মেজর আখতার (অব.):রাজনীতিতে জোট বা ঐক্যজোট একটি অতি পরিচিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই এবং কোনো গন্ডি নেই। জোট বা মহাজোটের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যও যেমন নেই তেমনি এর কোনো স্পষ্ট উদ্দেশ্যও থাকে না। সময়ের প্রয়োজনে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল বা কুপোকাত করার মানসে, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে, নিজেদের মত ও পথের সঙ্গে আপস করে বৃহত্তর রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার অভিপ্রায়ে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে অধিকতর শক্তিশালী নেতৃত্বের সহায়তা নেওয়ার জন্য বা শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে মেরুকরণ হয় যার রাজনৈতিক বহিঃপ্রকাশ ঘটে জোট বা মহাজোটের মাধ্যমে। জোট বা মহাজোট ভিত্তিক রাজনীতির সুবিধা এবং অসুবিধা দুটিই আছে। রাজনীতির বিভিন্ন বাঁকে জোট যেমন অনেক সময় সফলতা বয়ে আনে তেমনি বিপর্যয়ও ঘটায়। ইতিহাসে এমন অজস্র প্রমাণ রয়েছে যেখানে জোটের সফলতা ও ব্যর্থতা উদাহরণসহ দেখানো সম্ভব। কাজেই রাজনীতিতে জোট হতেই পারে আবার না হলেও যে মহাভুল হয়ে যাবে তার নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারে না। জোটবদ্ধ রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত মূলত দলের নেতার একান্ত ব্যক্তিগত বিচার্য বিষয়। আবার জোটবদ্ধ রাজনীতি না করে এককভাবে রাজনীতি করার ভাবনাও সংগতভাবেই নির্ভর করবে নেতার আত্মবিশ্বাস, জনগণের ওপর নেতার প্রভাব তথা জনমত, দলের সুশৃঙ্খল কাঠামো, নেতৃত্বের বিন্যাস, দলের জনপ্রিয় জনবান্ধব রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং ইত্যকার বিভিন্ন ইতিবাচক রাজনৈতিক পদক্ষেপ বা কর্মকান্ডের ওপর।
বিগত ৪০ বছরের রাজনীতিতে বিএনপি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট করেছে। ওই সব জোটে বিএনপি শুধুই লাভবান হয়েছে তা যেমন চোখ বন্ধ করে বলা যাবে না তেমনি আবার জোট করে শুধু দলের ক্ষতি হয়েছে তেমন বক্তব্যও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তবে মোদ্দা কথা হলো, বিএনপি গত ৪০ বছরের রাজনীতিতে কখনই একলা চলেনি। আশির দশকে বিএনপির মূল রাজনীতি ছিল এরশাদবিরোধী বা এরশাদ পতনের আন্দোলন। তখন আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের রাজনীতিও ছিল একই লক্ষ্য নিয়ে কিন্তু তারপরও তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো ঐক্যজোট ছিল না। তবে তখন সাতদলীয় ঐক্যজোট নামে বিএনপির নেতৃত্বে সমমনা সাতটি রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি ঐক্যজোট ছিল। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এরশাদের পতনের পরে সাতদলীয় ঐক্যজোট অনেকটা শিথিল হয়ে যায় এবং বিএনপি এককভাবে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে ১৪২টি আসন পায়। ১৪২টি আসন পেয়ে সংসদে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ঠিকই কিন্তু সরকার গঠন করার জন্য আরও ৯টি আসনের প্রয়োজন পড়ে। তখন বিএনপি তড়িঘড়ি করে জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে একটি অসম সমঝোতা করে সরকার গঠন করে। জামায়াত বিএনপি সরকারে অংশগ্রহণ করেনি কিন্তু সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দেয় যার ফলে সেটি জোট না হয়ে সমঝোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়। যদিও পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপির প্রতি তাদের সমর্থন তুলে নিয়ে সেই আন্দোলনে যোগদান করে। এর ফলে ১৯৯৬ সালে সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই বিএনপি সরকার সংসদ ভেঙে দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করে এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা ও অপরিণামদর্শিতার দুঃখজনক প্রমাণ রাখতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামও সেই নির্বাচনকে বয়কট করে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকার থেকে জামায়াতের সমর্থন প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে গিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন বয়কট করা ছিল জামায়াতে ইসলামের রাজনীতির আত্মহত্যা। সেই আত্মহত্যাই পরবর্তীতে ফাঁসিতে রূপান্তরিত হয় যার জ্বলন্ত প্রমাণ চলমান ইতিহাস ও জামায়াতের বিপর্যয়। জামায়াতের দাবি এবং চালে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সেদিন বাধ্য হয়েছিল। যদিও জামায়াত ও বিএনপি সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার টিকিয়ে রাখতে পারেনি কিন্তু তত্ত্বাবধায়কের ফাঁদে পড়ে জামায়াত ও বিএনপি আজ অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। সময় ও চাহিদা মতো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে তার পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে তার চরম উদাহরণ হলো জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের ভাগ্য বিপর্যয়!
১৯৯৬ সালের চরম তিক্ত অভিজ্ঞতার পরেও ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে একসঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচন এই দ্বিমুখী লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি আবার জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যজোট করে যার কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। যা হোক, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যজোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়। সেই বিজয় বিএনপির একক প্রচেষ্টা ও ক্যারিশমায় হওয়ার পরেও অন্যের সঙ্গে অহেতুক বাটোয়ারা করতে গিয়ে বিএনপি তার চরম ভাগ্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে যার চরম মূল্য আজও দিতে হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে। অনেক রাজনৈতিক চিন্তাবিদ মনে করেন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ক্যারিশমা ও আপসহীন রাজনৈতিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যতাই ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিজয় এনে দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তা ধরে রাখতে পারেনি। বিএনপির অনেক নেতাই বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, অপরিসীম ধৈর্য, উদার গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা রাখতে পারেনি। ফলে সবাই বিজয়ের দাবিদার হয়ে দলের সংকট শুধু বৃদ্ধিই করেছে।
১৯৯৯ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী ঐক্যজোট মিলে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরে এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি সেই জোট থেকে বেরিয়ে যায় কিন্তু নাজিউর রহমান মঞ্জুর দলছুট একটি অংশের বদৌলতে চারদলীয় জোট নাম ঠিক থাকে। পরে ১৯১২ সালের ১৮ এপ্রিল সবকিছু হারিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ডান ও মধ্যডানপন্থিদের নিয়ে সরকারবিরোধী জোট করা হয় যা পরবর্তীতে আরও দুটি দলকে অন্তর্ভুক্তি করে ২০-দলীয় জোট হয়। ওই ২০-দলীয় জোটে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়া তেমন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ছিল না। ফলে বিএনপিও তার মধ্যপন্থি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ডান ও মধ্যডানপন্থি রাজনৈতিক দলের আবর্তে পড়ে যায় যা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। ২০-দলীয় ঐক্যজোট ডান ও মধ্যডানপন্থি বৈশিষ্ট্যের জোট হিসেবে পরিচিত পাওয়ায় সরকার খুব সহজেই বিএনপিকে চরম ডানপন্থি রাজনৈতিক দলের তকমা চড়িয়ে সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে পশ্চিমা বিশ্ব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরিচিত করতে সফল হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন বিএনপির আজকের চরম পরিণতির জন্য মূলত ডান ও মধ্যডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সেদিন লক্ষ্যহীন সরকারবিরোধী তথাকথিত ২০-দলীয় জোট করা অনেকাংশে দায়ী। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল ২০-দলীয় জোটে ২০টি রাজনৈতিক দল ছিল না এবং ২০-দলীয় জোটের সরকারবিরোধী ঘোষণা ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা লক্ষ্যও ছিল না। কীভাবে বা কোথায় কোথায় সরকারের বিরোধিতা করবে তার পরিষ্কার কোনো রূপরেখাও ছিল না। সবকিছু বেগম খালেদা জিয়ার ওপর ন্যস্ত ছিল যার ফলে ২০-দলীয় জোটের সব দায়ভার তার ওপর বর্তায় এবং তা এককভাবে উনাকেই বহন করতে হয়েছে এবং হচ্ছে।
২০১২ সালে ২০-দলীয় জোট করার পরে দুটি একপেশে নির্বাচন হয়ে গেছে যেখানে ২০-দলীয় জোট কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এমনকি জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য দুটি নির্বাচন নিয়েও জনমনে ও বিশ্বজনমতেও কোনো বিরূপ ছাপ ফেলতে পারেনি যা ২০-দলীয় জোটের রাজনৈতিক চরম ব্যর্থতার চিত্রই তুলে ধরে। এরকম একটি ব্যর্থ রাজনৈতিক জোট যে আগামীতে সফলতা নিয়ে আসতে পারবে তেমন কোনো আলামতও দেখা যাচ্ছে না। তার ওপরে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে অত্যন্ত হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করে। রাজনৈতিক আদর্শের পরিপন্থী এরকম একটি জোটে অংশগ্রহণ করা যেমন ছিল দলের নেতৃত্বের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা তেমনি দলের আদর্শের প্রতিও ছিল চরম অবজ্ঞা। ২০১৮ সালের জোট বিএনপির জন্য কোনো সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে তো পারেইনি উল্টো নির্বাচনের রাজনীতিতে বিএনপিকে আরও কঠিন অবস্থানে ছুড়ে ফেলেছে। বিএনপির বর্তমান অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে অবশ্যই অস্তিত্বের সংকটে পড়তে হতে পারে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ধারণা। যদি সরকার আগাম নির্বাচনের চমক থেকে সরে যায় তাহলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবশ্যই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হবে তা মোটামুটি নিশ্চিত বলা যায়। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের সম্ভাবনাও অনেকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অবশ্য নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যেমন কোনো মাথাব্যথা নেই তেমন কোনো কৌশল বা পরিকল্পনাও দৃশ্যমান নয়। তবে বিএনপির মহাসচিব, ভদ্রলোকের এককথা, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে ‘সবাই একত্রিত হয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় নিতে বাধ্য করা হবে এবং সেই জন্য যুগপৎ আন্দোলনের ডাক আসছে।’ বিএনপি তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য যারা সরকারবিরোধী তাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে। কাজেই পরিষ্কার যে বিএনপি চুপ করে বসে নেই। বিএনপি আশাবাদী অচিরেই একটি গণঅভ্যুত্থান হতে যাচ্ছে যার ফলে অতীতে এরশাদের মতো বর্তমান সরকারের পতন হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে তারা বাধ্য হবে। সব ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নেই। তাত্ত্বিকভাবে তা অবশ্যই সম্ভব। অতীতে বিএনপি বাস্তবে তা করিয়েও দেখিয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট যে ভিন্ন তা বেমালুম ভুলে গেলে সফলতার জায়গায় ব্যর্থতার হতাশা নিয়ে আসবে! ’৯০-এ সরকার ছিল এরশাদ এবং তখন সরকারবিরোধী ছিল বিএনপির নেতৃত্বে সাত দল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল এবং তৃতীয় বিরোধী শক্তি ছিল জামায়াতে ইসলামী। আর এখন সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল এবং সরকারবিরোধী ২০-দলীয় জোট যারা ১০ বছর ধরে লাগাতার বিরোধিতা করে সরকারের টিকিটিও নাড়াতে পারেনি! তারপরে ২০১৮ সালে তথাকথিত গণঐক্য করেও সরকারকে টলানো যায়নি। এই বাস্তবতাগুলো যদি কেউ বিবেচনা করতে না চায় তাহলে তারা আর যাই করুক রাজনীতি কখনই তাদের জন্য সুখকর হবে না।
সরকারবিরোধী বলতে এখন একমাত্র বিএনপি। এমনকি জামায়াতে ইসলামও সরকারবিরোধী নয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান বা জোবাইদা রহমান বা জাইমা রহমানের বাইরে বিএনপিতে তেমনি আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া কারও নাম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উচ্চারণ করার কথা ভাবে না মানুষ। এরকম একটি রাজনৈতিক সমীকরণে সত্যিকার সরকারবিরোধী খুঁজে নেওয়া প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। এখানে আমরা সবাই সুযোগ সন্ধানী এবং সর্বদা ধান্ধায় থাকি কোথা থেকে বেশি হাতিয়ে নিতে পারি!
তাই বর্তমান বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিএনপির কোনো জোট গঠন করার প্রয়োজন নেই বলে রাজনৈতিক চিন্তাশীলরা মনে করেন। কঠিন বাস্তবতা হলো চরম ত্যাগ স্বীকার করে কেউ এখন সরকারের বিরোধিতায় মাঠে নামবে না। এমনকি ছাত্র সংগঠনের টোকাই ছেলেটিও! কারণ তারও ধান্ধা আছে এবং নগদ টু-পাইস ছাড়া রাজনীতিতে শ্রম দেওয়ার মতো বোকা সে নয়! কাজেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্নে জোট, ঐক্য, আলাপ আলোচনার ধান্ধা ছেড়ে দিয়ে শুধু নিজের দল নিয়ে নির্বাচনের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে যাতে সরকার থেকে আসন ছিনিয়ে নেওয়া যায়। সব আসনে জয়ের লক্ষ্য মানেই আরেক হটকারিতা! সরকার পরিবর্তনের জন্য তিন শ আসনের দরকার নেই। ১৫১টি আসন হলেই যথেষ্ট। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হলেই হলো। জোট করে সরাসরি প্রতিযোগিতার চেয়ে ত্রিমুখী বা চতুরমুখী লড়াইয়ে সরকার বেকায়দায় থাকে, প্রশাসন ধোঁকায় পড়ে, পুলিশ বাণিজ্য করে এবং নির্বাচনের কর্মকর্তারা সাধু সাজে! সেই লড়াইয়ে জনগণ দক্ষ দেখে পক্ষ নেয়! তাই বিএনপির এখন একাই চলা উচিত। নির্বাচনে সফল হতে হলে চমক লাগে, লাগে নেতার ক্যারিশমা। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে চমক ছিল, ছিল খালেদা জিয়ার ক্যারিশমা। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কী চমক বিএনপির এবং কী ক্যারিশমা নেতার কাছে আছে তা দেখতে জনগণ অপেক্ষায় আছে। বুঝে নেও সেই জন যে আছ মহাজন!
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন