নূরে আলম সিদ্দিকী :ষড়যন্ত্রের কুশীলবরা বঙ্গবন্ধুকে বোঝাতে সক্ষম হন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বোঝে না। তারা অর্থনৈতিক মুক্তি চায় এবং এ অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করা জায়েজ। বঙ্গবন্ধু নিজের অজান্তেই এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল গঠন করেন। এর বিরোধিতা করে আমি বাকশাল আটকাতে পারিনি কিন্তু নিজের অজান্তেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে নির্বাসিত হয়েছি। এ যে কত হৃদয়বিদারক অন্তর্জ্বালা, ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ অনুধাবন করতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কেন জানি না, আমার বিরুদ্ধে সব সময় ষড়যন্ত্র করত এবং বঙ্গবন্ধুর কান ভারী করত। অন্যরা যারা আমার পূর্ব এবং পরবর্তীকালে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, তারা শুধু নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বাভাবিক কোনো বাধাবিঘ্ন ছাড়া কাউন্সিলের সমর্থনে অনায়াসে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। মজার বিষয় হলো, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে হলে নোয়াখালী অথবা ফরিদপুরের একটা তকমা থাকা লাগত বলে একটা মিথ চালু ছিল। এ প্রচলিত মিথকে অতিক্রম করা যমুনা পাড়ের উত্তরবঙ্গের পক্ষে ও দক্ষিণ -পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে অতটা সহজ ছিল না। এই না পারার বিষয়টা আমার জন্য প্রচন্ড আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। যমুনা পাড়ের সব জেলা, মহকুমা, থানা ও প্রতিটি স্কুল-কলেজের এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের অসংখ্য কর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে একটা প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হন যে, এবার তারা যেমন করেই হোক ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী অঞ্চল এবং ফরিদপুরের তথাকথিত বেষ্টনী ভেঙে অন্য কোনো জেলা থেকে আনবেন।
ছাত্রলীগের কর্মরত কার্যনির্বাহী কমিটির বাইরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের একটি শক্তিশালী কোটারি ছিল। ওই কোটারির বাইরে ছাত্রলীগের অন্যান্য শক্তিশালী সাবেক ছাত্রনেতারাও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হওয়া সত্ত্বেও কেন জানি না, ছাত্রলীগের নৈমিত্তিক প্রবাহে সম্পৃক্ত থাকতে চাইতেন না। তাঁরা দূরে দূরে অবস্থান করে যে নির্বাক নিস্পৃহ দৃষ্টিতে ওই সক্রিয় চক্রের জটিল কর্মকান্ড অবলোকন করতেন, বোঝা যেত কষ্ট পেতেন কিন্তু চ্যালেঞ্জ করতে আসতেন না। যত কিছুই হয়েছে ষড়যন্ত্রের জটিল প্রবাহ আমাকেই রুখতে হয়েছে। এই পক্ষের হয়ে লড়াই করতে হয়েছে আমাকেই। অনেক দুঃসাধ্য কর্মে সততা ও মুজিব ভাইয়ের অনবদ্য সমর্থন আমার প্রেরণা ও হৃদয়ের অমিতবিক্রম শক্তি ছিল।
স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে এসে জীবনসায়াহ্নের পাদপীঠে দাঁড়িয়ে সংগ্রামের শতধা সাফল্যের জয়মাল্যে ভূষিত আজকের ছাত্রলীগের দিকে যখন দৃষ্টিপাত করি, তখন একটা অব্যক্ত যন্ত্রণায় হৃদয় কুঁকড়ে কেঁদে ওঠে। কোথায় গেল সেই স্বকীয় ও স্বাধীন শক্তি? কোথায় গেল সেই অমিতবিক্রম তেজস্বিতা? কোথায় গেল সেই দুর্লঙ্ঘ্যনীয় প্রাচীর ভাঙার দৃপ্ত শপথে উজ্জীবিত প্রাণ? আজকের ছাত্রলীগকে অনেকটাই সরকারের প্রশাসননির্ভর ও ক্ষমতাশ্রয়ী বলেই প্রতীয়মাণ হয়। যে স্বাধীন স্বকীয় সত্তার শক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে সেদিন আমরা উচ্চারণ করতে পারতাম, What Students League thinks today, the whole of Pakistan will think tomorrow. এ উদ্গত চিত্তের উদ্ধত বাণী বঙ্গবন্ধুও মুক্ত মনে সমর্থন করতেন। এ উদাত্ত মানসিকতাই ছাত্রলীগকে তার স্বাধীন স্বকীয় মননে এগিয়ে চলার প্রেরণা জুগিয়েছিল। সারা বাংলাদেশ কাঁপিয়ে ছয় দফার কর্মসূচি বক্ষে লালন করে সেই বিস্ময়কর ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং ’৭০-এর নির্বাচন কেন্দ্র করে ছাত্রলীগই গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে উঠেছিল। সমগ্র বাংলাদেশকে অগ্নি-উদ্গিরণে দুর্দান্তভাবে সক্ষম হয়েছিল।
সেদিন আমরা সত্তরের নির্বাচনটিকে ক্ষমতা দখলের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করিনি। বরং স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উত্তরণের ম্যান্ডেট হিসেবে মানুষের একটা ঐক্যের পাদপীঠে দাঁড় করাতে চেয়েছিলাম। আমাদের সে পরিকল্পনা বাংলার জাগ্রত জনতার একটা প্রচন্ড ঐক্যের সেতুবন্ধ তৈরি করে। তাই ’৭০-এর নির্বাচনের রায় স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উত্তরণের একটা প্রচন্ড প্রতীতির এবং বিশ্বাসের যে প্রত্যয়বোধ তৈরি করে, তার ওপর ভিত্তি করেই ’৭১-এর মার্চজুড়ে ছাত্রলীগ স্বাধীনতার বিজয়ের জন্য সমগ্র জনতাকে প্রস্তুত করতে একটার পর একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান করে। ১ মার্চ ছাত্রলীগের একক নেতৃত্বে পল্টন ময়দানে লাখ লাখ মানুষের শাশ্বত ও স্বতঃস্ফূর্ত সভা থেকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কমিটি গঠন করা হয়। এ সংগ্রাম পরিষদের নামকরণই স্বাধীনতার বিজয় কেতন উড়িয়ে দেয়। একটার পর একটা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান করে নতুন সত্তায় উজ্জীবিত হয়ে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার আঘাতের বিপরীতে প্রত্যাঘাত হানার জন্য। উল্লেখ্য, এর আগের আন্দোলনগুলো কেবলই তাদের নির্যাতনের বিরোধিতা করত কিন্তু এবার নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো- রক্ত, হত্যা-নির্যাতন-নিগ্রহের আর কোনো প্রতিবাদ নয়, এবার প্রত্যাঘাত হানার সময়। ওদের যে-কোনো আঘাতের বিপরীতে স্বাধীনতার উচ্চকিত শপথকে আরও শক্তিশালী প্রত্যয়ে মুষ্টিবদ্ধ উত্তোলিত হাত ওদের আক্রমণের বিপরীতে প্রচন্ড আঘাত হানার জন্য।
‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো’। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ প্রতিটি শহরে-বন্দরে, বাংলার প্রতিটি নিভৃত কোনায় কোনায় সংগ্রাম কমিটি গঠন করে স্বাধীনতার অগ্নিঝরা শপথে প্রস্তুত হওয়ার জন্য। ছাত্রলীগ সেদিন শুধু বক্তৃতা ও স্লোগানের মধ্যেই তাদের সংগ্রাম সীমাবদ্ধ রাখেনি। বরং প্রতিটি দামাল ছেলেমেয়ের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলে। তারা সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং স্বাধীনতার প্রদীপ্ত শপথে সূর্যস্নাত হয়। সত্যিকার অর্থে ’৭১-এর সমগ্র মার্চ মাস প্রচন্ড রণভেরি বাজিয়ে বঙ্গবন্ধুর অমোঘ আলোকিত নেতৃত্ব সামনে রেখে ছাত্রলীগ গোটা বাঙালি জাতিকে সম্মুখসমরের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
