ছবি সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্ট: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে শাহিদা বেগম (৬৫) নামে এক নারীর লাশ পাওয়া যায় বাড়ির সেফটি ট্যাংকে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এবার এ হত্যার ঘটনার তিনমাস পর রহস্য উন্মোচন করল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ।
তদন্তে উঠে এসেছে মা ও স্বামীকে সবসময় অপমান, মায়ের সেবা যত্ন না করার ক্ষোভে স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন স্বামী। স্বামী আব্দুল মমিন মসজিদের ইমাম ছিলেন। বৃহস্পতিবার ( ২৪ এপ্রিল) সকালে প্রেস বিপিং এমটাই দাবি করেন চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ।
এ ঘটনায় ওই বৃদ্ধার ছেলে মো মাছুম বিল্লাহ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১ নম্বর স্বাক্ষী করা হয় বৃদ্ধার স্বামী ৬৮ বছর বয়সী স্বামী আবদুল মমিনকে। দীর্ঘ তদন্ত আর জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ অবশেষে নিশ্চিত হয় ওই বৃদ্ধার স্বামীই বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর স্ত্রীর মরদেহ বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলেন সেপটিক ট্যাংকে। ক্লু-লেস এই হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলাটি তদন্ত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক হেশাম উদ্দিন।
ওসি বলেন, বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে কুমিল্লার আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আবদুল মমিন। সেখানে মমিন দাবি করেন, পারিবারিক কলহ এবং তার ১৩০ বছর বয়সী মা আতর বানুর সেবাযত্ন করতে অনীহা প্রকাশ করায় কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রাম থেকে ওই বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শাহিদা বেগমের স্বামী মাওলানা আবদুল মমিন স্থানীয় একটি মসজিদে দীর্ঘদিন ধরে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদ সম্মেলনে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার পর বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের সন্দেহ হয় আবদুল মমিনের ওপর। এরপর আমরা তাকে নজরদারিতে রাখি। এক পর্যায়ে গত ২৭ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হলে আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২১ এপ্রিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চৌদ্দগ্রাম থানায় আনা হয়। এরপর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মমিন স্ত্রীকে হত্যার করা স্বীকার করেন। সর্বশেষ বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করেন তিনি।
জবানবন্দিতে আবদুল মমিন দাবি করেন, তার মায়ের বয়স ১৩০ বছরের কাছাকাছি। তার মা চলাফেরা করতে পারতেন না, তবে সুস্থ আছেন। মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় সময় তার ঝগড়া হতো। মমিন ও তার ভাই পালাক্রমে এক মাস করে তাদের মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবাযত্ন করতেন। মমিনের ছেলে তাদের পুরাতন বাড়িতে মা এবং পরিবার নিয়ে থাকতেন। মমিন থাকতেন ঘোলপাশা মসজিদ সংলগ্ন তাদের নতুন বাড়িতে। তার মা যখন তাদের পুরাতন বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তখন মমিন সেখানে মায়ের খোজখবর নিতে যান।
তখন তার মা তার কাছে নালিশ করেন যে, তার স্ত্রী মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। তখন মমিন মনে মনে রাগ হন এবং মমিন তার নতুন বাড়িতে ফিরে আসেন। ওইদিন গভীর রাতে নতুন বাড়িতে শারীরিক সম্পর্ক শেষে মমিন তার স্ত্রী শাহিদা বেগমকে তার মায়ের সাথে খারাপ আচরণের বিষয়টি জিজ্ঞেস করেন। এতে শহিদা রাগান্বিত হয়ে মমিনকে বিভিন্ন গালমন্দ শুরু করেন। মমিন এতে বিরক্ত হয়ে তার পাশে থাকা বালিশ দিয়ে স্ত্রীর নাক, মুখে চাপ দিয়ে ধরে রাখেন। কিছুক্ষণ পর দেখেন তার স্ত্রী আর নড়াচড়া করছে না।
জবানবন্দিতে তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পর অনেক চিন্তাভাবনা করে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির উত্তর পাশে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলেন এবং ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দেন। ভিকটিমের লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় পেটিকোটটি লাশের শরীর থেকে পড়ে গিয়েছিল। মমিন লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলার পর বাড়ির নলকূপে গোসল করে পেটিকোটটি বালতির মধ্যে রেখে ৫টার দিকে মসজিদে চলে যান। এরপর মসজিদ থেকে এসে তার ছেলেকে ফোন দিয়ে বলেন- তোমার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
পরে তার ছেলেসহ আশেপাশের লোকজন আসামির নতুন বাড়িতে এসে ভিকটিমকে খুঁজতে থাকে এবং একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভিকটিমের লাশ সেপটিক ট্যাংকে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেশাম উদ্দিন বলেন, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি একাই পুরো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা সম্ভব হবে।