এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রধান গাছ ‘সুন্দরী’। মে মাসের শুরুতেই এই গাছে ফুল ফোটে। এ বছর সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ জুড়ে অপ্রত্যাশিতভাবে সুন্দরী ফুলের সমারোহ দেখা যাচ্ছে, যা অভিজ্ঞ বনজীবী ও গবেষকদেরও বিস্মিত করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগাম ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এ বছর গাছে গাছে একযোগে ফুল ফুটেছে। ফলে গোটা বনভূমি যেন পরিণত হয়েছে এক ফুলেল বনভূমিতে। পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীরা সুন্দরবনের এই রূপ দেখে বিমুগ্ধ।
সুন্দরবনের ৭০ শতাংশ অংশ জুড়ে রয়েছে সুন্দরী গাছ। বিশেষ করে পূর্ব সুন্দরবনের বাগেরহাট জেলার শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে এর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। সুন্দরী গাছের ফুল ঘণ্টার মতো, আকারে মাত্র ৫ মিলিমিটার চওড়া এবং কমলা ও গোলাপি রঙের। ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করে পুরো বনাঞ্চল।
অভিজ্ঞদের মতামত
মধু সংগ্রহকারী মৌয়াল শাহজাহান আকন, আলতাফ ঘরামী ও বাবুল হাওলাদার জানান, তারা গত ১৫–২০ বছর ধরে সুন্দরবনে কাজ করছেন। কিন্তু এ বছর তারা যেভাবে গাছে ফুল ফুটতে দেখেছেন, তা আগে কখনও দেখেননি।
স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তা রাসেল আহমেদ বলেন, “৩ মে শরণখোলার আলীবান্দা ইকো-পার্কে একটি ট্যুর পরিচালনা করি। সেখানে গিয়ে গাছে এত ফুল দেখে আমরা অভিভূত হই। পুরো পার্ক জুড়ে ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে ছিল।”
বিশেষজ্ঞ ও বনবিভাগের মত
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, “পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে সুন্দরী গাছে এ বছর ব্যাপক ফুল এসেছে। এছাড়া, পূর্ব সুন্দরবনে পূর্ণবয়স্ক গাছের সংখ্যা বেড়েছে, যা ফুল উৎপাদনে ভূমিকা রেখেছে।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়েছে। এতে আগামরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গাছ। তুলনামূলকভাবে পূর্ব সুন্দরবনে লবণাক্ততা কম থাকায় গাছের স্বাস্থ্য ভালো।”
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের নবনিযুক্ত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, “শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে সুন্দরী গাছের ঘনত্ব বেশি। রোগবালাই কম থাকায় ফুলও বেশি এসেছে। ফলে গোটা বনভূমি যেন সৌন্দর্যের অভয়ারণ্যে রূপ নিয়েছে।”