‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে দরকার ওরাল হিস্ট্রিগুলো রেকর্ড করা’

সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র নিয়মিত মাসিক আসরে প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ উল্লাহ বলেছেন, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী। মানুষ জন্মভূমি হতে দেশান্তরি হয় কিন্তু জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা সবসময় থাকে। দেশ, সমাজ প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের জেনারেশন গ্যাপ, কালচারাল গ্যাপ, কন্টিনেন্টাল গ্যাপ রয়েছে, কিন্তু ওদেরকে যদি দেশ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানাতে পারি অবশ্যই ওরা চিন্তা, মননে আন্তর্জাতিক বাঙালি হয়ে উঠবে।

 

‘সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক’র নিয়মিত মাসিক আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩০ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায়। আসর পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

 

সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে সৈয়দ উল্লাহ আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য ওরাল হিস্ট্রি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওরাল হিস্ট্রিগুলো রেকর্ড করে রাখা দরকার। উত্তর আমেরিকা সহ পৃথিবীর নানান দেশে মুক্তিযোদ্ধাসহ সে সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ রয়েছেন যাদের ইন্টারভিউ করা এবং সে ইতিহাস সংরক্ষণ করা একটা পবিত্র দায়িত্ব। এই সময় তিনি প্রবাসে বাস করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন।

 

আলোচনায় অংশগ্রহণকারিগণের মধ্যে আরো ছিলেন লেখক ফেরদৌস সাজেদীন, সাংবাদিক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, কবি তমিজ উদদীন লোদী, কবি কাজী আতীক, কবি হুসাইন কবির, অধ্যাপিকা হুসনে আরা, লেখক আদনান সৈয়দ, লেখক এ.বি.এম সালেহ উদ্দিন, বীর মুক্তযোদ্ধা ডক্টর মোহসীন আলী, রাজনীতিক-লেখক মোর্শেদ আলম, লেখক আকবর হায়দার কিরণ।

 

ফেরদৌস সাজেদীন বলেন, সকলের আলোচনায় ভেতরে একটা আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বিজয়ের এই মাসে অনেক কথা মনে পড়ছে। তৎকালীন পাকিস্তান সময়ে বাংলাদেশ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যখন প্রথম সরকার গঠন করতে যাবে, তখন সেই মার্চের আগে বাংলা একাডেমিতে ফেব্রুয়ারির প্রথম অনুষ্ঠানের জন্য সারারাত জেগে হলের ভেতর বন্ধুরা মিলে একটি স্মরণিকা তৈরি করে গিয়ে দাঁড়ালাম বর্ধমান হলটির সামনে। সঙ্গে ছিলেন কবি আবুল হাসান, কবি নির্মেলেন্দু গুণ। সবুজ ঘাসের উপর সংকলনটি রেখেছি। ডক্টর মুনীর চৌধুরীকে হেঁটে যেতে দেখে তাঁকে সংকলনটি দেখাতেই বললেন, তিনি এটি আগেই কিনে নিয়েছেন। কী করে এই মানুষটি হারিয়ে গেলেন, আজো জানি না। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাঙালি জাতিকে নিঃস্ব করতে তারা কী না করেছে? ‘ সাবধানে হাঁটবেন সাহেব, দেখবেন মাথার খুলির উপর যেন পা না পড়ে’ সে সময়ের পূর্বদেশ সংবাদ পত্রের হেডলাইনটির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ভাবা যায়? মুনীর চৌধুরীকে পাইনি, কিন্তু তাঁর আবিষ্কৃত বাংলা টাইপ রাইটারের কীবোর্ড ব্যবহার করে মহাশক্তিশালী লেখক সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা, রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের নাটক।

 

শিল্প সাহিত্য যারা করে তারা হলো মিস্ত্রি ‘-সৈয়দ শামসুল হকের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শিল্প, সাহিত্য রচনায় মনোযোগী হতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে, সর্বোপরি ভালো মিস্ত্রি হতে হবে। সাহিত্য একাডেমি সে শিল্পিত স্বরুপটি পেতে চায়। আমি মুগ্ধ হয়ে সাহিত্য একাডেমির এই স্বরুপটি উপলব্ধি করছি।

 

