শহীদুল-জিয়াউলে চলতো পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়!

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ও টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক প্রধান জিয়াউল আহসানের কথায় চলতো পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ। তাদের কাজে বাধা দেওয়ায় তখনকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সচিবকে পরিবর্তন করার তথ্যও পাওয়া গেছে।

 

আইজিপি শহীদুল হক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গড়ে তুলেছিলেন নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পিএস হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। ইসরায়েল থেকে আড়ি পাতার যন্ত্রসহ নানা সরঞ্জাম কিনতে হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ আটকে দেওয়াই কাল হয়েছিল তৎকালীন এক স্বরাষ্ট্রসচিবের। শহীদুল, জিয়াউল ও হারুনের কথা না শোনায় ওই স্বরাষ্ট্রসচিবের মেয়াদকাল ছিল মাত্র ৯ মাস। স্বরাষ্ট্রসচিব কে হবেন, তাও নির্ধারণ করে দিতেন শহীদুল ও জিয়াউল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দীর্ঘদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে আইজিপি ছিলেন এ কে এম শহীদুল হক। আর এনটিএমসির প্রধান ছিলেন জিয়াউল আহসান। একই সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পিএস ছিলেন হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। আর র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর আহমেদ। বেনজীর আহমেদও ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন হলেও তারাই ছিলেন হর্তাকর্তা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার হাসিনার সঙ্গে এই সিন্ডিকেটের যোগাযোগ থাকায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের সমীহ করে চলতেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা এর ব্যত্যয় ঘটালে বেশি দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঠিকতে পারতেন না।

 

২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে নিয়োগ পান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সচিব হওয়ার পর পুলিশ ও র‌্যাবের অন্যায্য চাওয়ার প্রতি নজর দেন তিনি। যোগদানের কিছুদিন পর পুলিশ ও র‌্যাবের কেনাকাটার জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রস্তাব যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই সময় সচিবের কাছে মনে হয়- এই কেনাকাটা ২০০ কোটি টাকা দিয়েই সম্ভব। ফলে বেঁকে বসে ওই ফাইলে স্বাক্ষর করেননি তিনি। কাছাকাছি সময়ে এনটিএমসির তৎকালীন প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান এনটিএমসির যন্ত্রপাতি কিনতে এক হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে যান। যার মধ্যে ইসরায়েলের আড়ি পাতা যন্ত্র কেনার প্রস্তাবও ছিল বলে জানা গেছে। ওই প্রস্তাবও আটকে দেন ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

 

ইসরায়েলি আড়ি পাতার যন্ত্র কেনার বিষয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেজের এক রিপোর্টে বলা হয়- সাইপ্রাসে নিবন্ধিত ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের এনটিএমসি নজরদারি প্রযুক্তি কিনেছে। ওই সময় দেশের একটি ইংরেজি দৈনিক হারেজের খবরের সূত্রের বরাতে জানায়- ২০২১-২২ অর্থবছরে অন্যান্য উপকরণের পাশাপাশি ১৯১ কোটি টাকা খরচ করে ‘ভেহিকল মাউন্টেড ডেটা ইন্টারসেপ্টার-২’ কেনার কথা উল্লেখ আছে। এ নিয়ে তখন দেশে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সময় জিয়াউল আহসান গণমাধ্যমের কাছে ইসরায়েল থেকে আড়ি পাতার যন্ত্র কেনার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ইসরায়েলি আড়ি পাতার যন্ত্র কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, তারা এনটিএমসির কাছে তথ্য চেয়েছেন। তবে এখনো পাননি।

 

