মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আজ দেশের সাধারণ নাগরিকের কোনো অধিকার নেই, কোনো সম্মান নেই। সব অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। অথচ স্বাধীনতা-উত্তর দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল স্বাধীন দেশে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাবে, সম্মান পাবে। বাকস্বাধীনতা পাবে, ন্যায়বিচার পাবে। জান-মাল, ইজ্জত-আবরু এবং জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। অর্থনৈতিক সাম্য ও রুটি-রুজির নিশ্চয়তা পাবে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পাবে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, স্বাধীনতা-পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের স্বপ্ন গলা টিপে হত্যা করেছে। সবাই জনগণের সঙ্গে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণমানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশ শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করেছে। জনগণের সব মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং সুদ ও ঘুষকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শাসক শ্রেণির এহেন কর্মকান্ডের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। গোটা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। জনতাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। জাতিকে নেশাগ্রস্ত করে স্বার্থ হাসিলের পাঁয়তারা চলছে। দেশ আর এভাবে চলতে পারে না।
গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ৯৫ শতাংশ। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৯২ শতাংশ। চালের দাম দ্বিগুণ হয়েছে, আটার দাম বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। ৪৩ শতাংশ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য খাবারের ব্যয় কমাতে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে নিম্নতম মজুরি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে। আইএলও জানিয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি হারে প্রকৃত নিম্নতম মজুরি কমেছে বাংলাদেশে।
সরকার প্রায়ই দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার নানা চমকপ্রদ তথ্য দেয়। কিন্তু সিপিডির এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা মালয়েশিয়ার একজন শ্রমিকের চেয়ে কম বেতন পেয়েও তাদের চেয়ে বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনছে ঢাকার শ্রমিকরা। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে ঢাকার একজন শ্রমিককে। এ দাম বাড়ার কারণ মূলত কৃত্রিম। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই দাম বাড়ে বলে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে। দ্রব্যমূল্যের এ লাগামহীন বৃদ্ধি দেশে খাদ্যভাবের হুমকি সৃষ্টি করছে। লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধাপেটে ঘুমাতে যাচ্ছে। খাবারের জন্য খাদ্যের ট্রাকের পেছনে মানুষ দৌড়াচ্ছে।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরগুলো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ মদের ওপর, তা পানকারীর ওপর, যে পান করায় তার ওপর, যে বিক্রি করে তার ওপর, যে তা নিষ্কাশন করে এবং যার আদেশে নিষ্কাশন করে তার ওপর আর যে ব্যক্তি তা বহন করে এবং যার কাছে পৌঁছে দেয়, সবার ওপর।’ (আবু দাউদ)।
৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০২২’ নামক মদসহায়ক একটি বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিধিমালা পড়লে যে কারও মনে হবে সরকার দেশে মদ ও অ্যালকোহল আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ, বিপণন ও ক্রয়-বিক্রয় এবং সংরক্ষণের দুয়ার উন্মুক্ত করতে চাইছে।
গেজেটে বলা হয়েছে, ‘২১ বছরের ঊর্ধ্বের যে কেউ শর্ত সাপেক্ষে মদপানের আবেদন করতে পারবে।’ এর অর্থ হলো, ২১ বছরের ওপরের সবার জন্যই মদপান করার বৈধতা দেওয়া।
জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত মদকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার এ বিধিমালা আমাদের সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। ফলে ৯২% মুসলমানের দেশে ইসলাম কর্তৃক হারাম এবং আমাদের সংবিধান কর্তৃক নিষিদ্ধ মদের ব্যবহার সহজ করে এমন কোনো বিধিমালা মেনে নেওয়া হবে না।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে এইচএসসি পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়াবলি থেকে ইসলাম শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মানবিক বিভাগ ছাড়া বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও অন্যান্য বিভাগে ইসলাম শিক্ষাকে ঐচ্ছিক বিষয়ও রাখা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা ইসলাম শিক্ষার আগ্রহ হারাচ্ছে।
