রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাদারীপুরের কৃষকলীগ নেতা মানিক সরদার (৩৮) নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ১০টার দিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে রাত ৮টার দিকে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের পালরদী নদীর পাড়ে মানিককে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে দুর্বৃত্তরা।
নিহতের পরিবারের দাবি, গেলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মানিক সরদারকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ।
নিহত মানিক সরদার জেলার কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামের আলমগীর সরদারের ছেলে। তিনি কালকিনি উপজেলা কৃষকলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
নিহত মানিক সরদারের বোন তাসলিমা বেগম জানান, মানিক সরদার সোমবার রাত ৮টার দিকে কালকিনির ফাঁসিয়াতলা বাজার থেকে ওয়াজ মাহফিলের অনুদান সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি পালরদী নদীর পাশ দিয়ে আসার সময় মুখোশধারী ৮ থেকে ১০ জন দুর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ফেলে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে পালিয়ে যায়। এসময় মানিকের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে।
পরে তার পরিচয় জেনে কালকিনি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১০টার দিকে আবাসিক চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাসলিমা বেগম বলেন, ‘গেলো আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মানিক সরদার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাহেদ পারভেজের পক্ষে কাজ করেছেন। তার বিরোধীপক্ষ ছিল সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান মিলন সরদার। পূর্বপরিকল্পিতভাবে মানিক সরদারকে হাফিজুর রহমান মিলন সরদার তার লোকজন দিয়ে হত্যা করেছে। এ নির্মম হত্যার বিচার দাবি করছি। নিহত মানিক সরদারের দুই ছেলে ও স্ত্রী আছে। তারা কিভাবে চলবে, আমরা হত্যার বিচার চাই।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে মানিক সদরকারকে আনলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তিনি মারা গেছেন। কী কারণে মারা গেলেন, তা ময়নাতদন্ত করলেই বের হবে। আপাতত তার ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে মৃতদেহ রাখা আছে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকেই আলীনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান মিলন সরদার বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে। তার বাড়িতে কোনো লোকজনও পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে আলীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেদ পারভেজ বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমার বিরোধীপক্ষ মিলন সরদার জড়িত। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল, আমার কর্মীদের হত্যা করবে। এ ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি আমার আরো অন্যান্য কর্মীদের হত্যা করবেন বলেও আশঙ্কা করছি। তিনি রাতের আঁধারে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগে তাকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) চাইলাউ মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির, কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসতিয়াক আসফাক রাসেলসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
চাইলাউ মারমা বলেন, ‘ঘটনার পরেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মৃতদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। মৃতদেহের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, দুবৃর্ত্তরা পরিকল্পিতভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়েছে। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। নিহতের পরিবার মামলা দিলে মামলা আমলে নেয়া হবে।,