বাগেরহাটে ডাবের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সহ নয়টি উপজেলায়  ডাবের বাম্পার ফলন, ন্যায্য মূল্য পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি। প্রতিদিন এ উপজেলার ডাব যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায়। টাকার হিসেবে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার ডাব পাঠানো হচ্ছে এসব স্থানে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানোর জন্য প্রতিদিন মোরেলগঞ্জের অন্তত ৩০টি গ্রাম থেকে ডাব সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন বিকাল হলেই ফেরিঘাটে ফেরি পার হওয়ার জন্য ডাবভর্তি নসিমন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

মোরেলগঞ্জ পৌরশহরের ফেরিঘাটে ফেরি পার হওয়ার সময় কথা হয় ডাব বিক্রেতা সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘প্রতিদিন আমরা ডাবের সন্ধানে নসিমন নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়ান। উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব ডাব সংগ্রহ করেন তারা। তারপর আড়তের মাধ্যমে বা নিজেরাই সেই ডাব ট্রাক, বাসের ছাদে করে রাজধানীতে পাঠিয়ে দেন। ডাব বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। হকাররা মালিকদের কাছ থেকে প্রতি পিস ডাব ৩০-৩৫ টাকা দরে কিনে আনেন। ঢাকার বড় বড় পার্টি  আমাদের প্রতি পিস ডাবের মূল্য দেওয়া হয় ৫০-৬০  টাকা করে।

চিকিৎসক ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, ‘ডাবের পানিতে মিনারেল ওয়াটার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা হৃৎপিন্ডের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং হৃৎপিন্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।’

ডাবের পানিতে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে অ্যান্টি-এজিংপ্রপার্টিস থাকে ‘

তিনি আরো বলেন, ‘ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে ডাবের পানি অনেক বেশি কার্যকরী। এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে। ডাবে আছে কার্বোহাইড্রেড যা শক্তি বাড়ায়। এবং শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ করে। ডাবের পানি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধার প্রবণতা কমে আসে। ফলে কম খাওয়া হয়। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। হজমশক্তি অনেক বাড়িয়ে তোলে।’

মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম.  সাইফুল ইসলাম কবির জানান, আখ চাষিদের কে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সীড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরীব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  মোঃ সাইফুল ইসলাম  জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডাবের ফলন ভালো হওয়ায় ও তীব্র পরিমাণ গরম পড়ায় ডাব কাটা হয়েছে বেশি। তবে ডাবের কারণে নারিকেলের ফলন কম হয়েছে। নারিকেল সমৃদ্ধ এ জেলায় নারিকেল ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে চাষিরা নায্য দাম পাওয়ার পাশাপাশি বিপুল মানুষের কর্মসস্থান হবে। সে জন্য এ জেলায় নারিকেল ভিত্তিক কারখানা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।  ডাব উৎপাদনে খরচ  অনেক কম। মোরেলগঞ্জে এবার ৬৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি ডাব উৎপাদন হয়েছে যার বাজার মুল্য প্রায় ৪২ কোটি টাকা। ডাব উৎপাদনে এ এলাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি

» দুর্গাপূজায় তিন ধাপে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা থাকবে: আইজিপি

» সবুজ পাহাড়ে রক্তের দাগ দেখতে চাই না : জিএম কাদের

» জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

» মানুষের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে বিএনপি : তারেক রহমান

» সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম কারাগারে

» আন্তরিকতার সঙ্গে দেশসেবায় আত্মনিয়োগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান

» আগামী সপ্তাহে গণমাধ্যম কমিশন : তথ্য উপদেষ্টা

» দুর্গাপূজায় ব্র্যাক ব্যাংক দিচ্ছে শীর্ষ ব্র্যান্ডে ৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট

» দীর্ঘ বন্যার পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বাগেরহাটে ডাবের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সহ নয়টি উপজেলায়  ডাবের বাম্পার ফলন, ন্যায্য মূল্য পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি। প্রতিদিন এ উপজেলার ডাব যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায়। টাকার হিসেবে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার ডাব পাঠানো হচ্ছে এসব স্থানে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানোর জন্য প্রতিদিন মোরেলগঞ্জের অন্তত ৩০টি গ্রাম থেকে ডাব সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন বিকাল হলেই ফেরিঘাটে ফেরি পার হওয়ার জন্য ডাবভর্তি নসিমন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

মোরেলগঞ্জ পৌরশহরের ফেরিঘাটে ফেরি পার হওয়ার সময় কথা হয় ডাব বিক্রেতা সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘প্রতিদিন আমরা ডাবের সন্ধানে নসিমন নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়ান। উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব ডাব সংগ্রহ করেন তারা। তারপর আড়তের মাধ্যমে বা নিজেরাই সেই ডাব ট্রাক, বাসের ছাদে করে রাজধানীতে পাঠিয়ে দেন। ডাব বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। হকাররা মালিকদের কাছ থেকে প্রতি পিস ডাব ৩০-৩৫ টাকা দরে কিনে আনেন। ঢাকার বড় বড় পার্টি  আমাদের প্রতি পিস ডাবের মূল্য দেওয়া হয় ৫০-৬০  টাকা করে।

চিকিৎসক ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, ‘ডাবের পানিতে মিনারেল ওয়াটার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা হৃৎপিন্ডের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং হৃৎপিন্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।’

ডাবের পানিতে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে অ্যান্টি-এজিংপ্রপার্টিস থাকে ‘

তিনি আরো বলেন, ‘ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে ডাবের পানি অনেক বেশি কার্যকরী। এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে। ডাবে আছে কার্বোহাইড্রেড যা শক্তি বাড়ায়। এবং শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ করে। ডাবের পানি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধার প্রবণতা কমে আসে। ফলে কম খাওয়া হয়। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। হজমশক্তি অনেক বাড়িয়ে তোলে।’

মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম.  সাইফুল ইসলাম কবির জানান, আখ চাষিদের কে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সীড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরীব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  মোঃ সাইফুল ইসলাম  জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডাবের ফলন ভালো হওয়ায় ও তীব্র পরিমাণ গরম পড়ায় ডাব কাটা হয়েছে বেশি। তবে ডাবের কারণে নারিকেলের ফলন কম হয়েছে। নারিকেল সমৃদ্ধ এ জেলায় নারিকেল ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে চাষিরা নায্য দাম পাওয়ার পাশাপাশি বিপুল মানুষের কর্মসস্থান হবে। সে জন্য এ জেলায় নারিকেল ভিত্তিক কারখানা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।  ডাব উৎপাদনে খরচ  অনেক কম। মোরেলগঞ্জে এবার ৬৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি ডাব উৎপাদন হয়েছে যার বাজার মুল্য প্রায় ৪২ কোটি টাকা। ডাব উৎপাদনে এ এলাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com