ভারতে নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসছে

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.) : ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। তাতে বর্তমান ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কি হ্যাটট্রিক করবে, নাকি অন্য কিছু হতে পারে তা নিয়ে ইতোমধ্যে ভারতের মিডিয়াতে অনেক হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক সমীকরণ ও হিসাব-নিকাশ খুবই কঠিন ও জটিল। আগাম কিছু প্রিডিকশন করা সহজ নয়। তবে যেহেতু রাজনীতির বিষয়, তাই বহুবিধ জল্পনা-কল্পনা চলতেই থাকে। ২০২২ সালে সাতটি রাজ্যের বিধানসভা ও কিছু স্থানীয় সরকারের নির্বাচনী ফল এবং ২০২৩ সালে যে নয়টি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হবে সেগুলোতে কী হতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ধারা কোন দিকে যাবে তার কিছু বিচার-বিশ্লেষণ ভারতের মিডিয়াতে এখন চলছে। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় ডিসাইডিং ফ্যাক্টর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপ্রতিরোধ্য, তার কোনো জুড়ি নেই। প্রশ্নহীন ব্যক্তিগত সততা, নিষ্ঠা ও আত্মনিবেদন সংবলিত কঠিন সংগ্রামী জীবন একজন রাজনৈতিক নেতাকে কোন পর্যায়ে নিতে পারে তার উদাহরণ এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে ভারতের মতো বিশাল দেশের রাজনীতিতে কেউ চ্যালেঞ্জবিহীন নন। জাতীয় পর্যায়ে এখনো কংগ্রেসই বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার চেষ্টায় কংগ্রেস এখন রাহুল গান্ধীকে নতুনভাবে মানুষের সামনে আনার চেষ্টা করছে। এই লক্ষ্যে গেল বছর ৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর দক্ষিণপ্রান্ত কন্যাকুমারী থেকে ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছে কংগ্রেস, ১৫০ দিনে ১২টি রাজ্যের ওপর দিয়ে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চলতি জানুয়ারির শেষপ্রান্তে কাশ্মীরে এসে যাত্রার সমাপ্তি ঘটবে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র জনমানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ভারতকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করাই এই যাত্রার লক্ষ্য। যাত্রাকালীন সার্বক্ষণিক রাস্তায় উপস্থিত থেকে পার্টটাইম রাজনীতিকের অপবাদ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন রাহুল গান্ধী। এই যাত্রার ফলে নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তিতে কতটুকু কী হবে তা এখনো বলা না গেলেও পথিমধ্যে সর্বত্র ব্যাপকভাবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যাত্রার সঙ্গী হচ্ছেন এবং কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাও ভীষণভাবে উজ্জীবিত হচ্ছেন। কিন্তু সেটা যদি নির্বাচনের বেলায় ভোট প্রাপ্তিতে সুফল না দেয়, তাহলে কোনো লাভ নেই। এক সময়ে জাতীয় নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৪৮.১ ভাগ পর্যন্ত পেয়েছে কংগ্রেস, সেখানে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র শতকরা ১৯.৫ ভাগ। নব্বই দশকের মাঝামাঝি ১৫টি রাজ্যে এককভাবে নিজস্ব সরকার ছিল কংগ্রেসের, সেখানে তা এখন মাত্র দুটিতে নেমে এসেছে। প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। যার চিত্র গত দুই বছরে মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও রাজস্থানে প্রকাশ্যে দেখা গেছে এবং তার মধ্য দিয়ে দলের ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে হলে প্রাপ্ত ভোট শতকরা ১৯.৫ ভাগ থেকে কমপক্ষে আরও ১০-১২ ভাগ বাড়াতে হবে। শুধু তা হলেই হবে না, আঞ্চলিক সমমনা ক্ষমতাশালী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ও কোয়ালিশন করতে হবে, যা আরও কঠিন কাজ। আর কংগ্রেসকে এককভাবে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে হলে প্রাপ্ত ভোট বাড়াতে হবে কম করে হলেও আরও প্রায় শতকরা ১৫-১৬ ভাগ; যা আপাত দৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব মনে হয়। ২০২২ সালে সাতটি রাজ্যের বিধানসভা ও কিছু স্থানীয় নির্বাচনের যে ফল দেখা যায়, তা কংগ্রেসের জন্য ওই আকাশে উদিত প্রথম দিনের চাঁদের সূক্ষ্ম ফালির মতো, যা আবার একটু দেখা দিয়েই নেই হয়ে যায়। এক সময়ে কংগ্রেসের ভোটব্যাংক খ্যাত সবচেয়ে বৃহৎ রাজ্য এবং লোকসভার জন্য পুরো দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮০টি আসন নির্ধারিত উত্তরপ্রদেশে ২০২২ সালের বিধান সভা নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়ে একটানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে বিজেপি। কংগ্রেস ভোট পেয়েছে শতকরা ২.৩৩ ভাগ, আর ৪০৩ সদস্যের বিধানসভায় মাত্র দুটি আসন। তবে উত্তরপ্রদেশে প্রভাবশালী অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি ২০১৭ সালের চেয়ে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অনেকটাই ভালো করেছে; আসন সংখ্যা ৪৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১১১ হয়েছে। ভোট প্রাপ্তির হারও বেড়েছে অনেক। বিজেপি বিশাল ব্যবধানে জিতলেও ২০১৭ থেকে ২০২২-এ এসে ভোটারদের ক্ষমতাবিরোধী মনোভাবে আসন সংখ্যা কমেছে। তাই ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতিতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি জোটবদ্ধ হলে উত্তরপ্রদেশে অন্তত বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।

