মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন : ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ করেন। সে সময় আমি সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। কালক্ষেপণ না করে ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নিলাম রাষ্ট্রদূতের পদ ত্যাগ করার। যিনি আমাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি ক্ষমতায় নেই বিধায় আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই। গণতান্ত্রিক রীতি সমুন্নত রাখার জন্যই ছিল আমার এ সিদ্ধান্ত। তখন সৌদি আরবে বিকাল ৪টা। আমি টেলিফোনে আমার স্ত্রী ডালিয়াকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানালাম এবং বললাম আমার বাসায় ফিরতে দেরি হবে। ইতোমধ্যে আমার পদত্যাগপত্র সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের দফতরে পৌঁছানোর পর চারদিক থেকে টেলিফোন আসছিল বিষয়টি জানার জন্য। সৌদি রয়েল অথরিটি, বিশেষ করে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি টেলিফোনে আমার কাছ থেকে জানতে চান পদত্যাগের কারণ। আমি অত্যন্ত মোলায়েম ভাষায় তাঁকে জানালাম, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি সমুন্নত রাখার জন্য আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ যিনি আমাকে তাঁর কাছে পরিচয় প্রদানের মুহূর্ত থেকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন, যখনই তাঁর সঙ্গে দেখা হতো তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার লিডার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কথা বলতেন। আরাফাত ময়দানে জিয়া-ট্রি লাগানো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা অকপটে বলতেন। পরিচয়পত্র প্রদানের সময় বিভিন্ন দেশের আমরা ১৬ জন রাষ্ট্রদূত রয়েল প্যালেসে উপস্থিত ছিলাম। বিকাল ৫টায় পরিচয়পত্র প্রদান কর্মকান্ড শুরু হলো। সেখানে ভারতের নবাগত মান্যবর রাষ্ট্রদূত হামিদ আনসারি, পাকিস্তানের নবাগত রাষ্ট্রদূত আহমদ আমিনসহ আমরা ১৬ জন একই রুমে বসেছিলাম পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য। পরিচয়পত্র প্রদান শেষে পাশের একটি বিশাল হলঘরে আমাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিল। একে একে ১৫ জন রাষ্ট্রদূত তাঁদের পরিচয়পত্র প্রদান শেষে ১-২ মিনিটের মধ্যে হলরুমে অপেক্ষা করলেন। আমি ছিলাম সবার শেষে। আগের ১৫ জন প্রত্যেকে পরিচয়পত্র প্রদান করে ২ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে চলে আসেন। আমার ডাক পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি বাদশাহর হাতে পরিচয়পত্র প্রদানের সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাদশাহকে বলা শুরু করলাম যে আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দল বিএনপির নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একজন কর্মী। এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে মহামান্য বাদশাহ আমাকে তাঁর বুকে টেনে নিলেন। তারপর বলতে শুরু করলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান Is an well respected brother of Saudi Arabia. মহামান্য বাদশাহ ম্যাডাম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা থেকে শুরু করে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে খোঁজখবর আমার কাছ থেকে নেন। এদিকে সারা সৌদি আরবের টেলিভিশনে আমার পরিচয়পত্র প্রদানের মুহূর্তটি ১১ মিনিট গুরুত্বসহকারে প্রচার করা হয়েছিল। আমি মহামান্য বাদশাহর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তিনি বললেন ঈদের দিন তাঁর বাসভবনে যাওয়ার জন্য। সৌদি টেলিভিশন এও গুরুত্বসহকারে প্রচার করল। আমি যে-ই মাত্র পরিচয় প্রদান শেষে পাশের হলরুমে গেলাম; যে ১৫ জন রাষ্ট্রদূত পরিচয়পত্র প্রদান শেষে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা উৎসুক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এত দেরি হওয়ার কারণ কী? এর মধ্যে পরবর্তীতে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন যিনি সেই রাষ্ট্রদূত হামিদ আনসারিসহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আহমদ আমিন উৎসুকভরে বাদশাহর সঙ্গে আমার ১১ মিনিট কী আলাপ হয়েছিল তা জানতে চাইলেন। যাক, প্রায় আধঘণ্টা পর মহামান্য বাদশাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, চিফ অব রয়েল প্রটোকলসহ হলে প্রবেশ করলেন। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে মহামান্য বাদশাহকে সম্মান জানালাম। ইতোমধ্যে চিফ অব রয়েল প্রটোকল আমার কাছে এসে মহামান্য বাদশাহর একটি বার্তা আমাকে বললেন। আমার এ লেখার প্রারম্ভিক অংশ অর্থাৎ আমার বিদায়বেলার ঘটনা জানাতে চাই অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারে। ২৩ জুন, ১৯৯৬ আমার পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত টেলিফোনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই প্রায় বিকাল ৫টার দিকে। তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন অন্য রাষ্ট্রদূত যাঁরা বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিকভাবে নিয়োজিত তাদের কী সিদ্ধান্ত? বললাম, আমি লন্ডনের হাইকমিশনার ড. এ এফ এম ইউসুফসহ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা বলেছেন, ‘দেখি আমরা একটু অপেক্ষা করি।’ ইতোমধ্যে আমার পদত্যাগের খবর সৌদি টেলিভিশনে ফলাও করে প্রচার হয়। এ খবরের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অত্যন্ত হতাশাভরে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানালেন আমাকে। যাক, আমি আসল ঘটনায় চলে আসি। কারণ এটাই হলো আমার মুখ্য বিষয়।
আবুল হাসান চৌধুরী আমাকে বললেন, আগামীকাল (২৫ জুন) আপনার সঙ্গে আমি আবার কথা বলব। প্রয়োজনে নেত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। ২৫ জুন চৌধুরী আবার সৌদি সময় সকাল ১০টায় আমাকে জানালেন বাংলাদেশের নবনির্বাচিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার দায়িত্বকালীন সৌদি আরবে যেতে চান এবং সেজন্য আপনাকে রিয়াদ থেকে জেদ্দা যেতে হবে। তখন সৌদি বাদশাহ জেদ্দায় অবকাশে ছিলেন। আমি তাঁকে স্পষ্টভাবে বললাম, আমাকে যিনি সৌদি আরবের মতো দেশে রাষ্ট্রদূত করে পাঠিয়েছেন তাঁর অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই করতে পারব না। তিনি বললেন, আগামীকাল আমি আবারও আপনার সঙ্গে কথা বলব। আমি সেদিন সন্ধ্যার দিকে আমার নেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে ব্যাপারটি জানালাম। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে আমাকে বললেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সৌদি আরবে গেলে আপনি যে যে ব্যবস্থা নিতেন বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তাঁর কণ্ঠে এ রকম দৃঢ় নির্দেশ পাওয়ার পর আমি একটু হতচকিত হয়ে গেলাম এবং বললাম, আমি আপনার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করব। তাঁর সঙ্গে আমার কথোপকথনের সময় আমি একটু আবেগাপ্লুত হলাম এজন্য যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকে রিসিভ করার কথা, এখন আরেকজনকে করতে হচ্ছে। আমার জন্য এটা ছিল অস্বস্তিকর। আমি ম্যাডামকে আভাস দিলাম, আমি কতটুকু করতে পারব জানি না তবে আপনার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করব। এই কয়েক মিনিটের আলাপ-আলোচনায় আমি নিজেকে আবেগতাড়িত অবস্থায় সামলে নিলাম। এ সিদ্ধান্ত তাঁর কাছ থেকে পাওয়ার পর একটু আশ্চর্যান্বিত হলাম যে ম্যাডাম খালেদা জিয়া কত বিশাল হৃদয়ের নেত্রী। এ ধরনের একটি অসাধারণ অকল্পনীয় সিদ্ধান্তের জন্য তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এবং তাঁর নেতৃত্বের কোনো মৃত্যু হবে না। এর কিছুক্ষণ পর আমি আমার রিয়াদস্থ ডেপুটি চিফ অব দ্য মিশনের ডিফেন্স অ্যাটাচি, প্রেস অ্যাটাচিদের বললাম, আগামীকাল আমি বাংলাদেশের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে রিসিভ করার জন্য জেদ্দায় থাকব সেখানে মহামান্য সৌদি বাদশাহ ও তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং আমার বন্ধুবর চিফ অব রয়েল প্রটোকল জেদ্দায় অবস্থানরত আছেন।
সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের দূতাবাসের সর্বস্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রাতারাতি আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে গেলেন। তাঁদের আচার-ব্যবহারে অন্যরা খুব দুঃখ পেলেন। আমি নিজের কথা নাই-বা বললাম। শুধু প্রেস অ্যাটাচি হানিফ সাহেব, লেবার অ্যাটাচি কামালউদ্দিন সাহেব যিনি ছাত্রজীবনে জগন্নাথ কলেজে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, যাঁকে আমি আমার সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত আতাউর রহমান সাহেবকে বাদ দিয়ে লেবার অ্যাটাচি করেছিলাম তিনি শতভাগ সততার সঙ্গে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি ছাড়া আর সবাই যখনই শুনলেন আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য জেদ্দায় যাব, তখন বিজলির মতো সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হলো। এই তো সেই তথাকথিত বাঙালি চরিত্র। ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দল পাল্টানো। কিছুক্ষণ পর বেলা ১২টার দিকে বন্ধুবর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টেলিফোনে জানালেন, ‘আপনি রিয়াদ থেকে জেদ্দা যাচ্ছেন তো?’ আমার জেদ্দা যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁকে না বলে আমি বললাম, একটি কারণে আমি জেদ্দায় যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আমার ম্যাডাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি এলে যে রকম অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করতাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও সে রকম ব্যবস্থা করার। যেন ত্রুটি না হয়। যাতে তিনি বুঝতে পারেন আমি কাকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠিয়েছি। কায়সার ভাই আমার কথা শুনে উল্লাসে ফেটে পড়েন। তখন আমি তাঁকে বললাম, তবে একটি শর্ত আছে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ফারুক সোবহানকে বাদ দিতে হবে। তাঁকে বাদ দেওয়ার পেছনে একটা কারণ ছিল, সেটা নাই বা উল্লেখ করলাম। তিনি ৫ মিনিটের মধ্যে আমাকে বললেন যে, তাঁকে ড্রপ করা হয়েছে। তাঁকে বললাম, আমি আজই জেদ্দার উদ্দেশে যাত্রা করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভ্যর্থনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে আমি কায়সার ভাইকে বললাম, আপনি নিশ্চয়ই বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ ওমর বারি সাহেবের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ আদায় করছেন। তিনি হো হো করে হাসলেন। বললেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত তাঁকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি মীর নাছির রাষ্ট্রদূত থাকা অবস্থায় সৌদি আরব যেতে চান তাহলে তিনি চমৎকার ব্যবস্থা করতে পারবেন।
এত দিন পর বিষয়টার অবতারণা করলাম দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে। আমার নেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভ্যর্থনার ব্যাপারে আমাকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। একইভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের শেষ প্রান্তে শতাধিক কূটনীতিকের উপস্থিতিতে সংবর্ধনা সমাবেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার এ সফর সফল করার জন্য রাষ্ট্রদূত মীর নাছির যে অবদান রেখেছেন তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ আমরা দুজনই মঞ্চে ছিলাম। সংবর্ধনা সমাবেশ শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রামের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ওমর ফারুক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহগামী হিসেবে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আপনি এ কী চমক দেখালেন!
সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার সঙ্গে যে হৃদয়ের বিশালতা, উদারতা, আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ করেছিলেন তাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার সঙ্গে কথা বলার চেয়েও ভাইয়ের মতো হৃদয়স্পর্শী আচরণ করেছেন। তাঁর সমস্ত কর্মসূচি সফল বাস্তবায়ন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিশেষ করে তাঁর স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াকে আমার কাছে রেখে বললেন তিনি ১০ দিন আপনার সঙ্গে থাকবেন। খাওয়াইয়া মোটা করে দেবেন। আজ তিনি নেই। মনের স্মৃতিতে তিনি চির-অম্লান থাকবেন আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছি। সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর পক্ষ থেকে যেভাবে আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ছিলেন আমি তাঁর কয়েকজন সিনিয়র সদস্যকে বলেছিলাম, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা শুরু হবে। আজকের মতো তখনো বিএনপি ছিল বিরোধী দল। অথচ আমি বিএনপি নেতা হিসেবে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার নির্দেশ আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা বাস্তবায়নে কার্পণ্য করিনি। তিনি বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। এ ধরনের চিন্তাধারা অব্যাহত থাকলে সরকারি দল বিরোধী দল একসঙ্গে কাজ করতে পারবে। দেশের খাতিরে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে এক হওয়া যাবে।
অতীতের স্মৃতি রোমন্থন অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমাকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন দিয়ে তা এক ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করা হয়! ফলে টয়লেটের সামনে কাটাতে হয়েছে দেড় বছর। আমার সেদিন সৌদি আরবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা, সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহারের কথা মনে পড়ছিল। যেখানে কোর্ট কর্তৃক আমাকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছিল সেখানে মাগরিবের নামাজের সময় আমার বিছানা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে টয়লেটের সামনে থাকতে হলো। ইদানীং সরকারের পক্ষ থেকে ম্যাডাম খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক। ম্যাডাম খালেদা জিয়ার একজন কর্মী হিসেবে আমার রক্তক্ষরণ হয় অধঃপতিত অবস্থা দেখে। তা বন্ধের জন্য সবাইকে বিনীতভাবে বলব, রুচিশীল বক্তব্য যতটা গ্রহণযোগ্য ও ক্ষুরধার হয়, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ততটুকু আত্মঘাতী হয়। যেখানে ম্যাডাম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি অবস্থায় জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে, সেখানে তাঁর সম্পর্কে ক্ষমতাসীনদের অশোভন বক্তব্য তাঁদের নিজেদের জন্যও সম্মানজনক নয়।
লেখক : সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত এবং মেয়র । সূূূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন