ফাইল ছবি
অনলাইন ডেস্ক : বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ (ভারত) ১৪০০ শিশু-তরুণ-কিশোরের হত্যাকারী, রক্তপানকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। এখন বাংলাদেশের ভেতর নাশকতা করার চেষ্টা করছে। তার মানে পার্শ্ববর্তী দেশ শেখ হাসিনার কাছে এতটাই কৃতজ্ঞ অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকতে নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা এতটাই বিক্রি করেছেন যে, তাকে শেল্টার দিয়েছে এবং অপতৎপরতা চালাতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জিয়া পরিষদ।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের ভয়ঙ্কর নির্যাতনের কাছে যিনি আদর্শচ্যুত হননি তার নামই তো বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আপস করতে পারতেন। শেখ হাসিনাকে ছাড় দিতে পারতেন। দিলে কী হতো? দিলে দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হতো। জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হতো। আর জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা মানে গণতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এই পথ অবলম্বন করেননি। বরং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন। একবার না, একাধিকবার প্রচণ্ড নিপীড়নের শিকার হয়েও তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি।
তিনি বলেন, এরশাদের আমলে আর শেখ হাসিনার এই টানা ১৬ বছরে তিনি (খালেদা জিয়া) দুঃসহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন । কিন্তু এই নেত্রীকে টলানো যায় না, নেত্রীকে বশ মানানো যায় না, যে নেত্রী জনগণের স্বার্থ এবং অধিকারের প্রশ্নটাই বড় করে দেখেন, মৃত্যুভয় যাকে স্পর্শ করতে পারেনি, শেখ হাসিনার দেখানো ভয় যাকে টলাতে পারেনি তিনি বেগম খালেদা জিয়া। আমরা নেতাকর্মীরা সবসময় এই বিষয়টা যদি মনে রাখি তাহলে আমাদের সামনের যে কোনো বিপদ, বাধা বা স্বৈরতন্ত্র, দুঃশাসন সবকিছুকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ওপর এত নিপীড়ন-অত্যাচার হয়েছে, তারপরও কিন্তু কোনোদিন কারও সম্পর্কে, যারা অত্যাচার করেছে তাদের ব্যাপারে একটাও কটু কথা বলেননি। অত্যন্ত নীরবে নিভৃতে সব সহ্য করেছেন। যারা শত্রুতা করেছে, যারা তাকে শেষ করে দিতে চেয়েছে তাদের ব্যাপারেও কোনো কটু কথা বলেননি।
হুমকি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বিচ্যুত করা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সংযত কথা এবং বাক্যবিন্যাসে এক অসাধারণ নেতৃত্বের উচ্চতায় তিনি প্রতিষ্ঠিত। আজকে পরিবর্তিত পরিস্থিতি হয়েছে, শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। এখন আমাদের একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক ছোটোখাট বিষয় নিয়ে আমরা ঝগড়াঝাঁটি দেখছি। প্রাপ্তির জন্য, নিজের পাতে ঝোল বেশি করে ঢালার জন্য অনেকে নৈতিকতার সীমানা অতিক্রম করে কথা বলছে। প্রতিদিনই তো আমরা দেখছি। কিন্তু আমরা যখন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি এবং তার ব্যক্তিগত মহত্ব দেখি তখন মনে হয় যে, বেগম খালেদা জিয়ার কর্মী হিসেবে আমরা সার্থক। আমরা সার্থক বিএনপির একজন সদস্য হিসেবে।
খালেদা জিয়া জনগণের সামনে যে ওয়াদা করেন সে ওয়াদা থেকে কোনোদিন সরে আসেননি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এই জিনিসটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই বেগম জিয়ার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আলোচনার সময়। আদর্শের প্রশ্নে যে কমিটমেন্ট- শেখ হাসিনা এবং এরশাদের অবৈধ নির্বাচনে যাবো না, তিনি যাননি। পরশুদিন এক ধরনের কথা বললাম, আজকে নিজের স্বার্থে বা রাজনৈতিক স্বার্থে আরেকটি কথা বললাম- এই দ্বিচারিতা বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে কখনো ছিল না। আত্মসমর্পণ করেননি কোনো জায়গায়। এই জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে এখনো কেউ হরণ করতে পারেনি, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে কেউ দুর্বল করতে পারেনি। বেগম জিয়া বেঁচে আছেন তাই অনেকে সাহস করতে পারেনি। কারণ সেই প্রশ্নেও তাকে টলানো যায়নি কখনো।
তিনি বলেন, আমাদের শক্তি হচ্ছে এদেশের জনগণ আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দেখানো পথেই যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটাই হচ্ছে আমাদের সবচাইতে বড় ভরসার জায়গা, আমাদের শক্তির জায়গা, আমাদের উদ্দীপনার জায়গা, আমাদের প্রেরণার জায়গা। আমরা আমাদের স্বাধীনতা বিক্রি করতে দেবো না। আমরা সার্বভৌমত্বকেও দুর্বল করতে দেবো না। আমরা গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে এনেছি, আসবো। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত কোনো স্বার্থে ১৬ বছর ধরে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে আমরা লড়াই করিনি।