মাধ্যমিক স্তরে যতটুকু ইসলাম শিক্ষা রাখা হয়েছে তাতেও ইসলামকে খন্ডিত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর উচ্চশিক্ষায় ইসলাম শিক্ষা সম্পূর্ণই বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি হলো, শিক্ষার সর্বস্তরেই ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাধীনতার প্রধান প্রেক্ষাপট ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নিরীহ ওলামায়ে কিরামসহ হাজার হাজার নাগরিককে কেবল রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে বিনা বিচারে কারান্তরিন করে রাখা দুর্ভাগ্যজনক। দেশের রাজনীতি সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন দরকার। শুধু একটি ভালো নির্বাচন হলেই দেশ ঠিক হয়ে যাবে না। অতীতে এমন বহু নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত দুই ধরনের স্বৈরাচারই দেখেছে। ঘুরে-ফিরে সেসব স্বৈরাচারী শক্তিকে আবার ক্ষমতায় বসালে দেশে অশান্তি আরও বাড়বে। জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাবে না। জনগণের অধিকার ফিরে পেতে হলে, দেশকে ভালো করতে হলে, দুর্নীতি, দুঃশাসনমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে ভালো নেতার অধীনে ভালো নীতির বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। কিন্তু বিগত দিনে দেশ শাসনের ভালো নীতি ও পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়নি। ভালো নেতা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হয়নি। ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থে বারবার সংবিধানে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। নিজেদের বানানো সংবিধানের দোহাই দিয়ে বারবার কৃত্রিমভাবে জাতীয় সংকট সৃষ্টি করেছে। অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সংবিধানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
দেশের মানুষ আজ আতঙ্কিত। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরাও আজ চিন্তিত। দেশময় সংঘাত আর সহিংসতার অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদে একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করার পর থেকেই রাজনৈতিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আমরা বারবার রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দাবি জানিয়ে আসছি। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিকসমাজের প্রতিনিধি সংকট সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলে এলেও, কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচনব্যবস্থাই ধ্বংস করে ফেলেছে। বিগত ১৩ বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোয়ও জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। ক্ষমতাসীনরা তাদের দলীয় লোকদের নির্বাচিত করার জন্য হেন কাজ নেই যা করেনি। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন কেউই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। ফলে নির্বাচনকে মানুষ এখন প্রহসন ও তামাশা মনে করে। আগামীতে মানুষ আর তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না।
ক্ষমতাসীনরা আগামীতেও জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চায়। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং আবারও ২০১৪ ও ২০১৮-এর মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে। আমরা বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চাই।
আমরা আমাদের এ প্রিয় দেশকে ভালোবাসি। আমরা দেশে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে চাই। আমরা মানুষকে স্বস্তি ও নিরাপত্তা দিতে চাই। আমরা ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা মানুষের মানবীয় ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চাই। আমরা প্রতিহিংসা, জিঘাংসা আর ধ্বংসের রাজনীতির চির-অবসান চাই। আমরা দেশের সব নাগরিকের শান্তিপূর্ণ ভ্রাতৃপ্রতিম সহাবস্থান চাই। আমরা দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে চাই। আর এজন্য আমরা কালজয়ী আদর্শ ইসলামের আলোকে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই।
বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষ আজ বুঝতে পারছে ইসলাম ছাড়া তাদের মুক্তির কোনো পথ নেই। এ দেশের মানুষ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম চায় বলেই আজ দেশে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
ইসলাম নিয়ে সমাজের মানুষের মধ্যে এখনো কিছু ভুল ধারণা আছে। অনেকের ধারণা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রের সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাবে। অন্য ধর্মের মানুষ তাদের অধিকার হারাবে। নারীরা গৃহবন্দি হবে। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে যাবে। যারা ইসলাম প্রসঙ্গে এসব ভুল ধারণা নিয়ে আতঙ্কিত তাদের আশ্বস্ত করে আমি বলতে চাই- রাষ্ট্রে ইসলাম বিজয়ী হলে মানুষের প্রয়োজনে রাষ্ট্রে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সব বহাল থাকবে। রাষ্ট্রের যে যে-ই অবস্থানে কর্মরত আছে সে সেখানেই থাকবে; কারও ওপর কোনো অন্যায় করা হবে না। তবে কেউ দুর্নীতি করতে পারবে না, কেউ রাষ্ট্রেীয় সম্পদ অপচয় করতে পারবে না। কেউ জনগণকে হয়রানি করতে পারবে না। রাষ্ট্রে অন্য ধর্মের লোকজন আরও বেশি সুবিধা ভোগ করবে। তাদের ধর্ম-কর্মের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তাদের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে। তারা রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে।