আবার একই সময়ে ধরা পড়ে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্যের চিত্র। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পিএস হরুন অর রশীদ বিশ্বাস ও আইজিপি শহীদুল মিলে প্রতি নিয়োগে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে ঘুষ বাণিজ্য করেন। ওই তথ্য পেয়ে যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা। বিষয়টি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আনেন। ওই কর্মকর্তা সম্প্রতি জানান, তিনি যখন হারুনের নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আনেন, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চমকে বলে ওঠেন, ‘কী বলছেন হারুন! না, এটা হতে পারে না।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, দুঃখের বিষয় হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবাক হলেন, মনে করলেন হারুন ঘুষ নিতেই পারেন না। অথচ শেষ পর্যন্ত হারুনের দেওয়া তালিকা ধরেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাগ পেয়েছেন, তা তো বোঝাই যায়। তিনি জানান, হারুনের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ এলেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাঁকে পদোন্নতি দিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে হারুন  উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব, এরপর অতিরিক্ত সচিব হওয়ার সুযোগ পান।

 

তিনি আরও জানান, ওই  সময় হারুনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে  জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও ম্যানেজ করেছিলেন  হারুন। হারুনকে ছায়া দিতেন শহীদুল ও জিয়াউল আহসান। ফলে নিয়োগ বাণিজ্যে শত কোটি টাকার দুর্নীতি করলেও তাঁর কোনো সমস্যা হয়নি।

 

চক্রটি পুলিশের এসপি, ডিআইজি এবং কমিশনার পদে বদলিতেও বিপুল টাকার বাণিজ্য করেছে। পাশাপাশি কারাগারের জেল সুপার ও জেলারদের নিয়োগ, বদলিতেও ছিল তাদের হাত। এমনকি হারুন অর রশীদ বিশ্বাস সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হয়ে চলে যাওয়ার পরও পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে ভূমিকা রাখতেন। জানা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেনদরবার করে ঘুষের অঙ্ক ঠিক করতেন তিনি।

 

সূত্র জানায়, শহীদুল ও জিয়াউলের প্রস্তাব আটকে দেওয়ার পর তখনকার স্বরাষ্ট্রসচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে দিয়ে তাদের অনুগত মোস্তাফা কামাল উদ্দিনকে ওই পদে বসানো হয়। এরপর পুলিশ ও এনটিএমসির কেনাকাটায় আর কোনো বাধা তৈরি হয়নি। পুলিশ ও এনটিএমসিকে ‘খুশি’ রেখে পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। মোস্তাফা কামাল উদ্দিনকে সিনিয়র সচিব হিসেবেও পদোন্নতি  দেওয়া হয়েছিল।

 

কিন্তু গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর রেহাই পাননি মোস্তাফা কামাল উদ্দিন। যুবদল নেতা শামীম মোল্লা হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ। একই চিত্র আইজিপি শহীদুল হক ও জিয়াউল আহসানের। তবে হারুন অর রশীদ বিশ্বাস কোথায় আছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো সূত্র। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেখুন এসব বিষয় নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’

 

কানাডায় বাড়ি : এদিকে আইজিপি শহীদুল হকের শত কোটি টাকার সম্পদের দলিলসহ বিভিন্ন নথি খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে নথিগুলো জব্দ করা হয়। ওই সব নথির মধ্যে জার্মানির বন শহরে থাকা বাড়ির মূল দলিল এবং কানাডার টরন্টোতে থাকা আরেকটি বাড়ির মূল দলিল পাওয়া গেছে। দুদক কর্মকর্তাদের দাবি, জব্দ হওয়া নথিপত্রে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। শহীদুল হক তাঁর সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো আত্মীয়ের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন।

সৌজন্যে – কালের কণ্ঠ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ মানবিক দেশ গড়তে চান তারেক রহমান

» ‘আর কারও যেন মাগুরার শিশুটির মতো করুণ পরিণতি না হয়’

» শেখ হাসিনার ৫৭ বার ফাঁসি হওয়া উচিৎ: আমান

» ‘সৌদি অর্থ দেয়নি, দ্বিগুণের বেশি টাকা ব্যয় প্রতিটি মডেল মসজিদে’

» হাসিনাকে ফেরত চাওয়া চিঠির জবাব এখনো দেয়নি ভারত : মুখপাত্র

» জামায়াত শাপলাকে, আওয়ামী লীগ শাহবাগকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করেছে: মাহফুজ আলম

» সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে মতামত দেবে বিএনপি : সালাহউদ্দিন

» ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : প্রিন্স

» আগের বিচারগুলো হলে আছিয়াকে এভাবে হারাতে হতো না : সারজিস

» ভূমিকম্পে কাঁপল ইতালি, আতঙ্কে রাস্তায় মানুষ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শহীদুল-জিয়াউলে চলতো পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়!

