ছবি সংগৃহীত
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, রাষ্ট্রের যে তিনটি অঙ্গ, সেই অঙ্গের একটি হলো বিচার বিভাগ। যদি বিচার বিভাগ দুর্বল হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্র শক্তিশালী এটা বলা যাবে না। সেজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে করে সাধারণ জনগণ ন্যায়বিচার প্রার্থনায় আদালতে আসেন।
শনিবার সকালে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জের’ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, জনগণ যাতে সহজে স্বল্প সময় ও খরচে ন্যায় বিচার পায়, তা নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা করছি। বিচার বিভাগকে গতিশীল করে দ্রুততম সময়ে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে বিচারকদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মামলা জট সহনশীল মাত্রায় আনার পরিকল্পনা নিয়ে বিচার বিভাগ কাজ করছে।
মামলাজটের কারণে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে বড় বড় ভবন থাকলেও বিচারপ্রার্থীরা এসে স্বস্তিতে বসবেন, এ রকম ব্যবস্থা সারা দেশে কোনো আদালতে নেই। অথচ তাদের জন্যই এই আদালত এবং বিচারব্যবস্থা। দূর-দূরান্ত গ্রামাঞ্চল থেকে পুরুষদের সঙ্গে নারী বিচারপ্রার্থীরাও আদালতে আসেন। সারা দেশে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন। বাদী ও বিবাদী মিলিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ লোককে আদালত প্রাঙ্গণে আসতে হয়। তারা যেন স্বস্তিতে বসে পানি পান করতে পারেন, শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন-এ রকম কোনো ব্যবস্থা নেই।
তিনি বলেন, সরকার ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা জেলা শহরগুলোতে ৫০ লাখ টাকা করে ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠায় বরাদ্দ দিচ্ছি। সেখানে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক শৌচাগার ও বসার জন্য ৫০ থেকে ৭০টি চেয়ারের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি খাবার ও নিত্য পণ্যের দোকানও থাকবে।
বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশে আর্থিক সংগতি বেড়েছে। দেশ সমৃদ্ধির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জুডিশিয়াল ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা।
আইনজীবী ও তাদের সহকারীরা বিচারকাজে বিচারকদের সহায়তা করলে মামলাজট সহনীয় পর্যায়ে আনা যাবে উল্লেখ করে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, মামলা ডিসপোজালের হার বেড়েছে। এই ডিসপোজাল রেট যদি ১২৫ শতাংশে উন্নীত করা যায়, তাহলে আগামী পাঁচ বছরেরই মধ্যেই মামলা জট নিরসন হবে।
পরে প্রধান বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে বকুল ফুলের চারা রোপণ করেন ও জাদুঘর পরিদর্শন করেন। দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির মতবিনিময় সভায় যোগ দেন তিনি। সেখানে আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার সঙ্গে পেশাগত কাজ করতে হবে। সততাকে ধর্মের মতো করে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে বিচারপ্রার্থী মানুষের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বেগম শামীম আহমেদসহ বিচারক ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি আখতারুজ্জামান মুক্তা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু উপস্থিত ছিলেন। সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন