অ আ আবীর আকাশ :সারা দুনিয়ার শান্তিপ্রিয় মানুষ হয়তো কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে এই ভেবে যে, আপাতত ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতি চলছে বলে। পৃথিবীর তাবৎ মানুষেরা যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায়। সহাবস্থান নিয়ে, মৌলিক অধিকার অক্ষুন্ন রেখে বাঁচতে চায়। ফিলিস্তিনে গত ক’বছর ধরে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলি হামলার দরুন যেভাবে সাজানো একটি দেশ, পতাকা, মানুষের বসতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এর দায় পৃথিবীর আর কে দিতে পারবে? তাজা শিশুর প্রাণ কিসের বিনিময়ে ফেরত দিতে পারবে?
তবে সে তুলনায় ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কোনরকম পারমাণবিক বোমা বা সেল নিক্ষেপ করেনি বা এখনো সে পথে হাঁটতে হয়নি দু’দেশের কোন দেশকেই। যদিও বিশ্ববাসী সে আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায়নি বলে ভেবেছে, তথাপিও আবার যুদ্ধবিরতি শেষে ফের যদি যুদ্ধে নামতে হয় তাহলে ভারত পাকিস্তান নিশ্চয়ই তখন আর কেউ এ বিষয়ে পিছপা হবেন না। তখন হয়তো তারা পুনরায় আগের চরিত্রে আগের রূপে ফিরে যাবেন, ভারত পাকিস্তান বহু বছর ধরে চলমান কাহিনীতে। যদি ভারতে কোন সন্ত্রাসী হামলা হয় তাহলে পাকিস্তানকে দায়ী করবে। উভয় দেশের সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান করবে। এতে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হবে। এরপর আবার ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে। এরকম বহু ঘটনার সাথে ভারত পাকিস্তান বহু আগ থেকেই পরিচিত।
এবার যখন ভারত পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চলছিল তখন ঠিক উত্তেজনার চরম মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেন-‘হয়তো ভারত পাকিস্তান দু দেশের মধ্যে পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরোধী চূড়ান্ত হয়েছে’। ট্রাম্পের ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এই দুই দেশ পাল্টাপাল্টি আক্রমণ কীেই যাচ্ছে।ভারত প্রথম দফাতেই পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ করে। পরিস্থিতি এতো মারাত্মক অবস্থায় যখন চলছিলো ঠিক তখনই যেন ট্রাম্পের এমন স্ট্যাটাসে যুদ্ধ থমকে যায়।
পরিস্থিতি ক্রমাগত যখন এমন পর্যায়ে চলে যেতে থাকলো যে, যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যেতে পারে, এমন ভাবনা ভেবেছিলো ভারত পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষেরাও। কাশ্মীরের নিজেদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের যে গভীরে ঢুকে হামলা চালানোর যে কৌশল ছিল তা মুহূর্তেই বুমেরাং হয়ে গেছে ও মিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গেছে ভারতের। এই যুদ্ধে ভারতের যেসব বিমান পাকিস্তানের সৈন্যরা ভূপতিত করেছে সেগুলোর মধ্যে ছয়টি ফরাসি রাফাল জেট ছিল। প্রতিটির রাফালের দাম যেখানে ২৫ কোটি ডলারের বেশি সেখানে এই অত্যাধুনিক শক্তিশালী যুদ্ধবিমান বাস্তবে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
ভারত ভেবেছিল- এই বিমান দিয়ে পাকিস্তানকে কুপোকাত করবে, ফরাসি রাফাল তার যুদ্ধবিধ্বংসীতা দেখাবে। আদতে তা না হয়ে পাকিস্তান সৈন্যদের রাফালের অর্ধেকের অর্ধেক দামে সস্তায় কেনা যুদ্ধবিমানের কাছে হেরে গেছে। পাকিস্তানের বিমান তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও তাদের সৈন্যদের দক্ষতার কাছে, যুদ্ধকৌশলের কাছে হেরে গেছে রাফাল কিবা ভারতের নীল নকশা। রাফাল নিয়ে ভারত সরকার যে উচ্চাকাঙ্খা করেছে, যে আশা করেছে তা মোটেও দেখাতে পারেনি রাফাল।
পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে দামি যুদ্ধ বিমান ছিল জে-১০ সি। যা কিনতে রাফালের দামের পাঁচ ভাগের এক ভাগ খরচ পড়েছে। এত সস্তা বিমান দিয়ে ভারতের এত উচ্চমূল্যে কেনা রাফাল ভূপতিত করে পাকিস্তান সৈন্যরা। তাদের দক্ষতা একনিষ্ঠতা আর যান্ত্রিক কলাকৌশলের কাছে হেরে গেছে ভারত।
