বিপজ্জনক বাঁকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.) :রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সাত পেরিয়ে আট মাসে পড়েছে। এই যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিশ্বব্যাপী, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। গরিব, উন্নয়নশীল দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সব সময়ই যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। আগ বাড়িয়ে অন্য দেশের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বা যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে আত্মরক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনীতি ও কূটনীতিতে পেরে না ওঠে বড় রাষ্ট্রগুলো প্রতিবেশী ছোট রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালালে তা সব সময়ই বিবেকবান, মানবিক, যুক্তিনির্ভর মানুষের কাছে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আট মাসব্যাপী চললেও এর শেষ কোথায় সে সম্পর্কে কোনো বিশ্লেষকই নিশ্চিত নন। তবে এর পরিণতির ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা নিয়ে সবাই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এশিয়া-আফ্রিকার অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ ও মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুদ্ধ করছে ইউক্রেন আর রাশিয়া; কিন্তু চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বিশ্বের সাধারণ মানুষ। সব সময়ই দেখা গেছে যুদ্ধটা হয় এমনই যে, কারও সর্বনাশ আর কারও পৌষমাস, এমন অবস্থা। শাসক শ্রেণি ও ব্যবসায়ীরা লোক দেখানো হাহুতাশ করলেও মনে মনে বেজায় খুশি। জিনিসের দাম বেড়ে গেলে ওই দুই শ্রেণিই লাভবান হয়, আর স্বল্প সীমিত ও অবসরপ্রাপ্ত আয়হীন মানুষের সর্বনাশ হয়। আমজাদ হোসেনের সেই নাটকের গো অ্যান্ড স্টক ডায়ালগের নির্দয় বাস্তবায়ন সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারেও প্রত্যক্ষ করা গেছে। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী। গণতন্ত্রের বড় শত্রু গোষ্ঠীতন্ত্র, যাদের ইংরেজি ভাষায় অলিগার্ক বলা হয়। তারা  যখন রাষ্ট্রের চেয়ে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়। রাষ্ট্রের রাজনীতি যখন আদর্শগতভাবে চরম বিপরীতমুখী এবং মানি ও মাসলের প্রভাবে জনমেরুকরণে উভয় পক্ষ প্রায় সমক্ষমতাবান হয় তখন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীতন্ত্র শক্তিশালী হয়। দেশ, কাল, পাত্রভেদে সব জায়গায় প্রায় একই রকম দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা শতকরা ৯৫ ভাগ, যারা কার্লমার্কসের ভাষায় হ্যাভেনটস গ্রুপ। আর মাত্র শতকরা ৫ ভাগ মানুষ হচ্ছে ধনী; হ্যাভ গ্রুপ। ২০১৮ সালে আমেরিকার ব্লুমবার্গ মিডিয়া হাউস থেকে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে পুঞ্জীভূত যত সম্পদ মানুষের হাতে রয়েছে তার শতকরা ৯৫ ভাগ রয়েছে এই হ্যাভ গ্রুপের শতকরা ৫ ভাগ মানুষের হাতে, আর শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের হাতে রয়েছে মাত্র, শতকরা ৫ ভাগ সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছেন, ‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’ এই বিশ্বে যত যুদ্ধ হয়েছে তার সবগুলো, বর্তমানের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ, অনুসন্ধান ও বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ওই হ্যাভ গ্রুপের অস্ত্র ব্যবসায়ী, করপোরেট হাউস ও শাসকগোষ্ঠীর সম্মিলিত স্বার্থ রক্ষার জন্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি, সূত্রপাত ও তার বিস্তার ঘটেছে। এবার প্রবন্ধের মূল বিষয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিণতির আশঙ্কার কথায় আসি। সাত মাসেরও অধিক সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। মাঠের যুদ্ধ পরিস্থিতির মূল্যায়নে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, যুদ্ধ যত দিন চলুক না কেন, কোনো পক্ষেরই একচ্ছত্রভাবে জয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, পূর্বাঞ্চলীয় বড় শহর খারকিভ অঞ্চল এবং কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ ওডেসা সমুদ্রবন্দর থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। এই তিন অঞ্চলে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষমতা এখন চলে গেছে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর হাতে। ন্যাটো দেশগুলো থেকে আধুনিক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ, ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরবরাহ লাইন, অর্থাৎ আকাশ, জল ও স্থলপথ প্রথম থেকে এ পর্যন্ত যথারীতি সচল এবং খোলা রয়েছে। ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে রাশিয়ার জন্য অপরিহার্য ছিল সব পথ বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু রাশিয়ার সেনাবাহিনী সে পথে যাওয়ার সাহস করেনি। এই সরবরাহ লাইন অটুট রেখে ইউক্রেন সরকারকে উৎখাত ও সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি সাধন যে একেবারে অসম্ভব তা জেনেও যখন সেটি বন্ধ করার উদ্যোগ ও পরিকল্পনা রাশিয়ান সেনাবাহিনী নেয়নি, তার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় ইউক্রেনের সরকার উৎখাত ও সেনাবাহিনীকে বিলুপ্তি ঘোষণার লক্ষ্য ছিল বড় এক ধাপ্পাবাজি ও ভয় দেখানোর কৌশল। যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে তাই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার ইউক্রেনবাসী। কিন্তু রাশিয়ার সেনাবাহিনীও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কোনো কোনো অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে রাশিয়ার প্রায় ৮৫ হাজার সেনা সদস্য যুদ্ধে নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্প্রতি আরও তিন লাখ নতুন সেনা সমাবেশের যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতেই প্রমাণ হয় রাশিয়ান সেনাবাহিনীর হতাহতের সংখ্যা কম নয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ ঘোষণার প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট পুতিন যে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, ইউক্রেনের সরকার উৎখাত ও সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি, এর কোনোটাই সাত মাসে অর্জিত হয়নি, হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই, বরং বলা যায় উল্টোটি ঘটেছে। ইউক্রেন সেনাবাহিনী অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও তাদের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, রাশিয়ার মতো একটা পরাশক্তির সেনাবাহিনীকে তারা শুধু ঠেকিয়ে রাখা নয়, পিছু হটতে বাধ্য করেছে। এটা ইউক্রেনের জন্য বড় এক অর্জন। তাতে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেটি যে কোনো যুদ্ধ জয়ের জন্য অপরিহার্য। প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার সহযোগীরা রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক বিচার-বিশ্লেষণে ভুল করেছেন। বিগত সময়ে ইতিহাসের ডিক্টেটর শাসকদের বেলায় যা দেখা গেছে পুতিনও ঠিক সেটাই করেছেন। ইতিহাসে দেখা যায়, ডিক্টেটররা অহংবোধে অন্ধ হয়ে দ্বন্দ্বে জড়িত অন্য রাষ্ট্র ও পক্ষের সক্ষমতা নিয়ে ভুল বিচার-বিশ্লেষণ করেন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ লাঘবের লক্ষ্যে ও নিজ দেশের মানুষের কাছে অপরিহার্য শাসক হওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষায় যে কোনো অজুহাতকে অবলম্বন করে অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন বা অন্য দেশ দখল করে নেন। কিন্তু শেষ বিচারে তার ফল ওই দেশ ও শাসকের জন্য শুভকর হয়নি। ইরাকের সাদ্দাম হোসেন যদি নব্বই দশকের শুরুতে কুয়েত দখল না করতেন তাহলে তার ওই পরিণতি হতো না এবং ইরাকের মতো একটা আধুনিক শক্তিশালী দেশের আজকে যা করুণ অবস্থা সেটিও হতো না। কিন্তু ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, পুতিনও নেননি। আবার বিপরীতে এ কথাও বলা প্রয়োজন যে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অপরিপক্ব রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল নিশ্চিতভাবে আত্মঘাতী হয়েছে। জেলেনস্কি রাজনীতির লোক নন, অন্য পেশা থেকে হঠাৎ করেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। ফল যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। ২০০১ সালে আফগানিস্তান ও ২০০৩ সালে ইরাক আমেরিকা দখলে নেওয়ার পর যথাক্রমে হামিদ কারজাই ও নূরি আল মালিকি হঠাৎ করে উড়ে এসে যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হয়ে কি রকম নাকানি-চুবানি খেয়েছেন সেটা ইউক্রেনবাসী ও জেলেনস্কি যদি মনে রাখতেন তাহলে কিন্তু আজকের এই দশায় ইউক্রেনকে পড়তে হয় না। সবকিছুর জন্য একটা দেশের নেতৃত্ব সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর? যুদ্ধে কোনো পক্ষই একচ্ছত্র জয় পাবে না। এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেন যে রকম ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠে পুনরায় নিজস্ব জাতিগত স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বাধীনভাবে চলা ইউক্রেনের পক্ষে আর সম্ভব হবে না। পশ্চিম অথবা পূর্ব কোনো এক পক্ষের তাঁবেদার হয়ে থাকতে হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বুঝতে পারেননি যে, পশ্চিমা বিশ্বের পাকা পাকা কৌশলবিদ ও থিঙ্কট্যাঙ্ক হয়তো চেয়েছেন ইউক্রেনকে অবলম্বন করে রাশিয়াকে যুদ্ধের মাঠে টেনে আনা এবং তার মধ্য দিয়ে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত ও রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা হ্রাস করা, আর তা করতে পারলে আগামীতে চীনকে সফলভাবে মোকাবিলা করা সহজতর হবে। পশ্চিমা বিশ্বের ভূ-রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য চীন, এ কথা এখন সবাই জানেন। কিন্তু পুতিন প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার ক্ষমতা অটুট থাকলে চীন-রাশিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ফলে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির যে মেরুকরণ ঘটবে তাতে চীনের দিকে পাল্লা ভারী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এবং তার পরিণতিতে পুতিন ক্ষমতাচ্যুত ও রাশিয়া দুর্বল হলে সেটা যে চীনের জন্য বড় চিন্তার বিষয় সে কথা শি জিন পিং স্পষ্টভাবে পুতিনকে জানিয়েছেন। গত ১৫-১৬ সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানের রাজধানী সমরখন্দে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে নিজে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং চীনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনুযায়ী সুবিধা করতে না পেরে নিজের গদি রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন গত দুই সপ্তাহে যেসব পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে রাশিয়ার অবস্থান একটা পয়েন্ট অব নো রিটার্ন পর্যায়ে চলে গেছে। এই জাতীয় সংকটের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন এবং বিপুল ভোটে তৃতীয় মেয়াদে আরও ছয় বছর ক্ষমতায় থাকা পুতিন নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেনের দক্ষিণ অঞ্চলে খেরসনসহ পুরো ডনবাস অঞ্চল এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিঝঝিয়া নিয়ে ইউক্রেনের প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ ভূখন্ড যেটি এখন রাশিয়ান সৈন্যদের দখলে আছে, সেখানে এক ধরনের তথাকথিত গণভোট এবং তাতে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের সম্মতি রয়েছে দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। এই সংযুক্তির প্রস্তাব বিল আকারে রাশিয়ার পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে উল্লিখিত দনবাস অঞ্চল এবং ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়া এখন থেকে রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য ভূখন্ড। রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অবিচ্ছেদ্য ভূখন্ডের কোনো অংশই প্রেসিডেন্ট বা সরকার, কেউ অন্য রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না, এখতিয়ার নেই। তাতে ফল দাঁড়াল এই, ইউক্রেন থেকে দখলকৃত ইউক্রেনের শতকরা ২০ ভাগ ভূখন্ডের মর্যাদা নিয়ে আর কোনো আলোচনার সুযোগ স্বয়ং পুতিনেরও থাকল না। এটাই এখন বড় বিপজ্জনক অবস্থা। কারণ, ন্যাটো দেশসমূহের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ইউক্রেন উল্লিখিত ভূমি উদ্ধারের জন্য সব রকম সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।

