স্পষ্ট দৃষ্টিশক্তি মানুষের জীবনে একটি মৌলিক চাহিদা। দৃষ্টির স্বচ্ছতা ছাড়া কোনো কাজই সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। এরপরও, দৃষ্টিশক্তির স্পষ্টতার অভাবে অনেকেই উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ হারাচ্ছেন; ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তাঁদের ব্যক্তিস্বাধীনতা আর সামাজিক মর্যাদা। দৃষ্টিশক্তি যেন কখনই জীবনে চলার পথে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করছে ব্র্যাক ব্যাংক।
ব্যাংকটি এর অনন্য কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) উদ্যোগ, “অপরাজেয় আমি” এর মাধ্যমে, ভিশনস্প্রিং এবং গ্রামীণ হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের সহযোগিতায় পরিচালনা করছে বিনামূল্যে চোখ স্ক্রিনিং এবং চশমা প্রদান কর্মসূচি। সেইসাথে শিল্পকারখানা ও গ্রামবাংলার মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে দিচ্ছে ছানি অস্ত্রোপচারের সুবিধা।
ব্র্যাক ব্যাংকের এই প্রতিশ্রুতি কেবল কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা পেশার মানুষের জন্য নয়। তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মী থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত অনেকেরই জীবনকে উন্নত করেছে; সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে এবং মানুষকে নিজের মূল্য বোঝাতে শিখিয়েছে।
ভিশনস্প্রিংয়ের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের দৃষ্টিশক্তির সংশোধনে সহায়তা করছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি কারও কাছে উল্লেখযোগ্য সমস্যা মনে না হলেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, তাঁরা আর্থিক বঞ্চনার শিকার হতে পারেন এবং তাঁদের জীবনযাত্রার মানও ব্যাহত হয়। এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫,৬২৫ জন কর্মীর চোখ পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮৪% এর আগে কখনও চশমা পরেননি। প্রায় ৬,০০০ কর্মী, যার বেশিরভাগই নারীশ্রমিক, সংশোধনমূলক চশমা পেয়েছেন, যা তাঁদের আরও সঠিকভাবে ও দক্ষতার সাথে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে তাঁদের আয় বেড়েছে, বেড়েছে ঐ কারখানাগুলোর উৎপাদনশীলতাও।
সুস্থ দৃষ্টিশক্তিকে একটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণ হেলথকেয়ারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জীবনেও পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। শুধুমাত্র ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে, ব্যাংকটির সহায়তায় গ্রামীণ হেলথকেয়ার ৭১৮টি ছানি অস্ত্রোপচার পরিচালনা করে স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা হয়েছে; ৫৩ জনের চোখে অন্যান্য অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। মোট ২৪০ জনকে চশমা দেওয়া হয়েছে এবং ২৭৩ জন মানুষের মাঝে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে। বগুড়া এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১০টি কমিউনিটি চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে, এই সেবাগুলি সরাসরি সেই সকল মানুষের কাছে পৌঁছেছে, যাদের কখনও উন্নতমানের চক্ষু চিকিৎসার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। মাত্র দুই মাসে ৪,৭৬২ জন মানুষ এই উদ্যোগ থেকে উপকৃত হয়েছেন, যা পেশাগত অবস্থান বা আর্থিক সামর্থ্য নির্বিশেষে সবার জন্য স্পষ্টদৃষ্টি নিশ্চিত করতে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
এই উদ্যোগগুলির অর্থনৈতিক প্রভাবও অনেক। পরিষ্কার দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে কর্মীদের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত হচ্ছে; কমছে কাজে ত্রুটির হার, বাড়ছে কর্মক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস। গবেষণায় দেখা গেছে যে উন্নত দৃষ্টিশক্তি কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ২২% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। যদি চশমাপ্রাপ্ত ৫,৯১৬ জন কর্মীর অর্ধেকেরও ১০% করে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, তাহলে কারখানাগুলির সার্বিক আয় বৃদ্ধি পাবে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের জিডিপিতে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন এমন অনেক মানুষই দীর্ঘদিন ধরে উপার্জনক্ষম কাজে অংশগ্রহণ, জ্ঞান অর্জন এবং আর্থিক স্বনির্ভরতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ব্র্যাক ব্যাংকের এই উদ্যোগে যারা ছানি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন বা চশমা পেয়েছেন, তাঁরা আবার কাজ করতে পারছেন, ঠিকমতো পড়তে ও লিখতে পারছেন, পরিবারের সদস্যদের যত্ন নিতে পারছেন এবং সর্বোপরি, আত্মমর্যাদার সাথে জীবনযাপন করতে পারছেন।
স্পষ্ট দৃষ্টিশক্তি আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্র্যাক ব্যাংকের এই উদ্যোগের ফলে মানুষের আর্থিক সাক্ষরতা উন্নত হয়েছে, এবং তাঁদের ডিজিটাল ব্যাংকিংসহ সকল আর্থিক সেবা পাওয়া নিশ্চিত হয়েছে। এর ফলে হাজারও মানুষ টেকসই উপার্জনের পথ পেয়ে ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ – বিশেষ করে চোখের যত্নকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। ‘অপরাজেয় আমি’-এর মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংকের সিএসআর উদ্যোগ একটি উদাহরণ তৈরি করেছে। প্রমাণ করেছে যে চোখের দৃষ্টির প্রতি অঙ্গীকার দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন, শিল্প অগ্রগতি এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
চোখের যত্নের প্রতি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে, ব্র্যাক ব্যাংক শুধু যে মানুষের দৃষ্টিশক্তিই পুনরুদ্ধার করছে তা নয় – বরং আলোকিত করছে প্রতিটি সম্ভাবনাকে। বিকশিত করছে সমাজের প্রায় ঝরে পড়া বিভিন্ন স্তরের মানুষগুলোকে – দেশের অগ্রযাত্রায় যাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে অবদান রাখার সমান অধিকার।