সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : ট্রুং মি লান, ভিয়েতনামের একজন ধনকুবের। ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় দেশটির নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল তার। দেশটির আবাসন খাতের অন্যতম শীর্ষ এই ব্যবসায়ী এবার আপিলেও হেরে গেলেন। মঙ্গলবার লানের আপিল আবেদনটি খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত। ফলে এই মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকল।
ট্রুং মি লান, আবাসন কোম্পানি ভান থিন ফাত হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারপারসন। গত এপ্রিলে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষ গ্রহণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। শুধু ভিয়েতনাম নয়, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক জালিয়াতির মামলা হিসেবে তার এই মামলাকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে এখনও মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ আছে ৬৮ বছর বয়সী এই নারীর। ভিয়েতনামের আইন অনুযায়ী, ট্রুং মি লান যদি আত্মসাৎ করা অর্থের ৭৫ শতাংশ ফেরত দেন, তবে তার সাজা কমে যাবজ্জীবন হতে পারে।
মঙ্গলবার আদালত বলেন, ট্রুং মি লানের মৃত্যুদণ্ড কমানোর কোনও ভিত্তি নেই। অবশ্য আত্মসাৎকৃত অর্থের তিন–চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৯০০ কোটি ডলার ফেরত দিলে এখন তিনি মৃত্যুদণ্ড এড়াতে পারবেন। তবে এখনও তার সামনে একটি সুযোগ আছে। তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে সাধারণ ক্ষমা চাইতে পারেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিচারকাজ চলার সময় ট্রুং মি লান কখনও কখনও উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন। তবে সাজার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিককালে আপিল শুনানি চলার সময় তিনি অনেক বেশি অনুতপ্ত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি বিব্রত এবং তার একমাত্র চিন্তা ছিল, যা নিয়েছেন, তা ফেরত দেওয়া।
গত এপ্রিলে বিচারিক আদালত দেখতে পান, মি লান গোপনে সাইগোন কমার্সিয়াল ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করেন। এটি দেশের পঞ্চম বৃহত্তম ঋণদাতা ব্যাংক। এই ব্যাংক থেকে ১০ বছর ধরে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ও নগদ অর্থ তুলে নিয়েছেন তিনি, যার পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।
আইনজীবীরা বলেন, এই অর্থের মধ্যে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ট্রুং মি লান নয়–ছয় করেছেন। আর ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার যে তিনি আত্মসাৎ করেছেন, তা প্রমাণিত। আর এই গুরুতর আর্থিক অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ভিয়েতনামে এ ধরনের শাস্তির রায় খুবই বিরল। আর সেখানে আর্থিক অপরাধে খুব কম ধনাঢ্য নারীরই মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।
হো চি মিন সিটিতে সিনো–ভিয়েতনামিজ পরিবারে জন্ম ট্রুং মি লানের। শুরুর দিকে তিনি বাজারে মায়ের সঙ্গে কসমেটিকসের স্টলে বসতেন। এরপর ১৯৮৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করলে ট্রুং মি ভূমি ও সম্পত্তি কেনাবেচা শুরু করেন। ১৯৯০–এর দশকে বিভিন্ন হোটেল ও রেঁস্তোরার একটি বড় অংশের মালিক বনে যান তিনি।
এই মামলায় ট্রুং মি লানের সঙ্গে থাকা বাকি ৮৫ আসামির সবাই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর মি লানের স্বামী, ভাতিজিসহ বাকিদের ২০ বছর থেকে ৩ বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সূত্র: বিবিসি