ছবি সংগৃহীত
রূপকথার স্নো হোয়াইট, রুপাঞ্জেল কিংবা সিন্ড্রেলা হওয়ার শখ ছিল কমবেশি সব মেয়েরই। কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর আমরা বুঝতে পারলাম যে এগুলো রূপকথার গল্প। সেখানকার রাজকন্যারাই এমন জীবনযাপন করে। তবে গল্প অবাস্তব হলেও রূপকথার যেসব দুর্গ, শহর আছে তার অস্তিত্ব আছে বাস্তবেই।
ঘুমন্ত রাজকন্যার দুর্গ
সেই ঘুমন্ত রাজকন্যার গল্প নিশ্চয়ই এখনো মনে আছে। যাকে ডাইনি অভিশাপ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল। এক রাজপুত্র এসে তার মাথায় সোনার কাঠি ছুঁইয়ে ঘুম ভাঙিয়েছিল। সেই রাজকন্যার প্রাসাদের মতো দেখতে একটি প্রাসাদ রয়েছে বাস্তবেই। জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিম বাভারিয়ার হোহেনশওনগাউ গ্রামে দেখা পাওয়া যায় সেই দুর্গেই। যার নাম নিউশোয়ানস্টাইন ক্যাসেল সেখানকার পাথুরে খাঁড়া পাহাড়ের উপরে রয়েছে বাভারিয়ার রাজা দ্বিতীয় লুডভিগের তৈরি করেন এই ক্যাসেল। অনেকেই বলেন ডিজনিল্যান্ড তৈরির আগে ওয়াল্ট ডিজনি স্বয়ং লুডভিগ রাজার প্রাসাদে গিয়েছিলেন। সেই প্রাসাদের আদলেই তার ডিজনিল্যান্ডে ঘুমন্ত রাজকন্যার প্রাসাদটি বানান তিনি।
বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্টের দেশ
বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্টের সেই সাজানো নীলচে শহর আছে বাস্তবেই। ফ্রান্সের কোলমার শহরেই নাকি বাস করত রূপকথার বিউটি আর বিস্ট। আসলে অনেকের বিশ্বাস ওয়াল্ট ডিজনির বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্টের শহরটি তৈরি হয়েছিল ফ্রান্সের কোলমার শহরের অনুপ্রেরণায়। শহরের কাঠের তৈরি কটেজ, প্যাস্টেল রঙা স্টোরফ্রন্ট এবং মধ্যযুগীয় দুর্গ, লিটল ভেনিসের ধার জুড়ে সাজানো রঙিন ফুলের ঝারের রেখা,পাথুরে রাস্তা সবই মনে করিয়ে দেবে বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্টের কাহিনিকে।
সান্তাক্লজের বাড়ি
ফিনল্যান্ডের রোভানিমিকে বলা হয় সান্তাক্লজের শহর। এখানেই নাকি সান্তা থাকে। বিশ্বের নানা দেশের পর্যটক এখানে ছুটি কাটাতে যান। বরফ পানিতে মাছ ধরেন, বরফের মেঝেতে স্কিইং এবং হাইকিং করে দিন কাটান। এখানে বছরের ছয় মাস দিন আর ছয় মাস রাত। নজরে আসে বিস্ময়কর মেরুজ্যোতি। রূপকথার গল্পে তো সান্তাকজকে তো এমনই এক তুষার ঢাকা দেশ থেকেই তার গাড়িতে করে আসেন পৃথিবীতে।
কাউন্ট ড্রাকুলার দুর্গ
ড্রাকুলা বা ভ্যাম্পায়ারের অস্তিত্ব পৃথিবীতে আছে কি না তা কেউ নিশ্চিত নয়, তবে রূপকথার এক শক্তিশালী চরিত্র এটি। কত ভ্যাম্পারের গল্প শুনে মানুষ তাদের উপর রাগ করেছে, আবার দয়ালু, উপকারী ভ্যাম্পারকে মনের অজান্তেই ভালোবেসেছে তার হিসাব নেই। তবে বাস্তবে মধ্য ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী এবং সাংস্কৃতিক অঞ্চল ট্রান্সিলভেনিয়াকে বলা হয় ভ্যাম্পায়ারের শহর। গল্প অনুযায়ী, এই শহরেই নাকি বাস করতেন ভ্যাম্পায়ারদের রাজা কাউন্ট ড্রাকুলা। শহরের বিখ্যাত ব্র্যান ক্যাসলটি আজও ড্রাকুলার দুর্গ হিসেবে পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
স্নো হোয়াইট, সাত বামনের বাড়ি
ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ডে, তুষারে প্রায় সারা বছর ঢেকে থাকে। শীতের সময় তুষার এত ঘন যে, দেখে মনে হবে গাছগুলো হয়তো আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। এই স্থানে রয়েছে ছোট্ট ছোট্ট তুষার ঘর। দেখলে মনে হতেই পারে বামনদের বসবাস বুঝি এখানে। ধারণা করা হয় এটিই হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের মাস্টারপিস দ্য স্নো কুইন এর ল্যান্ডস্কেপ।
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ডেনিশ শহরের ওডেনসে একজন মুচি এবং একজন ধোপা নারীর সংসারে জন্ম নেন অ্যান্ডারসন। ভয়ানক দারিদ্র্যের মধ্যে তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে অ্যান্ডারসন বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তিনি উচ্চ এবং পরাক্রমশালী ব্যক্তিদের বাড়িতে কাজ নেন।
তবে তার লেখক হয়ে ওঠার গল্পের শুরু এখানেই। তার লেখা বিখ্যাত রূপকথার গল্প স্নো কুইনের প্রেক্ষাপট তিনি তার নিজের বাড়িটিকেই ভেবেছিলেন। যে বাড়ি তিনি ১৪ বছর বয়সে ছেড়ে এসেছেন। সেই তুষার, আর তুষারের মধ্যে থাকা তুষার ঘর, যেগুলোকে বলা যায় কুঁড়ে ঘর, সেই স্মৃতি কখনো ভুলতে পারেননি অ্যান্ডারসন। তাই তো নিজের লেখায় সেই স্মৃতি বাঁচিয়ে রেখেছেন যুগের পর যুগ।
সূত্র: ম্যাটাডর নেটওয়ার্ক, টাইমস অব ইন্ডিয়া