লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষক গ্রেপ্তার!

অ আ আবীর আকাশ,লক্ষ্মীপুর  : লক্ষ্মীপুরে আল-মুঈন ইসলামী একাডেমী হেফজ বিভাগের ছাত্র সানিম হোসাইনকে (৭) তুচ্ছ ঘটনায় পিটিয়ে হত্যা করেছে ওই মাদ্রসার শিক্ষক মাওলানা মাহমুদুর রহমান। এর আগের সাপ্তাহে ওই মাদ্রাসায় বলাৎকার করায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিশ হাজার টাকা জরিমানা করে গোপনে তা মিট করা হয়। ছাত্র নির্যাতন, ছাত্র হত্যা করে চুলার উপর উত্তপ্ত ডালে ফেলে দেয়া, জোর করে সাঁতার শিখাতে নিয়ে ডুবে ছাত্রের মৃত্যু হওয়াসহ বলাৎকারের বহু ঘটনা ঘটে। বিগত সরকারের আমলে দলীয় প্রভাবে এসব ঘটনা ধামাছাপা দেয়া হয়।
মাসখানেক আগেও এক নিরীহ ছাত্রকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে বের করে দেয়া হয়। ওই ছাত্রের মা আধুনিক হাসপাতালে আয়ার কাজ করছেন।
ছাত্র হত্যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সানিম হোসাইনকে বেদম প্রহার করে হেফজ বিভাগে শিক্ষক মাওলানা মাহমুদুর রহমান। সানিমের অপরাধ হিসেবে ওই মাদ্রাসা প্রধান বশির আহমেদ জানান, সানিম হুজুরের বিরুদ্ধে বদনাম করেছে। কি ধরনের বদনাম তা বশির আহমেদ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। উপস্থিত জনতা ও সানিমের স্বজনেরা সন্দেহ প্রকাশ করে বলছেন যে, তাহলে কি সানিমকেও বখাটে মাহমুদুর রহমান বলাৎকার করেছে নাকি অন্য ছাত্রকে বলাৎকার করতে দেখেছে? নয়তো কিসের বদনাম করে?
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা অত্র মাদ্রাসা ভাংচুর করতে উদ্যেত হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে অন্যান্য ছাত্রদের অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে যেতে দেখা যায়। সচেতন নাগরিক অত্র মাদ্রসা বন্ধ করে সিলগালা করার দাবী করেন প্রশাসনের কাছে। সে সাথে মাদ্রাসার সুপার কাম পরিচালক বশির আহমেদকে গ্রেপ্তারের দাবী জানান বিক্ষুব্ধ জনতা।
সানিমের মা বিলাপ দিতে দিতে বলেন, সানিমকে গত তিন ধরে ভাত দেয়া হয়নি। তাকে উপোস রাখা হয়েছে। সানিম নাকি হুজুরের বিরুদ্ধে বদনাম করে।  আজ সকালেও সানিমের সাথে ফোনে কথা হইছে, সানিম বলছে তাকে ভাত দেয়া হয়নি। গত সপ্তাহে তাকে মারছে, আমি এসে হুজুরকে ছেলেটা বুঝিয়ে দিয়ে বললাম, আমার ছেলে মানে আপনার ছেলে। ছোট মানুষে তাকে মারবেন না।
ঘটনার দিন সানিমকে দু’দফায় মারধর করার এক পর্যায়ে সানিম মারা যায়। ছোট্ট শিশু সানিমকে মৃত্যুর পর গলায় গামছা পেছিয়ে টয়লেটের ভেন্টিলেটরে ঝুলিয়ে রেখে কয়েকজন ছাত্রকে দিয়ে দরজা খুলতে বলে ঘাতক মাহমুদুর রহমান। এরপর সানিম আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। এসব ঘটনা মাদ্রাসার তিন তলায় ঘটলেও সানিমের মৃতদেহ মাদ্রাসার নিচের তলায় ছোট্ট একটি অন্ধকার কক্ষে নামিয়ে রাখে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ।
উপায়ন্তর মা পেয়ে মাদ্রাসা পরিচালক সানিমের মায়ের কাছ থেকে বাবা হুমায়ুন কবির মাতব্বরের নাম্বার নিয়ে তাকে সানিম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় মাদ্রাসা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোন্নাফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা মাদ্রাসার শিক্ষক ও নিহত সানিমের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
নিহত সানিম রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের কুচিয়ামারা গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির মাতব্বরের ছেলে।
সানিমের ফুফাতো ভাই বকশি মোহাম্মদ শাহেদ হোসাইন বলেন,  সানিম ২০ পারা কোরআনে হাফেজ। ৩-৪ দিন আগে আমাদের কাছে খবর যায় সে নাকি হুজুরের কথা শোনে না, এমনকি হুজুরের নামে বদনাম করে। এনিয়ে হুজুর তার ওপর রেগে ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে খবর পাই সানিম নাকি টয়লেটে ঢুকে গলায় ফাঁস দিয়েছে। মাদ্রাসা এসে সেই হুজুরে কথা জিজ্ঞেস করতে সবাই বলেছে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সানিমের লাশ আমরা টয়লেটে পাইনি। তার লাশ মাদ্রাসার নিচতলার একটি কক্ষে বিছানায় পেয়েছি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যার বিচার চাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রের অপমৃত্যুর খবর পেয়েছি। তার গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের দাগ রয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ১ মাস না যেতেই বদলে গেল ডেসটিনির রফিকুল আমীনের দলের নাম

» ছাত্রদল নেতাকর্মীদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে : নাছির উদ্দীন

» সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাত ৮টার পর বন্ধ থাকবে: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

» জনগণ নির্বাচন চায় তাদের ভাষা বুঝুন, সরকারকে ফারুক

» অনলাইনে দেয়া যাবে ডিএনসিসি’র হোল্ডিং ট্যাক্স

» ছাত্ররা ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে : ড. মঈন খান

» পলাশে এক সঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিলেন এক গৃহ বধূ

» বাগেরহাটে একসাথে অর্ধশত শিশুর জন্মদিন উদযাপন

» লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষক গ্রেপ্তার!

» পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিশক্তি আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ও ভিশনস্প্রিং

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষক গ্রেপ্তার!

অ আ আবীর আকাশ,লক্ষ্মীপুর  : লক্ষ্মীপুরে আল-মুঈন ইসলামী একাডেমী হেফজ বিভাগের ছাত্র সানিম হোসাইনকে (৭) তুচ্ছ ঘটনায় পিটিয়ে হত্যা করেছে ওই মাদ্রসার শিক্ষক মাওলানা মাহমুদুর রহমান। এর আগের সাপ্তাহে ওই মাদ্রাসায় বলাৎকার করায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিশ হাজার টাকা জরিমানা করে গোপনে তা মিট করা হয়। ছাত্র নির্যাতন, ছাত্র হত্যা করে চুলার উপর উত্তপ্ত ডালে ফেলে দেয়া, জোর করে সাঁতার শিখাতে নিয়ে ডুবে ছাত্রের মৃত্যু হওয়াসহ বলাৎকারের বহু ঘটনা ঘটে। বিগত সরকারের আমলে দলীয় প্রভাবে এসব ঘটনা ধামাছাপা দেয়া হয়।
মাসখানেক আগেও এক নিরীহ ছাত্রকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে বের করে দেয়া হয়। ওই ছাত্রের মা আধুনিক হাসপাতালে আয়ার কাজ করছেন।
ছাত্র হত্যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সানিম হোসাইনকে বেদম প্রহার করে হেফজ বিভাগে শিক্ষক মাওলানা মাহমুদুর রহমান। সানিমের অপরাধ হিসেবে ওই মাদ্রাসা প্রধান বশির আহমেদ জানান, সানিম হুজুরের বিরুদ্ধে বদনাম করেছে। কি ধরনের বদনাম তা বশির আহমেদ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। উপস্থিত জনতা ও সানিমের স্বজনেরা সন্দেহ প্রকাশ করে বলছেন যে, তাহলে কি সানিমকেও বখাটে মাহমুদুর রহমান বলাৎকার করেছে নাকি অন্য ছাত্রকে বলাৎকার করতে দেখেছে? নয়তো কিসের বদনাম করে?
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা অত্র মাদ্রাসা ভাংচুর করতে উদ্যেত হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে অন্যান্য ছাত্রদের অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে যেতে দেখা যায়। সচেতন নাগরিক অত্র মাদ্রসা বন্ধ করে সিলগালা করার দাবী করেন প্রশাসনের কাছে। সে সাথে মাদ্রাসার সুপার কাম পরিচালক বশির আহমেদকে গ্রেপ্তারের দাবী জানান বিক্ষুব্ধ জনতা।
সানিমের মা বিলাপ দিতে দিতে বলেন, সানিমকে গত তিন ধরে ভাত দেয়া হয়নি। তাকে উপোস রাখা হয়েছে। সানিম নাকি হুজুরের বিরুদ্ধে বদনাম করে।  আজ সকালেও সানিমের সাথে ফোনে কথা হইছে, সানিম বলছে তাকে ভাত দেয়া হয়নি। গত সপ্তাহে তাকে মারছে, আমি এসে হুজুরকে ছেলেটা বুঝিয়ে দিয়ে বললাম, আমার ছেলে মানে আপনার ছেলে। ছোট মানুষে তাকে মারবেন না।
ঘটনার দিন সানিমকে দু’দফায় মারধর করার এক পর্যায়ে সানিম মারা যায়। ছোট্ট শিশু সানিমকে মৃত্যুর পর গলায় গামছা পেছিয়ে টয়লেটের ভেন্টিলেটরে ঝুলিয়ে রেখে কয়েকজন ছাত্রকে দিয়ে দরজা খুলতে বলে ঘাতক মাহমুদুর রহমান। এরপর সানিম আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। এসব ঘটনা মাদ্রাসার তিন তলায় ঘটলেও সানিমের মৃতদেহ মাদ্রাসার নিচের তলায় ছোট্ট একটি অন্ধকার কক্ষে নামিয়ে রাখে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ।
উপায়ন্তর মা পেয়ে মাদ্রাসা পরিচালক সানিমের মায়ের কাছ থেকে বাবা হুমায়ুন কবির মাতব্বরের নাম্বার নিয়ে তাকে সানিম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় মাদ্রাসা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোন্নাফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা মাদ্রাসার শিক্ষক ও নিহত সানিমের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
নিহত সানিম রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের কুচিয়ামারা গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির মাতব্বরের ছেলে।
সানিমের ফুফাতো ভাই বকশি মোহাম্মদ শাহেদ হোসাইন বলেন,  সানিম ২০ পারা কোরআনে হাফেজ। ৩-৪ দিন আগে আমাদের কাছে খবর যায় সে নাকি হুজুরের কথা শোনে না, এমনকি হুজুরের নামে বদনাম করে। এনিয়ে হুজুর তার ওপর রেগে ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে খবর পাই সানিম নাকি টয়লেটে ঢুকে গলায় ফাঁস দিয়েছে। মাদ্রাসা এসে সেই হুজুরে কথা জিজ্ঞেস করতে সবাই বলেছে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সানিমের লাশ আমরা টয়লেটে পাইনি। তার লাশ মাদ্রাসার নিচতলার একটি কক্ষে বিছানায় পেয়েছি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যার বিচার চাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল হক বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রের অপমৃত্যুর খবর পেয়েছি। তার গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের দাগ রয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com