মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর রুদ্ধশ্বাস মধ্যরাতে যা যা ঘটলো

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  মঙ্গলবার ভোরের দিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, ইসরায়েল আক্রমণ বন্ধ করলে ইরানের জবাব দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

যদিও ইসরায়েলের পক্ষ থেকেই বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। এর আগে, ইরানের তেহরানসহ একাধিক স্থানে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। সেসব এলাকায় রাতে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিলো। অন্যদিকে, ইসরায়েলের কিছু এলাকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইরান। মঙ্গলবার সকালে সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হবে বলে জানিয়েছিল ইরানি কর্তৃপক্ষ।

 

সোমবার রাতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। তবে সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘খুব দুর্বল’ হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। এদিকে, কাতারে ইরানের হামলার পর থেকে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে।

 

শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইরান
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি বলেছেন, স্থানীয় সময় ভোর চারটা পর্যন্ত ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন’ প্রতিহত করার জন্য সর্বোচ্চ লড়াই করেছে ইরান। তিনি দেশের সামরিক বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্থানীয় সময় ভোর চারটার পর যদি তার দেশের ওপর আর হামলা না হয়, তাহলে ইরানও আর পাল্টা হামলা চালাবে না।

 

তবে আরাঘচির এই স্ট্যাটাসের আগ পর্যন্ত ইরানে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে একটি ‘দাবি’ হিসেবেই দেখা হচ্ছিলো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায় বলা হয়েছিলো, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি’ কার্যকর হবে। তবে, কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত তেহরানের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া কিংবা সম্মতি বা অসম্মতি জানানো হয়নি।

 

বিবিসি পার্সিয়ানের সংবাদদাতা ঘনচেহ হাবিবিয়াজাদ জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসায় ইরানের রাষ্ট্রীয় ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘একটি দাবি’ হিসেবেই উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করছিল।

‘যুদ্ধ শেষ করার’ আগ্রহ জানিয়ে ইরানকে বার্তা ইসরায়েলের
কয়েক ঘণ্টা আগে ‘নজিরবিহীন শক্তি’ নিয়ে ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কিন্তু একই সাথে এ খবরও আসছে, ইসরায়েল সরকার তার আরব প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা দিয়েছে যে তারা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী।

 

গত ১১ দিনে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের অনেকগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে প্রাণহানির কারণ হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এর আগে দীর্ঘ যুদ্ধে আগ্রহ না থাকার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

 

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ট্রাম্পের
ইরান কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, আগামী ‘প্রায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যখন উভয় দেশ তাদের চলমান সামরিক অভিযান ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেবে।

 

এই যুদ্ধকে ”১২ দিনের যুদ্ধ” বলে নাম দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের ঘোষণায় ধীরে ধীরে উভয় দেশের বৈরিতার অবসানের কথা বলা হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, “২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে” এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে বিবেচিত হবে।

 

এই ঘোষণায় ট্রাম্প উল্লেখ করেন, এটি এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা “বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত”, কিন্তু তা হয়নি—এবং আর কখনো হবে না।

 

এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের সহায়তায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি সাহায্য করেছেন।

 

এই আলোচনার সাথে যুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা জানান, কাতারসহ এই অঞ্চলের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান হামলা চালানোর পর, ইরানের কর্মকর্তাদের সাথে মার্কিন প্রস্তাবের বিষয়ে ফোনে কথা বলে কাতার।

 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা “সম্পূর্ণ মিথ্যা” দাবি করে প্রতিবেদন করেছে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কোর বা আইআরজিসি’র সাথে সম্পর্কিত ফার্স নিউজ এজেন্সি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র ফার্সকে জানিয়েছে, “ইরান এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি এবং ‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যে’ একটি প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে ঘোষণাটি মিথ্যা বলে প্রমাণ করবে।”

 

সূত্রটি ফার্সকে আরও বলেছে, দোহায় মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর নিজেদের “অপমান” থেকে “মানুষের দৃষ্টি” সরাতে এই ঘোষণাটি আমেরিকার একটি প্রচেষ্টা।

কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা
শনিবার রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। হামলায় স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করা হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

এর জবাবে সোমবার রাতে কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

 

এ সময় কাতারের রাজধানী দোহার আকাশে বিকট শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিহত করার সময় আকাশে আলোর চোখ ধাঁধানো ঝলক ধরা পড়েছে সেই সময়ে তোলা ভিডিওগুলিতে।

 

ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সংঘর্ষের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা সম্প্রতি নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে প্রায় আট হাজার মার্কিন নাগরিক রয়েছেন।

 

এটি ওই অঞ্চলে সমস্ত বিমান অভিযানের মার্কিন সামরিক সদর দফতর। কিছু ব্রিটিশ সামরিক কর্মীও ‘রোটেশনে’ ওই ঘাঁটিতে কাজ করেন। কাতার সরকার জানিয়েছে, ইরানের তরফে চালানো হামলায় কারও মৃত্যু হয়নি বা কেউ আহতও হননি। ওই ঘাঁটিটি আগেই খালি করে দেওয়া হয়েছিল।

 

ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলিকে নিশানা করে হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ তাদের (ইরানকে) কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল। পাশাপাশি, তেহরানের নেতাদের ওই অঞ্চলে অস্থিরতার অবসানের জন্য কূটনৈতিক মাধ্যমের বিষয়ে সম্মত হওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছিল।

‘ইরান নীতিতে ট্রাম্পের আরেকটি ১৮০ ডিগ্রি মোড়’
বিবিসি হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি বার্ন্ড ডেবসামেন জুনিয়র বলছেন, ইরানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ করে ট্রাম্পের নীতি ১৮০ ডিগ্রি মোড় নিয়ে নতুন পথে হাঁটছে বলে দেখা যাচ্ছে।

 

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি ও বাহিনীর ওপর ইরানি প্রতিশোধমূলক হামলার জবাবে ‘ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া’ দেওয়ার হুমকি দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এখন মনে হচ্ছে আবারও শান্তির পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করছেন।

 

সোমবার সন্ধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “ইরান এখন অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে এগোতে পারে… এবং আমি ইসরায়েলকেও একই পথে চলার জন্য উৎসাহিত করছি।”

 

এই বক্তব্য রবিবারের পোস্ট থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, যেখানে তিনি ইরানে “শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন” নিয়ে কথা বলেছিলেন।

 

এই নাটকীয় মোড় এবং সামগ্রিকভাবে ইরান সংকট মোকাবিলায় ট্রাম্পের কৌশল ইঙ্গিত দেয় যে, তার পররাষ্ট্রনীতি অনেকটাই তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি ও দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল।

 

যেভাবে সংঘাতের শুরু
গত ১৩ই জুন ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েল।

 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মূলে’ আঘাত।

 

নেতানিয়াহুর মতে, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে ইরান খুব শিগগিরই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম হবে।তবে, ইরান বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।

 

এদিকে ইসরায়েলের হামলার জবাবে তেহরানও ‘ট্রু প্রমিস’ নামের অভিযানে ইসরায়েলের দিকে শত শত রকেট ও ড্রোন ছুঁড়েছে। তারপর থেকে দুই দেশ একে অপরের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মায়ের জানাজায় অংশ নিতে ২ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি

» শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম হোসেন ডলার গ্রেফতার

» বিপুল পরিমাণ সীম কার্ডসহ হ্যাকার চক্রের ২ সদস্য গ্রেফতার

» আরও সহজ হচ্ছে মেট্রোরেলের টিকিট কাটা ও ভাড়া পরিশোধ

» একনেকে ৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকার ১৭ প্রকল্প অনুমোদন

» সাদা বাথরোবে, কফি কাপ হাতে কে এই অভিনেত্রী

» চাঁদা না দেওয়ায় দাড়ি ধরে টান-অকথ্য গালাগালি, ভিডিও ভাইরাল

» ইরান থেকে আবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, দাবি ইসরায়েলের

» জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন ইশরাক

» দেশের ৫৭ কলেজের নাম পরিবর্তন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর রুদ্ধশ্বাস মধ্যরাতে যা যা ঘটলো

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  মঙ্গলবার ভোরের দিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, ইসরায়েল আক্রমণ বন্ধ করলে ইরানের জবাব দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

যদিও ইসরায়েলের পক্ষ থেকেই বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। এর আগে, ইরানের তেহরানসহ একাধিক স্থানে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। সেসব এলাকায় রাতে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিলো। অন্যদিকে, ইসরায়েলের কিছু এলাকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইরান। মঙ্গলবার সকালে সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হবে বলে জানিয়েছিল ইরানি কর্তৃপক্ষ।

 

সোমবার রাতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। তবে সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘খুব দুর্বল’ হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। এদিকে, কাতারে ইরানের হামলার পর থেকে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে।

 

শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইরান
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি বলেছেন, স্থানীয় সময় ভোর চারটা পর্যন্ত ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন’ প্রতিহত করার জন্য সর্বোচ্চ লড়াই করেছে ইরান। তিনি দেশের সামরিক বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্থানীয় সময় ভোর চারটার পর যদি তার দেশের ওপর আর হামলা না হয়, তাহলে ইরানও আর পাল্টা হামলা চালাবে না।

 

তবে আরাঘচির এই স্ট্যাটাসের আগ পর্যন্ত ইরানে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে একটি ‘দাবি’ হিসেবেই দেখা হচ্ছিলো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায় বলা হয়েছিলো, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি’ কার্যকর হবে। তবে, কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত তেহরানের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া কিংবা সম্মতি বা অসম্মতি জানানো হয়নি।

 

বিবিসি পার্সিয়ানের সংবাদদাতা ঘনচেহ হাবিবিয়াজাদ জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসায় ইরানের রাষ্ট্রীয় ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘একটি দাবি’ হিসেবেই উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করছিল।

‘যুদ্ধ শেষ করার’ আগ্রহ জানিয়ে ইরানকে বার্তা ইসরায়েলের
কয়েক ঘণ্টা আগে ‘নজিরবিহীন শক্তি’ নিয়ে ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কিন্তু একই সাথে এ খবরও আসছে, ইসরায়েল সরকার তার আরব প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা দিয়েছে যে তারা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী।

 

গত ১১ দিনে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের অনেকগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে প্রাণহানির কারণ হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এর আগে দীর্ঘ যুদ্ধে আগ্রহ না থাকার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

 

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ট্রাম্পের
ইরান কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, আগামী ‘প্রায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যখন উভয় দেশ তাদের চলমান সামরিক অভিযান ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেবে।

 

এই যুদ্ধকে ”১২ দিনের যুদ্ধ” বলে নাম দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের ঘোষণায় ধীরে ধীরে উভয় দেশের বৈরিতার অবসানের কথা বলা হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, “২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে” এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে বিবেচিত হবে।

 

এই ঘোষণায় ট্রাম্প উল্লেখ করেন, এটি এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা “বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত”, কিন্তু তা হয়নি—এবং আর কখনো হবে না।

 

এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের সহায়তায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি সাহায্য করেছেন।

 

এই আলোচনার সাথে যুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা জানান, কাতারসহ এই অঞ্চলের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান হামলা চালানোর পর, ইরানের কর্মকর্তাদের সাথে মার্কিন প্রস্তাবের বিষয়ে ফোনে কথা বলে কাতার।

 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা “সম্পূর্ণ মিথ্যা” দাবি করে প্রতিবেদন করেছে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কোর বা আইআরজিসি’র সাথে সম্পর্কিত ফার্স নিউজ এজেন্সি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র ফার্সকে জানিয়েছে, “ইরান এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি এবং ‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যে’ একটি প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে ঘোষণাটি মিথ্যা বলে প্রমাণ করবে।”

 

সূত্রটি ফার্সকে আরও বলেছে, দোহায় মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর নিজেদের “অপমান” থেকে “মানুষের দৃষ্টি” সরাতে এই ঘোষণাটি আমেরিকার একটি প্রচেষ্টা।

কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা
শনিবার রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। হামলায় স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করা হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

এর জবাবে সোমবার রাতে কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

 

এ সময় কাতারের রাজধানী দোহার আকাশে বিকট শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিহত করার সময় আকাশে আলোর চোখ ধাঁধানো ঝলক ধরা পড়েছে সেই সময়ে তোলা ভিডিওগুলিতে।

 

ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সংঘর্ষের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা সম্প্রতি নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে প্রায় আট হাজার মার্কিন নাগরিক রয়েছেন।

 

এটি ওই অঞ্চলে সমস্ত বিমান অভিযানের মার্কিন সামরিক সদর দফতর। কিছু ব্রিটিশ সামরিক কর্মীও ‘রোটেশনে’ ওই ঘাঁটিতে কাজ করেন। কাতার সরকার জানিয়েছে, ইরানের তরফে চালানো হামলায় কারও মৃত্যু হয়নি বা কেউ আহতও হননি। ওই ঘাঁটিটি আগেই খালি করে দেওয়া হয়েছিল।

 

ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলিকে নিশানা করে হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ তাদের (ইরানকে) কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল। পাশাপাশি, তেহরানের নেতাদের ওই অঞ্চলে অস্থিরতার অবসানের জন্য কূটনৈতিক মাধ্যমের বিষয়ে সম্মত হওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছিল।

‘ইরান নীতিতে ট্রাম্পের আরেকটি ১৮০ ডিগ্রি মোড়’
বিবিসি হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি বার্ন্ড ডেবসামেন জুনিয়র বলছেন, ইরানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ করে ট্রাম্পের নীতি ১৮০ ডিগ্রি মোড় নিয়ে নতুন পথে হাঁটছে বলে দেখা যাচ্ছে।

 

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি ও বাহিনীর ওপর ইরানি প্রতিশোধমূলক হামলার জবাবে ‘ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া’ দেওয়ার হুমকি দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এখন মনে হচ্ছে আবারও শান্তির পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করছেন।

 

সোমবার সন্ধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “ইরান এখন অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে এগোতে পারে… এবং আমি ইসরায়েলকেও একই পথে চলার জন্য উৎসাহিত করছি।”

 

এই বক্তব্য রবিবারের পোস্ট থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, যেখানে তিনি ইরানে “শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন” নিয়ে কথা বলেছিলেন।

 

এই নাটকীয় মোড় এবং সামগ্রিকভাবে ইরান সংকট মোকাবিলায় ট্রাম্পের কৌশল ইঙ্গিত দেয় যে, তার পররাষ্ট্রনীতি অনেকটাই তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি ও দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল।

 

যেভাবে সংঘাতের শুরু
গত ১৩ই জুন ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েল।

 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মূলে’ আঘাত।

 

নেতানিয়াহুর মতে, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে ইরান খুব শিগগিরই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম হবে।তবে, ইরান বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।

 

এদিকে ইসরায়েলের হামলার জবাবে তেহরানও ‘ট্রু প্রমিস’ নামের অভিযানে ইসরায়েলের দিকে শত শত রকেট ও ড্রোন ছুঁড়েছে। তারপর থেকে দুই দেশ একে অপরের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com