মৌসুমী ইসলাম:পুরো বাজেট বিশ্লেষণে আমরা মূল যে জিনিস দেখতে পাই, তা হলো আয় ও ব্যয়ের বড় চ্যালেঞ্জ। সংগত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা খাতসহ বেশ কিছু খাতকে।
দেশীয় শিল্পের শক্ত অবস্থান ও রাজস্ব আহরণ গতিশীল করতে বিলাসবহুল ও বিদেশি পণ্যের উপর কর আরোপকে সাধুবাদ জানাই। উৎপাদকের কাঁচামাল সরবরাহের ওপর উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং ট্রেডিং পণ্য সরবরাহের উৎসে কর কর্তনের হার ৭ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ করায় তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাবেন।
এক লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যাংকঋণ এবং বিদেশ থেকে অর্থ–সম্পত্তি আনতে যে ধরনের কর আরোপ করা হয়েছে, তা কতটুকু সুফল বয়ে আনবে, তা সময় বলে দেবে। মনে রাখতে হবে, অনুদানসহ ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সুদ পরিশোধ বাবদ খরচ হবে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ আর বিদেশি ঋণের সুদ ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অতএব ব্যাংক খাত নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকা জরুরি।
করপোরেট করহার কমানো, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহারের পরিবর্তন ব্যবসায় গতি সৃষ্টি করবে। আয়করের সীমা অপরিবর্তিত রেখে করের আওতা বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া, তা প্রশংসনীয়।
উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে প্রযুক্তিপণ্যের ওপর কর ছাড় সুফল বয়ে আনবে। এসএমই ও তৃণমূলের উদ্যোক্তাদের জন্য যে ধরনের সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে দেওয়া হচ্ছে, তা কাজে লাগাতে হবে। কর অব্যাহতি, পণ্যের বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে বিদেশি পণ্যের ওপর কর আরোপ, কাঁচামালের সুবিধা এবং বাস্তবায়নের অগ্রগতির জন্য যে ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এ বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৩৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ২৮১ কোটি টাকা আর স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে পণ্য কেনাকাটায় বড় ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়নি। পণ্য কেনাকাটায় ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রয়েছে। এ বিষয়ে এ বছরের বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় সংকট তৈরি হবে।
লেখক: সভাপতি, তৃণমূল নারী শিল্প উদ্যোক্তা সমিতি, বাংলাদেশ। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন