মাথা ছাড়া আড়াই বছর বেঁচে ছিল যে মুরগি

সংগৃহীত ছবি

 

ফিচার ডেস্ক :বিশ্বে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে, যার বেশিরভাগ অনেকেই জানেন না। তবে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যা মানুষ মনে রাখেন যুগের পর যুগ ধরে। কেউ বলেন অলৌকিক, কেউ খোঁজেন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। তেমনই একটি ঘটনা ঘটে যায় ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ফ্রুইটাতে।

 

এখানকার বাসিন্দা ওলসেন। তার পারিবারিক একটি মুরগির খামার ছিল। সেদিন বাজারে নেওয়ার জন্য ওলসেন মুরগি জবাই করছিলেন। এর মধ্যে একটি মুরগি আশ্চর্যজনকভাবে মাথা কাটার পরও দৌড়াচ্ছিল। ওলসেন ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবেই নেন। কারণ নিশ্চয়ই দেখেছেন মুরগি জবাই করার কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত নড়াচড়া করে।

বেশিকিছু না ভেবে ওলসেন মুরগিটিকে ধরে একটি বাক্সের মধ্যে রাখেন। আশ্চর্যজনকভাবে পরের দিন সকালেও ওলসেন দেখলেন মুরগিটি বেঁচে আছে। তিনি নিজেই এই ঘটনায় কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। বাক্সে রাখা মুরগিটির নাম দেন তিনি ‘মাইক’।

মুরগির মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ মাথা ও চোখের পেছনে থাকে। যখন ওলসেন মাথা কাটার জন্য কোপ দেন তখন মাইকের মাথার সামনের বেশির ভাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস, হজম ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের অংশটি অক্ষত রয়ে যায়।

মাথা ছাড়া আড়াই বছর বেঁচে ছিল যে মুরগি

পরবর্তীতে তিনি মুরগিটিকে খাওয়ানোর কৌশল আবিষ্কার করেন। সেটির খাদ্যনালীতে ড্রপার দিয়ে পানি ও তরল খাবার দিতেন। পাশাপাশি সিরিঞ্জ দিয়ে গলা থেকে শ্লেষ্মা অপসারণ করতেন। এভাবে বেশ সুস্থ সবল শরীর নিয়েই বেঁচে ছিল মাইক। সে সময় মাইক এতটাই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল যে, টাইম ম্যাগাজিনও এটিকে নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছিল।

 

হোপ ওয়েড নামে একজন প্রবর্তক বিখ্যাত মুরগির কথা শুনে সেটি দেখতে আসেন। তিনি ওলসেনকে মুরগিটিকে সল্টলেকের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে রাজি করান যাতে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে পারেন যে সত্যিই কলোরাডোর ফ্রুটাতে একটি মাথাবিহীন মুরগি সত্যিই আছে।

 

বিজ্ঞানীরা নির্ণয় করেছেন যে একটি কানের অংশ, জগুলার শিরা এবং মস্তিষ্কের বেস যা মোটর ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে। সেটি অক্ষত রয়েছে। ফলে মাইক বেঁচে আছে। সল্টলেকের স্থানীয় কাগজপত্রে খবর ছড়িয়েছিল যে একটি মুরগি মাথা ছাড়াই বেঁচে আছে। লোকেরা বিখ্যাত মুরগিটিকে দেখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

এ ঘটনায় ওলসেন বুঝতে পারেন, মাইক বিখ্যাত হতে যাচ্ছে! মানুষ এটিকে টাকা দিয়ে দেখতে আসবে। ফলে সল্টলেকে একটি ছোট সাইড শোয়েরও আয়োজন করা হয়েছিল মাইককে প্রদর্শনের জন্য। ঘটনার পরের ১৮ মাস বিভিন্ন মেলা, কার্নিভ্যাল ও অন্যান্য পাবলিক ইভেন্টে এই মস্তকবিহীন মুরগিটি প্রদর্শন করেন ওলসেন। এগুলো করে বেশ অর্থও কামান তিনি।

