বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা: ৮ মার্চ প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বা থিম ‘টেকসই আগামীর জন্য আজকের লিঙ্গসাম্যতা’। মূলত প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য থাকে (১) বিভিন্ন আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পথপরিক্রমায় নারীর অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান (২) লিঙ্গসাম্যতা সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করা এবং সমাজের সর্বস্তরে নারীর সাফল্য ও জয়গান গাওয়া (৩) পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা, নারীবিদ্বেষী রক্ষণশীল চিন্তা-চেতনা, পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও ছকে বাঁধা মিথ তৈরির কাঠামো ভেঙে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা এবং (৪) বহুত্ববাদের আলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও লিঙ্গসমতাভিত্তিক আগামীর সমাজ বিনির্মাণ। নারী দিবস পালনের লক্ষ্য যেহেতু নারীর অবদান ও মর্যাদাকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে নারীর অগ্রযাত্রা ও তার গতিশীল কর্মকান্ডকে দৃশ্যমান করে তোলা, এ কারণেই আমার আজকের এ লেখার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রোকেয়া সাখাওয়াত ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সামাজিক পরিবর্তন আনয়নের অনুঘটক বা চেঞ্জ মেকার হিসেবে। ‘নারী ও নর উভয়ে একটি বস্তু ও অঙ্গবিশেষ। যেমন দুইটি হাত কিংবা কোনো শকটের দুইটি “চক্র” সুতরাং উভয়ে মিলিয়া একই বস্তু হয়। তাই একটিকে ছাড়িয়া অপরটি উন্নতি করিতে পারিবে না’-(মতিচূর, প্রথম খন্ড)। রোকেয়া সাখাওয়াত বর্ণিত এ বাণী একটি সমাজ উন্নয়নের মূলসূত্র। সমাজ উন্নয়ন ও নারী উন্নয়নের বিষয়টি ওতপ্রোত জড়িত। নারীর ক্ষমতায়ন তাই আজ আর শুধু একটি আধুনিক প্রপঞ্চ নয়, বরং একই সঙ্গে বৈশ্বিক ও সর্বজনীন প্রবঞ্চ। ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের প্রথম নারীবাদী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক ও নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো, মানসিকতা, সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, উগ্রবাদী, মৌলবাদী নারীবিদ্বেষী শক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নারীমুক্তির জয়গান গেয়েছেন রোকেয়া সাখাওয়াত। তিনি বৃত্তাবদ্ধ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর পর্দা নামক শৃঙ্খলের বেড়াজালে পড়া অবরোধবাসিনীদের অধস্তন, পরাধীন অবস্থা তুলে ধরেন নানা লেখনীতে। নারীর শারীরিক দুর্বলতা কাঠামো তত্ত্বকে গুঁড়িয়ে ফেলে, লিঙ্গবৈষ্যমের শিকার নারীসমাজের মুক্তির লক্ষ্যে রোকেয়া নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের ধারণা প্রতিষ্ঠার এক নতুন সংগ্রাম শুরু করেন।

 