তমিজ উদদীন লোদী ফরাসি বিপ্লবের প্রতি আলোকপাত করে বলেন, চতুর্দশ লুই এর সময় ফরাসি দেশের অর্ধেক লোক ছিল অশিক্ষিত, কুসংস্কার ছিল, চার্চের আধিপত্য ছিল, এগুলোর বাইরে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না লোকদের। লুই তার শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মীয় কুসংস্কার লালন করেছে, প্রশ্রয় দিয়েছে। পাকিস্তানি শাষক আয়ুব খান ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একইভাবে ধর্মীয় কুসংস্কার, পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চাৎপদতা সহ অন্য দূর্বল দিকগুলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে অর্থ, প্রলোভন দিয়ে তার মতো করে সাজিয়েছে। তেইশ বছরের দেশটি কেন ভেঙে গেলো তার কারণগুলো অনুসন্ধান করতে গেলে এই বিষয়গুলো উঠে আসবে। প্রকৃত স্বাধীনতা হলো গণ মানুষের স্বাধীনতা। প্রান্তিক মানুষ সহ সর্বস্তরের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সার্বিক স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারবো আমরা। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ধারণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিশ্চয়ই আমাদের দেশটিকে বহুদূর নিয়ে যাবে।

 

ফজলুর রহমান বলেন, বাঙালি জীবনে ধ্রুব সত্য মুক্তিযুদ্ধ, এই নিয়ে কোন কথা বলার অবকাশ নেই, তবুও বলি। গুটিকয়েক ছাড়া দেশের সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, এই বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। মুক্তিযুদ্ধ উদ্দীপক শক্তি, এই শক্তিতে বাঙালি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠুক, এগিয়ে যাক।

 

কাজী আতিক বলেন, ইদানীং মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখালেখি কম হলেও স্বাধীনতা উত্তর সময়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের একটা পটভূমি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা হঠাৎ করে হয় নি। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এর পটভূমি নিয়ে চর্চাও জরুরি। শেষাংশে তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

হুসাইন কবির বলেন, আমরা সবকিছু নিয়ে বিতর্ক করি, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ নিয়েও বিতর্ক করি, এটি একদম উচিৎ নয়। মাকে নিয়ে যেমনি বিতর্ক করি না তেমনি মাতৃসম দেশ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও বিতর্ক বন্ধ করা উচিৎ। তিরিশ লক্ষ লোক শহীদ হওয়ার গোটা দেশটাই একটা বধ্যভূমি। সেই বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলাটা বড় ন্যক্কারজনক বিষয়।

 

অধ্যাপিকা হোসনে আরা বলেন, জীবনটা নানান রঙের ফুলের মালা দিয়ে তৈরি। বিজয়ের কথা বললে আমাদের স্বাধীনতা, দেশ, ভাষা যেন আমাদের গলায় পরা কান্না- হাসির একটি ফুলের মালা। দেশ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিজেদের কথায় নিজেরা যেন বিভ্রান্ত না হই, অন্যকেও বিভ্রান্ত না করি।

 

আদনান সৈয়দ বলেন, গল্প, কবিতা, গান, আলোচনায় আমরা বিজয়ের মাস উদযাপন করি। আমরা ভাগ্যবান কারণ আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পেয়েছি। ওরাল হিস্ট্রির উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, যাঁরা স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মুখ থেকে শুনে সে সময়ের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করায় আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যেও প্রোথিত করতে হবে।

 

ডক্টর মোহসীন আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ১৯৭১ সালের পর ১৯৭৫ সালেও যুদ্ধ করি। বর্তমানে ফুল টাইম রাইটার। এখন ইংরেজি ভাষায় লিখছি দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের কথা। উদ্দেশ্য হলো, বিদেশী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো। তিনি তাঁর বইগুলোর প্রচ্ছদ এবং পরিচিতি তুলে ধরেন সকলের সামনে।

 

মোরশেদ আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, হৃদয়ে ধারণ করি, দেশকে ভালোবাসি।

 

স্থূলতা মুক্ত জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আনন্দঘন বিজয়ের মাসে নিজের শারীরিক সুস্থতা লাভের গল্প ভাগাভাগি করেন সকলের সঙ্গে দৌড়বিদ মোহাম্মদ নাসির শিকদার। বরাবরের মতো আসরে স্বরচিত কবিতা ও গল্পপাঠ ছিল। আসরে আবৃত্তি করেন পারভীন সুলতানা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি, দুদিনের মধ্যে অভিযান: ডিএমপি কমিশনার

» গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করে শেষ মুহূর্তে ‘শাটডাউন’ এড়ালো যুক্তরাষ্ট্র

» বাসে তল্লাশি চালিয়ে দেশীয় তৈরি পাইপ গানসহ দুই যাত্রী গ্রেপ্তার

» সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে হাসান আরিফের জানাজা সম্পন্ন

