একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নড়াইলের লোহাগড়ার ১০ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিদের সাফাই উভয় পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়েছে। এখন মামলায় যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের জন্য আগামী ১৪ মার্চ দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম।
আদালতে এ দিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস সুবহান তরফদার ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
আসামিদের মধ্যে পাঁচজন কারাগারে। এরা হলেন-যশোরের কোতোয়ালীর শংকরপুর এলাকার আমিন উদ্দিন মোল্লার ছেলে ওহাব মোল্লা (৮০), যার স্থায়ী ঠিকানা নড়াইলের ফুলেশ্বর গ্রামে। নড়াইলের বড়শুলা এলাকার রোকন উদ্দিন শেখের ছেলে ওমর আলী (৬৪), তুলারামের আব্দুর রহমানের ছেলে বদরুদ্দোজা (৭৫), লোহাগড়ার নওয়াগ্রামের নবীর শেখের ছেলে দাউদ শেখ (৬৭) ও নড়াইলের শেখহাটির রবিউল হোসেন খানের ছেলে গুলজার হোসেন খান (৭৫)। পলাতক আসামিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জাগো নিউজকে বলেন, মামলায় মোট আসামি ছিলেন ১২ জন। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন ৫ জন। দুজন জামিনে এবং তিন জন এখন কারাগারে। গ্রেফতারের আগেই পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন আরও দুই আসামি। বাকিরা পলাতক।
এর আগে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর আটক দুই আসামিকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আসামিরা হলেন-নওয়াগ্রামের নবীর শেখের ছেলে দাউদ শেখ এবং ঝিনাইদহ সদরের কোলা (পূর্বপাড়া) প্রয়াত আ. হামিদ মিয়ার ছেলে মো. আব্দুর রশিদ মিয়া। অসুস্থ থাকায় তাদের ঢাকায় ছেলে বা আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে হবে এবং কখনো গ্রামের বাড়ি যেতে পারবেন না শর্তে জামিন দেন আদালত।
রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, ঢাকায় অবস্থান করা, পাসপোর্ট থাকলে জমা দেওয়াসহ কয়েকটি শর্তে মেডিকেল গ্রাউন্ডে দাউদ শেখকে ২ ডিসেম্বর এবং আব্দুর রশিদকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়।
নড়াইলের এসব আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন।
২০১৭ সালের ২৭ জুলাই নড়াইলের লোহাগড়ার নওয়াগ্রামের নবীর শেখের ছেলে দাউদ শেখসহ যশোর-নড়াইলের ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তদন্ত সংস্থা। ৪৩৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ আনা হয়।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদরের কোলা (পূর্বপাড়া) মৃত আ. হামিদ মিয়ার ছেলে মো. আব্দুর রশিদ মিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তদন্ত সংস্থা। এ তিনজনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৭ জুন তদন্ত শুরু হয়। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।