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ও টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক প্রধান জিয়াউল আহসানের কথায় চলতো পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ। তাদের কাজে বাধা দেওয়ায় তখনকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সচিবকে পরিবর্তন করার তথ্যও পাওয়া গেছে।

 

আইজিপি শহীদুল হক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গড়ে তুলেছিলেন নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পিএস হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। ইসরায়েল থেকে আড়ি পাতার যন্ত্রসহ নানা সরঞ্জাম কিনতে হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ আটকে দেওয়াই কাল হয়েছিল তৎকালীন এক স্বরাষ্ট্রসচিবের। শহীদুল, জিয়াউল ও হারুনের কথা না শোনায় ওই স্বরাষ্ট্রসচিবের মেয়াদকাল ছিল মাত্র ৯ মাস। স্বরাষ্ট্রসচিব কে হবেন, তাও নির্ধারণ করে দিতেন শহীদুল ও জিয়াউল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দীর্ঘদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে আইজিপি ছিলেন এ কে এম শহীদুল হক। আর এনটিএমসির প্রধান ছিলেন জিয়াউল আহসান। একই সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পিএস ছিলেন হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। আর র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর আহমেদ। বেনজীর আহমেদও ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন হলেও তারাই ছিলেন হর্তাকর্তা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার হাসিনার সঙ্গে এই সিন্ডিকেটের যোগাযোগ থাকায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের সমীহ করে চলতেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা এর ব্যত্যয় ঘটালে বেশি দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঠিকতে পারতেন না।

 

২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে নিয়োগ পান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সচিব হওয়ার পর পুলিশ ও র‌্যাবের অন্যায্য চাওয়ার প্রতি নজর দেন তিনি। যোগদানের কিছুদিন পর পুলিশ ও র‌্যাবের কেনাকাটার জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রস্তাব যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই সময় সচিবের কাছে মনে হয়- এই কেনাকাটা ২০০ কোটি টাকা দিয়েই সম্ভব। ফলে বেঁকে বসে ওই ফাইলে স্বাক্ষর করেননি তিনি। কাছাকাছি সময়ে এনটিএমসির তৎকালীন প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান এনটিএমসির যন্ত্রপাতি কিনতে এক হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে যান। যার মধ্যে ইসরায়েলের আড়ি পাতা যন্ত্র কেনার প্রস্তাবও ছিল বলে জানা গেছে। ওই প্রস্তাবও আটকে দেন ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

 

ইসরায়েলি আড়ি পাতার যন্ত্র কেনার বিষয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেজের এক রিপোর্টে বলা হয়- সাইপ্রাসে নিবন্ধিত ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের এনটিএমসি নজরদারি প্রযুক্তি কিনেছে। ওই সময় দেশের একটি ইংরেজি দৈনিক হারেজের খবরের সূত্রের বরাতে জানায়- ২০২১-২২ অর্থবছরে অন্যান্য উপকরণের পাশাপাশি ১৯১ কোটি টাকা খরচ করে ‘ভেহিকল মাউন্টেড ডেটা ইন্টারসেপ্টার-২’ কেনার কথা উল্লেখ আছে। এ নিয়ে তখন দেশে ব্যাপক আলোচনা হয়। ওই সময় জিয়াউল আহসান গণমাধ্যমের কাছে ইসরায়েল থেকে আড়ি পাতার যন্ত্র কেনার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ইসরায়েলি আড়ি পাতার যন্ত্র কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, তারা এনটিএমসির কাছে তথ্য চেয়েছেন। তবে এখনো পাননি।

 

আবার একই সময়ে ধরা পড়ে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্যের চিত্র। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পিএস হরুন অর রশীদ বিশ্বাস ও আইজিপি শহীদুল মিলে প্রতি নিয়োগে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে ঘুষ বাণিজ্য করেন। ওই তথ্য পেয়ে যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা। বিষয়টি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আনেন। ওই কর্মকর্তা সম্প্রতি জানান, তিনি যখন হারুনের নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আনেন, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চমকে বলে ওঠেন, ‘কী বলছেন হারুন! না, এটা হতে পারে না।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, দুঃখের বিষয় হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবাক হলেন, মনে করলেন হারুন ঘুষ নিতেই পারেন না। অথচ শেষ পর্যন্ত হারুনের দেওয়া তালিকা ধরেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাগ পেয়েছেন, তা তো বোঝাই যায়। তিনি জানান, হারুনের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ এলেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাঁকে পদোন্নতি দিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে হারুন  উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব, এরপর অতিরিক্ত সচিব হওয়ার সুযোগ পান।

 

তিনি আরও জানান, ওই  সময় হারুনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে  জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও ম্যানেজ করেছিলেন  হারুন। হারুনকে ছায়া দিতেন শহীদুল ও জিয়াউল আহসান। ফলে নিয়োগ বাণিজ্যে শত কোটি টাকার দুর্নীতি করলেও তাঁর কোনো সমস্যা হয়নি।

 

চক্রটি পুলিশের এসপি, ডিআইজি এবং কমিশনার পদে বদলিতেও বিপুল টাকার বাণিজ্য করেছে। পাশাপাশি কারাগারের জেল সুপার ও জেলারদের নিয়োগ, বদলিতেও ছিল তাদের হাত। এমনকি হারুন অর রশীদ বিশ্বাস সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হয়ে চলে যাওয়ার পরও পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে ভূমিকা রাখতেন। জানা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেনদরবার করে ঘুষের অঙ্ক ঠিক করতেন তিনি।

 

সূত্র জানায়, শহীদুল ও জিয়াউলের প্রস্তাব আটকে দেওয়ার পর তখনকার স্বরাষ্ট্রসচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে দিয়ে তাদের অনুগত মোস্তাফা কামাল উদ্দিনকে ওই পদে বসানো হয়। এরপর পুলিশ ও এনটিএমসির কেনাকাটায় আর কোনো বাধা তৈরি হয়নি। পুলিশ ও এনটিএমসিকে ‘খুশি’ রেখে পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। মোস্তাফা কামাল উদ্দিনকে সিনিয়র সচিব হিসেবেও পদোন্নতি  দেওয়া হয়েছিল।

 

কিন্তু গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর রেহাই পাননি মোস্তাফা কামাল উদ্দিন। যুবদল নেতা শামীম মোল্লা হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ। একই চিত্র আইজিপি শহীদুল হক ও জিয়াউল আহসানের। তবে হারুন অর রশীদ বিশ্বাস কোথায় আছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো সূত্র। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেখুন এসব বিষয় নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’

 

কানাডায় বাড়ি : এদিকে আইজিপি শহীদুল হকের শত কোটি টাকার সম্পদের দলিলসহ বিভিন্ন নথি খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে নথিগুলো জব্দ করা হয়। ওই সব নথির মধ্যে জার্মানির বন শহরে থাকা বাড়ির মূল দলিল এবং কানাডার টরন্টোতে থাকা আরেকটি বাড়ির মূল দলিল পাওয়া গেছে। দুদক কর্মকর্তাদের দাবি, জব্দ হওয়া নথিপত্রে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। শহীদুল হক তাঁর সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো আত্মীয়ের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন।

সৌজন্যে – কালের কণ্ঠ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com