রাজধানী ঢাকার সড়কে রাতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। কোনো ধরনের পূর্ব নির্দেশনা ছাড়াই আটকে দেয়া হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো। এতে সড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নগরবাসীকে দীর্ঘ সময় যানজটের মধ্যে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেক যানবাহনকে বিকল্প রাস্তা ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। চালক ও যাত্রীরা বলছেন, দিনের বেলাতে যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ। এখন রাতেও কিছু না জানিয়ে রাস্তা বন্ধ করার কারণে তাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হচ্ছে। তাদের জন্য রাতের ঢাকায় নেমে আসছে দুর্ভোগ।
সরজমিনে রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, মগবাজার, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, আগারগাঁও, মিরপুরসহ বেশকিছু এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেট্রোরেলের কাজের জন্য প্রতিদিন রাত ১১ টার পর থেকে রাজধানীর এসব পয়েন্ট আটকে দেয়া হয়। বিষয়টি যানবাহন চালকদের জানা না থাকায় তারা ওই সময়ে এসব এলাকায় এসে বিড়ম্বায় পড়েন। এতে বাধ্য হয়ে চালকদের অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে হয়। তবে রাস্তা বন্ধ করার পর এসব পয়েন্টে কিংবা বিকল্প রাস্তাগুলোতে কোনো ট্রাফিক পুলিশ না থাকার কারণে বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চলাচল শুরু করে। এতেই এসব পয়েন্ট ঘিরে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে রাতেও দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
তারা জানান, রোজায় দিনে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে। রাতের বেলা রাস্তা একটু ফাঁকা থাকায় সবাই স্বস্তিতে গন্তব্যে ফিরতে পারেন। অথচ এখন রাতেও তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চালক-যাত্রীরা মনে করেন, মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তা বন্ধ করার প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই আগে থেকে জানানো উচিত। তাহলে তাদের এসব পয়েন্টে এসে ফিরে যেতে হবে না। আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে পারবেন। রাতে যানজটের সমস্যাও তৈরি হবে না।
সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১১টায় বাংলা মোটর মোড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে সোনারগাঁও হোটেলের অভিমুখ থেকে বাংলামোটর মোড় পর্যন্ত সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সকল যানবাহন বিপরীত লেন দিয়ে আসা-যাওয়া করে। উল্টোদিক দিয়ে বাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় জ্যামে পড়া পাঠাও চালক সাখাওয়াত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রাত ১২টার সময়ও রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে শান্তি নেই। প্রায় প্রতিদিনই জ্যামে পড়তে হয়। বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে হলেও অনেক পথ ঘুরে যেতে হবে।
একই সমস্যা দেখা গেল শাহবাগ মোড়েও। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শাহবাগ থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড় পর্যন্ত বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সামনের সড়কটি। এতে বারডেম হাসপাতালের সামনের সড়কটি দিয়ে চলছে সকল ধরনের যানবাহন। ফলে বারডেম হাসপাতালের গেট ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে তীব্র যানজট তৈরি হতে দেখা যায়। এই লেনে জ্যামে পড়া প্রাইভেটকার চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, মাঝে-মধ্যেই এই সড়ক দিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। উল্টো পথ দিয়ে যাওয়ার কারণে প্রায় প্রতিদিনই জ্যামে পড়তে হয়। উল্টো পথ দিয়ে না গেলে বাসায় ফিরতে অনেক পথ ঘোরা লাগবে। এজন্য জ্যাম হলেও এই পথ দিয়েই যাই। তিনি বলেন, দিনের বেলার জ্যাম সয়ে গেছে। কিন্তু রাতে যখন জ্যাম পায়, তখন খুবই কষ্ট লাগে। ঢাকা শহরে থাকতে আর ভালো লাগে না।
কাওরান বাজার থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে নীলক্ষেতে যাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফজলুল হক। তিনি রাত ১২টার দিকে বাংলামোটর পর্যন্ত যাওয়ার পর দেখেন শাহবাগ যাওয়ার রাস্তা আটকে দেয়া হয়েছে। পরে সেখান থেকে কাঁটাবনের দিকে ঘুরে যেতে যানজটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। ফজলুল বলেন, হঠাৎ করে এভাবে রাস্তা বন্ধ করার তো কোনো মানে নেই। এখানে সব গাড়ি এসে জড়ো হয়েছে। এখন গাড়ি ঘোরানোর মতোও কোনো অবস্থা নেই। এই জট কখন ছুটবে কে জানে। এমন একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে ফার্মগেট মোড়, আগারগাঁও থেকে তালতলা, শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর-১০ এবং মিরপুর সাড়ে এগারোতেও। বিশেষ করে তালতলা থেকে কাজীপাড়া এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই রাতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। মিরপুর ১১ নম্বর স্টেশন এলাকায়ও রাতে যখন- তখন সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন পাশের সরু সড়কে বাস ও ট্রাক প্রবেশ করায় পুরো এলাকায় স্থবিরতা দেখা দেয়। তখন কর্মস্থল ফেরত মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সড়কে দায়িত্বরত মেট্রোরেল কর্মীরা জানান, প্রায় প্রতিদিনই মেট্রোরেলের কাজের কারণে একটি লেন বন্ধ রাখা হয়। তখন একই লেন দিয়ে গাড়ি চলে। মাঝে-মধ্যে কিছুটা জ্যাম দেখা যায়। তবে অধিকাংশ সময়ই জ্যাম থাকে না। এত রাতে রাস্তায় তো গাড়ি কম থাকে। সূএ:মানবজমিন