 

তাতে রাশিয়ার জন্য বেকায়দা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পুতিন রাশিয়া পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবেন, যে কথা পুতিন নিজে বলেছেন এবং অনেক বিশ্লেষকও তাই মনে করেন। সে রকম হলে পারমাণবিক যুদ্ধ, এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এ কারণেই বলা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন বিপজ্জনক বাঁকে এসে পৌঁছেছে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected] । সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের এসেছে: মাসুদ সাঈদী

» নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

» অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ চারজন মাদক চোরা কারবারি আটক

» সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব, যা জানালেন বদিউল আলম

» ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান মঈন খানের

» কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়: আইজিপি

» সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময়ে জান্নাত! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

» বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পট লোন পেলেন সিলেটের সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা

» ‘ইউসিবি নাইট’ আয়োজনে গ্রাহক ও অংশীদারদের অব্যাহত সহযোগিতার স্বীকৃতি

» ইসলামপুর ওয়ার্ড কৃষক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিপজ্জনক বাঁকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.) :রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সাত পেরিয়ে আট মাসে পড়েছে। এই যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিশ্বব্যাপী, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। গরিব, উন্নয়নশীল দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সব সময়ই যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। আগ বাড়িয়ে অন্য দেশের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বা যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে আত্মরক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। রাজনীতি ও কূটনীতিতে পেরে না ওঠে বড় রাষ্ট্রগুলো প্রতিবেশী ছোট রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালালে তা সব সময়ই বিবেকবান, মানবিক, যুক্তিনির্ভর মানুষের কাছে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আট মাসব্যাপী চললেও এর শেষ কোথায় সে সম্পর্কে কোনো বিশ্লেষকই নিশ্চিত নন। তবে এর পরিণতির ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা নিয়ে সবাই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এশিয়া-আফ্রিকার অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ ও মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুদ্ধ করছে ইউক্রেন আর রাশিয়া; কিন্তু চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বিশ্বের সাধারণ মানুষ। সব সময়ই দেখা গেছে যুদ্ধটা হয় এমনই যে, কারও সর্বনাশ আর কারও পৌষমাস, এমন অবস্থা। শাসক শ্রেণি ও ব্যবসায়ীরা লোক দেখানো হাহুতাশ করলেও মনে মনে বেজায় খুশি। জিনিসের দাম বেড়ে গেলে ওই দুই শ্রেণিই লাভবান হয়, আর স্বল্প সীমিত ও অবসরপ্রাপ্ত আয়হীন মানুষের সর্বনাশ হয়। আমজাদ হোসেনের সেই নাটকের গো অ্যান্ড স্টক ডায়ালগের নির্দয় বাস্তবায়ন সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারেও প্রত্যক্ষ করা গেছে। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী। গণতন্ত্রের বড় শত্রু গোষ্ঠীতন্ত্র, যাদের ইংরেজি ভাষায় অলিগার্ক বলা হয়। তারা  যখন রাষ্ট্রের চেয়ে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়। রাষ্ট্রের রাজনীতি যখন আদর্শগতভাবে চরম বিপরীতমুখী এবং মানি ও মাসলের প্রভাবে জনমেরুকরণে উভয় পক্ষ প্রায় সমক্ষমতাবান হয় তখন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীতন্ত্র শক্তিশালী হয়। দেশ, কাল, পাত্রভেদে সব জায়গায় প্রায় একই রকম দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা শতকরা ৯৫ ভাগ, যারা কার্লমার্কসের ভাষায় হ্যাভেনটস গ্রুপ। আর মাত্র শতকরা ৫ ভাগ মানুষ হচ্ছে ধনী; হ্যাভ গ্রুপ। ২০১৮ সালে আমেরিকার ব্লুমবার্গ মিডিয়া হাউস থেকে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে পুঞ্জীভূত যত সম্পদ মানুষের হাতে রয়েছে তার শতকরা ৯৫ ভাগ রয়েছে এই হ্যাভ গ্রুপের শতকরা ৫ ভাগ মানুষের হাতে, আর শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের হাতে রয়েছে মাত্র, শতকরা ৫ ভাগ সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছেন, ‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’ এই বিশ্বে যত যুদ্ধ হয়েছে তার সবগুলো, বর্তমানের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ, অনুসন্ধান ও বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ওই হ্যাভ গ্রুপের অস্ত্র ব্যবসায়ী, করপোরেট হাউস ও শাসকগোষ্ঠীর সম্মিলিত স্বার্থ রক্ষার জন্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি, সূত্রপাত ও তার বিস্তার ঘটেছে। এবার প্রবন্ধের মূল বিষয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিণতির আশঙ্কার কথায় আসি। সাত মাসেরও অধিক সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। মাঠের যুদ্ধ পরিস্থিতির মূল্যায়নে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, যুদ্ধ যত দিন চলুক না কেন, কোনো পক্ষেরই একচ্ছত্রভাবে জয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, পূর্বাঞ্চলীয় বড় শহর খারকিভ অঞ্চল এবং কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ ওডেসা সমুদ্রবন্দর থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। এই তিন অঞ্চলে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষমতা এখন চলে গেছে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর হাতে। ন্যাটো দেশগুলো থেকে আধুনিক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ, ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরবরাহ লাইন, অর্থাৎ আকাশ, জল ও স্থলপথ প্রথম থেকে এ পর্যন্ত যথারীতি সচল এবং খোলা রয়েছে। ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে রাশিয়ার জন্য অপরিহার্য ছিল সব পথ বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু রাশিয়ার সেনাবাহিনী সে পথে যাওয়ার সাহস করেনি। এই সরবরাহ লাইন অটুট রেখে ইউক্রেন সরকারকে উৎখাত ও সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি সাধন যে একেবারে অসম্ভব তা জেনেও যখন সেটি বন্ধ করার উদ্যোগ ও পরিকল্পনা রাশিয়ান সেনাবাহিনী নেয়নি, তার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় ইউক্রেনের সরকার উৎখাত ও সেনাবাহিনীকে বিলুপ্তি ঘোষণার লক্ষ্য ছিল বড় এক ধাপ্পাবাজি ও ভয় দেখানোর কৌশল। যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে তাই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার ইউক্রেনবাসী। কিন্তু রাশিয়ার সেনাবাহিনীও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কোনো কোনো অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে রাশিয়ার প্রায় ৮৫ হাজার সেনা সদস্য যুদ্ধে নিহত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্প্রতি আরও তিন লাখ নতুন সেনা সমাবেশের যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতেই প্রমাণ হয় রাশিয়ান সেনাবাহিনীর হতাহতের সংখ্যা কম নয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ ঘোষণার প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট পুতিন যে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, ইউক্রেনের সরকার উৎখাত ও সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি, এর কোনোটাই সাত মাসে অর্জিত হয়নি, হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই, বরং বলা যায় উল্টোটি ঘটেছে। ইউক্রেন সেনাবাহিনী অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও তাদের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, রাশিয়ার মতো একটা পরাশক্তির সেনাবাহিনীকে তারা শুধু ঠেকিয়ে রাখা নয়, পিছু হটতে বাধ্য করেছে। এটা ইউক্রেনের জন্য বড় এক অর্জন। তাতে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেটি যে কোনো যুদ্ধ জয়ের জন্য অপরিহার্য। প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার সহযোগীরা রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক বিচার-বিশ্লেষণে ভুল করেছেন। বিগত সময়ে ইতিহাসের ডিক্টেটর শাসকদের বেলায় যা দেখা গেছে পুতিনও ঠিক সেটাই করেছেন। ইতিহাসে দেখা যায়, ডিক্টেটররা অহংবোধে অন্ধ হয়ে দ্বন্দ্বে জড়িত অন্য রাষ্ট্র ও পক্ষের সক্ষমতা নিয়ে ভুল বিচার-বিশ্লেষণ করেন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ লাঘবের লক্ষ্যে ও নিজ দেশের মানুষের কাছে অপরিহার্য শাসক হওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষায় যে কোনো অজুহাতকে অবলম্বন করে অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন বা অন্য দেশ দখল করে নেন। কিন্তু শেষ বিচারে তার ফল ওই দেশ ও শাসকের জন্য শুভকর হয়নি। ইরাকের সাদ্দাম হোসেন যদি নব্বই দশকের শুরুতে কুয়েত দখল না করতেন তাহলে তার ওই পরিণতি হতো না এবং ইরাকের মতো একটা আধুনিক শক্তিশালী দেশের আজকে যা করুণ অবস্থা সেটিও হতো না। কিন্তু ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, পুতিনও নেননি। আবার বিপরীতে এ কথাও বলা প্রয়োজন যে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অপরিপক্ব রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল নিশ্চিতভাবে আত্মঘাতী হয়েছে। জেলেনস্কি রাজনীতির লোক নন, অন্য পেশা থেকে হঠাৎ করেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। ফল যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। ২০০১ সালে আফগানিস্তান ও ২০০৩ সালে ইরাক আমেরিকা দখলে নেওয়ার পর যথাক্রমে হামিদ কারজাই ও নূরি আল মালিকি হঠাৎ করে উড়ে এসে যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হয়ে কি রকম নাকানি-চুবানি খেয়েছেন সেটা ইউক্রেনবাসী ও জেলেনস্কি যদি মনে রাখতেন তাহলে কিন্তু আজকের এই দশায় ইউক্রেনকে পড়তে হয় না। সবকিছুর জন্য একটা দেশের নেতৃত্ব সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর? যুদ্ধে কোনো পক্ষই একচ্ছত্র জয় পাবে না। এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেন যে রকম ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠে পুনরায় নিজস্ব জাতিগত স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বাধীনভাবে চলা ইউক্রেনের পক্ষে আর সম্ভব হবে না। পশ্চিম অথবা পূর্ব কোনো এক পক্ষের তাঁবেদার হয়ে থাকতে হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বুঝতে পারেননি যে, পশ্চিমা বিশ্বের পাকা পাকা কৌশলবিদ ও থিঙ্কট্যাঙ্ক হয়তো চেয়েছেন ইউক্রেনকে অবলম্বন করে রাশিয়াকে যুদ্ধের মাঠে টেনে আনা এবং তার মধ্য দিয়ে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত ও রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা হ্রাস করা, আর তা করতে পারলে আগামীতে চীনকে সফলভাবে মোকাবিলা করা সহজতর হবে। পশ্চিমা বিশ্বের ভূ-রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য চীন, এ কথা এখন সবাই জানেন। কিন্তু পুতিন প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার ক্ষমতা অটুট থাকলে চীন-রাশিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ফলে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির যে মেরুকরণ ঘটবে তাতে চীনের দিকে পাল্লা ভারী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এবং তার পরিণতিতে পুতিন ক্ষমতাচ্যুত ও রাশিয়া দুর্বল হলে সেটা যে চীনের জন্য বড় চিন্তার বিষয় সে কথা শি জিন পিং স্পষ্টভাবে পুতিনকে জানিয়েছেন। গত ১৫-১৬ সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানের রাজধানী সমরখন্দে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে নিজে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ ব্যাপারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং চীনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনুযায়ী সুবিধা করতে না পেরে নিজের গদি রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন গত দুই সপ্তাহে যেসব পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে রাশিয়ার অবস্থান একটা পয়েন্ট অব নো রিটার্ন পর্যায়ে চলে গেছে। এই জাতীয় সংকটের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন এবং বিপুল ভোটে তৃতীয় মেয়াদে আরও ছয় বছর ক্ষমতায় থাকা পুতিন নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেনের দক্ষিণ অঞ্চলে খেরসনসহ পুরো ডনবাস অঞ্চল এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিঝঝিয়া নিয়ে ইউক্রেনের প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ ভূখন্ড যেটি এখন রাশিয়ান সৈন্যদের দখলে আছে, সেখানে এক ধরনের তথাকথিত গণভোট এবং তাতে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের সম্মতি রয়েছে দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। এই সংযুক্তির প্রস্তাব বিল আকারে রাশিয়ার পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে উল্লিখিত দনবাস অঞ্চল এবং ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়া এখন থেকে রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য ভূখন্ড। রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অবিচ্ছেদ্য ভূখন্ডের কোনো অংশই প্রেসিডেন্ট বা সরকার, কেউ অন্য রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না, এখতিয়ার নেই। তাতে ফল দাঁড়াল এই, ইউক্রেন থেকে দখলকৃত ইউক্রেনের শতকরা ২০ ভাগ ভূখন্ডের মর্যাদা নিয়ে আর কোনো আলোচনার সুযোগ স্বয়ং পুতিনেরও থাকল না। এটাই এখন বড় বিপজ্জনক অবস্থা। কারণ, ন্যাটো দেশসমূহের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ইউক্রেন উল্লিখিত ভূমি উদ্ধারের জন্য সব রকম সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।

 

তাতে রাশিয়ার জন্য বেকায়দা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পুতিন রাশিয়া পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবেন, যে কথা পুতিন নিজে বলেছেন এবং অনেক বিশ্লেষকও তাই মনে করেন। সে রকম হলে পারমাণবিক যুদ্ধ, এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এ কারণেই বলা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন বিপজ্জনক বাঁকে এসে পৌঁছেছে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected] । সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com