বাংলার শাশ্বত মুজিব ভাইয়ের নেতৃত্বে স্বাধীনতার উদাত্ত বাণীর রণভেরি বাজায় ছাত্রলীগের সূর্যসৈনিকরা। ছাত্রলীগের সূর্যস্নাত কর্মীরা, নিগ্রহ সহ্য করা অগ্নিদগ্ধ সৈনিকরা যদি সেদিন প্রচন্ড প্রত্যয়ে রণভেরি বাজাতে না পারতেন, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নিতে পারত না। জাতির চেতনার সুপ্ত বাসনাটি প্রজ্বালিত করেন ছাত্রলীগের উদ্বেলিত কর্মীরা এবং এ প্রস্তুতিটি এতটাই প্রাণোচ্ছল ছিল যে, তা না হলে ২৫ মার্চে পাকিস্তান সামরিক জান্তার উন্মত্ত হত্যাযজ্ঞের ও রক্তপিপাসু শাসকদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিক্রমে বুক চিতিয়ে সম্মুখসমরের দিকে জাতি এগিয়ে যেতে পারত না। এখানেই ছাত্রলীগের সফলতা, এখানেই ছাত্রলীগের গৌরবদীপ্ত কৃতিত্ব।
এখানে একটি সূর্যস্নাত ঐতিহাসিক সত্য তুলে ধরতে চাই। সেদিন পল্টন ময়দানে ৩ মার্চের উত্তাল জনসমুদ্রে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন এবং ওই ইশতেহারে স্বাধীন বাংলার রূপরেখা এবং সেদিনই জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ঘোষণা করা হয়। ওই উত্তাল উন্মত্ত জনসভায় প্রচন্ড করতালির মধ্যে আমি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে বাঙালির হৃদয়ের রাজা শেখ মুজিবকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা করি। বঙ্গবন্ধুও বিদগ্ধ চিত্তে ওই সভায় মঞ্চে উপস্থিত থেকে ওইসব যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত শ্রবণ করেন। আমি আড়চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম, কি প্রশান্ত ছিল সেদিন তাঁর মুখমন্ডল। হয়তো উদ্বেলিত ছিল তাঁর চিত্ত, উদগত ছিল তাঁর মনন। তাঁর প্রশান্ত মুখমন্ডলে বাংলার প্রতি তাঁর নিগূঢ় ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি আমার চিত্তকে বিমোহিত করেছিল। আমরা আমাদের সব সিদ্ধান্ত মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই গ্রহণ করতাম কিন্তু এ সিদ্ধান্ত দুটি আমরা নিজেদের এখতিয়ারেই রেখেছিলাম। তবু ঘোষণাগুলো শুনে বঙ্গবন্ধু বিস্মিত হননি। স্থির অকম্পিত ছিল তাঁর হৃদয়। বাংলার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরপুর ছিল তাঁর মন। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উত্তরণে প্রতিশ্রুত ও উজ্জীবিত ছিল তাঁর বিদগ্ধ চেতনা।
ওই সভার পর বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় যখন তাঁর সঙ্গে আমার একান্তে দেখা হয়, তখন সস্নেহে আমার মাথায় হাত রেখে তিনি বলেছিলেন, তোমার মধ্যে আগুন আছে। স্বাধীনতার এ মহতী অভিযাত্রায় তুমি এগিয়ে যেতে পারবে। পরবর্তীকালে স্বাধীনতার সপক্ষে আমরা যত কর্মসূচি গ্রহণ করেছি তাঁর এ আশীর্বাদ সবটিতেই প্রেরণার উৎস ছিল। একটা কথা শুচিশুদ্ধ হৃদয়ে আমি নিঃসংকোচে তুলে ধরতে চাই। ’৭১-এর সেই স্বাধীনতার পথযাত্রায় ছাত্রলীগ নির্দেশনার অভিযাত্রী ছিল। তাই আমি আবারও বলি, বারবার বলি, ছাত্রলীগই বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে স্বাধীনতার রূপরেখা তৈরি করেছে এবং দৃপ্ত পদক্ষেপে অনির্বাণ সাহসিকতা নিয়ে স্বাধীনতার পথপরিক্রমণে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রলীগ কোনো দিনই সহযোগী সংগঠনের ভূমিকা পালন করেনি। ছাত্রলীগ প্রজ্বালিত মশাল হাতে অন্ধকার অমানিশার রাতে সমগ্র জাতিকে পথ দেখিয়েছে সমস্ত নিষ্ঠুর নির্যাতন ও নির্মম নিগ্রহ সহ্য করে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিকা রচনায় ছাত্রলীগ যে দুর্দমনীয় সাহসিকতায় একেকটি আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে দ্বিজাতিতত্ত্বের আবর্ত থেকে বের করে এনে বাঙালি জাতীয় চেতনার শক্ত পাদপীঠে দাঁড় করায়, তা সত্যিই অভাবনীয়। বিশ্বের ইতিহাসে এ জ্বলন্ত ঘটনার দৃষ্টান্ত বিরল।
সমগ্র জনতাকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি ঐক্যের মোহনায় এনে দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছিল বলেই এটি শুধু কোনো বাহিনীর যুদ্ধ ছিল না। বরং ছিল তেজোদীপ্ত জনযুদ্ধ। পৃথিবীর অন্য কোনো জাতির সফল বিপ্লবের পেছনে এ রকম ৯৮ ভাগ মানুষের অংশীদারি দেখা যায় না। ইতিহাস এখানে বিহ্বল, পৃথিবী এখানে স্তম্ভিত। অবাক বিস্ময়ে সারা পৃথিবী তখন সমস্ত হৃদয় দিয়ে বাঙালির এ অভূতপূর্ব ঐক্যের উত্থান অবলোকন করেছিল। আমি আবারও বলি, বারবার বলি, বঙ্গবন্ধুকে সামনে নিয়ে ছাত্রলীগই স্বাধীনতার মূল কারিগর। সেই ছাত্রলীগের আজ এ কী বেহাল দশা!
অতীতের এ ঐতিহাসিক ঐতিহ্য বর্তমান ছাত্রলীগকে, তার স্বাধীন স্বকীয় সত্তাকে উজ্জীবিত করবে এটাই তো স্বাভাবিক, এটাই তো প্রত্যাশিত। আমরা যারা সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস লালন করি, তারা দুই চোখ ভরে দেখতে চাই ছাত্রলীগ সমগ্র জাতিকে আলোর পথ দেখাবে। স্বাধীন উন্মুক্ত সত্তায় রাজনীতির অগ্রদূত হিসেবে তারা অবস্থান করবে। পথ চলতে চলতে স্বাভাবিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধের রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাবে কিন্তু কোনো অবস্থাতেই কোনো দল বা গোষ্ঠীর অঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করবে না। তার সমস্ত কর্মকান্ড নিবেদিত হবে জাগ্রত জনতার সুস্পষ্ট কল্যাণে। একসময়ের ছাত্রলীগ নেত্রী, ছাত্রলীগের সেই গৌরবদীপ্ত অতীতের অভিন্ন অংশীদার হিসেবে শেখ হাসিনা সংগঠনটিকে তার স্বাধীন সত্তায় বিচরণ করতে সাহায্য করবেন এটাই তো স্বাভাবিক। এ প্রত্যাশা তাঁর কাছে করা অমূলক নয়।
আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। নতুন প্রজন্ম সেই স্বাধীনতা অর্থবহ করে তুলবে। তার জন্য প্রয়োজন জ্ঞানতপস্যা। নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও জ্ঞানপিপাসু চিত্তকে পিপাসার্ত রাখা যাবে না। একজন জ্ঞানলব্ধ প্রতিভাপ্রদীপ্ত মানুষই জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে। মনে রাখতে হবে, ‘বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র’। তাই সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাদের নিজের লেখাপড়াটা চালু রাখতে হবে। শুধু স্লোগান দিলে হবে না। এটা ভুললে চলবে না, ‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ’।
ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি অনেকটা পথ হেঁটেছি। তাই জীবনসায়াহ্নে ছাত্রলীগকে স্বকীয় ও স্বাধীন সত্তার ওপর প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই। দেখতে চাই তার নির্মল, নির্মোহ ও অজেয় শক্তি। বাংলার মানুষের যে-কোনো প্রয়োজনে সে বজ্রনির্ঘোষে গর্জে উঠবে, এ প্রত্যাশা আমি বুকে বেঁধে রাখি। আজকের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আমার হৃদয়ের অন্তর্ভেদী অন্তিম আশীর্বাণী ‘মুক্ত কর ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধর, নিজেরে কর জয়’।
লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি
সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিনন