘটনা নিয়ে নীরব ছিল। পুরো দেশে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয় এবং বিএনপি কার্যত নির্বাচনের আগেই পরাজিত হয়।পরবর্তী এক দশকে আওয়ামী লীগকে ২০১৩ সালের মতো কঠোর দমননীতি অনুসরণ করতে হয়নি। ২০১৩ সালে তৈরি হওয়া ভয় জনগণের মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল। প্রতিবার বিএনপি আন্দোলনের চেষ্টা করলেই দমন-পীড়ন চালানো হয়।
তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালের মার্চে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় হেফাজত ইসলাম আরেকটি বড় আন্দোলনের চেষ্টা করে। তখনও ২০১৩ সালের কৌশল প্রয়োগ করা হয় এবং প্রায় ২০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে প্রথমবারের মতো ভয়ভীতি কমতে থাকে। এরপরের কয়েক বছরে বিএনপি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলেও ২০১৩ সালের গণহত্যার ভয় তাদের দমিয়ে রাখে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নতুন প্রজন্মের সাহসী তরুণরা যখন আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন ২০১৩ সালের ভয়ের মূর্তিটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে রইল—এক যুগের ভয়ভীতি একদিন শেষ হতেই হয়েছিল।