» উত্তর ভারতের প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামানো হচ্ছে ‘পুষ্পা-২’

» ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ কনসার্ট ঘিরে যান চলাচলে নির্দেশনা

» সাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু

» বেইলি ব্রিজ ভেঙে তুরাগ ন‌দে ট্রাক, বিকল্প পথে চলার অনুরোধ

» সড়ক ও পরিবহন খাতে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

» ক‍্যানবেরায় ১২ প্রবাসীকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অ‍্যাওয়ার্ড প্রদান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে দরকার ওরাল হিস্ট্রিগুলো রেকর্ড করা’

সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র নিয়মিত মাসিক আসরে প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ উল্লাহ বলেছেন, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী। মানুষ জন্মভূমি হতে দেশান্তরি হয় কিন্তু জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা সবসময় থাকে। দেশ, সমাজ প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের জেনারেশন গ্যাপ, কালচারাল গ্যাপ, কন্টিনেন্টাল গ্যাপ রয়েছে, কিন্তু ওদেরকে যদি দেশ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানাতে পারি অবশ্যই ওরা চিন্তা, মননে আন্তর্জাতিক বাঙালি হয়ে উঠবে।

 

‘সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক’র নিয়মিত মাসিক আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩০ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায়। আসর পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

 

সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে সৈয়দ উল্লাহ আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য ওরাল হিস্ট্রি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওরাল হিস্ট্রিগুলো রেকর্ড করে রাখা দরকার। উত্তর আমেরিকা সহ পৃথিবীর নানান দেশে মুক্তিযোদ্ধাসহ সে সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ রয়েছেন যাদের ইন্টারভিউ করা এবং সে ইতিহাস সংরক্ষণ করা একটা পবিত্র দায়িত্ব। এই সময় তিনি প্রবাসে বাস করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন।

 

আলোচনায় অংশগ্রহণকারিগণের মধ্যে আরো ছিলেন লেখক ফেরদৌস সাজেদীন, সাংবাদিক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, কবি তমিজ উদদীন লোদী, কবি কাজী আতীক, কবি হুসাইন কবির, অধ্যাপিকা হুসনে আরা, লেখক আদনান সৈয়দ, লেখক এ.বি.এম সালেহ উদ্দিন, বীর মুক্তযোদ্ধা ডক্টর মোহসীন আলী, রাজনীতিক-লেখক মোর্শেদ আলম, লেখক আকবর হায়দার কিরণ।

 

ফেরদৌস সাজেদীন বলেন, সকলের আলোচনায় ভেতরে একটা আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বিজয়ের এই মাসে অনেক কথা মনে পড়ছে। তৎকালীন পাকিস্তান সময়ে বাংলাদেশ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যখন প্রথম সরকার গঠন করতে যাবে, তখন সেই মার্চের আগে বাংলা একাডেমিতে ফেব্রুয়ারির প্রথম অনুষ্ঠানের জন্য সারারাত জেগে হলের ভেতর বন্ধুরা মিলে একটি স্মরণিকা তৈরি করে গিয়ে দাঁড়ালাম বর্ধমান হলটির সামনে। সঙ্গে ছিলেন কবি আবুল হাসান, কবি নির্মেলেন্দু গুণ। সবুজ ঘাসের উপর সংকলনটি রেখেছি। ডক্টর মুনীর চৌধুরীকে হেঁটে যেতে দেখে তাঁকে সংকলনটি দেখাতেই বললেন, তিনি এটি আগেই কিনে নিয়েছেন। কী করে এই মানুষটি হারিয়ে গেলেন, আজো জানি না। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাঙালি জাতিকে নিঃস্ব করতে তারা কী না করেছে? ‘ সাবধানে হাঁটবেন সাহেব, দেখবেন মাথার খুলির উপর যেন পা না পড়ে’ সে সময়ের পূর্বদেশ সংবাদ পত্রের হেডলাইনটির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ভাবা যায়? মুনীর চৌধুরীকে পাইনি, কিন্তু তাঁর আবিষ্কৃত বাংলা টাইপ রাইটারের কীবোর্ড ব্যবহার করে মহাশক্তিশালী লেখক সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা, রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের নাটক।

 

শিল্প সাহিত্য যারা করে তারা হলো মিস্ত্রি ‘-সৈয়দ শামসুল হকের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শিল্প, সাহিত্য রচনায় মনোযোগী হতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে, সর্বোপরি ভালো মিস্ত্রি হতে হবে। সাহিত্য একাডেমি সে শিল্পিত স্বরুপটি পেতে চায়। আমি মুগ্ধ হয়ে সাহিত্য একাডেমির এই স্বরুপটি উপলব্ধি করছি।

