রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ‘টার্গেট’ করে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল সুব্রত বাইনের

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ‘টার্গেট’ করে হামলা চালিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার বাহিনীর। এছাড়াও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর কমান্ডো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। রিমান্ডে জেরার মুখে এসব তথ্য জানিয়েছে সুব্রত নিজেই। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

 

‘র’-এর হয়ে সে দুবাই এবং নেপালেও দায়িত্ব পালন করেছে। বাংলাদেশেও সে একাধিকবার টার্গেট মিশন নিয়ে কাজ করেছে। যুক্তরাজ্যে থাকা একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যার মিশনও তাকে দিয়েছিল সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

সুব্রতর সঙ্গে থাকা অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ফোন সম্পর্কেও তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। ফোনটি মোল্লা মাসুদের মাধ্যমে সুব্রত বাইনের কাছে পাঠিয়েছিল ‘র’। এছাড়া বাংলাদেশে কথিত আয়নাঘরে আটক থাকা অবস্থায় বিশেষ প্রয়োজনে সুব্রত বাইনকে দূরবর্তী টার্গেটকে লক্ষ্য করে আঘাতের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

 

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দুপুরে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সুব্রত বাইন এবং তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে। ভারতের বিশেষ দুটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল কি-না এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুব্রত প্রথমে নীরব থাকে। এক পর্যায়ে সে জানায়, ‘র’-এর হয়ে নেপাল ও দুবাইয়েও দায়িত্ব পালন করেছে। বাংলাদেশে হত্যার মিশনের বিষয়টি কৌশলে এড়ানোর চেষ্টা করছে সুব্রত বাইন। তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্নবাণে সে আরও অনেক লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০১ সালে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে তৎকালীন সরকার। এরপর সুব্রত বাইন তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে সে যশোর আসত। যশোরের বেজপাড়া এলাকায় সে একটি বাসা ভাড়া নেয়। ওই বাসাটি স্থানীয় লাল্টু তাকে ভাড়া করে দিয়েছিল। ওই বাসায় সুব্রত বাইনের দ্বিতীয় স্ত্রী বিউটি এবং তিন সন্তান থাকত। যশোরে বসে চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে সুব্রত বাইন আবার কলকাতায় চলে যেত।

 

সুব্রত বাইনকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করলে তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয়। দার্জিলিংয়ে পড়ালেখার সুবাদে ভারতের প্রশাসনে জয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় সে সুব্রত বাইনকে জেল থেকে বের করে। জেল থেকে বের হওয়ার পর কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার এসকে চক্রবর্তী জয়, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে ডেকে পাঠান। তখন থেকে এই তিনজনের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক হয়। ‘র’-এর কর্মকর্তারা সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ ও তাদের অপর সহযোগী মধু বাবুকে ভারতের উত্তর ও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেন।

 

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে আমরা যাচাই বাছাই করছি।

 

২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ অনুরোধে কলকাতায় থাকা সন্ত্রাসীদের আটকের অভিযান শুরু হয়। তখন কলকাতার সিআইডি কর্মকর্তা রাজিব কুমার সুব্রত বাইনকে গ্রেফতারের জন্য বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সুব্রত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে ও সহায়তায় আলী মোহাম্মদ নামে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে প্রথমে সিঙ্গাপুর এবং পরে চীনে গিয়ে থিতু হয়। সেখানেও সুব্রত বাইন ‘র’-এর তত্ত্বাবধানেই ছিল।

 

চীনে ‘র’-এর খুব বেশি তৎপরতা না থাকায় সুব্রত বাইন দুবাই পাড়ি জমায়। সেখানে তাকে বিলাসবহুল ভিলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকেও পাঠানো হয়। তাদের দুবাইতে পলাতক ভারতীয় মোস্ট ওয়ান্টেড ইব্রাহিম মোশতাক আব্দুল রাজ্জাক মেমন ওরফে টাইগার মেমনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়। টার্গেট ছিল টাইগার মেমনের মাধ্যমে মাফিয়া লিডার দাউদ ইব্রাহিমের নেটওয়ার্কে ঢোকার। তবে এই মিশনে সফল হতে পারেনি সুব্রত বাইন। পরে ‘র’-এর পরামর্শে সুব্রত বাইন নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। পরে কলকাতায় তার বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে এসটিএফ (স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) তাকে গ্রেফতার করে।

 

২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা এসটিএফ সুব্রত বাইনকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করে। তাকে নিয়ে আসা হয় র‌্যাব সদর দপ্তরে। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। সুব্রতকে নতুন টার্গেট দিয়ে বলা হয় কাজ সফল করতে পারলে পরিবারসহ তাকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে। সুব্রত রাজি হলে তাকে র‌্যাব কার্যালয়ের ভেতরেই একটি কক্ষে রাখা হয়। তাকে দূরবর্তী টার্গেটকে লক্ষ্য করে আঘাতের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্নাইপার রাইফেলের ব্যবহার, মুভিং টার্গেটকে গুলি করার আগে বাতাসের গতি, আর্দ্রতা, দূরত্ব-এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে ট্রেনিং চলতে থাকে।

 

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুব্রত বাইনের সঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও ‘র’-এর এক কর্মকর্তা দেখা করেন এবং টার্গেট যুক্তরাজ্যে বসবাসরত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা বলে অবহিত করেন। তারা সুব্রতকে পাকিস্তানি পাসপোর্টে লন্ডন পাঠানোর কথা বলে এবং লন্ডনে মিশনটি সম্পন্ন করার জন্য যা যা সহায়তা লাগবে তা কূটনৈতিক চ্যানেলে প্রদান করা হবে বলে সুব্রতকে নিশ্চিত করেন।

 

কাজ হবার পর সুব্রত ও তার পরিবারকে ভারতীয় পাসপোর্টে (আলী মোহাম্মদ নামে) কানাডায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে-এ বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তারা আরও জানায়, এ কাজের ব্যাপারে সরকারের (তৎকালীন) সর্বোচ্চ পর্যায়ের আগ্রহ আছে এবং সর্বোচ্চ মহলের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই পাঠানো হবে। তার বেশভূষায় যেন পাকিস্তানি বলে মনে হয় এ ব্যাপারেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২৪-এর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হাসিনা সরকারের পতন ও হাসিনা পালানোর পর সুব্রত বাইনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই সুব্রত বাইন প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে ‘র’-এর সঙ্গে। সুব্রতকে সহায়তা করতে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ফোনসহ পাঠানো হয় মোল্লা মাসুদকে। আর এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে পলাতক আওয়ামী শীর্ষ নেতাদের যোগাযোগের মাধ্যম হয় নেপালে পলাতক আরেক সন্ত্রাসী লেদার লিটনের। সূএ : বার্তাবাজার  ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাংলাদেশের পাট গবেষণায় আগ্রহ চীনের

» ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে মামুনুল হকের দল খেলাফত মজলিস

» আ.লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই: আমানউল্লাহ আমান

» ‘নির্বাচনের দাবিকে ভারতীয় এজেন্ডা হিসেবে প্রচার বিপজ্জনক’- জোনায়েদ সাকি

» দেশের মানুষ সংস্কার নয়, দ্রুত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

» ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সেনাবাহিনীর স্পষ্ট অবস্থান এবং কার্যক্রম দেখতে চাই’ : সারজিস

» ফ্যাসিস্ট বিদায় করার পর বিএনপিকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে:জয়নুল আবদিন

» অসুস্থ মানুষকে নিয়ে এভাবে নিউজ করতে পারে, প্রশ্ন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবের

» ইশরাকের শপথ সংক্রান্ত আদেশের কপি পেল ইসি, এখন কমিশন কার্যকর ব্যবস্থা নেবে

» নির্বাচন আগওে হতে পারে, ৩০ জুনের পরে যাবে না: প্রেস সচিব

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ‘টার্গেট’ করে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল সুব্রত বাইনের

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ‘টার্গেট’ করে হামলা চালিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার বাহিনীর। এছাড়াও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর কমান্ডো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। রিমান্ডে জেরার মুখে এসব তথ্য জানিয়েছে সুব্রত নিজেই। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

 

‘র’-এর হয়ে সে দুবাই এবং নেপালেও দায়িত্ব পালন করেছে। বাংলাদেশেও সে একাধিকবার টার্গেট মিশন নিয়ে কাজ করেছে। যুক্তরাজ্যে থাকা একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যার মিশনও তাকে দিয়েছিল সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

সুব্রতর সঙ্গে থাকা অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ফোন সম্পর্কেও তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। ফোনটি মোল্লা মাসুদের মাধ্যমে সুব্রত বাইনের কাছে পাঠিয়েছিল ‘র’। এছাড়া বাংলাদেশে কথিত আয়নাঘরে আটক থাকা অবস্থায় বিশেষ প্রয়োজনে সুব্রত বাইনকে দূরবর্তী টার্গেটকে লক্ষ্য করে আঘাতের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

 

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দুপুরে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সুব্রত বাইন এবং তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে। ভারতের বিশেষ দুটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল কি-না এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুব্রত প্রথমে নীরব থাকে। এক পর্যায়ে সে জানায়, ‘র’-এর হয়ে নেপাল ও দুবাইয়েও দায়িত্ব পালন করেছে। বাংলাদেশে হত্যার মিশনের বিষয়টি কৌশলে এড়ানোর চেষ্টা করছে সুব্রত বাইন। তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্নবাণে সে আরও অনেক লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০১ সালে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে তৎকালীন সরকার। এরপর সুব্রত বাইন তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে সে যশোর আসত। যশোরের বেজপাড়া এলাকায় সে একটি বাসা ভাড়া নেয়। ওই বাসাটি স্থানীয় লাল্টু তাকে ভাড়া করে দিয়েছিল। ওই বাসায় সুব্রত বাইনের দ্বিতীয় স্ত্রী বিউটি এবং তিন সন্তান থাকত। যশোরে বসে চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে সুব্রত বাইন আবার কলকাতায় চলে যেত।

 

সুব্রত বাইনকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করলে তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয়। দার্জিলিংয়ে পড়ালেখার সুবাদে ভারতের প্রশাসনে জয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় সে সুব্রত বাইনকে জেল থেকে বের করে। জেল থেকে বের হওয়ার পর কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার এসকে চক্রবর্তী জয়, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে ডেকে পাঠান। তখন থেকে এই তিনজনের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক হয়। ‘র’-এর কর্মকর্তারা সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ ও তাদের অপর সহযোগী মধু বাবুকে ভারতের উত্তর ও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেন।

 

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে আমরা যাচাই বাছাই করছি।

 

২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ অনুরোধে কলকাতায় থাকা সন্ত্রাসীদের আটকের অভিযান শুরু হয়। তখন কলকাতার সিআইডি কর্মকর্তা রাজিব কুমার সুব্রত বাইনকে গ্রেফতারের জন্য বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সুব্রত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে ও সহায়তায় আলী মোহাম্মদ নামে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে প্রথমে সিঙ্গাপুর এবং পরে চীনে গিয়ে থিতু হয়। সেখানেও সুব্রত বাইন ‘র’-এর তত্ত্বাবধানেই ছিল।

 

চীনে ‘র’-এর খুব বেশি তৎপরতা না থাকায় সুব্রত বাইন দুবাই পাড়ি জমায়। সেখানে তাকে বিলাসবহুল ভিলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকেও পাঠানো হয়। তাদের দুবাইতে পলাতক ভারতীয় মোস্ট ওয়ান্টেড ইব্রাহিম মোশতাক আব্দুল রাজ্জাক মেমন ওরফে টাইগার মেমনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়। টার্গেট ছিল টাইগার মেমনের মাধ্যমে মাফিয়া লিডার দাউদ ইব্রাহিমের নেটওয়ার্কে ঢোকার। তবে এই মিশনে সফল হতে পারেনি সুব্রত বাইন। পরে ‘র’-এর পরামর্শে সুব্রত বাইন নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। পরে কলকাতায় তার বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে এসটিএফ (স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) তাকে গ্রেফতার করে।

 

২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা এসটিএফ সুব্রত বাইনকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করে। তাকে নিয়ে আসা হয় র‌্যাব সদর দপ্তরে। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। সুব্রতকে নতুন টার্গেট দিয়ে বলা হয় কাজ সফল করতে পারলে পরিবারসহ তাকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে। সুব্রত রাজি হলে তাকে র‌্যাব কার্যালয়ের ভেতরেই একটি কক্ষে রাখা হয়। তাকে দূরবর্তী টার্গেটকে লক্ষ্য করে আঘাতের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্নাইপার রাইফেলের ব্যবহার, মুভিং টার্গেটকে গুলি করার আগে বাতাসের গতি, আর্দ্রতা, দূরত্ব-এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে ট্রেনিং চলতে থাকে।

 

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুব্রত বাইনের সঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও ‘র’-এর এক কর্মকর্তা দেখা করেন এবং টার্গেট যুক্তরাজ্যে বসবাসরত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা বলে অবহিত করেন। তারা সুব্রতকে পাকিস্তানি পাসপোর্টে লন্ডন পাঠানোর কথা বলে এবং লন্ডনে মিশনটি সম্পন্ন করার জন্য যা যা সহায়তা লাগবে তা কূটনৈতিক চ্যানেলে প্রদান করা হবে বলে সুব্রতকে নিশ্চিত করেন।

 

কাজ হবার পর সুব্রত ও তার পরিবারকে ভারতীয় পাসপোর্টে (আলী মোহাম্মদ নামে) কানাডায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে-এ বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তারা আরও জানায়, এ কাজের ব্যাপারে সরকারের (তৎকালীন) সর্বোচ্চ পর্যায়ের আগ্রহ আছে এবং সর্বোচ্চ মহলের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই পাঠানো হবে। তার বেশভূষায় যেন পাকিস্তানি বলে মনে হয় এ ব্যাপারেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২৪-এর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হাসিনা সরকারের পতন ও হাসিনা পালানোর পর সুব্রত বাইনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই সুব্রত বাইন প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে ‘র’-এর সঙ্গে। সুব্রতকে সহায়তা করতে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ফোনসহ পাঠানো হয় মোল্লা মাসুদকে। আর এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে পলাতক আওয়ামী শীর্ষ নেতাদের যোগাযোগের মাধ্যম হয় নেপালে পলাতক আরেক সন্ত্রাসী লেদার লিটনের। সূএ : বার্তাবাজার  ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com