মেদভুঁড়ি ও হৃদরোগের সম্পর্ক

 ডা. এম শমশের আলী :মানবদেহের প্রধান উপাদান হলো হাড়, মাংস ও চামড়া। তার সঙ্গে বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- হৃৎপি-, ফুসফুস, মগজ, কিডনি, নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদিও বিদ্যমান থাকে। মানুষের নাড়িভুঁড়িতে মানে পেটে যৎসামান্য চর্বি জাতীয় বস্তু বা চর্বি বিদ্যমান থাকে। যাদের খাদ্যের প্রাচুর্যতা আছে তাদের দেহের বিভিন্ন অংশে চর্বি জমা হতে দেখা যায়। আমরা যারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যবস্তু গ্রহণ করে থাকি তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাদ্যবস্তু হজমের পর ব্যবহৃত না হয়ে চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে দেহে জমা হতে থাকে। যদি কখনো কেউ কোনো কারণে (অসুস্থতা, অরুচি, খাদ্যাভাব) খাদ্য গ্রহণ না করতে পারে তবে দেহে জমানো চর্বি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ব্যক্তির সুস্থতা ও জীবন বাঁচিয়ে রাখতে পারে। হালকা-পাতলা মানুষের চেয়ে মেদভুঁড়িসম্পন্ন লোক না খেয়ে অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। কারণ শরীরে মজুদ চর্বি তাদের শক্তি সরবরাহ করে বেশি সময় বাঁচিয়ে রাখে। মানবদেহে মস্তিষ্ক ছাড়া অন্য যে কোনো অঙ্গে চর্বি জমা হওয়ার সুযোগ আছে। মানবদেহে চর্বি জমা হওয়ার একমাত্র কারণ কিন্তু অধিক খাদ্য গ্রহণ নয়, বংশগত প্রবণতা, কর্ম সম্পাদনের গতি, বিভিন্ন ধরনের হরমোনের প্রভাবও অনেকাংশে দায়ী। তবে মেদভুঁড়ি হওয়ার প্রধান কারণ হলো অলস জীবনযাপন ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বিশেষ করে অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং ভাত। বয়স ভেদে এবং নারী-পুরুষ ভেদে চর্বি জমা হওয়ার স্থান ও প্রবণতা আলাদা। বাচ্চাদের চামড়ার নিচে ও পেটে চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ছেলেদের পেটে এবং বুকে, মেয়েদের তলপেটে নিতম্ব ও ঊরুতে চর্বি জমা হতে দেখা যায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের নতুন করে চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। মেদভুঁড়ির সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, নারী এবং পুরুষ উভয় লিঙ্গের ব্যক্তিরাই হৃৎপিন্ডের রক্তনালীর অসুস্থতায় ভোগার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যাকে সাধারণ মানুষ ব্লক বলে বুঝে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষ হার্ট অ্যাটাক, এনজিনা ও হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মেদভুঁড়ির ফলশ্রুতিতে পরোক্ষভাবে হার্টের কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। মেদভুঁড়ির জন্য মানুষের শারীরিক ওজন বৃদ্ধি ঘটার ফলে হার্টের কর্মপরিসর বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এসব ব্যক্তি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে উচ্চমাত্রায় চর্বি বা কোলেস্টেরল এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এসব অসুস্থতার প্রতিটিই হৃদরোগের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচ্য। মেদভুঁড়িসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রায়ই থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং এটাও হৃদরোগের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য। অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, পরিশ্রমকালীন শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া হৃদরোগের প্রধান লক্ষণ। তার সঙ্গে কারও কারও বুক ধড়ফড় করা, বুকের মাঝখানে অথবা বাম পাশে ব্যথা বা চাপ অনুভব করার মতো অনুভূতি সঞ্চার হতে পারে। পেটে বদহজম দেখা দেওয়া, পেটে অত্যধিক গ্যাস হওয়া এবং পেট ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে অলসতা, কর্মস্পৃহা কমে যাওয়া, কাজকর্মে বিশেষ করে হাঁটাচলার গতি কমে আসতে পারে। কারও কারও রাতে খাওয়ার পর বিছানায় শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়ে থাকে, আবার কেউ কেউ মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। মেদভুঁড়িসম্পন্ন ব্যক্তিদের হার্টের রক্তনালী প্রতিবন্ধকতা বা ব্লক দেখা দিয়ে থাকে তার সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ ও অন্যান্য অসুস্থতার ফলে হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলশ্রুতিতে হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে থাকে। তাই সচেতন হতে হবে।

লেখক: সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।  সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাগেরহাটে পুল ভেঙে তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ: শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে

» ভেড়ামারায় ৬ কেজি গাঁজাসহ যুবক গ্রেপ্তার ,পলাতক এক

» ‘পদতাগের খবর না আশা পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না’ : ইশরাক

» ‘অভিযোগ ভিত্তিহীন, ছাত্রদের টার্গেট করে মিথ্যা ছড়াচ্ছে’ : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস

» বিকেলে বিএনপির জরুরি সংবাদ সম্মেলন

» স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে চলার আহ্বান জামায়াত আমিরের

» বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৪জন দগ্ধ

» উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

» ট্রাকচাপায় স্কুলছাত্র নিহত

» আমাদের কি আসিফ নজরুলের পদত্যাগ চাওয়া উচিত নয়? : সারজিস

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : dhakacrimenewsbd@gmail.com

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মেদভুঁড়ি ও হৃদরোগের সম্পর্ক

 ডা. এম শমশের আলী :মানবদেহের প্রধান উপাদান হলো হাড়, মাংস ও চামড়া। তার সঙ্গে বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- হৃৎপি-, ফুসফুস, মগজ, কিডনি, নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদিও বিদ্যমান থাকে। মানুষের নাড়িভুঁড়িতে মানে পেটে যৎসামান্য চর্বি জাতীয় বস্তু বা চর্বি বিদ্যমান থাকে। যাদের খাদ্যের প্রাচুর্যতা আছে তাদের দেহের বিভিন্ন অংশে চর্বি জমা হতে দেখা যায়। আমরা যারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যবস্তু গ্রহণ করে থাকি তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাদ্যবস্তু হজমের পর ব্যবহৃত না হয়ে চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে দেহে জমা হতে থাকে। যদি কখনো কেউ কোনো কারণে (অসুস্থতা, অরুচি, খাদ্যাভাব) খাদ্য গ্রহণ না করতে পারে তবে দেহে জমানো চর্বি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ব্যক্তির সুস্থতা ও জীবন বাঁচিয়ে রাখতে পারে। হালকা-পাতলা মানুষের চেয়ে মেদভুঁড়িসম্পন্ন লোক না খেয়ে অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। কারণ শরীরে মজুদ চর্বি তাদের শক্তি সরবরাহ করে বেশি সময় বাঁচিয়ে রাখে। মানবদেহে মস্তিষ্ক ছাড়া অন্য যে কোনো অঙ্গে চর্বি জমা হওয়ার সুযোগ আছে। মানবদেহে চর্বি জমা হওয়ার একমাত্র কারণ কিন্তু অধিক খাদ্য গ্রহণ নয়, বংশগত প্রবণতা, কর্ম সম্পাদনের গতি, বিভিন্ন ধরনের হরমোনের প্রভাবও অনেকাংশে দায়ী। তবে মেদভুঁড়ি হওয়ার প্রধান কারণ হলো অলস জীবনযাপন ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বিশেষ করে অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং ভাত। বয়স ভেদে এবং নারী-পুরুষ ভেদে চর্বি জমা হওয়ার স্থান ও প্রবণতা আলাদা। বাচ্চাদের চামড়ার নিচে ও পেটে চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ছেলেদের পেটে এবং বুকে, মেয়েদের তলপেটে নিতম্ব ও ঊরুতে চর্বি জমা হতে দেখা যায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের নতুন করে চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। মেদভুঁড়ির সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, নারী এবং পুরুষ উভয় লিঙ্গের ব্যক্তিরাই হৃৎপিন্ডের রক্তনালীর অসুস্থতায় ভোগার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যাকে সাধারণ মানুষ ব্লক বলে বুঝে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষ হার্ট অ্যাটাক, এনজিনা ও হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মেদভুঁড়ির ফলশ্রুতিতে পরোক্ষভাবে হার্টের কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। মেদভুঁড়ির জন্য মানুষের শারীরিক ওজন বৃদ্ধি ঘটার ফলে হার্টের কর্মপরিসর বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এসব ব্যক্তি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে উচ্চমাত্রায় চর্বি বা কোলেস্টেরল এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এসব অসুস্থতার প্রতিটিই হৃদরোগের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচ্য। মেদভুঁড়িসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রায়ই থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং এটাও হৃদরোগের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য। অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, পরিশ্রমকালীন শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া হৃদরোগের প্রধান লক্ষণ। তার সঙ্গে কারও কারও বুক ধড়ফড় করা, বুকের মাঝখানে অথবা বাম পাশে ব্যথা বা চাপ অনুভব করার মতো অনুভূতি সঞ্চার হতে পারে। পেটে বদহজম দেখা দেওয়া, পেটে অত্যধিক গ্যাস হওয়া এবং পেট ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে অলসতা, কর্মস্পৃহা কমে যাওয়া, কাজকর্মে বিশেষ করে হাঁটাচলার গতি কমে আসতে পারে। কারও কারও রাতে খাওয়ার পর বিছানায় শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়ে থাকে, আবার কেউ কেউ মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। মেদভুঁড়িসম্পন্ন ব্যক্তিদের হার্টের রক্তনালী প্রতিবন্ধকতা বা ব্লক দেখা দিয়ে থাকে তার সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ ও অন্যান্য অসুস্থতার ফলে হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলশ্রুতিতে হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে থাকে। তাই সচেতন হতে হবে।

লেখক: সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।  সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : dhakacrimenewsbd@gmail.com

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com