ছবি সংগৃহীত
ধর্ম ডেস্ক :শরিয়তসম্মত কারণে কেউ রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম না হলে তার জন্য রোজা না রাখার সুযোগ আছে। যেমন অতিশয় বৃদ্ধ অথবা এমন অসুস্থ যার আরোগ্য হওয়ার আশা করা যায় না, তার জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে ‘ফিদিয়া’ প্রদান করবেন।
ফিদিয়ার বিধান
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, নির্দিষ্ট কয়েক দিন, তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে সে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর রোজা পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। (সুরা বাকারা: ১৮৩-১৮৪)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এ আয়াতটি মানসুখ (রহিত) হয়নি, বরং আয়াতটি ওইসব অতিশয় বৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা রোজা পালনে অক্ষম। তারা প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাওয়াবেন।’ (সহিহ বুখারি: ৪৫০৫)
গ্রহণযোগ্য আলেমদের মতে, ফিদিয়া কেবল তাদের বেলায় এবং ওই সময় আদায় করা যাবে, যখন রোজার কাজা আদায়ে আশা থাকে না। তা বার্ধক্যের কারণে হতে পারে কিংবা এমন রোগের কারণে হতে পারে যা থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।’ (সুরা বাকারা: ১৮৪) এখানে কষ্ট হয় থেকে উদ্দেশ্য হলো, যাদের জন্য রোজা পালন কষ্টসাধ্য। (আল মাওসুআহ আল ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা-১১৭)
আল্লামা ইবনে কুদামাহ (রহ.) বলেছেন, ‘অতিশয় বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী এবং রোগমুক্তির আশা করা যায় না এমন মানুষ, যাদের জন্য রোজা পালন কঠিন ও কষ্টসাধ্য তাঁরা রোজা পালন না করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাওয়াবেন। তারা যদি মিসকিন খাওয়াতেও অক্ষম হন তবে তাদের ওপর কোনো কিছু বর্তাবে না।’ (আলমুগনি, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা-৩৯৬) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।’ (সুরা বাকারা: ২৮৬)
ফিদিয়ার পরিমাণ কত
রোজার ফিদিয়ার বিষয়ে কোরআনে এসেছে, ‘আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া—একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৪)
প্রত্যেক রোজার জন্য ফিদিয়ার ন্যূনতম পরিমাণ হলো- প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে দু’বেলা খাবার খাওয়ানো কিংবা এমন কোনো ব্যক্তিকে দু’বেলা খাবারের মূল্য সদকা করা। মূল্য দিয়ে ফিদিয়া দিতে চাইলে যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের মূল্য হিসাবেই ফিদিয়া আদায় করতে হবে। ফিদিয়া আদায়ের পর কেউ যদি কখনও সুস্থ হয়ে যান তাহলে ওই রোজাগুলো তিনি কাজা করে নেবেন। (বুখারি: ৪৫০৫; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদিনাহ: ১/২৫৫; আলমুহিতুল বুরহানি: ৩/৩৫৯, ৩৬১; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/২৬৫; মুখতারাতুন নাওয়াজিল: ১/৪৫৯, ৪৬৪; ফাতহুল কাদির: ২/২৭৭; আলবাহরুর রায়েক: ২/২৮৬; রদ্দুল মুহতার: ২/৪২৭)
দরিদ্ররা ফিদিয়া দেবে কীভাবে
ফিদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই। তবে দারিদ্র্যের দরুন ফিদিয়া দিতে একেবারেই অক্ষম হলে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে। পরে কখনো সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদিয়া আদায় করে দেবে। (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৫/৪৫৫)
ফিদিয়া যাদের দেওয়া যাবে
ফিদিয়ার হকদার গরিব-মিসকিনরা, যারা জাকাতের হকদার। ফিদিয়া কোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠান যেখানে জাকাতের হকদার আছে, সেখানেও দেওয়া যাবে। (আল ইনায়াহ: ২/২৭৩) সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম