সংগৃহীত ছবি
ধর্ম ডেস্ক : ইসলামি শরিয়তে নবজাতকের জন্য ‘আকিকা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ইবাদত। মহানবী (স.) উম্মতকে নবজাতকের জন্য আকিকার উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করো (অর্থাৎ পশু জবাই করো) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও।’ (বুখারি: ৫৪৭২)
সাধারণত সন্তান ভূমিষ্ঠের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। তবে যদি কেউ কারণবশত সপ্তম দিনে না করতে পারে, তাহলে পরবর্তীতে যেকোনো দিন আদায় করতে পারবে। (ইবনুল কাইয়িম, তুহফাতুল মাওদুদ: ৬৩ পৃ; ফতোয়া লাজনা দায়েমা: ১৭৭৬; মাজমু ফতোয়া উসাইমিন: ২৫/২১৫)
ছেলে সন্তানের জন্য সাধারণত দুইটি ও মেয়ে সন্তানের জন্য একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৩৬) তবে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে— ‘যার জন্য আকিকা করা হচ্ছে, সে নিজেই কি আকিকার গোশত খেতে পারবে?’ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমরা দেখেছি প্রামাণ্য দলিল ও ফুকাহায়ে কেরামদের মতামত।
আকিকার গোশত খাওয়ার বিধান
আকিকার গোশত খাওয়া হালাল। যার জন্য আকিকা, তার জন্যও হালাল। এটি হানাফি, শাফেয়ি ও মালিকি মাজহাবের মত। তার পিতা-মাতা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এই গোশত খেতে পারবে।
ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, ‘আকিকার গোশত নিজেরা খেতে পারে, পরিবারকে খাওয়াতে পারে, অতিথিকে দিতে পারে এবং গরিবদের মাঝেও বণ্টন করা উত্তম।’ (আল-মুগনি, খণ্ড ১৩, পৃ- ৩৯৫)
আকিকার গোশতের বিধান কোরবানির মতো
অনেকের মধ্যে এমন ধারণা রয়েছে যে, আকিকার গোশত শুধুই গরিব-মিসকিনকে দিতে হবে, পরিবার বা যার পক্ষ থেকে আকিকা, তাদের খাওয়ানো অনুচিত। এই ধারণা ভুল ও ভিত্তিহীন।
বরং ফুকাহায়ে কেরামের মতে, আকিকা ও কোরবানির গোশতের হুকুম একই। অর্থাৎ কোরবানির গোশত যেমন তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ গরিবকে দেয়া ও একভাগ আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করা উত্তম। আবার ইচ্ছে করলে পুরোটাই নিজের জন্য রাখা জায়েজ আছে। ‘কাঁচা ও রান্না করা উভয়টিই বণ্টন করা যাবে। সর্বস্তরের লোক তা খেতে পারবে। এমনকি নিজের মা-বাবা, নানা-নানি, ধনী-গরিব সবাই নিশ্চিন্তে আকিকার গোশত খেতে পারবে।’ (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৩৬)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম: ৭৬৬৯)
আকিকার মাধ্যমে ইসলামি ঐতিহ্য, সামাজিক সম্প্রীতি ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটে। ভয় বা ভুল তথ্যের কারণে নিজের সন্তানকে আকিকার গোশত থেকে বঞ্চিত করা অনুচিত, বরং তা খাওয়ানো সুন্নাহসম্মত।