 

২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সাতটি রাজ্যের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশসহ পাঁচটিতে জয় পেয়ে বিজেপি ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়ে গেছে। কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়ে পাঞ্জাব চলে গেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির হাতে। আর সর্বত্র হতাশাজনক পরিস্থিতিতে হিমাচল প্রদেশে বিজেপিকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসায় কিছুটা হলেও কংগ্রেস নিঃশ্বাস নিতে পারছে। একমাত্র আম আদমি পার্টি ব্যতীত অন্য সব প্রভাবশালী আঞ্চলিক দলের সঙ্গে মতাদর্শগতভাবে কংগ্রেস যত কাছাকাছি, ঠিক ততটাই দূরে বিজেপি। কিন্তু রাজনীতিতে ক্ষমতা ও দলীয় স্বার্থের সামনে মতাদর্শগত ও জাতীয় স্বার্থ সব সময়ই পেছনে থেকেছে বিধায় এ পর্যন্ত কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে পারেনি। এটাই বিজেপির জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা। তামিলনাড়ুর এস কে স্ট্যালিনের ডিএসকে দলের সঙ্গে থাকা জোটকে সম্প্রসারিত করে এবার কংগ্রেস যদি উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি, বিহারে নিতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল, পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস ও সর্ব ভারতীয় বামফ্রন্টের সঙ্গে এক হয়ে লড়তে পারে তাহলে একটা নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তার জন্য কংগ্রেসকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে অনেক ছাড় দিতে হবে। কংগ্রেসের জন্য এটা ‘টু বি অর নট টু বি’ প্রশ্ন বিশাল দ্বিধান্বিত ইস্যু। ২০২৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রদেশসহ মোট নয়টি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হবে, যার মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরকেও ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে স্থানীয় প্রভাবশালী দলের সঙ্গে জোটবদ্ধতার কারণে এ রাজ্যগুলোতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ত্রিপুরায় কংগ্রেসসহ বিরোধী পক্ষ জোটবদ্ধ হতে পারলে বিজেপির জন্য ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। তেলেঙ্গানায় চন্দ্রশেখর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় রাষ্ট্র সমিতির একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা যায়। এ পর্যন্ত এই রাজ্যে বিজেপি সুবিধা করতে পারেনি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পায়। কংগ্রেস স্থানীয় তেলেগু দেশম পার্টির সঙ্গে আঁতাত করেও গত নির্বাচনে ১১৯ আসনের মধ্যে মাত্র ১৯টি আসন পায়। জম্মু ও কাশ্মীরে এ বছর নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে, সেখানে এখন কেন্দ্রীয় শাসন চলছে। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য রাজ্য নির্বাচন ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে, তা প্রধানত নির্ভর করছে কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড় ও রাজস্থানের ফলাফলের ওপর। ২০১৮ সালে রাজস্থানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয় পেয়ে এখনো কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে। কিন্তু বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অশোক ঘেলট ও শচীন পাইলট গ্রুপের মধ্যে চরম দলীয় কোন্দলের অর্থপূর্ণ মীমাংসা না হলে এবং তার সঙ্গে ভোটারদের ক্ষমতাবিরোধী মনোভাব দুই ফ্যাক্টর মিলে রাজস্থানে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হতে পারে। ছত্রিশগড়ে বর্তমান ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের অবস্থান তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি থেকে পপুলার ভোট প্রাপ্তির ব্যবধান খুব বেশি না হওয়ায় অন্যান্য সমআদর্শবাদী দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে না পারলে এ রাজ্যেও কংগ্রেসের জন্য ভালো খবর প্রত্যাশা করা যায় না। কর্ণাটকে এখন বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও স্থানীয় প্রবীণ নেতা ও বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নিজ প্রভাব খাটিয়ে দলের কোন্দল মেটাতে পারলে এবং তার সঙ্গে যদি জনতা দলের (সেক্যুলার) জোটবদ্ধ হয় তাহলে কর্ণাটকই একমাত্র রাজ্য যেখানে কংগ্রেস কিছুটা হলেও নিশ্চিত হতে পারবে। প্রভাবশালী মধ্যপ্রদেশে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয় পেয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েও দলীয় কোন্দলের কারণে ২০২০ সালে এসে ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং সেখানে এখন বিজেপি ক্ষমতায়। কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা জতিন্দ্রনাথ সিন্ধিয়া বেশ কিছু বিধায়ক নিয়ে দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপির মধ্যে আসন সংখ্যা ও পপুলার ভোট প্রাপ্তির ব্যবধান ছিল খুব কম। এবার বিজেপির জন্য ক্ষমতাবিরোধী মনোভাব এবং কংগ্রেসের জন্য দলীয় দুর্বলতা, দুই ফ্যাক্টর দুই দলকে পারস্পরিক কতটুকু সুবিধা-অসুবিধা দেবে তার ওপর মধ্যপ্রদেশের ফল নির্ভর করবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে কিছুটা হলেও অনুকূল বাতাস তৈরির জন্য কর্ণাটকে জয় পাওয়া কংগ্রেসের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কর্ণাটকের সঙ্গে রাজস্থান ও ছত্রিশগড়ের অন্তত একটি যদি কংগ্রেস ধরে রাখতে পারে এবং তার সঙ্গে অন্য যে কোনো একটি রাজ্যে জয় পায় তাহলে বিজেপির জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। তবে ২০২৩ সালের রাজ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের যতটুকুই যা অগ্রগতি হোক না কেন, চলমান প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধতা ঠেকিয়ে রাখতে পারলে বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজতর হবে। বৈশ্বিক বিবেচনায় ভারত আজ উদীয়মান পরাশক্তি হওয়ায় তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি থাকবে-সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, যে কোনো দেশের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে সেদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ ৭৬ বছর একটানা ভারত ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদী আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলেই আজ বিপুল সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। সবার চোখের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুুগোস্লাভিয়া ভেঙে গেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদী ও সামরিকতন্ত্রের রাজনীতির জন্য পাকিস্তান একাত্তরে ভেঙে গেছে এবং সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ক্রমশই তলিয়ে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাজনীতিই ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি। অর্থনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক প্রযুক্তিগত ইত্যাদি সব মিলে ২০৩০ সাল নাগাদ আমেরিকা ও চীনের পরেই ভারতের অবস্থান হবে। তাই ভারতের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্থিতিশীলতা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। তবে পাকিস্তান সামরিকতন্ত্র থেকে মুক্ত হতে না পারলে উপমহাদেশভিত্তিক পারস্পরিক সহযোগিতার যে সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে, তার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জায়গাটিতে বিশেষ বিশেষত্ব আছে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অসামান্য ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সব সময় স্মরণ করে। ১৯৭৫ সালের পর মাঝপথে ভিন্ন রকম হলেও সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আজ আবার রক্তে খচিত একাত্তরের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। নিরাপত্তা, সংহতি, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। ভারতের সব রাজনৈতিক পক্ষ ও সুশীল সমাজ, রক্তে গাঁথা দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্বকে সমানভাবে মূল্যায়ন করছে বিধায় বাংলাদেশের জন্য সেটা এক স্বস্তির বিষয়।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, দাবির সত্যতা নিয়ে যা জানা গেল

» জানুয়ারি থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের এমপিও ইএফটিতে

» সাত দাবিতে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ

» স্মার্টফোনের আয়ু একটি স্মার্টফোন কতদিন চালানো যায়?

» পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলাও হচ্ছে

» জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদন ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে : রাষ্ট্রদূত

» রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে আ.লীগ: উপদেষ্টা নাহিদ

» বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল, দুর্গন্ধে কাছে ঘেঁষা যায় না

» ঘুমের মধ্যে পায়ের পেশিতে টান পড়ে কেন, করণীয় কী?

» গাইবান্ধায় জন্ম নিল ছয় পা বিশিষ্ট বাছুর

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ভারতে নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসছে

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.) : ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। তাতে বর্তমান ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কি হ্যাটট্রিক করবে, নাকি অন্য কিছু হতে পারে তা নিয়ে ইতোমধ্যে ভারতের মিডিয়াতে অনেক হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক সমীকরণ ও হিসাব-নিকাশ খুবই কঠিন ও জটিল। আগাম কিছু প্রিডিকশন করা সহজ নয়। তবে যেহেতু রাজনীতির বিষয়, তাই বহুবিধ জল্পনা-কল্পনা চলতেই থাকে। ২০২২ সালে সাতটি রাজ্যের বিধানসভা ও কিছু স্থানীয় সরকারের নির্বাচনী ফল এবং ২০২৩ সালে যে নয়টি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হবে সেগুলোতে কী হতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ধারা কোন দিকে যাবে তার কিছু বিচার-বিশ্লেষণ ভারতের মিডিয়াতে এখন চলছে। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় ডিসাইডিং ফ্যাক্টর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপ্রতিরোধ্য, তার কোনো জুড়ি নেই। প্রশ্নহীন ব্যক্তিগত সততা, নিষ্ঠা ও আত্মনিবেদন সংবলিত কঠিন সংগ্রামী জীবন একজন রাজনৈতিক নেতাকে কোন পর্যায়ে নিতে পারে তার উদাহরণ এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে ভারতের মতো বিশাল দেশের রাজনীতিতে কেউ চ্যালেঞ্জবিহীন নন। জাতীয় পর্যায়ে এখনো কংগ্রেসই বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার চেষ্টায় কংগ্রেস এখন রাহুল গান্ধীকে নতুনভাবে মানুষের সামনে আনার চেষ্টা করছে। এই লক্ষ্যে গেল বছর ৭ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর দক্ষিণপ্রান্ত কন্যাকুমারী থেকে ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছে কংগ্রেস, ১৫০ দিনে ১২টি রাজ্যের ওপর দিয়ে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চলতি জানুয়ারির শেষপ্রান্তে কাশ্মীরে এসে যাত্রার সমাপ্তি ঘটবে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র জনমানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ভারতকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করাই এই যাত্রার লক্ষ্য। যাত্রাকালীন সার্বক্ষণিক রাস্তায় উপস্থিত থেকে পার্টটাইম রাজনীতিকের অপবাদ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন রাহুল গান্ধী। এই যাত্রার ফলে নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তিতে কতটুকু কী হবে তা এখনো বলা না গেলেও পথিমধ্যে সর্বত্র ব্যাপকভাবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যাত্রার সঙ্গী হচ্ছেন এবং কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাও ভীষণভাবে উজ্জীবিত হচ্ছেন। কিন্তু সেটা যদি নির্বাচনের বেলায় ভোট প্রাপ্তিতে সুফল না দেয়, তাহলে কোনো লাভ নেই। এক সময়ে জাতীয় নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৪৮.১ ভাগ পর্যন্ত পেয়েছে কংগ্রেস, সেখানে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র শতকরা ১৯.৫ ভাগ। নব্বই দশকের মাঝামাঝি ১৫টি রাজ্যে এককভাবে নিজস্ব সরকার ছিল কংগ্রেসের, সেখানে তা এখন মাত্র দুটিতে নেমে এসেছে। প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। যার চিত্র গত দুই বছরে মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও রাজস্থানে প্রকাশ্যে দেখা গেছে এবং তার মধ্য দিয়ে দলের ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে হলে প্রাপ্ত ভোট শতকরা ১৯.৫ ভাগ থেকে কমপক্ষে আরও ১০-১২ ভাগ বাড়াতে হবে। শুধু তা হলেই হবে না, আঞ্চলিক সমমনা ক্ষমতাশালী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ও কোয়ালিশন করতে হবে, যা আরও কঠিন কাজ। আর কংগ্রেসকে এককভাবে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে হলে প্রাপ্ত ভোট বাড়াতে হবে কম করে হলেও আরও প্রায় শতকরা ১৫-১৬ ভাগ; যা আপাত দৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব মনে হয়। ২০২২ সালে সাতটি রাজ্যের বিধানসভা ও কিছু স্থানীয় নির্বাচনের যে ফল দেখা যায়, তা কংগ্রেসের জন্য ওই আকাশে উদিত প্রথম দিনের চাঁদের সূক্ষ্ম ফালির মতো, যা আবার একটু দেখা দিয়েই নেই হয়ে যায়। এক সময়ে কংগ্রেসের ভোটব্যাংক খ্যাত সবচেয়ে বৃহৎ রাজ্য এবং লোকসভার জন্য পুরো দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮০টি আসন নির্ধারিত উত্তরপ্রদেশে ২০২২ সালের বিধান সভা নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়ে একটানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে বিজেপি। কংগ্রেস ভোট পেয়েছে শতকরা ২.৩৩ ভাগ, আর ৪০৩ সদস্যের বিধানসভায় মাত্র দুটি আসন। তবে উত্তরপ্রদেশে প্রভাবশালী অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি ২০১৭ সালের চেয়ে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অনেকটাই ভালো করেছে; আসন সংখ্যা ৪৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১১১ হয়েছে। ভোট প্রাপ্তির হারও বেড়েছে অনেক। বিজেপি বিশাল ব্যবধানে জিতলেও ২০১৭ থেকে ২০২২-এ এসে ভোটারদের ক্ষমতাবিরোধী মনোভাবে আসন সংখ্যা কমেছে। তাই ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতিতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি জোটবদ্ধ হলে উত্তরপ্রদেশে অন্তত বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।

 

২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সাতটি রাজ্যের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশসহ পাঁচটিতে জয় পেয়ে বিজেপি ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়ে গেছে। কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়ে পাঞ্জাব চলে গেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির হাতে। আর সর্বত্র হতাশাজনক পরিস্থিতিতে হিমাচল প্রদেশে বিজেপিকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসায় কিছুটা হলেও কংগ্রেস নিঃশ্বাস নিতে পারছে। একমাত্র আম আদমি পার্টি ব্যতীত অন্য সব প্রভাবশালী আঞ্চলিক দলের সঙ্গে মতাদর্শগতভাবে কংগ্রেস যত কাছাকাছি, ঠিক ততটাই দূরে বিজেপি। কিন্তু রাজনীতিতে ক্ষমতা ও দলীয় স্বার্থের সামনে মতাদর্শগত ও জাতীয় স্বার্থ সব সময়ই পেছনে থেকেছে বিধায় এ পর্যন্ত কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে পারেনি। এটাই বিজেপির জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা। তামিলনাড়ুর এস কে স্ট্যালিনের ডিএসকে দলের সঙ্গে থাকা জোটকে সম্প্রসারিত করে এবার কংগ্রেস যদি উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি, বিহারে নিতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল, পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস ও সর্ব ভারতীয় বামফ্রন্টের সঙ্গে এক হয়ে লড়তে পারে তাহলে একটা নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তার জন্য কংগ্রেসকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে অনেক ছাড় দিতে হবে। কংগ্রেসের জন্য এটা ‘টু বি অর নট টু বি’ প্রশ্ন বিশাল দ্বিধান্বিত ইস্যু। ২০২৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রদেশসহ মোট নয়টি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হবে, যার মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরকেও ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে স্থানীয় প্রভাবশালী দলের সঙ্গে জোটবদ্ধতার কারণে এ রাজ্যগুলোতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ত্রিপুরায় কংগ্রেসসহ বিরোধী পক্ষ জোটবদ্ধ হতে পারলে বিজেপির জন্য ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। তেলেঙ্গানায় চন্দ্রশেখর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় রাষ্ট্র সমিতির একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা যায়। এ পর্যন্ত এই রাজ্যে বিজেপি সুবিধা করতে পারেনি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পায়। কংগ্রেস স্থানীয় তেলেগু দেশম পার্টির সঙ্গে আঁতাত করেও গত নির্বাচনে ১১৯ আসনের মধ্যে মাত্র ১৯টি আসন পায়। জম্মু ও কাশ্মীরে এ বছর নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে, সেখানে এখন কেন্দ্রীয় শাসন চলছে। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য রাজ্য নির্বাচন ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে, তা প্রধানত নির্ভর করছে কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড় ও রাজস্থানের ফলাফলের ওপর। ২০১৮ সালে রাজস্থানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয় পেয়ে এখনো কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে। কিন্তু বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অশোক ঘেলট ও শচীন পাইলট গ্রুপের মধ্যে চরম দলীয় কোন্দলের অর্থপূর্ণ মীমাংসা না হলে এবং তার সঙ্গে ভোটারদের ক্ষমতাবিরোধী মনোভাব দুই ফ্যাক্টর মিলে রাজস্থানে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হতে পারে। ছত্রিশগড়ে বর্তমান ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের অবস্থান তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি থেকে পপুলার ভোট প্রাপ্তির ব্যবধান খুব বেশি না হওয়ায় অন্যান্য সমআদর্শবাদী দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে না পারলে এ রাজ্যেও কংগ্রেসের জন্য ভালো খবর প্রত্যাশা করা যায় না। কর্ণাটকে এখন বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও স্থানীয় প্রবীণ নেতা ও বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নিজ প্রভাব খাটিয়ে দলের কোন্দল মেটাতে পারলে এবং তার সঙ্গে যদি জনতা দলের (সেক্যুলার) জোটবদ্ধ হয় তাহলে কর্ণাটকই একমাত্র রাজ্য যেখানে কংগ্রেস কিছুটা হলেও নিশ্চিত হতে পারবে। প্রভাবশালী মধ্যপ্রদেশে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয় পেয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েও দলীয় কোন্দলের কারণে ২০২০ সালে এসে ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং সেখানে এখন বিজেপি ক্ষমতায়। কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা জতিন্দ্রনাথ সিন্ধিয়া বেশ কিছু বিধায়ক নিয়ে দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপির মধ্যে আসন সংখ্যা ও পপুলার ভোট প্রাপ্তির ব্যবধান ছিল খুব কম। এবার বিজেপির জন্য ক্ষমতাবিরোধী মনোভাব এবং কংগ্রেসের জন্য দলীয় দুর্বলতা, দুই ফ্যাক্টর দুই দলকে পারস্পরিক কতটুকু সুবিধা-অসুবিধা দেবে তার ওপর মধ্যপ্রদেশের ফল নির্ভর করবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে কিছুটা হলেও অনুকূল বাতাস তৈরির জন্য কর্ণাটকে জয় পাওয়া কংগ্রেসের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কর্ণাটকের সঙ্গে রাজস্থান ও ছত্রিশগড়ের অন্তত একটি যদি কংগ্রেস ধরে রাখতে পারে এবং তার সঙ্গে অন্য যে কোনো একটি রাজ্যে জয় পায় তাহলে বিজেপির জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। তবে ২০২৩ সালের রাজ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের যতটুকুই যা অগ্রগতি হোক না কেন, চলমান প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধতা ঠেকিয়ে রাখতে পারলে বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজতর হবে। বৈশ্বিক বিবেচনায় ভারত আজ উদীয়মান পরাশক্তি হওয়ায় তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি থাকবে-সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, যে কোনো দেশের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে সেদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ ৭৬ বছর একটানা ভারত ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদী আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলেই আজ বিপুল সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। সবার চোখের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুুগোস্লাভিয়া ভেঙে গেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদী ও সামরিকতন্ত্রের রাজনীতির জন্য পাকিস্তান একাত্তরে ভেঙে গেছে এবং সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ক্রমশই তলিয়ে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাজনীতিই ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি। অর্থনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক প্রযুক্তিগত ইত্যাদি সব মিলে ২০৩০ সাল নাগাদ আমেরিকা ও চীনের পরেই ভারতের অবস্থান হবে। তাই ভারতের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্থিতিশীলতা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। তবে পাকিস্তান সামরিকতন্ত্র থেকে মুক্ত হতে না পারলে উপমহাদেশভিত্তিক পারস্পরিক সহযোগিতার যে সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে, তার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জায়গাটিতে বিশেষ বিশেষত্ব আছে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অসামান্য ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সব সময় স্মরণ করে। ১৯৭৫ সালের পর মাঝপথে ভিন্ন রকম হলেও সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আজ আবার রক্তে খচিত একাত্তরের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। নিরাপত্তা, সংহতি, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। ভারতের সব রাজনৈতিক পক্ষ ও সুশীল সমাজ, রক্তে গাঁথা দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্বকে সমানভাবে মূল্যায়ন করছে বিধায় বাংলাদেশের জন্য সেটা এক স্বস্তির বিষয়।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com