এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট :দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, রামপালসহ জেলার ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে কাজ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে রিকশাচালক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ভারি বর্ষণে বাগেরহাট পৌরসভা, রাহাতের মোড়, সাধনার মোড়, নাগেরবাজার, পোস্ট অফিসের মোড়, শালতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার সব নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাগেরহাট পৌরসভার সামনে অবস্থিত চা-দোকানি সুমন শেখ বলেন, দোকানের সামনে পানি জমে আছে, ভেতরেও পানি ঢুকেছে। আজ দোকান পুরোপুরি বন্ধ।
শুধু আমার না, আশপাশের অনেক দোকানেরও একই অবস্থা।
শিক্ষক অনিমেষ সাহা বলেন, ঘর থেকে বের হওয়াই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শহরের ড্রেনেজ-ব্যবস্থা এতটা খারাপ যে একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। এটা খুবই হতাশাজনক।আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. কালাম বলেন, বাড়ির চারপাশে হাঁটু সমান পানি। রান্নাঘরেও পানি উঠে গেছে। পানি সেচে বের করতে হচ্ছে, খুব কষ্টে আছি।
এদিকে লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে শত শত মাছধরা ট্রলার।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে মোংলা বন্দরের পণ্য ওঠা-নামার কাজ। বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মোংলা বন্দরের বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামান জানান, থেমে থেমে ভারি বর্ষণে মোংলা বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বর্তমানে বন্দরে খাদ্যবাহীসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ৯টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এসব জাহাজ থেকে খাদ্যপণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের খালাসের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
অপরদিকে, লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী, সুপতি, দুবলাসহ শরণখোলা, রামপাল ও মোংলাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে কয়েক শ মাছধরা ট্রলার।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে টিকতে না পেরে সকাল থেকে কয়েক শ ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী, সুপতি ও দুবলার বিভিন্ন খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ হারুন আর রশিদ জানান, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকায় মোংলা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।