ছবি সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের আমলে সর্বস্তরে দলীয়করণের অভিযোগ তুলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একজন যোগ্য কর্মকর্তাকে কাজে লাগালে সরকারেরই লাভ হতো। কিন্তু একজন ভালো প্রশাসনিক কর্মকর্তার শ্যালকও যদি বিএনপি কিংবা ছাত্রদল করেছে তাহলে তার ঠিকানা হয়েছে হয় খাগড়াছড়ি, না হয় ওএসডি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ নয়াপল্টনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দেশকে নির্যাতনের মধ্যে পতিত হতে হয়েছিল। যার যে কাজ সেই কাজ তারা করতে পারেনি। তখন ধরেন একজন ভালো ডাক্তার তার মামার শ্বশুর যদি বিএনপি করতো তাহলে তাকে হাসপাতাল থেকে বিদায় করে দেওয়া হতো। কোনো একজন ভালো প্রশাসনিক কর্মকর্তা অত্যন্ত স্মার্ট এবং যোগ্যতা সম্পন্ন, তাকে একটা ভালো জায়গা দিলে সরকারেরই লাভ হতো। কিন্তু তার শালা যদি ছাত্রদল করে থাকে অথবা যদি বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠন করে থাকে তাহলে তার ঠিকানা হয়েছে হয় খাগড়াছড়ি না হয় ওএসডি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, এইভাবে প্রত্যেকটি জায়গায় এমন এক বন্য একদলীয় কর্তব্যবাদী শাসন শেখ হাসিনা কায়েম করেছিলেন সেখানে উপযুক্তদের যে কাজ সেই কাজ তারা করতে পারেনি বা সে কাজটি করার তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। প্রত্যেকটিতে শেখ হাসিনা খুঁজে বেরিয়েছেন তার দলের লোক কারা আছে। তাদেরকেই উচ্চপদে বসিয়ে তাদেরকে দিয়ে সমস্ত অন্যায় করিয়েছেন।
রিজভী বলেন, আমরা যেটা শুনেছি ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা যখন হেলিকপ্টারে করে পালাচ্ছিলেন, হেলিকপ্টারের পাইলটকে মনে হয় বলেছেন আগরতলা কতদূর, আগরতলা কতদূর। তার মনে এতটাই সংশয় ছিল জনগণ মনে হয় এবার তাকে আর ছাড় দেবে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তাদেরকে দিয়ে আয়নাঘর করিয়েছেন, তাদেরকে দিয়ে গুম করিয়েছেন, তাদেরকে দিয়ে ক্রসফায়ার দিয়েছেন। একটা ভয় তাকে সব সময় তাড়া করত, বিরোধীদলের অস্তিত্ব থাকা মানেই শেখ হাসিনার পতন কোনো না কোনো সময় অত্যাবশ্যক হয়ে উঠবে। এই ভয় থেকেই বিরোধীদল শূন্য বিএনপি শূন্য একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রাণবন্ত চেষ্টা করেছে শেখ হাসিনা। চেষ্টা করার পর উজার করে দিয়েছেন গ্রামের পর গ্রাম, নগরের পর নগর, জনপদের পর জনপদ। কেউ তার নিজের এলাকায় থাকতে পারতো না। কেউ তার নিজের বাড়িতে থাকতে পারতো না। আজকে বছরের পর বছর কেউ ঢাকায় সিএনজি চালিয়েছে। কেউ ঢাকায় রিকশা চালিয়েছে। কেউ ঢাকায় বাসের কন্ট্রাক্টর হয়েছে। অর্থাৎ নিজের দেশের লোককেই বন্দি করে রেখেছিল শেখ হাসিনা। শুধুমাত্র তার নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। এটা একটা ভয়ংকর ধরনের মানসিক অসুস্থতা থেকে শেখ হাসিনা এই কাজগুলো করেছেন।
রিজভী আরও বলেন, শেখ হাসিনা চেয়েছে বিচার প্রাঙ্গণে যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিচারপতি থাকতে হবে। যারা ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিল তাদেরকে তিনি পুলিশে ঢুকিয়েছেন, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়েছেন। তারা শেখ হাসিনার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য যা কিছু করার দরকার তাই করেছেন। বিএনপির বড় বড় নেতাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে শারীরিকভাবে টর্চার করা হয়েছে। বিনা দ্বিধায় সেই সমস্ত কাজ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। আমরা সবাই তাদের নাম জানি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা কোথায় যেন একটা ভুল করে বসেছিলেন। সেই ভুলটা হচ্ছে, তিনি বিশ্বাস হারিয়েছিলেন। সেই বিশ্বাস হারানো থেকেই ভুলটা। সেটা হচ্ছে তিনি জনগণের যে শক্তি সেই শক্তিটা তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি। এইখানে একটা তার বড় ভুল হয়ে গিয়েছিল।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে গণতান্ত্রিক প্রত্যয়ের জন্য আমরা লড়াই করেছি, আমাদের এত লোক শহীদ হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কচি বাচ্চারা যে অকাতরে জীবন দিয়েছে, পুলিশের সেই ভাইরাল হওয়া বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে একটা মারি সেখানে আর একজন এসে দাঁড়িয়ে যায়। সুচিন্তিতভাবে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, আমরা কোনো মিডিয়া ভাঙতে চাই না। কোনো মিডিয়া যেন আমাদের দ্বারা আতঙ্কিত না হয়। মানুষ যেন আমাদের ওপরে নির্ভয়ে আস্থা রাখতে পারে। বাংলাদেশে যারা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, যারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানকে বিশ্বাস করে মান্য করে তাদের নীতি আদর্শকে অনুসরণ করে, তারা হবে জনগণের একটা নিরাপত্তার বেষ্টনী।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জেলানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সঞ্চালনায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কর্মসূচিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।