মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের ৯ জনের রায় পিছিয়ে ৩০ নভেম্বর

ফাইল ফটো

 

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের ৯ জনের বিরুদ্ধে রায়ের দিন পিছিয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় একজন পলাতক আসামি সুলতান খান মারা যাওয়ায় রায়ের দিন পেছানো হলো।

আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য নতুন এদিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মেজবাউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

রায় ঘোষণার জন্য গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই দিন ধার্য করেন।

এ মামলায় কারাবন্দি তিন আসামি হলেন- খান আকরাম হোসেন, শেখ মো. উকিল উদ্দিন ও মো. মকবুল মোল্লা। অন্যরা পলাতক রয়েছেন।

 

আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো:

এক নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২৬ মে ১৫/২০ জন রাজাকার ও ২৫/৩০ জন পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষদের ওপর অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে ৪০/৫০টি বাড়ির সব মালামাল লুণ্ঠন করে, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, দুইজন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করে এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।

 

দুই নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই আসামিরা বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেয়।

 

তিন নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুইজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।

 

চার নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঁঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়।

 

পাঁচ নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল গ্রাম হতে নিরস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে অন্যায়ভাবে আটক ও অপহরণ করে মোড়লগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাঁটির ব্রিজের ওপরে নিয়ে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে।

 

ছয় নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে অবৈধভাবে আটক করে হত্যা করে এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে সলিমাসহ চারজনকে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।

 

সাত নম্বর অভিযোগ : বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন গজালিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রী কমলা রানি কর্মকারকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করতে থাকে। আসামিরা শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে কমলা রানি কর্মকারকে জোরপূর্বক অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে এনে আটকে রাখে। উল্লিখিত আসামিসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে কমলা রানি কর্মকারসহ আটক করা অন্যান্য চারজনকে দীর্ঘদিন রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। প্রায় এক মাস শারীরিক নির্যাতনের পর কমলা রানি কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারী ঢাবির ছাত্রলীগ নেতা ইমনকে গ্রেফতার

» গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরি: ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

» একদিনের ব্যবধানে কমল স্বর্ণের দাম

» নাগরিক কমিটিতে যুক্ত হলেন সারজিসসহ আরও ৪৫ জন

» সকল ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের ঘোষণা

» অহিংস গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক মাহবুবুল আলম গ্রেপ্তার

» চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার: প্রতিবাদে ডিবির সামনে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ

» ডিবি হেফাজতে সনাতন জাগরণ মঞ্চের চিন্ময় কৃষ্ণ

» অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদশের আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন আটক

» ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ৮ দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের ৯ জনের রায় পিছিয়ে ৩০ নভেম্বর

ফাইল ফটো

 

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের ৯ জনের বিরুদ্ধে রায়ের দিন পিছিয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় একজন পলাতক আসামি সুলতান খান মারা যাওয়ায় রায়ের দিন পেছানো হলো।

আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য নতুন এদিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মেজবাউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

রায় ঘোষণার জন্য গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই দিন ধার্য করেন।

এ মামলায় কারাবন্দি তিন আসামি হলেন- খান আকরাম হোসেন, শেখ মো. উকিল উদ্দিন ও মো. মকবুল মোল্লা। অন্যরা পলাতক রয়েছেন।

 

আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো:

এক নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২৬ মে ১৫/২০ জন রাজাকার ও ২৫/৩০ জন পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষদের ওপর অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে ৪০/৫০টি বাড়ির সব মালামাল লুণ্ঠন করে, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, দুইজন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করে এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।

 

দুই নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই আসামিরা বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেয়।

 

তিন নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুইজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।

 

চার নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঁঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়।

 

পাঁচ নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল গ্রাম হতে নিরস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে অন্যায়ভাবে আটক ও অপহরণ করে মোড়লগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাঁটির ব্রিজের ওপরে নিয়ে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে।

 

ছয় নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে অবৈধভাবে আটক করে হত্যা করে এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে সলিমাসহ চারজনকে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।

 

সাত নম্বর অভিযোগ : বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন গজালিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রী কমলা রানি কর্মকারকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করতে থাকে। আসামিরা শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে কমলা রানি কর্মকারকে জোরপূর্বক অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে এনে আটকে রাখে। উল্লিখিত আসামিসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে কমলা রানি কর্মকারসহ আটক করা অন্যান্য চারজনকে দীর্ঘদিন রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। প্রায় এক মাস শারীরিক নির্যাতনের পর কমলা রানি কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com