র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

ফাইল ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সংস্কার কঠিন বলে মনে করে বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সম্প্রতি রিলিজ হওয়া বাৎসরিক রিপোর্টে বলা হয়, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার রোধই নয়, নিরাপত্তা বাহিনী যাতে পরবর্তী সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার না হয়, তা নিশ্চিত করতে এখনই র‌্যাবের বিলুপ্তি ঘটানো জরুরি।

 

নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) রিপোর্টে খোলাসা করেই বলা হয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কাঠামোগত সংস্কার না হলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের কষ্টার্জিত সব অর্জন বৃথা যেতে পারে!

 

রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো পতিত সরকারের আমলে সাধারণ মানুষকে যেভাবে অকারণে হয়রানি করতো এখনও তাতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। সেই বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করা বিদ্যমান আপৎকালীন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়।

 

২০০৪ সালে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠন করা হয়েছিল। এরপর যেসব সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা এই বাহিনীকে এক ধরনের ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে কাজ করিয়েছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, গুম, হত্যা বা ক্রসফায়ারের ঘটনার জন্য র‌্যাবের একটি আলাদা দল রয়েছে। বেশির ভাগ কাজই ওই দল করে। র‌্যাবে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালে তিনি র‌্যাবে যোগ দিয়ে হতবাক হয়েছিলেন। কারণ, একজন প্রশিক্ষক প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে, তিনি ১৬৯টি ক্রসফায়ার পরিচালনা করেছেন।

 

রাজনৈতিক নেতারা যখনই ক্ষমতার বাইরে থাকেন, তখন র‌্যাবের বিলুপ্তির বিষয়ে একমত পোষণ করেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন সরকার র‌্যাবের পাশাপাশি বাহিনীর সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

 

গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদনে র‌্যাবকে বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। র‌্যাবপ্রধান এ কে এম শহীদুর রহমান ইউনিটের গোপন আটক কেন্দ্রের কথা স্বীকার করেন এবং বলেন, অন্তর্র্বতী সরকার ইউনিটটি বিলুপ্তি করে দিতে চাইলে র‌্যাব তা মেনে নেবে।

 

এমন প্রেক্ষাপটে এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘ এবং দাতা সরকারকে সুপারিশ করে বলেছে, র‌্যাব বিলুপ্তি করা হবে শুধু এই শর্তেই যে, র‌্যাবের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা যাতে অন্য ইউনিটে গিয়ে একই অপকর্মের চর্চা করতে না পারেন, সে জন্য তাদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

 

কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে এইচআরডব্লিউ’র জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীন করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তাদের পদোন্নতি থেকে শুরু করে নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। তার মতে, যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, র‌্যাবকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। র‌্যাবকে সংস্কার করা সম্ভব নয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম

» মানুষের আস্থা ফেরাতে নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে : তারেক রহমান

» নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সংকট বাড়বে : নুর

» টস হেরে বরিশালের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ঢাকা

» গণমাধ্যম এখন নজিরবিহীন স্বাধীনতা ভোগ করছে : ড. ইউনূস

» এসএসসির ফরম পূরণের সময় বেড়েছে

» জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবীকে সংবর্ধনা

» ব্র্যাক ব্যাংক প্রিমিয়াম ব্যাংকিং সিনিয়র কাস্টমারদের জন্য অ্যাস্টার ফার্মেসিতে বিশেষ সুবিধা

» বাংলালিংকের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন

» সাড়ে ২৬ ঘণ্টা পর রাজশাহীতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

ফাইল ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সংস্কার কঠিন বলে মনে করে বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সম্প্রতি রিলিজ হওয়া বাৎসরিক রিপোর্টে বলা হয়, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার রোধই নয়, নিরাপত্তা বাহিনী যাতে পরবর্তী সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার না হয়, তা নিশ্চিত করতে এখনই র‌্যাবের বিলুপ্তি ঘটানো জরুরি।

 

নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) রিপোর্টে খোলাসা করেই বলা হয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কাঠামোগত সংস্কার না হলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের কষ্টার্জিত সব অর্জন বৃথা যেতে পারে!

 

রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো পতিত সরকারের আমলে সাধারণ মানুষকে যেভাবে অকারণে হয়রানি করতো এখনও তাতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। সেই বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করা বিদ্যমান আপৎকালীন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়।

 

২০০৪ সালে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠন করা হয়েছিল। এরপর যেসব সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা এই বাহিনীকে এক ধরনের ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে কাজ করিয়েছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, গুম, হত্যা বা ক্রসফায়ারের ঘটনার জন্য র‌্যাবের একটি আলাদা দল রয়েছে। বেশির ভাগ কাজই ওই দল করে। র‌্যাবে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালে তিনি র‌্যাবে যোগ দিয়ে হতবাক হয়েছিলেন। কারণ, একজন প্রশিক্ষক প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে, তিনি ১৬৯টি ক্রসফায়ার পরিচালনা করেছেন।

 

রাজনৈতিক নেতারা যখনই ক্ষমতার বাইরে থাকেন, তখন র‌্যাবের বিলুপ্তির বিষয়ে একমত পোষণ করেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন সরকার র‌্যাবের পাশাপাশি বাহিনীর সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

 

গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদনে র‌্যাবকে বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। র‌্যাবপ্রধান এ কে এম শহীদুর রহমান ইউনিটের গোপন আটক কেন্দ্রের কথা স্বীকার করেন এবং বলেন, অন্তর্র্বতী সরকার ইউনিটটি বিলুপ্তি করে দিতে চাইলে র‌্যাব তা মেনে নেবে।

 

এমন প্রেক্ষাপটে এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘ এবং দাতা সরকারকে সুপারিশ করে বলেছে, র‌্যাব বিলুপ্তি করা হবে শুধু এই শর্তেই যে, র‌্যাবের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা যাতে অন্য ইউনিটে গিয়ে একই অপকর্মের চর্চা করতে না পারেন, সে জন্য তাদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

 

কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে এইচআরডব্লিউ’র জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীন করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তাদের পদোন্নতি থেকে শুরু করে নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। তার মতে, যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, র‌্যাবকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। র‌্যাবকে সংস্কার করা সম্ভব নয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com