এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলেরবাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ মোংলা, শরণখোলা, রামপালসহ জেলার ৯টি উপজেলার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও আদরে লালিত হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে প্রায়। গ্রাম বাংলার ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল পরিবারের মাঝেই হারিকেন বাতির ব্যবহার ছিল ব্যাপক। সন্ধ্যার পর হতেই রাতের অন্ধকার দূর করতে একটা সময় দেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন। ৯০ দশকরে পূর্বে ও কিছুকাল পর দেশ-বিদেশে চাকরিসহ উচ্চ পর্যায়ে কর্মরতদের মধ্যে অনেকেই পড়ালেখা করেছেন এই হারিকেনের মৃদু আলোয়। গৃহস্থালি এবং ব্যবসার কাজেও হারিকেনের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বিয়ে, জন্মদিন বা পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে লোকের সমাগম হলে ব্যবহার হতো হ্যাজাক, পাশাপাশি জমা রাখা হতো এই হারিকেন।
যুগের পরির্বতনের সাথে সাথে হারিকেনের স্থান দখল করছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক চার্জার বাতি। বৈদ্যুতিক ও চায়না বাতির কারণে গ্রাম ও শহরে হারিকেনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। সেই আলোর প্রদীপ এখন গ্রাম থেকেও প্রায় বিলুপ্তি হচ্ছে। হারিকেন জ্বালিয়ে বাড়ীর উঠানে বা বারান্দায় পড়াশোনা করত শিক্ষার্থীরা। রাতে পথচলার জন্য ব্যবহার করা হত হারিকেন। হারিকেনের জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন আনার জন্য প্রায় বাড়ীতেই থাকত কাঁচের বিশেষ ধরনের বোতল। সেই বোতলে রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো। গ্রাম-গঞ্জে হাটের দিনে সেই রশিতে ঝোলানো বোতল হাতে যেতে হতো হাটে, এ দৃশ্য বেশি দিন আগের নয়।
সরেজমিনে দেখা যায় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শেখ সুলতান জয়নাল আবেদীন হারিকেন ব্যবহার। তিনি বলেন আমাদের বাড়ীতে দেশ স্বাধীনের পূর্ব হতেই কেরোসিনের বাতি এবং পরবর্তীতে হারিকেনের ব্যবহার করা হতো। যা এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বাজারে থেকে প্রতিদিন রাতে হারিকেনের সাহায্যে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরি। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাবসা করছি। সেই ১৯৯০-৯৫ সালের কথা, দোকানে হারিকেন বিক্রি করতাম। আজ ৩৫/৪০ বছর পর হারিকেন বেচাকেনা নেই। মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম কবির বলনে, হারিকেন আমাদের পরম বন্ধু ছিল, হারিকেন জ্বালিয়ে আমরা লেখাপড়া করেছি।
এখনকার ছাত্রছাত্রীদের কাছে হারিকেন এর কথা কাল্পনিক মনে হবে। ঘরে বিদ্যুৎ, সোলার থাকায় আজ হারিকেনের কোন প্রয়োজন নেই, তবে ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য হারিকেন এর বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।