বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমানো সম্ভব?

ছবি সংগৃহীত

 

বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. আগরওয়ালার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।

 

এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্বর্ণ ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণের বাজারে তথাকথিত ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

বাংলাদেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হয় না। ফলে এই খাতে ‘সিন্ডিকেট’র দ্বারা স্বর্ণের মূল্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পুরনো। চোরাচালানের মাধ্যমে যে সব স্বর্ণ আসে, সেগুলো দেশের বাজারে বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেন। ফলে চোরাচালান-কেন্দ্রিক এই খাত নজরদারির বাইরে থাকার সুযোগ নিচ্ছেন তারা।

দাম নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো তা নির্ধারণেরও সুযোগ পাচ্ছেন। কারণ সরকার স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে না, করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা ত্রুটিপূর্ণ। ফলে স্বর্ণ আমদানি হয় না।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খাতে জবাবদিহিতা ও নজরদারি নেই। ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কর। আর মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাজার বা প্রতিবেশী দেশের বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কি না, তাও দেখা হয় না। ফলে যেভাবে উচ্চহারে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটা কতখানি যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন সব সময়ই ছিল বলে জানান তারা।

 

তাই পুরো বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ ছাড়া চোরাচালান ছাড়া বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি কীভাবে করা যাবে, সে বিষয়গুলো আরো সহজীকরণ করারও আহ্বান জানান তারা।

কেন স্বর্ণ আমদানি হয় না?

সরকার ২০১৮ সালে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে ২০২১ সালে তা সংশোধন করা হয়। স্বর্ণের বাজার ও জুয়েলারি ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে ওই বছরই একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। শুরুর দিকে পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান কিছু স্বর্ণ আমদানি করলেও, পরে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।

 

ব্যবসায়ীরা নিজেরাও স্বীকার করছেন, বাংলাদেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হয় না। কিন্তু কেন হয় না, এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা দুষছেন সাবেক সরকারের স্বর্ণ আমদানির নীতিমালাকে।

 

বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আগের সরকারের গোল্ড ইমপোর্টের ক্যাটাগরিটা বেশ ত্রুটিযুক্ত ছিল। আমরা অনেক আবেদন করেছি যে, গোল্ডের ইমপোর্টের যে বিষয়টা লাইসেন্স দিলেন। কিন্তু গোল্ড আমদানি করার কোনো সুযোগ নাই!’

 

‘কারণ ওখানে ট্যাক্স ক্যাটাগরি যেটা ইমপোজ করা আছে অলমোস্ট ১৮ থেকে ১৯ পারসেন্ট সব কিছু মিলিয়ে। অন দ্য আদার হ্যান্ড এটা ‘হ্যাসেলফুল’ (ঝামেলায় পরিপূর্ণ) ছিল’, বলেন মি. রহমান। এ ছাড়া স্বর্ণ আমদানির পুরো প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এবং নানা জটিলতায় সেটা আর সামনে এগোতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন মি. রহমান।

 

তিনি জানান, ‘গোল্ড ইমপোর্টের জন্য পারমিশন থেকে শুরু করে অলমোস্ট ফিনিশ করা পর্যন্ত ২৪ থেকে ২৫ দিন পার হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ-ছয়জন ইমপোর্টার ইমপোর্ট করেছিল। কিন্তু তারা আর সামনে এগোতে পারেনি এসব বাধাগুলোর কারণে!’

 

‘শিথিল’ ব্যাগেজ রুলস

ব্যবসায়ীদের দাবি সরকার একদিকে আমদানি নীতিমালা করে স্বর্ণ আমদানি করতে বলে, অথচ ব্যাগেজ রুলসে দেওয়া হয়েছে শিথিলতা। ব্যাগেজ রুলসে এক ভরি স্বর্ণ শুধুমাত্র চার হাজার টাকায় দেশে আনার সুযোগ রয়েছে।

 

মি. রহমান বলেন, ‘এটা টোটালি কন্ট্রাডিকটরি (স্ববিরোধিতায় ভরা)। ইমপোর্টকে যদি এনকারেজ করতে চান আবার ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সুযোগ করে দেন, তাহলে তো ইমপোর্ট হবে না।’

 

‘এই জটিলতাগুলো নিয়ে আমরা চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরসহ অনেকবার চেষ্টা করেছি তিন বছর থেকে। কিন্তু তখন এনবিআরের যারা কর্ণধার ছিলেন তারা আমাদের কথায় কান দেননি।’

 

বিএফআইইউ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই খাতে আমদানি-রফতানির সুযোগ হলে ২২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে। যাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আহরণ হবে দেশের।
এই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মি. রহমান দাবি করেন এই সেক্টরকে ‘এগুতে দেওয়া হয়নি’ এবং এই খাত ‘সরকারের সহযোগিতা পায়নি’।

স্বর্ণের দাম সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর তাঁতীবাজারে বুলিয়ান (পোদ্দার) মার্কেট স্বর্ণের যে দাম নির্ধারণ করে সেটা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে। বুলিয়ান মার্কেট হলো যেসব ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের ব্যবসা করেন তাদের মার্কেট। বাংলায় একেই পোদ্দার বলা হয়।

যারা স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। বাজুস দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘অসহায়’ বলে দাবি তাদের। কারণ সরকার ডলারের রেট দেয়। কিন্তু স্বর্ণের রেট নির্ধারণ করে না।

মি. রহমান বলেন, ‘সরকার গোল্ড আনেও না, গোল্ড সাপ্লাইও দেয় না। বাজুস দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধতা ধরে রাখার জন্য স্বর্ণের রেট দেয়।’

 

‘রেট কীভাবে দেয় বাজুস? যেমন ধরুন তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট। আমরা কিন্তু বুলিয়ান মার্কেটের রেটকে ফলো করি। বুলিয়ান মার্কেট সলিড গোল্ড নিয়ে ডিল করে’, জানান তিনি।

 

বুলিয়ান মার্কেটে স্বর্ণ কোথা থেকে আনা হয়, এমন প্রশ্নে মি. রহমানের দাবি, ‘সেটা আসলে আমাদের ধারণা নেই। ইট ইজ টোটালি বেইজড অন স্মাগলিং। যেটা আমরা জানি। এদেশের প্রশাসনও জানে।’

 

এদের একটা সিন্ডিকেট আছে দাবি করে মি. রহমান জানান, দুবাই থেকে ব্যাগেজ রুলসে যেসব স্বর্ণ আসে বা মানুষজন যে স্বর্ণ আনে অথবা ইনফরমাল ওয়েতে যে স্বর্ণ আসে তারা সে সব স্বর্ণের উচ্চ মূল্য মুনাফা নির্ধারণ করে স্বর্ণের রেটকে নিয়ন্ত্রণ করে।

 

‘যেহেতু বহির্বিশ্ব থেকে দেশে স্বর্ণ আমদানি হয় না, তারা ১০-১২ হাজার টাকা রেট বাড়িয়ে একটা রেট নির্ধারণ করে রাখে। ওইটা ফলো করতে বাজুস বাধ্য’, বলেন মি. রহমান।

 

বুলিয়ান মার্কেটের সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী বলে দাবি করেন তিনি। মূলত ওই মার্কেটের রেট অনুসরণ করেই বাজুস দাম নির্ধারণ করে থাকে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

 

ফলে তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট যে স্বর্ণের রেট নির্ধারণ করে, তার ভিত্তিতে শুধু দুই দশমিক আট শতাংশ মুনাফা যুক্ত করে দাম নির্ধারণ করা হয় বলে দাবি এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর।

 

বাংলাদেশে স্বর্ণের গহনা তৈরিতে ১২ শতাংশ ‘ওয়েস্টেজ’ (অপচয়) থাকে যা বাকি বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি। অন্য দেশে এই পরিমাণ ১ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। বাংলাদেশে সেটা অলংকার তৈরির চার্জ হিসেবে নেওয়া হয় বলে জানান মি. রহমান। এতেও দাম বৃদ্ধি পায়।

 

স্বর্ণের দাম বাড়তি হওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্রেতাই দুবাই, কাতার বা পার্শ্ববর্তী দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে এখন যে ধারায় স্বর্ণের ব্যবসা চলছে তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চলছে না। তারা বলছেন, যারা স্মাগলিং করত তারা এই সিন্ডিকেটের অংশীদার। মূলত ২০০৯ সাল থেকে এ ধারা চলছে বলে দাবি তাদের।

 

ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান দোলন এবং সাধারণ সম্পাদক দিলীপ আগরওয়ালের দিকেও ইঙ্গিত করছেন। সে সময় স্বর্ণের রেট উচ্চ মাত্রায় ছিল বলে দাবি তাদের।

 

এদিকে, মি. রহমানের দাবি ওই ধারা থেকে বের হতে তারা ইতিমধ্যেই পাঁচ শতাংশ স্বর্ণের রেট কমিয়েছেন। যদিও তার এই দাবির তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজারে গত কয়েক মাসেও দেখা যায়নি।

 

মঙ্গলবার রাতেই সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সাথে তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধানও শুরু করেছে সিআইডি।

 

এই সিন্ডিকেটের বিপরীতে বাজুস অসহায় বলে দাবি ওই সংস্থার স্বর্ণের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের।

 

মি. রহমানের দাবি, আগের রেট হলে এখন স্বর্ণের দাম ভরিতে আরেও অন্তত ১০ হাজার টাকা বেড়ে যেতো। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার দর বাংলাদেশ জুয়েলারি এসোসিয়েশন বিবেচনায় নেয় না বলেও জানান তিনি।

‘আমাদের তো দেখার সুযোগ নাই। যদি গোল্ড ইমপোর্ট হতো বা রিফাইনারি থেকে বের হতো তাহলে নির্ধারণ করার সুযোগ ছিল। যেহেতু এটা নাই তাই ধারণা নাই’, বলেন মি. রহমান।

বাংলাদেশের ও ভারতের দামে পার্থক্য কত?

 

বাংলাদেশে বুধবার ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ২৬ হাজার ৩২১ টাকা। একই দিনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় ২২ ক্যারেট এক ভরি স্বর্ণের দাম বাংলাদেশি টাকায় আসে এক লাখ দশ হাজার ৬৫৩ টাকা। অর্থাৎ একই দিনে দুই দেশের স্বর্ণের ভরিতে পার্থক্য ১৫ হাজার ৬৬৮ টাকা।

স্বর্ণ চোরাচালান রোধ কীভাবে সম্ভব?

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের চোরাচালানের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একই সাথে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালাকে আইনি কাঠামোতে আনতে হবে। এতে জড়িত শুধুমাত্র বাহকদের নয়, বরং মূল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

 

এজন্য আইন প্রয়োগকারী প্রত্যেকটি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে সীমান্ত এলাকা, বিমানবন্দরগুলোতে নজরদারি বাড়ালে চোরাচালান রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সমন্বিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থায়ী একটা সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি করলে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতে পারে।’

 

অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়-এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া চোরাচালান-কেন্দ্রিক এই খাতকে রক্ষা করা কঠিন বলেও মনে করেন মি. ইফতেখারুজ্জামান।

 

‘সব চেয়ে বড় কথা যারা চোরাচালানের সাথে জড়িত তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়, একজন-দুজন নয় পুরো সিন্ডিকেটই যাদের কথা বলা হচ্ছে…আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ অপরাধ করলে যে শাস্তি দিতে হয় সেটার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তাহলেই চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হবে’, বলেন তিনি।

 

চোরাচালান রোধ করতে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানিকে উৎসাহ দিতেও সরকারকে আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদরা।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘যদি দেখি বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানির জন্য সরকারকে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে আনা হয়, তাহলে সরকারকে এনকারেজ করতে হবে। অর্থাৎ বৈধ পথে আনার বিষয়কে এনকারেজ করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সরকারের সেটা নেওয়া দরকার।’

 

‘এ জায়গাটাতে স্বচ্ছতা প্রায় নেই। তাই বৈধ পথে আনার ক্ষেত্রে আরেকটু ফ্লেক্সিবল টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন দেওয়া জরুরি’, বলছিলেন সায়মা হক বিদিশা।  সূএ:বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি, দুদিনের মধ্যে অভিযান: ডিএমপি কমিশনার

» গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করে শেষ মুহূর্তে ‘শাটডাউন’ এড়ালো যুক্তরাষ্ট্র

» বাসে তল্লাশি চালিয়ে দেশীয় তৈরি পাইপ গানসহ দুই যাত্রী গ্রেপ্তার

» সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে হাসান আরিফের জানাজা সম্পন্ন

» উত্তর ভারতের প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামানো হচ্ছে ‘পুষ্পা-২’

» ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ কনসার্ট ঘিরে যান চলাচলে নির্দেশনা

» সাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু

» বেইলি ব্রিজ ভেঙে তুরাগ ন‌দে ট্রাক, বিকল্প পথে চলার অনুরোধ

» সড়ক ও পরিবহন খাতে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

» ক‍্যানবেরায় ১২ প্রবাসীকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অ‍্যাওয়ার্ড প্রদান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমানো সম্ভব?

ছবি সংগৃহীত

 

বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. আগরওয়ালার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।

 

এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্বর্ণ ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণের বাজারে তথাকথিত ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

বাংলাদেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হয় না। ফলে এই খাতে ‘সিন্ডিকেট’র দ্বারা স্বর্ণের মূল্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পুরনো। চোরাচালানের মাধ্যমে যে সব স্বর্ণ আসে, সেগুলো দেশের বাজারে বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেন। ফলে চোরাচালান-কেন্দ্রিক এই খাত নজরদারির বাইরে থাকার সুযোগ নিচ্ছেন তারা।

দাম নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো তা নির্ধারণেরও সুযোগ পাচ্ছেন। কারণ সরকার স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে না, করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা ত্রুটিপূর্ণ। ফলে স্বর্ণ আমদানি হয় না।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খাতে জবাবদিহিতা ও নজরদারি নেই। ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কর। আর মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাজার বা প্রতিবেশী দেশের বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কি না, তাও দেখা হয় না। ফলে যেভাবে উচ্চহারে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটা কতখানি যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন সব সময়ই ছিল বলে জানান তারা।

 

তাই পুরো বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ ছাড়া চোরাচালান ছাড়া বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি কীভাবে করা যাবে, সে বিষয়গুলো আরো সহজীকরণ করারও আহ্বান জানান তারা।

কেন স্বর্ণ আমদানি হয় না?

সরকার ২০১৮ সালে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে ২০২১ সালে তা সংশোধন করা হয়। স্বর্ণের বাজার ও জুয়েলারি ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে ওই বছরই একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। শুরুর দিকে পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান কিছু স্বর্ণ আমদানি করলেও, পরে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।

 

ব্যবসায়ীরা নিজেরাও স্বীকার করছেন, বাংলাদেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হয় না। কিন্তু কেন হয় না, এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা দুষছেন সাবেক সরকারের স্বর্ণ আমদানির নীতিমালাকে।

 

বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আগের সরকারের গোল্ড ইমপোর্টের ক্যাটাগরিটা বেশ ত্রুটিযুক্ত ছিল। আমরা অনেক আবেদন করেছি যে, গোল্ডের ইমপোর্টের যে বিষয়টা লাইসেন্স দিলেন। কিন্তু গোল্ড আমদানি করার কোনো সুযোগ নাই!’

 

‘কারণ ওখানে ট্যাক্স ক্যাটাগরি যেটা ইমপোজ করা আছে অলমোস্ট ১৮ থেকে ১৯ পারসেন্ট সব কিছু মিলিয়ে। অন দ্য আদার হ্যান্ড এটা ‘হ্যাসেলফুল’ (ঝামেলায় পরিপূর্ণ) ছিল’, বলেন মি. রহমান। এ ছাড়া স্বর্ণ আমদানির পুরো প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এবং নানা জটিলতায় সেটা আর সামনে এগোতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন মি. রহমান।

 

তিনি জানান, ‘গোল্ড ইমপোর্টের জন্য পারমিশন থেকে শুরু করে অলমোস্ট ফিনিশ করা পর্যন্ত ২৪ থেকে ২৫ দিন পার হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ-ছয়জন ইমপোর্টার ইমপোর্ট করেছিল। কিন্তু তারা আর সামনে এগোতে পারেনি এসব বাধাগুলোর কারণে!’

 

‘শিথিল’ ব্যাগেজ রুলস

ব্যবসায়ীদের দাবি সরকার একদিকে আমদানি নীতিমালা করে স্বর্ণ আমদানি করতে বলে, অথচ ব্যাগেজ রুলসে দেওয়া হয়েছে শিথিলতা। ব্যাগেজ রুলসে এক ভরি স্বর্ণ শুধুমাত্র চার হাজার টাকায় দেশে আনার সুযোগ রয়েছে।

 

মি. রহমান বলেন, ‘এটা টোটালি কন্ট্রাডিকটরি (স্ববিরোধিতায় ভরা)। ইমপোর্টকে যদি এনকারেজ করতে চান আবার ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সুযোগ করে দেন, তাহলে তো ইমপোর্ট হবে না।’

 

‘এই জটিলতাগুলো নিয়ে আমরা চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরসহ অনেকবার চেষ্টা করেছি তিন বছর থেকে। কিন্তু তখন এনবিআরের যারা কর্ণধার ছিলেন তারা আমাদের কথায় কান দেননি।’

 

বিএফআইইউ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই খাতে আমদানি-রফতানির সুযোগ হলে ২২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে। যাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আহরণ হবে দেশের।
এই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মি. রহমান দাবি করেন এই সেক্টরকে ‘এগুতে দেওয়া হয়নি’ এবং এই খাত ‘সরকারের সহযোগিতা পায়নি’।

স্বর্ণের দাম সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর তাঁতীবাজারে বুলিয়ান (পোদ্দার) মার্কেট স্বর্ণের যে দাম নির্ধারণ করে সেটা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে। বুলিয়ান মার্কেট হলো যেসব ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের ব্যবসা করেন তাদের মার্কেট। বাংলায় একেই পোদ্দার বলা হয়।

যারা স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। বাজুস দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘অসহায়’ বলে দাবি তাদের। কারণ সরকার ডলারের রেট দেয়। কিন্তু স্বর্ণের রেট নির্ধারণ করে না।

মি. রহমান বলেন, ‘সরকার গোল্ড আনেও না, গোল্ড সাপ্লাইও দেয় না। বাজুস দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধতা ধরে রাখার জন্য স্বর্ণের রেট দেয়।’

 

‘রেট কীভাবে দেয় বাজুস? যেমন ধরুন তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট। আমরা কিন্তু বুলিয়ান মার্কেটের রেটকে ফলো করি। বুলিয়ান মার্কেট সলিড গোল্ড নিয়ে ডিল করে’, জানান তিনি।

 

বুলিয়ান মার্কেটে স্বর্ণ কোথা থেকে আনা হয়, এমন প্রশ্নে মি. রহমানের দাবি, ‘সেটা আসলে আমাদের ধারণা নেই। ইট ইজ টোটালি বেইজড অন স্মাগলিং। যেটা আমরা জানি। এদেশের প্রশাসনও জানে।’

 

এদের একটা সিন্ডিকেট আছে দাবি করে মি. রহমান জানান, দুবাই থেকে ব্যাগেজ রুলসে যেসব স্বর্ণ আসে বা মানুষজন যে স্বর্ণ আনে অথবা ইনফরমাল ওয়েতে যে স্বর্ণ আসে তারা সে সব স্বর্ণের উচ্চ মূল্য মুনাফা নির্ধারণ করে স্বর্ণের রেটকে নিয়ন্ত্রণ করে।

 

‘যেহেতু বহির্বিশ্ব থেকে দেশে স্বর্ণ আমদানি হয় না, তারা ১০-১২ হাজার টাকা রেট বাড়িয়ে একটা রেট নির্ধারণ করে রাখে। ওইটা ফলো করতে বাজুস বাধ্য’, বলেন মি. রহমান।

 

বুলিয়ান মার্কেটের সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী বলে দাবি করেন তিনি। মূলত ওই মার্কেটের রেট অনুসরণ করেই বাজুস দাম নির্ধারণ করে থাকে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

 

ফলে তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট যে স্বর্ণের রেট নির্ধারণ করে, তার ভিত্তিতে শুধু দুই দশমিক আট শতাংশ মুনাফা যুক্ত করে দাম নির্ধারণ করা হয় বলে দাবি এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর।

 

বাংলাদেশে স্বর্ণের গহনা তৈরিতে ১২ শতাংশ ‘ওয়েস্টেজ’ (অপচয়) থাকে যা বাকি বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি। অন্য দেশে এই পরিমাণ ১ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। বাংলাদেশে সেটা অলংকার তৈরির চার্জ হিসেবে নেওয়া হয় বলে জানান মি. রহমান। এতেও দাম বৃদ্ধি পায়।

 

স্বর্ণের দাম বাড়তি হওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্রেতাই দুবাই, কাতার বা পার্শ্ববর্তী দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে এখন যে ধারায় স্বর্ণের ব্যবসা চলছে তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চলছে না। তারা বলছেন, যারা স্মাগলিং করত তারা এই সিন্ডিকেটের অংশীদার। মূলত ২০০৯ সাল থেকে এ ধারা চলছে বলে দাবি তাদের।

 

ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান দোলন এবং সাধারণ সম্পাদক দিলীপ আগরওয়ালের দিকেও ইঙ্গিত করছেন। সে সময় স্বর্ণের রেট উচ্চ মাত্রায় ছিল বলে দাবি তাদের।

 

এদিকে, মি. রহমানের দাবি ওই ধারা থেকে বের হতে তারা ইতিমধ্যেই পাঁচ শতাংশ স্বর্ণের রেট কমিয়েছেন। যদিও তার এই দাবির তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজারে গত কয়েক মাসেও দেখা যায়নি।

 

মঙ্গলবার রাতেই সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সাথে তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধানও শুরু করেছে সিআইডি।

 

এই সিন্ডিকেটের বিপরীতে বাজুস অসহায় বলে দাবি ওই সংস্থার স্বর্ণের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের।

 

মি. রহমানের দাবি, আগের রেট হলে এখন স্বর্ণের দাম ভরিতে আরেও অন্তত ১০ হাজার টাকা বেড়ে যেতো। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার দর বাংলাদেশ জুয়েলারি এসোসিয়েশন বিবেচনায় নেয় না বলেও জানান তিনি।

‘আমাদের তো দেখার সুযোগ নাই। যদি গোল্ড ইমপোর্ট হতো বা রিফাইনারি থেকে বের হতো তাহলে নির্ধারণ করার সুযোগ ছিল। যেহেতু এটা নাই তাই ধারণা নাই’, বলেন মি. রহমান।

বাংলাদেশের ও ভারতের দামে পার্থক্য কত?

 

বাংলাদেশে বুধবার ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ২৬ হাজার ৩২১ টাকা। একই দিনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় ২২ ক্যারেট এক ভরি স্বর্ণের দাম বাংলাদেশি টাকায় আসে এক লাখ দশ হাজার ৬৫৩ টাকা। অর্থাৎ একই দিনে দুই দেশের স্বর্ণের ভরিতে পার্থক্য ১৫ হাজার ৬৬৮ টাকা।

স্বর্ণ চোরাচালান রোধ কীভাবে সম্ভব?

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের চোরাচালানের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একই সাথে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালাকে আইনি কাঠামোতে আনতে হবে। এতে জড়িত শুধুমাত্র বাহকদের নয়, বরং মূল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

 

এজন্য আইন প্রয়োগকারী প্রত্যেকটি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে সীমান্ত এলাকা, বিমানবন্দরগুলোতে নজরদারি বাড়ালে চোরাচালান রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সমন্বিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থায়ী একটা সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি করলে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতে পারে।’

 

অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়-এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া চোরাচালান-কেন্দ্রিক এই খাতকে রক্ষা করা কঠিন বলেও মনে করেন মি. ইফতেখারুজ্জামান।

 

‘সব চেয়ে বড় কথা যারা চোরাচালানের সাথে জড়িত তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়, একজন-দুজন নয় পুরো সিন্ডিকেটই যাদের কথা বলা হচ্ছে…আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ অপরাধ করলে যে শাস্তি দিতে হয় সেটার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তাহলেই চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হবে’, বলেন তিনি।

 

চোরাচালান রোধ করতে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানিকে উৎসাহ দিতেও সরকারকে আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদরা।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘যদি দেখি বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানির জন্য সরকারকে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে আনা হয়, তাহলে সরকারকে এনকারেজ করতে হবে। অর্থাৎ বৈধ পথে আনার বিষয়কে এনকারেজ করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সরকারের সেটা নেওয়া দরকার।’

 

‘এ জায়গাটাতে স্বচ্ছতা প্রায় নেই। তাই বৈধ পথে আনার ক্ষেত্রে আরেকটু ফ্লেক্সিবল টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন দেওয়া জরুরি’, বলছিলেন সায়মা হক বিদিশা।  সূএ:বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com