রেশমা আক্তার :কুঁড়েঘর
এই এইটুকু নিতো বসতবাড়ির কুঁড়ে ঘরখানি
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাস যার ঘুণ পোকার।
হৃদয়ে জরাজীর্ণ জোড়াতালি
পাজরে এফোঁড় ওফোঁড় বহুবার।
নিদান বরষাকালে, শতছিদ্রে জল পড়ে
থরথর কাঁপে প্রাণ, চালাখানি নড়বড়ে
ফোঁটা ফোঁটা মোহজমে, পাত্রে-অপাত্রে।
ব্যথা জাগে, ঘোলা চোখে ঘোর লাগে
আসে না বসন্তের লিলুয়া বাতাস, ভাঙা ঘরে।
তবু, ভরা পূর্ণিমার রাতে
আলোয় ভাসে ঘর, যত ছিদ্র তত পথে।
বিমূর্ত রাতের আলিঙ্গনে নেশা ধরে, আর
বিস্ময়ে বিদগ্ধ গৃহী বিমুগ্ধ চেয়ে দেখে
একা নয়নে, আরও একজনা নিশি জাগে
আসমানে গরবিনী চাঁদ সে, কী অপূর্ব !
ভেসে থাকে হৃদয়ে নিয়ে তার আজন্ম ক্ষত।
কলঙ্ক বুকে নিয়েও ছড়ায় আলো বিশ্বচরাচরে।
মানে নেই
এইযে ফিরে যেতে যেতে ফিরে দেখা
এর কোনো মানে নেই।
ভুলেতে চেয়ে চেয়ে এই যে ঝুলে থাকা
খানিক খুনসুটি, ভালোবাসা
আবার আশায় বাঁধা বাসা
বলছি, এর কোনো মানে নেই।
এই যে বন্ধ চোখে ভাবা
হারিয়ে গেছি বেশ
এই যে মরে গিয়ে স্বস্তি, বিরহ অস্বস্তি
এই যে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে
আবার জড়িয়ে থাকা।
এই যে উত্তুরে হাওয়া দক্ষিণ দিকে ধাওয়া,
এই যে সকাল-সন্ধ্যা মনের মাঝে বুদবুদ
দোলাচল অদ্ভুত।
এই যে অকাল-কার্তিকে
পৌষের শীতে কাঁপা
কোনো মানে আছে?
জানি মানে নেই, কোনো মানে নেই।
পিছু ডাকতে নেই
পিছু ডাকতে নেই।
চেয়ে দেখো,
শরতের দেবীও চলে গেছে বিসর্জনে
থেমে গেছে ঢাকের ডামাডোল
দীর্ঘ রাতের পর, আসন্ন পাতাঝরা দিন।
পথের দিকে তাকিয়ে চোখগুলো
কেমন বিষণ্ণ নিদ্রাহীন।
তবু তুমি ডাকলে বলেই
তীব্র দাবদাহে পোড়া দুচোখে
বৃষ্টি এলো, আবার।
নীরবতার অন্ধগলিতে
ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরলো
জমা মেঘ।
ভিজলো মাটি, জন্মালো
প্রতীক্ষার অবদমিত দূর্বাঘাস।
বন্ধ কপাট খুলে ফিরে এলো
অন্ধগাঙচিল, ব্যথার পূর্বাভাস।
বিবাগী স্রোতে ভেসে ভেসে
ফিরে এলো বিস্মৃত শব্দকণা।
অথচ ভেবেছিলাম, ফিরবো না।
নিথর সমুদ্রে যাবো পুণ্যস্নানে
ধুয়ে নেবো কিছু জন্মান্ধ পাপ
স্তব্ধ, বোবা আবেগে ডুব দিয়ে।
আর
পাথর হৃদয় সেচে খুঁজে আনবো
কিছু প্রবাল, কান্না
বিষাদের হীরা-পান্না।
চলে যাবো সুদীর্ঘ শীতঘুমে।
তুমি কেন পিছু ডাকলে?
জানো না, পিছু ডাকতে নেই।