মাথা ছাড়া আড়াই বছর বেঁচে ছিল যে মুরগি

সেসময় এই শোয়ের একটি টিকিট ছিল ০.২৫ ডলার, যা আজকের সময়ে প্রায় ২.৫০ ডলারের সমান। মাইক দিনে ৬০০ জন দর্শকের সঙ্গে দেখা করত। মাইক শুধু লং বিচের সাইডশোইতেই নয় ফিনিক্স, অ্যারিজোনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও গিয়েছিল।

১৯৪৭ সালের ১৭ মার্চ অ্যারিজোনার ফিনিক্সে প্রদর্শনীর জন্য সফরকালে মাইক মারা যায়। ওলসেন ও তার স্ত্রী ক্লারা তাদের হোটেলের ঘরে মাইকের শ্বাসনালির গড়গড় শব্দে জেগে ওঠেন। মাইককে বাঁচানোর জন্য তারা সিরিঞ্জ খুঁজছিলেন, কিন্তু সিরিঞ্জটি ভুলবশত এটি সাইড শো-তে রেখে এসেছিলেন। ফলে মাইকের গলা থেকে শ্লেষ্মা টেনে বের করা যায়নি। এতে একসময় দম বন্ধ হয়ে মারা যায় মুরগিটি।

মাইককে তখন সোনার ডিম পাড়া সত্যিকারের হাঁস নামে খ্যাতি পেয়েছিল বটে। এই আশ্চর্যজনক ঘটনাটি বহু দশক আগে ঘটলেও, ফ্রুইটারের নাগরিকরা মুরগিটিকে ভুলে যায়নি। এটিকে সেখানকার জনগণ ‘মাইক দ্য হেডলেস চিকেন’ নামে চেনে। এখনো মাইকের সেই জন্মস্থানে প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহান্তে মাইক দ্য হেডলেস চিকেন ফেস্টিভালে উদযাপন করা হয়। সূত্র: ফ্রুটা হিস্ট্রি, বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার : ডা. শফিকুর রহমান

» অন্তর্বর্তী সরকার কঠিন সময়ে এসে পড়েছে : মান্না

» ফার্মগেটে ককটেল বোমা উদ্ধার, চলছে নিষ্ক্রিয়ের কাজ

» বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাল্টে দিল ছাত্র-জনতা

» একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশকে বিশৃঙ্খলা ও সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : দুদু

» ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত যুবকের মৃত্যু

» ব্যবসাবাণিজ্যের বেহাল দশা ও করণীয়

» গাজীপুরে হামলার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল

» সড়ক দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত

» ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ হতে দেব না : রিজভী

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মাথা ছাড়া আড়াই বছর বেঁচে ছিল যে মুরগি

সংগৃহীত ছবি

 

ফিচার ডেস্ক :বিশ্বে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে, যার বেশিরভাগ অনেকেই জানেন না। তবে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যা মানুষ মনে রাখেন যুগের পর যুগ ধরে। কেউ বলেন অলৌকিক, কেউ খোঁজেন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। তেমনই একটি ঘটনা ঘটে যায় ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ফ্রুইটাতে।

 

এখানকার বাসিন্দা ওলসেন। তার পারিবারিক একটি মুরগির খামার ছিল। সেদিন বাজারে নেওয়ার জন্য ওলসেন মুরগি জবাই করছিলেন। এর মধ্যে একটি মুরগি আশ্চর্যজনকভাবে মাথা কাটার পরও দৌড়াচ্ছিল। ওলসেন ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবেই নেন। কারণ নিশ্চয়ই দেখেছেন মুরগি জবাই করার কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত নড়াচড়া করে।

বেশিকিছু না ভেবে ওলসেন মুরগিটিকে ধরে একটি বাক্সের মধ্যে রাখেন। আশ্চর্যজনকভাবে পরের দিন সকালেও ওলসেন দেখলেন মুরগিটি বেঁচে আছে। তিনি নিজেই এই ঘটনায় কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। বাক্সে রাখা মুরগিটির নাম দেন তিনি ‘মাইক’।

মুরগির মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ মাথা ও চোখের পেছনে থাকে। যখন ওলসেন মাথা কাটার জন্য কোপ দেন তখন মাইকের মাথার সামনের বেশির ভাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস, হজম ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের অংশটি অক্ষত রয়ে যায়।

মাথা ছাড়া আড়াই বছর বেঁচে ছিল যে মুরগি

পরবর্তীতে তিনি মুরগিটিকে খাওয়ানোর কৌশল আবিষ্কার করেন। সেটির খাদ্যনালীতে ড্রপার দিয়ে পানি ও তরল খাবার দিতেন। পাশাপাশি সিরিঞ্জ দিয়ে গলা থেকে শ্লেষ্মা অপসারণ করতেন। এভাবে বেশ সুস্থ সবল শরীর নিয়েই বেঁচে ছিল মাইক। সে সময় মাইক এতটাই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল যে, টাইম ম্যাগাজিনও এটিকে নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছিল।

 

হোপ ওয়েড নামে একজন প্রবর্তক বিখ্যাত মুরগির কথা শুনে সেটি দেখতে আসেন। তিনি ওলসেনকে মুরগিটিকে সল্টলেকের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে রাজি করান যাতে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে পারেন যে সত্যিই কলোরাডোর ফ্রুটাতে একটি মাথাবিহীন মুরগি সত্যিই আছে।

 

বিজ্ঞানীরা নির্ণয় করেছেন যে একটি কানের অংশ, জগুলার শিরা এবং মস্তিষ্কের বেস যা মোটর ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে। সেটি অক্ষত রয়েছে। ফলে মাইক বেঁচে আছে। সল্টলেকের স্থানীয় কাগজপত্রে খবর ছড়িয়েছিল যে একটি মুরগি মাথা ছাড়াই বেঁচে আছে। লোকেরা বিখ্যাত মুরগিটিকে দেখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

এ ঘটনায় ওলসেন বুঝতে পারেন, মাইক বিখ্যাত হতে যাচ্ছে! মানুষ এটিকে টাকা দিয়ে দেখতে আসবে। ফলে সল্টলেকে একটি ছোট সাইড শোয়েরও আয়োজন করা হয়েছিল মাইককে প্রদর্শনের জন্য। ঘটনার পরের ১৮ মাস বিভিন্ন মেলা, কার্নিভ্যাল ও অন্যান্য পাবলিক ইভেন্টে এই মস্তকবিহীন মুরগিটি প্রদর্শন করেন ওলসেন। এগুলো করে বেশ অর্থও কামান তিনি।

মাথা ছাড়া আড়াই বছর বেঁচে ছিল যে মুরগি

সেসময় এই শোয়ের একটি টিকিট ছিল ০.২৫ ডলার, যা আজকের সময়ে প্রায় ২.৫০ ডলারের সমান। মাইক দিনে ৬০০ জন দর্শকের সঙ্গে দেখা করত। মাইক শুধু লং বিচের সাইডশোইতেই নয় ফিনিক্স, অ্যারিজোনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও গিয়েছিল।

১৯৪৭ সালের ১৭ মার্চ অ্যারিজোনার ফিনিক্সে প্রদর্শনীর জন্য সফরকালে মাইক মারা যায়। ওলসেন ও তার স্ত্রী ক্লারা তাদের হোটেলের ঘরে মাইকের শ্বাসনালির গড়গড় শব্দে জেগে ওঠেন। মাইককে বাঁচানোর জন্য তারা সিরিঞ্জ খুঁজছিলেন, কিন্তু সিরিঞ্জটি ভুলবশত এটি সাইড শো-তে রেখে এসেছিলেন। ফলে মাইকের গলা থেকে শ্লেষ্মা টেনে বের করা যায়নি। এতে একসময় দম বন্ধ হয়ে মারা যায় মুরগিটি।

মাইককে তখন সোনার ডিম পাড়া সত্যিকারের হাঁস নামে খ্যাতি পেয়েছিল বটে। এই আশ্চর্যজনক ঘটনাটি বহু দশক আগে ঘটলেও, ফ্রুইটারের নাগরিকরা মুরগিটিকে ভুলে যায়নি। এটিকে সেখানকার জনগণ ‘মাইক দ্য হেডলেস চিকেন’ নামে চেনে। এখনো মাইকের সেই জন্মস্থানে প্রতি বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহান্তে মাইক দ্য হেডলেস চিকেন ফেস্টিভালে উদযাপন করা হয়। সূত্র: ফ্রুটা হিস্ট্রি, বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com