ছবি:সংগৃহীত
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহজ ও দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট সেবা দিতে আউটসোর্সিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এক্সপ্যাট সার্ভিসেস লিমিটেড (ইএসএল) নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
ইএসএল বাংলাদেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়াতেও নিবন্ধিত। প্রতিষ্ঠানটি ই-পাসপোর্ট এবং মালয়েশীয় ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশের ভিসা সেবা প্রদানের জন্য এরই মধ্যে জালান দুয়া-চান শো লেনে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ চালু করতে প্রস্তুতি নিয়েছে।
ভবনটি যে এলাকায় অবস্থিত সেখানে যাতায়াতের জন্য সব ধরনের নাগরিক সুবিধা, যেমন বাস, এলআরটি, এমআরটি রয়েছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে চালুর লক্ষ্যে এরই মধ্যে এখানে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হচ্ছে এবং ৪৭টি সার্ভিস কাউন্টার স্থাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এর আগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের সীমিত জনবল দিয়ে বিশাল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট সেবা প্রদান করে আসছিল। নতুন চুক্তির মাধ্যমে গত একবছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় এসেছেন। ফলে আগের তুলনায় হাইকমিশনের কাজের পরিধি বহু অংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে হাইকমিশন মনে করে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ ধারণার আদলে সরকারের নির্দেশনায় পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা সহজ ও দ্রুততর করতে আউটসোর্সিং কোম্পানি নিয়োগ সময়োপযোগী।
ই-পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে আবেদন ফরম পূরণ, স্ক্যান ও বায়োমেট্রিকসহ আবেদনের সব কার্যক্রম ইএসএল সম্পন্ন করবে। কোম্পানিটি বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ার পোস্টাল বিভাগের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণ নিশ্চিত করবে। পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি বন্ধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আউটসোর্সিং কোম্পানি তাদের প্রদানকৃত সেবার জন্য কী পরিমাণ সার্ভিস চার্জ পাবে তা স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রমিক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন ফরম পূরণ, ইন্টারভিউ, সরকারি ফি জমাকরণ, বায়ো-এনরোলমেন্ট, ডকুমেন্ট স্ক্যানিং, পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ মোট সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ রিঙ্গিত।
পেশাজীবী ও অন্যান্যদের এ সেবার জন্য সার্ভিস চার্জ দিতে হবে ৬০ রিঙ্গিত। একইভাবে মালয়েশীয় ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশের ভিসা আবেদনের জন্য সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ রিঙ্গিত। ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ হিসেবে কাজ করায় পুরো প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহীতাকে একবার সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে। ইএসএল কুয়ালালামপুরের বাইরে একাধিক রাজ্যে যেমন জহরবাহরু, পেনাং এ হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে মোবাইল টিমের মাধ্যমে সেবা প্রদান করবে।
আউটসোর্সিং কোম্পানি ইএসএল পরিচালিত ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারটির সার্বিক কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় সরাসরি হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এবং সিসিটিভির মাধ্যমে তা হাইকমিশন থেকে সরাসরি মনিটরিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, জনবল নিয়োগের বিষয়ে নিয়োগকৃত কর্মীদের হাইকমিশনের মাধ্যমে পুলিশ ভেরিফিকেশনের (বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া) বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং আউটসোর্সিং কোম্পানির সেবা প্রদান কার্যক্রম সন্তোষজনক না হলে চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা হাইকমিশনের হাতে রয়েছে।
আউটসোর্সিং কোম্পানির প্রস্তুতি কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীরের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ইএসএল-এর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন এক্সপ্যাট সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গিয়াস আহমেদ। হাইকমিশনের প্রতিনিধি দলটি ইএসএল-এর কার্যক্রমের অগ্রগতি বিশেষ করে অফিস ব্যবস্থাপনার নির্মাণাধীন অবকাঠামো এবং বাহ্যিক অবয়ব দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরিদর্শন টিমে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য, কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) ও দূতালয় প্রধান ফারহানা আহমেদ চৌধুরী, কাউন্সেলর (কনসুলার) জিএম রাসেল রানা ও প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষ প্রমুখ। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম