সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : পাসপোর্ট সেবা নিতে প্রতিদিনই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইএসকেএলে জড় হচ্ছেন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। গভীর রাত থেকেও অপেক্ষমাণ থাকছেন অনেকে। সম্প্রতি স্থানীয় নিরাপত্তাকর্মীর মারধরের শিকার হন সেবা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিরা। এতে প্রবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে ইএসকেএল ও বাংলাদেশ হাইকমিশন।
সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহে ইএসকেএলের সেন্টারে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক পাসপোর্ট সেবাপ্রত্যাশী বাইরে অপেক্ষা করছেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ছবি তুলতে চাইলে এক নিরাপত্তাকর্মী তেড়ে আসেন। ছবি ও ভিডিও নেওয়ায় বারবার বাধা দেওয়া হয় এবং তাকে লাঞ্ছিতও করা হয়।
বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তের মালয়েশিয়া প্রতিনিধি আশরাফুল মামুন বলেন, প্রবাসীদের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখে সিকিউরিটি গার্ড বাধা দেন এবং ভিডিও না করতে হুমকি দেন।
মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে গেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মারধর করে সেখানকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইএসকেএলের নিরাপত্তাকর্মীরা। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
বুধবার (২০ নভেম্বর) হাইকমিশন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমনটি বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসীরা পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে গেলে তাদের ওপর নিরাপত্তা প্রহরীরা বলপ্রয়োগ করেছেন। বিষয়টি কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। হাইকমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। সেবা প্রদানের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে হাইকমিশন প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবাদানে সচেষ্ট রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অনিবার্য কারণে এমআরপি প্রিন্টিং সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় ই-পাসপোর্ট সেবা গ্রহণের জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার সেবাপ্রত্যাশী অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া ইএসকেএল অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন। ধারণক্ষমতার বাইরে সেবাপ্রত্যাশীদের উপস্থিতির কারণে সেবা প্রদানসহ অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক সেবাপ্রত্যাশীদের আগমন ইএসকেএল ও এর আশপাশের এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ-পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলছে এবং শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় সেবাপ্রত্যাশীদের এই নম্বরে (০৩৯২১২০২৬৭) কল করে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে পাসপোর্ট সেবা নিতে ইএসকেএলে আসার জন্য বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়।
মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। দেশটিতে থাকা প্রবাসীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে সফলতা বয়ে আনছেন পাচ্ছেন সফলতার স্বীকৃতিও। এছাড়া তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা পালন করছেন। প্রবাসে তাদের জীবন মানে সরকার এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
১১ নভেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ লাউঞ্জ উদ্বোধন শেষে বক্তৃতাকালে প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, প্রয়োজনে বিদেশে পাসপোর্ট ছাপানোর মেশিন বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। যেন দ্রুত প্রবাসীরা তাদের জরুরি পাসপোর্ট হাতে পান তার জন্য যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করছে সরকার।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়া প্রবাসী ড. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান মাজিজ বলেন, স্থানীয়ভাবে মালয়েশিয়ায় রি ইস্যু পাসপোর্ট প্রিন্ট করার ব্যবস্থা করা উচিৎ। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট অধিদপ্তর মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট অফিসারকে তাদের কেন্দ্রীয় পোর্টালের সাথে তথ্য যাচাই করার সুযোগ দিতে হবে।
অর্থাৎ কেউ পাসপোর্ট রি ইস্যু আবেদন করলে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করতে পারবে অনলাইনে। তথ্য সঠিক থাকলে সাথে সাথে প্রিন্ট এ চলে যাবে। এতে সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
নাজমুল হাসান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর তারই অংশ মিশনের পাসপোর্ট অফিসারকে সে অনুমতি দেবে কি না। নাগরিকের স্বার্থে এটি দেওয়া ফরজ হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্ধারিত মান ও গুণ বজায় রেখে প্রিন্টিং সার্ভিস নেওয়া। হতে পারে বাংলাদেশ পাসপোর্টের কাগজ ও ডিজাইন সরবরাহ করবে মালয়েশিয়ায় শুধু প্রিন্ট ও বাঁধাই হবে। নাগরিকের (প্রবাসীদের) স্বার্থে এই পদ্ধতি চালু করতে হবে। এতে পাসপোর্ট পরিবহন বাবদ বিশাল অংকের অর্থ সাশ্রয় হবে। এটি দেশের স্বার্থ। এজন্য বাংলাদেশে বিদ্যমান পাসপোর্ট আইন ও বিধি সংশোধন করতে হবে এবং যে দেশ থেকে প্রিন্ট করা হবে সে দেশের সরকারের সাথেও সমঝোতা থাকা দরকার। সূএ: জাগোনিউজ২৪.কম