ছবি সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেদের মত, এটি মার্কিন বিমান বাহিনীর এফ-৩৫, চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত।
বিশ্বের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর অন্যতম এফ-৩৫ ‘স্টেল্থ’ প্রযুক্তিসম্পন্ন। ফলে রাডারের নজরদারি এড়িয়ে শত্রুপক্ষের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে হামলা বা নজরদারির কাজ করতে পারে।
তবে এই এফ-৩৫ নিয়ে জার্মানি এমন এক দাবি করেছে, যা নিয়ে গোটা বিশ্বে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে।
জার্মানির আশঙ্কা, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে এমন একটি ‘কিল সুইচ’ রয়েছে, যা সক্রিয় করলে ওই যুদ্ধবিমানগুলো মুহূর্তেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।
জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ১৩টি ইউরোপীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চুক্তি করেছে। কিল সুইচের ধারণা সত্যি হলে ওই দেশগুলো বিপাকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। কেউ কেউ আবার মনে করছেন এর ফলে ওই দেশগুলোকে ট্রাম্পের ‘হাতের পুতুল’ হয়ে থাকতে হতে পারে!
কিন্তু কী এই ‘কিল সুইচ’? ‘কিল সুইচ’ হল এমন একটি সুইচ যা দিয়ে এক মুহূর্তে যুদ্ধবিমান নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যাবে, সেগুলো দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন। জার্মানির আশঙ্কা, এভাবে এফ-৩৫ বিমানগুলোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমেরিকার কাছে।
কিন্তু তা নিয়ে কেন আশঙ্কা প্রকাশ করছে জার্মানি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু কোটির একটি চুক্তি করেছে জার্মানি, যার আওতায় ৩৫টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পেতে চলেছে তারা। আর সে কারণেই জার্মানির আশঙ্কা, যুদ্ধবিমানগুলো তাদের কাছে থাকলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমেরিকার হাতেই।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে ‘কিল সুইচ’ থাকা নিয়ে বহু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। যদিও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা প্রমাণিত হয়নি। জার্মানির ওই দাবিতে, বিষয়টি নিয়ে আবার নতুন করে হইচই পড়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সাহায্য বন্ধ করার ঘোষণা করেছিল ট্রাম্প সরকার। তার আগে দু’দেশের মধ্যে খনিজ চুক্তি স্থগিত হয়। এরপরই একটি রিপোর্টে উঠে আসে যে, ইউক্রেনের হাতে থাকা মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো ইউক্রেনে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
এরপরই উদ্বেগ তৈরি হয় যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইউক্রেনের মতো অন্য দেশেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন ট্রাম্প। যখন তখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হাতে থাকা যুদ্ধবিমানগুলো নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারেন তিনি।
পরে জানা যায়, রাডার সিস্টেমের জন্য কাজ করা বন্ধ করেছিল এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো। তবে নিজেদের ‘কিল সুইচ’ দাবি থেকে পিছু হঠেনি জার্মানি। জার্মানির অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘হেনসোল্টের’ যোগাযোগ বিভাগের প্রধান জোয়াকিম শ্রানজোফার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “এফ-৩৫-এর কিল সুইচ কিন্তু কোনও গুজব নয়।”
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান কঠোর অবস্থানের কারণে ইউরোপীয় নেতারা জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই জার্মানির দাবি, ভবিষ্যতে তাদের জব্দ করতে কিল সুইচের ব্যবহার করতে পারে আমেরিকা।
সুইজারল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বিভাগ আবার অন্য কথা বলছে। তাদের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ নিষ্ক্রিয় করতে পারে, এমন দাবি ভুয়া। তারা জোর দিয়ে বলেছে, যুদ্ধবিমানগুলো যেকোনও সময় স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল ফ্রেডেরিক ভ্যানসিনাও গত সপ্তাহে বলেছিলেন, “এফ-৩৫ কোনও রিমোট-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিমান নয়।”
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান উলফগ্যাং ইশিংগার সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ট্রাম্পের সমর্থন না করা প্রতিরক্ষা বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কের জন্য অশুভ ইঙ্গিত।
তিনি আরও বলেন, “যদি আমাদের আশঙ্কা হয় যে, আমেরিকা এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিয়ে জার্মানির সঙ্গেও ইউক্রেনের মতোই করবে, তাহলে চুক্তি বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।”
উল্লেখ্য, এফ ৩৫-এর তিনটি ধরন রয়েছে। এফ ৩৫এ, এফ৩৫বি এবং সি। এফ ৩৫এ যুদ্ধবিমানের এক একটির দাম আট কোটি মার্কিন ডলার।
এফ৩৫বি-এর একটির দাম সাড়ে ১১ কোটি মার্কিন ডলার এবং এফ ৩৫সি ভ্যারিয়ান্টের একটির দাম ১১ কোটি মার্কিন ডলার । সূত্র: ডেইলি মেইল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে