শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা না মানা, প্রশাসনিক দুর্নীতিসহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
২০১৮ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশেষ ক্লাসের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। পরে অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয় তারা। এ ছাড়া আরও কিছু অভিযোগ আমলে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুদক থেকে তদন্ত করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত ফি আদায় করা এসব টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সেসময়ের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান হাওলাদার, সহকারী প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসরীন নাহারের যৌথ নামে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে (যাত্রাবাড়ী শাখা) গচ্ছিত রাখেন। পরবর্তীতে দুদকের নির্দেশে বেআইনিভাবে আদায় করা ২১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাস মহামারী চলা সময়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আবু ইউসুফ প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ধরা পড়ে ডিআইএর তদন্তে। এ ঘটনায় তিনি চাকরিচ্যুত হন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটিতে আরেক দফা অনিয়মের তদন্ত চালাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিআইএর গঠিত তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। কমিটিতে আছেন শিক্ষা পরিদর্শক হেমায়েত উদ্দিন, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মো. মুকিব মিয়া ও অডিট অফিসার সুলতান আহমেদ।
ঢাকা টাইমসের কথা হয় শিক্ষা পরিদর্শক হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত একেবারে শেষ পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই আমরা প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’
তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অসঙ্গতি তো কিছু পেয়েছি। সেগুলোর সত্যতা আরেকটু যাছাইয়ের জন্য সময় নিচ্ছি। আশা করি দ্রুত শেষ হবে।’ কোন বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনো আমরা তদন্ত রিপোর্টটি পেশ করিনি। তাই এ বিষটি বলা সমীচীন হবে না। তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলে সবই জানতে পারবেন।’
এর আগে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের প্রমাণ পায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট এই প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বশেষ কর্মরত প্রধান শিক্ষক আবু ইউসুফের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়।
নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পরিচালনা কমিটি একজন সহকারী শিক্ষককে প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক আছেন, সেগুলোতে তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে বোর্ড ২০১৯ সালের ৫ মার্চ নির্দেশ দেয়। এক্ষেত্রে সেটাও পালন করা হয়নি। ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ জানিয়েছিলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে স্কুলের পরিচালনা কমিটি (জিবি) গঠন এবং তড়িঘড়ি করে একই ব্যক্তিকে প্রথমে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এই কলেজ পরিদর্শক জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কলেজের জিবি গঠন ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি আন্তঃবিভাগীয় কমিটি এ তদন্ত করেন।
তদন্তে জিবি সদস্য নির্বাচন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। এসব অনিয়মের দায়ে প্রতিষ্ঠানটির জিবি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিয়োগও বাতিল করে শিক্ষা বোর্ড।
সেসময় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর ৩৮ ধারা মোতাবেক অবৈধ গভর্নিং বডি বাতিল করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।’
সূএ:ঢাকাটাইমস ডটকম