আশঙ্কা করা হচ্ছে এই দুই দেশের পাল্টাপাল্টি যুদ্ধে কতই বা বিদ্বংসী রূপ নিতে পারে। এই দুই দেশের হাতে কৌশলগত ও কৌশলগত প্রায় ৩০০ টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এগুলো ব্যবহারের নানা ধরনের কলাকৌশল তাদের হাতে রয়েছে। যদিও এইভাবে চলতে থাকে তাহলে তাদের একটু ভুল বা ভুল সিদ্ধান্ত উভয় দেশের কি পরিণতি বয়ে আনতে পারে তা ভাবতে পারা যায় না।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ভারত সরকার পাকিস্তানে প্রথমে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালায়। এ হামলায় প্রাথমিকভাবে ১২ জনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এরপর পাকিস্তান পরের দিন পাল্টা আক্রমণ করে। ভারতের একের পর এক হুমকি, রাফাল দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার ঘোষণায় ভারতের পরাজয় নেমে আসে। পাকিস্তানের যুদ্ধ কৌশলের কাছে এত মানুষের মৃত্যুর খবর, যুদ্ধবিমান ভূপতিত হওয়ার খবর সবই ভারত গোপন রাখার চেষ্টা করেও পারেনি। যুদ্ধবিমান রাফালের পাইলট আসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রাফাল ধ্বংস পরবর্তী পাইলট রক্ষা পাওয়ায় তথা সেভ হওয়ায় একটি ভিডিও চিত্র তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছে। সেভ হওয়া পাইলটদের তালিকা কাউন করেছে। সেখান থেকে মূলত চেপে রাখা ভারতের খবর প্রকাশ পায় ও রাফাল ধ্বংসের খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে।
ভারতের অনেক পাঠক মনে করতে পারেন যে আমার এই লেখায় তাদের দেশের স্বার্থকে খাটো করে দেখা হয়েছে। আদতে তা নয়। তারা যা শুনেছেন তাদের সরকারি বার্তা প্রদানের মাধ্যমে, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন গণমাধ্যম ও পরিচ্ছন্ন ছাঁকাছাঁকি করা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে যা সরবরাহ করা হয় তা একচেটিয়া একপেশে সংবাদ বা তথ্য পেয়েছেন। মূলত বহির্বিশ্বের গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত সংবাদ, বিশ্লেষণ, মতামত তারা কতটুকু জানে বা জানতে পারেন তা বোধগম্য নয়। কিন্তু তাদের এটা ভাবা উচিত ভারতের সরকার পাকিস্তানের সাথে আলোচনার বিষয়ে কোন অবস্থানে কিরূপ ভূমিকায় ছিলো।
যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় ওই দুই দেশকে ‘কমনসেন্স ও চমৎকার বুদ্ধিমত্তা ’ দেখানোর জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র টুইটারে একটি পোস্ট ছিল আরো বেশি গুরুত্ববহ ও ইঙ্গিত পণ্য। রুবিও’র বলেন তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতা, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসেন।
রুবিও’র দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের বিচক্ষণতা ধৈর্য আর নেতৃত্ব গুণের প্রশংসা করেন। কারণ তারা শান্তির পথ খুঁজে নিয়েছেন। তবে রুবিও’র বক্তব্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল- ‘একটি নিরপেক্ষ স্থানে বসে বহু বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে দুই দেশের নেতারা সম্মত হয়েছেন।’
আলোচনা কখন, কোথায় হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি। আবুধাবি হোক আর যেখানেই হোক স্বস্তির কথা হচ্ছে, ভারত তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। ভারত যা আগে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ আখ্যা দিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হতে চায়নি, সেখানে ভারতের দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসার কারণে আগের সিদ্ধান্ত ও কৌশল থেকে সরে এসেছে। আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। তাতে আপাতত পাকিস্তানের জয়ই বলা চলে।★
* অ আ আবীর আকাশ : কবি প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও সাংবাদিক। সম্পাদক আবীর আকাশ জার্নাল
Facebook Comments Box