বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলের ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে: বাঁশ ও বেত শিল্পে ধস পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পথে বসছে হাজারো পরিবার  

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত  বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট ,সাতক্ষীরা , খুলনা পটুয়াখালীও বরগুনা অঞ্চলে ‌প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং প্লাষ্টিক সামগ্রীর ব্যবহারের কারণে দিন দিন উপকূলীয় অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প।

 

এ শিল্পের সাথে জড়িতরা তাদের পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিন দিন অন্য পেশায় মনোনিবেশ করছে। যার কারণে বাঁশ ও বেত শিল্পের হাজার-হাজার পরিবার এখন চরম দুর্দিনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। উপকূলীয় অঞ্চল খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের হাজার-হাজার শ্রমিক ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রয়োজনীয় ঋণ, পুঁজির স্বল্পতা বাঁশ ও বেতের স্বল্পতা, মুজুরী কম থাকার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত হাজার-হাজার শ্রমিক বেকার জীবন যাপন করছে। এসব শ্রমিক বংশ পরম্পরায় এ শিল্পের সাথে জড়িত।

 

তাদের নিপুণ হাতে তৈরি কুলা, চাটাই, হাঁস-মুরগীর খাচা, সাজি, ঢাকনা, চালনী, পাল্লা, খাঁচা, মোড়া বেতের ধামা, পাতিল, চেয়ার, টেবিল, দোলনা, খারাই, পাখা, বই রাখার র্যাক, ঘুনি, ডালা ও ঝুড়ি প্রভৃতি মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে সরবরাহ করতো।বর্তমানে বাঁশ ও বেত পাওয়া যায় না বললেই চলে।

 

প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে বাঁশ ও বেতের ঝাড় মরে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও বাঁশ ও বেতের শো-শো শব্দ সকলকে আন্দলিত করতো। বর্তমানে সেসব বাঁশ বেত ঝাড় চোখে পড়েনা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কয়েক বছরে মধ্যে বাঁশ ও বেতের বাগান হারিয়ে গেছে। এক সময় বাঁশ-বেত শিল্পীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন হাট-বাজারসহ রাস্তায়-রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করতে দেখা যেত। সে দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। বাঁশ ও বেতের সংকটের কারণে এ শিল্পের সাথে জড়িত হাজার-হাজার কুটির শিল্পী ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরি বিক্রি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

 

বিভিন্ন বাজারে এ সামগ্রী বিক্রেতা বিমল ঋষি বলেন, দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছর যাবত এ ব্যবসা করছি, কিন্তু আগের মত এখন আর এ ব্যবসায় জৌলুস নেই। বাঁশ ও বেতের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এ ব্যবসার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।বাঁশ ও বেত শিল্পী শিবু বলেন, গ্রামাঞ্চলে যে বাঁশ পাওয়া যায়, তা চড়া মূল্যে কিনতে হয়। আর বেত নেই বললেই চলে। জিনিসপত্র তৈরি করে খরচ ও মজুরী তোলা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

বাজারে বাঁশ বেতের সামগ্রীর বিকল্প অনেক প্লাষ্টিক সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই এখন প্লাষ্টিক সামগ্রী ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। তার পরও বাঁশ ও বেতের অনেক সামগ্রীর বেশ কদর রয়েছে। বাঁশঝাড় উজাড় হওয়ার নেপথ্যের অন্যতম কারণ, ইট ভাটা ও টালী কারখানায় বাঁশের মুড়া তুলে ব্যাপকভাবে পোড়ানোর কারণে বাঁশের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাঁশ ও বেতের অভাবে এ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জুলাই শহীদদের প্রকৃত সম্মান হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া : পরিবেশ উপদেষ্টা

» তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের খালাসের রায় প্রকাশ

» ‘দুলাভাই, দুলাভাই’ স্লোগানে মুখরিত এনসিপির মঞ্চ, উৎসাহ দিলেন হাসনাত

» সংসদে ১০০ নারী আসনের পক্ষে বিএনপি, তবে সংরক্ষিত : সালাহউদ্দিন

» চাঁদাবাজ যেখানে সংগ্রাম হবে সেখানে: জামায়াতের নায়েবে আমির

» বিএনপির নেতাকে নিয়ে অশ্লীল স্লোগান দেওয়ার পরও ছাত্রদলের লাখো নেতাকর্মীকে শান্ত রেখেছি : ছাত্রদল সভাপতি

» বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশ কারও হাতে নিরাপদ নয়: মির্জা আব্বাস

» বিএনপি এখন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের দলে পরিণত হয়েছে: নাহিদ ইসলাম

» জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধন ৫ আগস্ট

» এ সরকারের শাসনামলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে : ড. আসিফ নজরুল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলের ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে: বাঁশ ও বেত শিল্পে ধস পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পথে বসছে হাজারো পরিবার  

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত  বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট ,সাতক্ষীরা , খুলনা পটুয়াখালীও বরগুনা অঞ্চলে ‌প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং প্লাষ্টিক সামগ্রীর ব্যবহারের কারণে দিন দিন উপকূলীয় অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্প।

 

এ শিল্পের সাথে জড়িতরা তাদের পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিন দিন অন্য পেশায় মনোনিবেশ করছে। যার কারণে বাঁশ ও বেত শিল্পের হাজার-হাজার পরিবার এখন চরম দুর্দিনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। উপকূলীয় অঞ্চল খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের হাজার-হাজার শ্রমিক ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রয়োজনীয় ঋণ, পুঁজির স্বল্পতা বাঁশ ও বেতের স্বল্পতা, মুজুরী কম থাকার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত হাজার-হাজার শ্রমিক বেকার জীবন যাপন করছে। এসব শ্রমিক বংশ পরম্পরায় এ শিল্পের সাথে জড়িত।

 

তাদের নিপুণ হাতে তৈরি কুলা, চাটাই, হাঁস-মুরগীর খাচা, সাজি, ঢাকনা, চালনী, পাল্লা, খাঁচা, মোড়া বেতের ধামা, পাতিল, চেয়ার, টেবিল, দোলনা, খারাই, পাখা, বই রাখার র্যাক, ঘুনি, ডালা ও ঝুড়ি প্রভৃতি মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে সরবরাহ করতো।বর্তমানে বাঁশ ও বেত পাওয়া যায় না বললেই চলে।

 

প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে বাঁশ ও বেতের ঝাড় মরে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও বাঁশ ও বেতের শো-শো শব্দ সকলকে আন্দলিত করতো। বর্তমানে সেসব বাঁশ বেত ঝাড় চোখে পড়েনা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কয়েক বছরে মধ্যে বাঁশ ও বেতের বাগান হারিয়ে গেছে। এক সময় বাঁশ-বেত শিল্পীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন হাট-বাজারসহ রাস্তায়-রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করতে দেখা যেত। সে দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। বাঁশ ও বেতের সংকটের কারণে এ শিল্পের সাথে জড়িত হাজার-হাজার কুটির শিল্পী ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরি বিক্রি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

 

বিভিন্ন বাজারে এ সামগ্রী বিক্রেতা বিমল ঋষি বলেন, দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছর যাবত এ ব্যবসা করছি, কিন্তু আগের মত এখন আর এ ব্যবসায় জৌলুস নেই। বাঁশ ও বেতের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এ ব্যবসার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।বাঁশ ও বেত শিল্পী শিবু বলেন, গ্রামাঞ্চলে যে বাঁশ পাওয়া যায়, তা চড়া মূল্যে কিনতে হয়। আর বেত নেই বললেই চলে। জিনিসপত্র তৈরি করে খরচ ও মজুরী তোলা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

বাজারে বাঁশ বেতের সামগ্রীর বিকল্প অনেক প্লাষ্টিক সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই এখন প্লাষ্টিক সামগ্রী ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। তার পরও বাঁশ ও বেতের অনেক সামগ্রীর বেশ কদর রয়েছে। বাঁশঝাড় উজাড় হওয়ার নেপথ্যের অন্যতম কারণ, ইট ভাটা ও টালী কারখানায় বাঁশের মুড়া তুলে ব্যাপকভাবে পোড়ানোর কারণে বাঁশের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাঁশ ও বেতের অভাবে এ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com