বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে : প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

 

ডেস্ক রিপোর্ট : চীনকে ভালো বন্ধু হিসেবে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে খুবই শক্তিশালী। আমাদের ব্যবসা খুবই শক্তিশালী এবং চীনের সাথে আমাদের সহযোগিতা থেকে আমরা উপকৃত হচ্ছি।

 

চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে বলে তিনি আশা করেন।

‘চীন যা অর্জন করেছে তাতে বাংলাদেশের সবাই অনুপ্রাণিত,’ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হল একটি নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করা এবং জনগণ আশা করে যে তারা নিজ দেশের উন্নয়নে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারবে।

 

চীনের দারিদ্র্য হ্রাসের অর্জন সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, বেশিরভাগ দেশ সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের পরিবর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেয়। কিন্তু চীন নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর ওপর জোর দেয়। ‘এ কারণেই চীনারা দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসে খুব সফল।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা উচ্চ পর্যায়ের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। চীন টানা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১,০০০ চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যা মোট ৫,৫০,০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

 

ড. ইউনূস উল্লেখ করেন যে, দুই দেশ ব্যাপক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছে, যা অনেক ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। ‘চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি বাড়ছে। আমাদের শিল্প-ব্যবহারের বেশিরভাগ পণ্য আসে চীন থেকে।

 

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ড. ইউনূস দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিপূরকতা এবং তাদের বিশাল সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর জোর দেন। তিনি আশা করেন আরও চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের সাথে একত্রে একটি বৃহত্তর বাজার উন্মুক্ত করবেন।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশি রোগী, ডাক্তার এবং ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর প্রথম দলটি চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে চিকিৎসা পরীক্ষা ও চিকিৎসা পর্যটন বাজারের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে গিয়েছিল।

 

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে শিখতে এবং জনগণের উপকারে একটি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।

 

এ বছর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী এবং এটিকে চীন ও বাংলাদেশ জনগণের সাথে জনগণের বিনিময় বছর হিসেবেও মনোনীত করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশে সন্ন্যাসী জুয়ানজ্যাং-এর পদচিহ্ন রেখে যাওয়া এবং চীনে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে পণ্ডিত অতিশ দীপঙ্করের অবদানের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দ্রুত এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।

 

ড. ইউনূস বলেন, চীনের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেবল দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিই তৈরি করতে পারি না, বরং একটি নতুন ধরনের অর্থনীতি তৈরি করতে পারি যেখানে সকলের অংশগ্রহণ থাকবে। আমরা এটিকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি যেখানে আমাদের সহযোগিতা কেবল অর্থনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি হবে সাংস্কৃতিক।

 

বাংলাদেশ ও চীনের বিগত ৫০ বছরের সম্পর্ক চমৎকার ছিল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী ৫০ বছর আরও সুদৃঢ় হবে।

 

তিনি বলেন, বৃহত্তর ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য উন্মুখ আমরা। এটাই দেখার অপেক্ষায় আছি।

সূত্র : বাসস।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ঈদুল ফিতরে ড. ইউনূসকে মোদির বার্তা

» আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই : নাহিদ

» তারা স্বপ্ন দেখে আ’লীগ ফিরে না আসলেও শেখ হাসিনা ফিরে আসবে: ছাত্রদল সভাপতি

» নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন প্রধান উপদেষ্টা

» রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স পরিদর্শন করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» জয়পুরহাটে জাকের পার্টির ঈদের নামাজ ও উন্মুক্ত খাবার পরিবেশন 

» ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে আগুনে পুড়লো বসতবাড়ি, সর্বশান্ত পরিবার

» ইসলামপুরে ৯৭ ব্যাচ কল্যান সংস্থার উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল

» ইসলামপুরে হাফিজ পাঠাগারের উদ্যোগে অসহায়রা পেল ঈদ উপহার

» প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে যেসব সিনেমা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে : প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

 

ডেস্ক রিপোর্ট : চীনকে ভালো বন্ধু হিসেবে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে খুবই শক্তিশালী। আমাদের ব্যবসা খুবই শক্তিশালী এবং চীনের সাথে আমাদের সহযোগিতা থেকে আমরা উপকৃত হচ্ছি।

 

চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে বলে তিনি আশা করেন।

‘চীন যা অর্জন করেছে তাতে বাংলাদেশের সবাই অনুপ্রাণিত,’ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হল একটি নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করা এবং জনগণ আশা করে যে তারা নিজ দেশের উন্নয়নে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারবে।

 

চীনের দারিদ্র্য হ্রাসের অর্জন সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, বেশিরভাগ দেশ সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের পরিবর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেয়। কিন্তু চীন নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর ওপর জোর দেয়। ‘এ কারণেই চীনারা দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসে খুব সফল।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা উচ্চ পর্যায়ের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। চীন টানা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১,০০০ চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যা মোট ৫,৫০,০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

 

ড. ইউনূস উল্লেখ করেন যে, দুই দেশ ব্যাপক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছে, যা অনেক ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। ‘চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি বাড়ছে। আমাদের শিল্প-ব্যবহারের বেশিরভাগ পণ্য আসে চীন থেকে।

 

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ড. ইউনূস দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিপূরকতা এবং তাদের বিশাল সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর জোর দেন। তিনি আশা করেন আরও চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের সাথে একত্রে একটি বৃহত্তর বাজার উন্মুক্ত করবেন।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশি রোগী, ডাক্তার এবং ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর প্রথম দলটি চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে চিকিৎসা পরীক্ষা ও চিকিৎসা পর্যটন বাজারের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে গিয়েছিল।

 

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে শিখতে এবং জনগণের উপকারে একটি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।

 

এ বছর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী এবং এটিকে চীন ও বাংলাদেশ জনগণের সাথে জনগণের বিনিময় বছর হিসেবেও মনোনীত করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশে সন্ন্যাসী জুয়ানজ্যাং-এর পদচিহ্ন রেখে যাওয়া এবং চীনে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে পণ্ডিত অতিশ দীপঙ্করের অবদানের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দ্রুত এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।

 

ড. ইউনূস বলেন, চীনের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেবল দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিই তৈরি করতে পারি না, বরং একটি নতুন ধরনের অর্থনীতি তৈরি করতে পারি যেখানে সকলের অংশগ্রহণ থাকবে। আমরা এটিকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি যেখানে আমাদের সহযোগিতা কেবল অর্থনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি হবে সাংস্কৃতিক।

 

বাংলাদেশ ও চীনের বিগত ৫০ বছরের সম্পর্ক চমৎকার ছিল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী ৫০ বছর আরও সুদৃঢ় হবে।

 

তিনি বলেন, বৃহত্তর ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য উন্মুখ আমরা। এটাই দেখার অপেক্ষায় আছি।

সূত্র : বাসস।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com