 

তমিজ উদদীন লোদী ফরাসি বিপ্লবের প্রতি আলোকপাত করে বলেন, চতুর্দশ লুই এর সময় ফরাসি দেশের অর্ধেক লোক ছিল অশিক্ষিত, কুসংস্কার ছিল, চার্চের আধিপত্য ছিল, এগুলোর বাইরে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না লোকদের। লুই তার শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মীয় কুসংস্কার লালন করেছে, প্রশ্রয় দিয়েছে। পাকিস্তানি শাষক আয়ুব খান ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একইভাবে ধর্মীয় কুসংস্কার, পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চাৎপদতা সহ অন্য দূর্বল দিকগুলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে অর্থ, প্রলোভন দিয়ে তার মতো করে সাজিয়েছে। তেইশ বছরের দেশটি কেন ভেঙে গেলো তার কারণগুলো অনুসন্ধান করতে গেলে এই বিষয়গুলো উঠে আসবে। প্রকৃত স্বাধীনতা হলো গণ মানুষের স্বাধীনতা। প্রান্তিক মানুষ সহ সর্বস্তরের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সার্বিক স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারবো আমরা। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ধারণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিশ্চয়ই আমাদের দেশটিকে বহুদূর নিয়ে যাবে।

 

ফজলুর রহমান বলেন, বাঙালি জীবনে ধ্রুব সত্য মুক্তিযুদ্ধ, এই নিয়ে কোন কথা বলার অবকাশ নেই, তবুও বলি। গুটিকয়েক ছাড়া দেশের সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, এই বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। মুক্তিযুদ্ধ উদ্দীপক শক্তি, এই শক্তিতে বাঙালি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠুক, এগিয়ে যাক।

 

কাজী আতিক বলেন, ইদানীং মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখালেখি কম হলেও স্বাধীনতা উত্তর সময়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের একটা পটভূমি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা হঠাৎ করে হয় নি। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এর পটভূমি নিয়ে চর্চাও জরুরি। শেষাংশে তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

হুসাইন কবির বলেন, আমরা সবকিছু নিয়ে বিতর্ক করি, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ নিয়েও বিতর্ক করি, এটি একদম উচিৎ নয়। মাকে নিয়ে যেমনি বিতর্ক করি না তেমনি মাতৃসম দেশ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও বিতর্ক বন্ধ করা উচিৎ। তিরিশ লক্ষ লোক শহীদ হওয়ার গোটা দেশটাই একটা বধ্যভূমি। সেই বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলাটা বড় ন্যক্কারজনক বিষয়।

 

অধ্যাপিকা হোসনে আরা বলেন, জীবনটা নানান রঙের ফুলের মালা দিয়ে তৈরি। বিজয়ের কথা বললে আমাদের স্বাধীনতা, দেশ, ভাষা যেন আমাদের গলায় পরা কান্না- হাসির একটি ফুলের মালা। দেশ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিজেদের কথায় নিজেরা যেন বিভ্রান্ত না হই, অন্যকেও বিভ্রান্ত না করি।

 

আদনান সৈয়দ বলেন, গল্প, কবিতা, গান, আলোচনায় আমরা বিজয়ের মাস উদযাপন করি। আমরা ভাগ্যবান কারণ আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পেয়েছি। ওরাল হিস্ট্রির উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, যাঁরা স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মুখ থেকে শুনে সে সময়ের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করায় আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যেও প্রোথিত করতে হবে।

 

ডক্টর মোহসীন আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ১৯৭১ সালের পর ১৯৭৫ সালেও যুদ্ধ করি। বর্তমানে ফুল টাইম রাইটার। এখন ইংরেজি ভাষায় লিখছি দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের কথা। উদ্দেশ্য হলো, বিদেশী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো। তিনি তাঁর বইগুলোর প্রচ্ছদ এবং পরিচিতি তুলে ধরেন সকলের সামনে।

 

মোরশেদ আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, হৃদয়ে ধারণ করি, দেশকে ভালোবাসি।

 

স্থূলতা মুক্ত জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আনন্দঘন বিজয়ের মাসে নিজের শারীরিক সুস্থতা লাভের গল্প ভাগাভাগি করেন সকলের সঙ্গে দৌড়বিদ মোহাম্মদ নাসির শিকদার। বরাবরের মতো আসরে স্বরচিত কবিতা ও গল্পপাঠ ছিল। আসরে আবৃত্তি করেন পারভীন সুলতানা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com