ব্রিটেনে নির্বাচন : পপলার লাইমহাউজে আপসানা বেগমেই শেষ ভরসা লেবার পার্টির

ছবি সংগৃহীত

 

রাজনীতিতে ঢুকে অল্প দিনের মধ্যেই সরাসরি এমপি হয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি আপসানা বেগম। মাত্র ২৭ বছর বয়সে এমপি হয়েছিলেন রাজনৈতিক পরিবারের এই মেয়ে।

 

বাবা মনির উদ্দিন ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর। তবে আপসানা বেগমের রাজনৈতিক উত্থান যতো সহজ ছিল, পথচলা ছিল ততোই কঠিন। তিনিই প্রথম ও একমাত্র হিজাব পরিহিত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য। এজন্য তাকে বারবার নানা কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। নিজ আসনের নিজ দলের তোপের মুখে পড়ে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাথে হাউজিং সংক্রান্ত এক মামলায় ফেসে যান। তিনি লড়াই চালিয়ে সেই মামলায় জিতেন। ষড়যন্ত্রেও জাল বুনেছিলেন সাবেক কাউন্সিলর স্বামী। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে তিনি দোষী সাব্যস্থ হলে আপসানার রাজনৈতিক কেরিয়ারই শেষ হওয়ার পথে ছিল। একই সাথে ব্রিটেনে বাংলাদেশিরা আরেক লজ্জায় ডুবতেন। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়! ফাইট ব্যাক করে রাজনীতির মূল মঞ্চে ফিরে আসেন আপসানা বেগম।

 

তারপরও শেষ হয় না ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক জীবনে লেবার পার্টিও বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ তিনি। একই সাথে সাবেক লিডার জেরেমী করবিনের অন্ধ সমর্থক। জেরেমী নিজে বামপন্থী লেবার। বর্তমান লিডার স্যার কিয়ার স্টারমার ডানপন্থী ও রক্ষণশীল লেবার। তাই দলে এখন ডানপন্থীদের জয়জয়কার। আপসানা নিজেই দলের সমালোচক। প্রকাশ্যে কিয়ার স্টারমারের পলিসির সমালোচক। এটাকে পুঁজি করে আপসানাকে ফেলে দেওয়ার যুদ্ধে নেমেছিলেন হাফ ডজন লেবার নেতা। তারা চেয়েছিলেন পপলার লাইমহাউজে পরিবর্তন।

 

সকল জল্পনা-কল্পনা পেছনে ফেলে বাংলাদেশি অধ্যুষিত পপলার – লাইমহাউজ থেকেই আবারো লেবার পার্টির প্রার্থী হলেন আপসানা বেগম।

 

অনেকটা দুদল্যমান ছিলেন তিনি। প্রথমে প্রাথমিক তালিকায় রেখে মাঝখানে আরো এক সপ্তাহ জুলিয়ে রাখা হয়।

 

২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে জেরেমী করবিন লেবারকে নেতৃত্ব দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন সেই জেরেমি করবিনকে লেবার পার্টি মনোনয়নই দেয়নি। হ্যাকনী থেকে বারবার নির্বাচিত ডায়নাকে মনোনয়ন দেয়নি লেবার। তাই এক ধরনের ধারণা তৈরি হয় আপসানা পাচ্ছেন না লেবারের মনোনয়ন। তবে ডায়নাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সারা দেশে তোপের মুখে পড়ে লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার। অভিযোগ উঠে সব বামপন্থীকে ছেটে ফেলছেন কিয়ার স্টারমার। আপসানাকে মনোনয়ন দিয়ে শেষ পর্যন্ত কিয়ার স্টারমার সমালোচনার মুখ বন্ধ করলেন।

 

আপসানা বেগম সবসময়ই হেঁটেছেন নিজের দেখানো পথে। তিনি কথা বলেছেন স্থানীয় ইস্যু নিয়ে। পাশে ছিলেন সকল প্রকার শ্রমিক আন্দোলনে। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন, টাওয়ার হ্যামলেটসের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কর্মঘণ্টা কমানো ও বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আপসানা মাঠে ছিলেন। পার্লামেন্টে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের হাউজিং, ক্রাইম ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তিনি বাংলা ভাষা নিয়ে সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন। আপসানা নিজ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজায় যুদ্ধ বিরতির দাবিতে পার্লামেন্টে ১৫ নভেম্বর ভোট দেন।

 

আপসানা বেগম তার প্রার্থীতা নিশ্চিত হওয়ার পর বলেছেন, আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি আবারো লেবার পার্টির একজন প্রার্থী হয়ে। আমি প্রথম হিজাব পরিহিত এমপি হিসেবে সব সময়ই বর্ণবাদ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। আমি স্থানীয় মানুষের সমস্যা নিয়ে নিয়মিত সরব ছিলাম পার্লামেন্টে। আবারো নির্বাচিত হলে এভাবেই কাজ করে যাব। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা

» যারা আ.লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী: হাসনাত আবদুল্লাহ

» বর্তমান সরকারকে আমরা সফল দেখতে চাই : তারেক রহমান

» আমরা কোনও দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই: জিএম কাদের

» ‘আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়ী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’

» ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে : প্রেস সচিব

» একটা একটা লীগ ধর- স্লোগানে আ.লীগ নিষিদ্ধ চাইলেন রফিকুল ইসলাম মাদানী

» কোকোর কবর জিয়ারত করলেন জুবাইদা ও শামিলা রহমান

» ব্র্যাক ব্যাংকের এক্সক্লুসিভ এমপ্লয়ি ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা

» সন্ধ্যায় উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ব্রিটেনে নির্বাচন : পপলার লাইমহাউজে আপসানা বেগমেই শেষ ভরসা লেবার পার্টির

ছবি সংগৃহীত

 

রাজনীতিতে ঢুকে অল্প দিনের মধ্যেই সরাসরি এমপি হয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি আপসানা বেগম। মাত্র ২৭ বছর বয়সে এমপি হয়েছিলেন রাজনৈতিক পরিবারের এই মেয়ে।

 

বাবা মনির উদ্দিন ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর। তবে আপসানা বেগমের রাজনৈতিক উত্থান যতো সহজ ছিল, পথচলা ছিল ততোই কঠিন। তিনিই প্রথম ও একমাত্র হিজাব পরিহিত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য। এজন্য তাকে বারবার নানা কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। নিজ আসনের নিজ দলের তোপের মুখে পড়ে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাথে হাউজিং সংক্রান্ত এক মামলায় ফেসে যান। তিনি লড়াই চালিয়ে সেই মামলায় জিতেন। ষড়যন্ত্রেও জাল বুনেছিলেন সাবেক কাউন্সিলর স্বামী। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে তিনি দোষী সাব্যস্থ হলে আপসানার রাজনৈতিক কেরিয়ারই শেষ হওয়ার পথে ছিল। একই সাথে ব্রিটেনে বাংলাদেশিরা আরেক লজ্জায় ডুবতেন। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়! ফাইট ব্যাক করে রাজনীতির মূল মঞ্চে ফিরে আসেন আপসানা বেগম।

 

তারপরও শেষ হয় না ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক জীবনে লেবার পার্টিও বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ তিনি। একই সাথে সাবেক লিডার জেরেমী করবিনের অন্ধ সমর্থক। জেরেমী নিজে বামপন্থী লেবার। বর্তমান লিডার স্যার কিয়ার স্টারমার ডানপন্থী ও রক্ষণশীল লেবার। তাই দলে এখন ডানপন্থীদের জয়জয়কার। আপসানা নিজেই দলের সমালোচক। প্রকাশ্যে কিয়ার স্টারমারের পলিসির সমালোচক। এটাকে পুঁজি করে আপসানাকে ফেলে দেওয়ার যুদ্ধে নেমেছিলেন হাফ ডজন লেবার নেতা। তারা চেয়েছিলেন পপলার লাইমহাউজে পরিবর্তন।

 

সকল জল্পনা-কল্পনা পেছনে ফেলে বাংলাদেশি অধ্যুষিত পপলার – লাইমহাউজ থেকেই আবারো লেবার পার্টির প্রার্থী হলেন আপসানা বেগম।

 

অনেকটা দুদল্যমান ছিলেন তিনি। প্রথমে প্রাথমিক তালিকায় রেখে মাঝখানে আরো এক সপ্তাহ জুলিয়ে রাখা হয়।

 

২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে জেরেমী করবিন লেবারকে নেতৃত্ব দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন সেই জেরেমি করবিনকে লেবার পার্টি মনোনয়নই দেয়নি। হ্যাকনী থেকে বারবার নির্বাচিত ডায়নাকে মনোনয়ন দেয়নি লেবার। তাই এক ধরনের ধারণা তৈরি হয় আপসানা পাচ্ছেন না লেবারের মনোনয়ন। তবে ডায়নাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সারা দেশে তোপের মুখে পড়ে লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার। অভিযোগ উঠে সব বামপন্থীকে ছেটে ফেলছেন কিয়ার স্টারমার। আপসানাকে মনোনয়ন দিয়ে শেষ পর্যন্ত কিয়ার স্টারমার সমালোচনার মুখ বন্ধ করলেন।

 

আপসানা বেগম সবসময়ই হেঁটেছেন নিজের দেখানো পথে। তিনি কথা বলেছেন স্থানীয় ইস্যু নিয়ে। পাশে ছিলেন সকল প্রকার শ্রমিক আন্দোলনে। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন, টাওয়ার হ্যামলেটসের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কর্মঘণ্টা কমানো ও বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আপসানা মাঠে ছিলেন। পার্লামেন্টে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের হাউজিং, ক্রাইম ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তিনি বাংলা ভাষা নিয়ে সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন। আপসানা নিজ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজায় যুদ্ধ বিরতির দাবিতে পার্লামেন্টে ১৫ নভেম্বর ভোট দেন।

 

আপসানা বেগম তার প্রার্থীতা নিশ্চিত হওয়ার পর বলেছেন, আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি আবারো লেবার পার্টির একজন প্রার্থী হয়ে। আমি প্রথম হিজাব পরিহিত এমপি হিসেবে সব সময়ই বর্ণবাদ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। আমি স্থানীয় মানুষের সমস্যা নিয়ে নিয়মিত সরব ছিলাম পার্লামেন্টে। আবারো নির্বাচিত হলে এভাবেই কাজ করে যাব। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com