রাষ্ট্রে ইসলাম বিজয়ী হলে নারীরা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হবে। সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধায় নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বিস্তৃত ও আরও নিরাপদ করা হবে। এক কথায় রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষের জন্য এবং রাষ্ট্রের জন্য যা কল্যাণ তার কিছুই পরিবর্তন করা হবে না। মানুষের জন্য যা অকল্যাণ এবং দেশের জন্য যা ক্ষতিকর তা-ই শুধু পরিবর্তন করা হবে।
ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা যেখানে মানুষের জন্য শুধু কল্যাণই রয়েছে। আমরা এ কল্যাণ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করি। আসুন আমরা কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি নিয়মতান্ত্রিক গণমুখী রাজনৈতিক দল। যে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ইসলামী আন্দোলন প্রস্তুত।
অতীতে যারা দেশ শাসন করেছে জনগণের কাছে তাদের নতুন কিছু বলার নেই। মানুষ তাদের কর্মকান্ড দেখেছে। তাদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান- আপনারা অন্যায়-অবিচার আর জুলুমকারীদের বর্জন করুন। দুর্নীতিবাজদের চিরতরে প্রত্যাখ্যান করুন। ন্যায় ও কল্যাণের পক্ষে অবস্থান নিন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলনকে শক্তিশালী করুন।
দেশে সর্বস্তরের ওলামা-মাশায়েখ, অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলামী সংগঠন এবং সব মতের ইসলামপন্থির প্রতি বিশেষ আহ্বান- আসুন আমরা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি না করে ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নেওয়ার জন্য একটি কার্যকর ও টেকসই ঐক্য গড়ে তুলি। আমরা যদি কার্যকর এবং ফলপ্রসূ ঐক্য গড়ে তুলতে পারি তাহলে ঐক্যবদ্ধ ইসলামী শক্তিই হবে এ দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। আর আল্লাহ যদি আমাদের কবুল করেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারি তাহলে দেশে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা হবে। দুর্নীতি উৎখাত করা হবে। প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার পরিবর্তে সমঝোতা ও সহনশীলতার রাজনীতির বিকাশ ঘটবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা হবে। সুদ, ঘুষ ও অপচয় বন্ধ করা হবে। মাদক, চাঁদাবাজি উৎখাত করব। নারী নির্যাতন ও মানব পাচার প্রতিরোধ করব। দ্রব্যমূল্য মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে রাখতে সিন্ডিকেটবাজি বন্ধ করা হবে। সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। দলীয়করণ বন্ধ করা হবে। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতি গ্রহণ করা হবে। সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমাব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করব। বেকারত্ব দূর করব এবং কৃষক-শ্রমিকসহ সব শ্রমজীবী ও পেশাজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।
নারীসামাজের প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে-পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা করা হবে। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কায়েম ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশকে উন্নতি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বে একটি উন্নত ও মডেল কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে ইনশা আল্লাহ।
এ স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা মানবতার মুক্তিদূত প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং সোনালি যুগের খোলাফায়ে রাশেদার রাষ্ট্রদর্শন অনুসরণ করব ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের তৌফিক দান করুন।
স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এবং সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রস্তাব :
১. যে কোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ২. দেশে মদ ও সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩. শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে। ৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৫. শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিক্যবাদী সব ধর্মবিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপচা ডারউইনের থিওরি বাদ দিতে হবে। ৬. কারান্তরি সব মজলুম আলেম ও রাজবন্দির মুক্তি দিতে হবে। ৭. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ৮. সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। ৯. তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। ১০. নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সব সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ১১. দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। ১২. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। ১৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (PR) নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। ১৪. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। ১৫. সব রাজনৈতিক দলের জন্য সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সব রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।
লেখক : পীর চরমোনাই। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন