যে ছবি কাঁদাল সবাইকে

চকরিয়ার ডুলাহাজারায় ৮ ফেব্রুয়ারি পিকআপচাপায় নিহত পাঁচ বাবাকে গতকাল শেষ বিদায় জানিয়েছে তাদের অবুঝ শিশু সন্তানরা। এজন্য তিন শিশুকে ভিন্ন ধরনের পোশাক পরিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আনা হয়। ছোট্ট এই কোমলমতি শিশুদের দেখে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়েছেন। শেষ বিদায় অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল হৃদয়বিদারক। গতকাল দুপুরে সরেজমিন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাসিনাপাড়ায় গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় এ করুণ দৃশ্য। মৃত ডা. সুরেশ চন্দ্র সুশীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, উঠানো মৃত পাঁচ ভাই অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও স্মরণ সুশীলের বাঁধানো ছবি সুন্দরভাবে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন হিসেবে সাজানো হয় এসব ছবি। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনুষ্ঠানে আসেন তাদের স্বজনরা। বাবাহারা ছোট্ট শিশুদের একনজর দেখতেও ছুটে আসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন।

 

এলাকার সোয়াজেনিয়া হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা ও পাড়ার নেতা ডাক্তার উদয়ন শর্মা বলেন, এক পরিবারের একসঙ্গে পাঁচভাই নিহত ও তিন ভাইবোন আহত হওয়ার ঘটনা কখনো দেখিনি। তাদের পরিবারের ওপর এমন দুদর্শা নেমে আসবে কল্পনাও করতে পারছি না।

 

স্বামী-সন্তান হারানো মৃণালিনী বালা সুশীল মানু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমায় ছেড়ে সবাই চলে গেছে, বাকি যেই দুই ধন (সন্তান) বেঁচে আছে, অন্তত তাদের যাতে বাঁচাতে পারি- সেই জন্য সরকারের কাছে আকুল মিনতি করছি।’

 

ওই দুর্ঘটনায় আহত মৃণালিনী বালা সুশীলের আরেক সন্তান রক্তিম সুশীল ও ছোট মেয়ে হীরা সুশীল এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। তাদের মধ্যে রক্তিম সুশীলের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার ছোট বোন হীরা রানী সুশীলও চকরিয়ার মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর সবার ছোট প্লাবন সুশীল অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। ঠিকঠাক মতো কথাও বলতে পারছে না। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আর্থিকভাবে দারুণ সংকটে পড়েছে পরিবার।

 

উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মৃত ডা. সুরেশ চন্দ্র সুশীলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে ক্ষুদান্ন দান করতে গিয়ে ঘাতক সবজি বোঝাই পিকআপের চাপায় ঘটনাস্থলে নিহত হন পাঁচ ভাই। এ সময় আহত হন দুই ভাই ও এক বোন। জীবিত ফিরে আসেন মুন্নি রানী সুশীল। এ ঘটনার পর দিন পুলিশ ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহলের একটি পাহাড়ি এলাকা থেকে ঘাতক পিকআপকে জব্দ করে। ওই ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি মামলাও হয়। কিন্তু চারদিন অতিবাহিত হলেও চালক-হেলপারকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।  তবে, ওই ঘাতক পিকআপের চালক-হেলপারকে আটক করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) শাফায়েত হোসেন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ড. ইউনূসকে ডি-লিট ডিগ্রি দেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

» আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সেলিনা ইসলাম পাপুল গ্রেপ্তার

» রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী নন জোবাইদা রহমান

» সেলাই করা খোলা মুখ আর কত নির্যাতনের শিকার হবেন চিকিৎসকরা

» এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত আইপিএল

» যেসব দেশে হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ কিংবা ব্যবহার সীমিত

» ভারতের ৩৬ স্থানে ৪০০ ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, দাবি দিল্লির

» শিশুদের গ্রীষ্মকালীন রোগ বালাই

» শ্বাসকষ্ট : সমস্যা ফুসফুসের নাকি হৃৎপিণ্ডের?

» মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেল থেকে পালানোা আসামি গ্রেফতার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

যে ছবি কাঁদাল সবাইকে

চকরিয়ার ডুলাহাজারায় ৮ ফেব্রুয়ারি পিকআপচাপায় নিহত পাঁচ বাবাকে গতকাল শেষ বিদায় জানিয়েছে তাদের অবুঝ শিশু সন্তানরা। এজন্য তিন শিশুকে ভিন্ন ধরনের পোশাক পরিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আনা হয়। ছোট্ট এই কোমলমতি শিশুদের দেখে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়েছেন। শেষ বিদায় অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল হৃদয়বিদারক। গতকাল দুপুরে সরেজমিন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাসিনাপাড়ায় গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় এ করুণ দৃশ্য। মৃত ডা. সুরেশ চন্দ্র সুশীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, উঠানো মৃত পাঁচ ভাই অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও স্মরণ সুশীলের বাঁধানো ছবি সুন্দরভাবে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন হিসেবে সাজানো হয় এসব ছবি। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনুষ্ঠানে আসেন তাদের স্বজনরা। বাবাহারা ছোট্ট শিশুদের একনজর দেখতেও ছুটে আসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন।

 

এলাকার সোয়াজেনিয়া হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা ও পাড়ার নেতা ডাক্তার উদয়ন শর্মা বলেন, এক পরিবারের একসঙ্গে পাঁচভাই নিহত ও তিন ভাইবোন আহত হওয়ার ঘটনা কখনো দেখিনি। তাদের পরিবারের ওপর এমন দুদর্শা নেমে আসবে কল্পনাও করতে পারছি না।

 

স্বামী-সন্তান হারানো মৃণালিনী বালা সুশীল মানু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমায় ছেড়ে সবাই চলে গেছে, বাকি যেই দুই ধন (সন্তান) বেঁচে আছে, অন্তত তাদের যাতে বাঁচাতে পারি- সেই জন্য সরকারের কাছে আকুল মিনতি করছি।’

 

ওই দুর্ঘটনায় আহত মৃণালিনী বালা সুশীলের আরেক সন্তান রক্তিম সুশীল ও ছোট মেয়ে হীরা সুশীল এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। তাদের মধ্যে রক্তিম সুশীলের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার ছোট বোন হীরা রানী সুশীলও চকরিয়ার মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর সবার ছোট প্লাবন সুশীল অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। ঠিকঠাক মতো কথাও বলতে পারছে না। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আর্থিকভাবে দারুণ সংকটে পড়েছে পরিবার।

 

উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মৃত ডা. সুরেশ চন্দ্র সুশীলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে ক্ষুদান্ন দান করতে গিয়ে ঘাতক সবজি বোঝাই পিকআপের চাপায় ঘটনাস্থলে নিহত হন পাঁচ ভাই। এ সময় আহত হন দুই ভাই ও এক বোন। জীবিত ফিরে আসেন মুন্নি রানী সুশীল। এ ঘটনার পর দিন পুলিশ ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহলের একটি পাহাড়ি এলাকা থেকে ঘাতক পিকআপকে জব্দ করে। ওই ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি মামলাও হয়। কিন্তু চারদিন অতিবাহিত হলেও চালক-হেলপারকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।  তবে, ওই ঘাতক পিকআপের চালক-হেলপারকে আটক করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) শাফায়েত হোসেন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com