বিংশ শতাব্দীতে লিঙ্গসমতাভিত্তিক যে সমাজ গঠনের ডাক দিয়েছিলেন রোকেয়া, সে সমাজ গঠনের পথে আজ ৫০-উত্তীর্ণ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বিশ্বের নারীর ক্ষমতায়নে আজ বাংলাদেশ রোল মডেল। নারী ক্ষমতায়ন মূল্যায়নে যেসব অনুঘটক বা সূচক ব্যবহার করা হয় তার সবকটি সূচকে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে এগিয়ে। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন নিজেই স্বীকার করেছেন ভারতের মেয়েদের পেছনে ফেলে বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণে। বঙ্গবন্ধু মূলত একজন নারীবাদী চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও লিঙ্গসমতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক যিনি বাংলাদেশকে একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আধুনিক তাত্ত্বিকরা যেসব প্রপঞ্চ ও সূচক ব্যবহার করেন দেশকে উন্নয়ন ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা, দর্শন, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বহুত্ববাদ, অন্তর্ভুক্তিকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন আজ বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ যা সত্তরের দশকেই প্রজ্ঞাবান বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনায় উন্নয়ন নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া যে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভবপর নয়, আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক ও অসামান্য দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু তা উপলব্ধি করেছিলেন স্বাধীনতা-উত্তর বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কাঠামো পুনর্গঠনের কাজে হাত দেওয়ার মাধ্যমে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও বাঙালি রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত বাঙালি নারীদের তিনি দিয়েছিলেন বীরের মর্যাদা। ভূষিত করেছেন ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে। পুরুষতান্ত্রিক নিষ্ঠুর সমাজব্যবস্থায় যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত, নির্যাতিত নারীকে ফিরিয়ে দিয়েছে পরিবার, জন্মদাতা পিতা কিংবা গর্ভধারিণী মা, লজ্জা ও ভয় কিংবা সামাজিক অপমানের কারণে নারীবাদী বঙ্গবন্ধু তখন আবির্ভূত হয়েছেন পিতার ভূমিকায়। ফিদেল কাস্ত্রো বর্ণিত ‘হিমালয়সম’ বঙ্গবন্ধু বঙ্গোপসাগরের বিশালত্ব বুকে ধারণ করে বীরাঙ্গনা কন্যাদের পিতৃ¯ন্ডেœহে নিজ বুকে স্থান দিয়েছেন। পিতার স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও ঠিকানার জায়গায় ৩২ ধানমন্ডি লেখার কথা বলে তিনি নারীর প্রতি সমাজের কুসংস্কার ও সব ছকে বাঁধা ধারণা চ্যালেঞ্জ করেছেন। সামাজিকভাবে অবাঞ্ছিত যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনের জন্যও তিনি গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন উদ্যোগ। সমাজের ঘৃণা ও অবহেলা, অপমানের বিরুদ্ধে তিনি বীরাঙ্গনা নারীদের লড়াই করার মানসিকতাই শুধু গড়ে তোলার চেষ্টা করেননি, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার জন্য এদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এ ট্যাবু গুঁড়িয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নারীবান্ধব রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার শুভ সূচনা করেন নারীকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে। এ লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় ‘বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ (১৯৭২) ও পরবর্তীতে ‘মহিলা পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফান্ড’ (১৯৭৪)। শুধু তাই নয়, রাজনীতি নামক পুরুষতান্ত্রিক বলয়টিও তিনি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রথমবারের মতো নারীদের সংসদ সদস্য মনোনয়ন ও চেয়ারম্যান নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান নামক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রটিতে নারীর অবস্থান শুধু দ্বিতীয় লিঙ্গ ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যে কারণে পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে নারীর প্রবেশ ছিল বন্ধ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কোটা/সংরক্ষিত আসন চালু করে সংসদে নারীর প্রবেশ নিশ্চিত করেন, চাকরিতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন। লিঙ্গসমতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেন। আজ যে অন্তর্ভুক্তিকরণের শিক্ষাকে বৈশ্বিকভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধু তাঁর শিক্ষাদর্শনে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিকরণ শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের রথযাত্রাটির যে শুভ সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তার সারথি আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। রাজনীতি ম্যাজিক নয়, কিন্তু একজন রাজনীতিবিদই রাজনীতি ম্যাজিকে রূপান্তরিত করতে পারেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেই ম্যাজিশিয়ান রাজনীতিবিদ যিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নকে সমার্থক প্রপঞ্চ হিসেবে মূল্যায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের মহাসড়কে যাত্রা করেছেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী বিধায় নারী-পুরুষের সমান অংশীদারি ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

 

শেখ হাসিনার বার্তা তাই নারী-পুরুষের সমতা। রোকেয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ ধরনের বার্তা প্রদানই স্বাভাবিক। সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম করার প্রয়োজনে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ যে আবশ্যিক তা রোকেয়া তাঁর লেখনীতে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। সুতরাং রোকেয়ার ভাষায় ‘পুরুষের স্বার্থ ও আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে, একই। তাঁহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্যও তাহাই।’ মূলত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ঘোষণা করে নারীসমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে। নারী শিক্ষা প্রসার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বাল্যবিয়ে নির্মূলের জন্য বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ সালে প্রণয়ন করা হয়। মেয়েদের শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে অবৈতনিক, চালু হয়েছে বৃত্তি, উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি। এর মাধ্যমে কমেছে নারী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার, বেড়েছে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এসব সুরক্ষা বলয় কর্মসূচির ফলে তৃণমূল ও প্রান্তিক নারীরা ভেঙে ফেলতে শুরু করেছেন বহু প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, ট্যাবুর সংস্কার ও বেড়াজাল। বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি ও অসাধারণ সাফল্য এ বাস্তবতাকেই তুলে ধরে।

 

নারীর উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীবান্ধব সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার প্রণয়ন করেছে নারীবান্ধব বাজেট। নারীবান্ধব বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে, স্তরে ও সেক্টরে বর্তমান সরকার নারীকে সম্পৃক্ত করেছে। রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ, অর্র্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, খেলাধুলাসহ পেশাভিত্তিক সব ক্ষেত্রে আজ রয়েছে নারীদের গর্বিত পদচারণ। রোকেয়ার দৃপ্ত উচ্চারণ ছিল- ‘পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয় তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে লেডী কেরানী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডী ম্যাজিস্ট্রেট, লেডী ব্যারিস্টার, লেডী জজ সবই হইবই’ (স্ত্রী জাতির অবনতি)। শেখ হাসিনা রোকেয়ার সেই আকাক্সক্ষাকেই আজ পূরণ করে চলেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, উপাচার্য, বিচারকসহ সব পদেই নারীর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রই শুধু নয়, আধুনিকায়ন ও গণতন্ত্রায়নের মূল কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। অথচ সেই আমেরিকার বাসিন্দারা শ্বেতকায় ও ক্ষমতাধর নারী হিলারি ক্লিনটনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে গ্রহণ করেনি। বরং কৃষ্ণকায় পুরুষ রাষ্ট্রপতি ওবামাকে গ্রহণ করে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। নারী ও কৃষ্ণবর্ণের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী প্রান্তিক ও দ্বিতীয় শ্রেণির ‘নাজুক’ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হলেও নারীর অবস্থান যে আজও পুরুষের নিচে তা আমেরিকান সমাজ প্রমাণ করেছে। পক্ষান্তরে রাজনীতির পুরুষতান্ত্রিক বলয়টিতে কাঁপন ধরিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে নারী প্রধানমন্ত্রীগণ, এনেছেন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভিন্ন পরিবর্তন। আবেদনপত্র কিংবা যে কোনো ফরম পূরণের ক্ষেত্রে পিতার নামের সঙ্গে মায়ের নাম সংযুক্ত করে পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এক বিশাল পরিবর্তন এনেছেন শেখ হাসিনা। শুরুতে মায়ের নাম সংযুক্ত করায় এ সমাজের নারীবিদ্বেষী পুরুষেরা বিষয়টি নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ দৃঢ়চেতা অদম্য শেখ হাসিনাকে কেউ পিছু হটাতে পারেনি বরং তিনি আরও এগিয়ে গেছেন। তাঁর পৃষ্টপোষকতায় তৈরি হয়েছে মহিলা ফুটবল/ক্রিকেট বাহিনী যাদের গলায় শোভা পাচ্ছে পুরস্কারের বিভিন্ন মালা। নীরবতার সংস্কৃতি ও অচলায়তন ভেঙে তিনি বীরাঙ্গনা নারীদের দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, সামাজিক ইতিহাস ও গবেষণাকর্মে ‘অদৃশ্যমান’ নারীর ত্যাগ ও অবদানকে তিনি করে তুলেছেন দৃশ্যমান।

 

ইতিহাস, পাঠ্যবই ও গবেষণাকর্মে তাই লিপিবদ্ধ হয়েছে আজ তাদের ঐতিহাসিক অবদান ও আত্মত্যাগের কাহিনি। সব চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীকে স্থান করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা, যে কারণে আজ আমরা দেখেছি পাহাড় ডিঙানো নারী, এভারেস্ট-বিজয়ী নারী, স্কুটি চালানো নারী, বৈমানিক নারী, সৈনিক নারী, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তি মিশনে নারী। ‘সুলতানার স্বপ্ন’ উপন্যাসে রোকেয়া নারীর জন্য যে কল্পিত সমাজের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপায়িত করার চেষ্টা করছেন প্রাচীন ধারণা, ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। জল, স্থল, অন্তরিক্ষে ক্ষমতায়নের পথ ধরে বাংলাদেশের মেয়েরা এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এসেছে নতুন স্লোগান। ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’। স্বাধীনতার ৫০ বছরে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় কতটা পরিবর্তন এসেছে তা উপলব্ধির জন্য এটি একটি বিশেষ উদাহরণ। উত্তরাধিকার নির্বাচন ও পুরুষ সন্তান লাভের প্রবল আকাক্সক্ষা যে অনেকটাই আজ ম্রিয়মাণ হয়েছে উল্লিখিত স্লোগানটির মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়। শুধু একটি সন্তান নয়, একটি মাত্র কন্যাসন্তানকে গ্রহণের মানসিকতাও যে আজ পঞ্চাশোর্ধ্ব বাংলাদেশের সমাজ জীবনে গ্রহণযোগ্য হতে শুরু করেছে, তা-ও পরিষ্কার। মূলত বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের এ মডেলটি শুধু কেন্দ্রভিত্তিক নয়, এটি প্রান্তিক নারীর জন্যও তৈরি করেছে বেঁচে থাকার নতুন নতুন সড়কপথ। বস্তুত রোকেয়ার মতানুযায়ী ‘শিক্ষার অর্থ কোনো সম্প্রদায় বা জাতি বিশেষের অন্ধ-অনুকরণ নয়, বরং ঈশ্বরপ্রদত্ত স্বাভাবিক ক্ষমতাকে অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করার নামই শিক্ষা।’ রোকেয়া কর্তৃক সংজ্ঞায়িত এ শিক্ষাকে শেখ হাসিনা গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ বেঁচে আছে গার্মেন্ট নারীদের শ্রমের ঘামে, কৃষি ক্ষেত্রেও এগিয়ে এসেছেন নারীশ্রমিকরা। অপ্রাতিষ্ঠানিক বা ইনফরমাল সেক্টরেও আজ নারীর বিপুল উপস্থিতি লক্ষণীয়। মিস্ত্রি নারী, জোগালি নারী, সবজি বিক্রেতা নারী, আজ উপার্জনক্ষম নারী, স্বাবলম্বী নারীর মর্যাদায় অভিষিক্ত। ‘আমরা উপার্জন করিব না কেন? আমাদের কি হাত নাই, না পা নাই, না বুদ্ধি নাই? কী নাই? যে পরিশ্রম আমরা গৃহকার্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা কি ব্যবসা করিতে পারিব না?’ রোকেয়ার এ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে আজ বাংলাদেশের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নারী, ব্যবসায়ী নারী, উদ্যোক্তা নারী, সেলস গার্ল নারী। আজ বাংলাদেশের শপিং মলগুলোয় দোকানের নাম পর্যন্ত রাখা হয়েছে ‘কন্যা’; যা পুরুষতান্ত্রিক সংস্কারকে কশাঘাত করার মাধ্যমে ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার আরও একটি দৃষ্টান্ত। ক্ষুদ্রঋণ প্রদান, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কর্মজীবী হোস্টেল চালুকরণ, শিশু বিকাশ ও দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ‘ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’ ও সেল স্থাপন শেখ হাসিনা কর্তৃক গ্রহীত নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ। গার্হস্থ্য সহিংসতা রোধ ও নারীবান্ধব কর্মস্থল গড়ে তোলার প্রয়াসে পারিবারিক সহিংসতা আইন, বাল্যবিয়ে আইন (২০১৭), যৌতুক নিরোধ আইন (২০১০), শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন প্রণীত হয়েছে যুগপৎভাবে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় নারী রয়েছে আজও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ যেখানে নারীর অবস্থান রয়েছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রশমন, অভিযোজন ও দুর্যোগের প্রভাব হ্রাসকরণের বিষয়ে শেখ হাসিনা তাই অত্যন্ত উচ্চকণ্ঠী ও উপযুক্ত কৌশল প্রণয়নে বাস্তববাদী রাষ্ট্রনায়ক। এ কারণেই দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসকরণের কৌশল প্রণয়নে লিঙ্গ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো অনুধাবন ও অভিযোজনের ক্ষেত্রে তিনি নারী, কন্যা ও প্রতিবন্ধীদের একীভুক্তিকরণের বিষয়টিকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। কারণ নারী ও কন্যারা শুধু দুর্যোগ ও সংকটেরই শিকার হয় না, পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রেও সক্রিয় এজেন্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। দুর্যোগ প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যদি তাদের অর্থপূর্ণভাবে নিযুক্ত করা হয় তবে তারাই হয়ে ওঠেন আরও দক্ষ, সক্রিয় ও মানবিক।

লেখক : সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, প্রভোস্ট, রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত (২০২১)

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শেখ হাসিনাসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে হেফাজতের অভিযোগ

» সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবদল কর্মী খুন

» চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর

» ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত

» চশমার যত্ন

» বর্তমানে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ নেই

» প্যানক্রিয়াটিক ডায়াবেটিস

» দেশের চার সমুদ্র বন্দরে সতর্ক সংকেত

» পরীক্ষামূলকভাবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে চলল ট্রেন

» কী কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন আমির!

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা: ৮ মার্চ প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বা থিম ‘টেকসই আগামীর জন্য আজকের লিঙ্গসাম্যতা’। মূলত প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য থাকে (১) বিভিন্ন আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পথপরিক্রমায় নারীর অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান (২) লিঙ্গসাম্যতা সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করা এবং সমাজের সর্বস্তরে নারীর সাফল্য ও জয়গান গাওয়া (৩) পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা, নারীবিদ্বেষী রক্ষণশীল চিন্তা-চেতনা, পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও ছকে বাঁধা মিথ তৈরির কাঠামো ভেঙে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা এবং (৪) বহুত্ববাদের আলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও লিঙ্গসমতাভিত্তিক আগামীর সমাজ বিনির্মাণ। নারী দিবস পালনের লক্ষ্য যেহেতু নারীর অবদান ও মর্যাদাকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে নারীর অগ্রযাত্রা ও তার গতিশীল কর্মকান্ডকে দৃশ্যমান করে তোলা, এ কারণেই আমার আজকের এ লেখার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রোকেয়া সাখাওয়াত ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সামাজিক পরিবর্তন আনয়নের অনুঘটক বা চেঞ্জ মেকার হিসেবে। ‘নারী ও নর উভয়ে একটি বস্তু ও অঙ্গবিশেষ। যেমন দুইটি হাত কিংবা কোনো শকটের দুইটি “চক্র” সুতরাং উভয়ে মিলিয়া একই বস্তু হয়। তাই একটিকে ছাড়িয়া অপরটি উন্নতি করিতে পারিবে না’-(মতিচূর, প্রথম খন্ড)। রোকেয়া সাখাওয়াত বর্ণিত এ বাণী একটি সমাজ উন্নয়নের মূলসূত্র। সমাজ উন্নয়ন ও নারী উন্নয়নের বিষয়টি ওতপ্রোত জড়িত। নারীর ক্ষমতায়ন তাই আজ আর শুধু একটি আধুনিক প্রপঞ্চ নয়, বরং একই সঙ্গে বৈশ্বিক ও সর্বজনীন প্রবঞ্চ। ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের প্রথম নারীবাদী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক ও নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো, মানসিকতা, সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, উগ্রবাদী, মৌলবাদী নারীবিদ্বেষী শক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নারীমুক্তির জয়গান গেয়েছেন রোকেয়া সাখাওয়াত। তিনি বৃত্তাবদ্ধ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর পর্দা নামক শৃঙ্খলের বেড়াজালে পড়া অবরোধবাসিনীদের অধস্তন, পরাধীন অবস্থা তুলে ধরেন নানা লেখনীতে। নারীর শারীরিক দুর্বলতা কাঠামো তত্ত্বকে গুঁড়িয়ে ফেলে, লিঙ্গবৈষ্যমের শিকার নারীসমাজের মুক্তির লক্ষ্যে রোকেয়া নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের ধারণা প্রতিষ্ঠার এক নতুন সংগ্রাম শুরু করেন।

 

বিংশ শতাব্দীতে লিঙ্গসমতাভিত্তিক যে সমাজ গঠনের ডাক দিয়েছিলেন রোকেয়া, সে সমাজ গঠনের পথে আজ ৫০-উত্তীর্ণ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বিশ্বের নারীর ক্ষমতায়নে আজ বাংলাদেশ রোল মডেল। নারী ক্ষমতায়ন মূল্যায়নে যেসব অনুঘটক বা সূচক ব্যবহার করা হয় তার সবকটি সূচকে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে এগিয়ে। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন নিজেই স্বীকার করেছেন ভারতের মেয়েদের পেছনে ফেলে বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণে। বঙ্গবন্ধু মূলত একজন নারীবাদী চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও লিঙ্গসমতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক যিনি বাংলাদেশকে একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আধুনিক তাত্ত্বিকরা যেসব প্রপঞ্চ ও সূচক ব্যবহার করেন দেশকে উন্নয়ন ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা, দর্শন, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বহুত্ববাদ, অন্তর্ভুক্তিকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন আজ বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ যা সত্তরের দশকেই প্রজ্ঞাবান বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনায় উন্নয়ন নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া যে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভবপর নয়, আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক ও অসামান্য দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু তা উপলব্ধি করেছিলেন স্বাধীনতা-উত্তর বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কাঠামো পুনর্গঠনের কাজে হাত দেওয়ার মাধ্যমে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও বাঙালি রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত বাঙালি নারীদের তিনি দিয়েছিলেন বীরের মর্যাদা। ভূষিত করেছেন ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে। পুরুষতান্ত্রিক নিষ্ঠুর সমাজব্যবস্থায় যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত, নির্যাতিত নারীকে ফিরিয়ে দিয়েছে পরিবার, জন্মদাতা পিতা কিংবা গর্ভধারিণী মা, লজ্জা ও ভয় কিংবা সামাজিক অপমানের কারণে নারীবাদী বঙ্গবন্ধু তখন আবির্ভূত হয়েছেন পিতার ভূমিকায়। ফিদেল কাস্ত্রো বর্ণিত ‘হিমালয়সম’ বঙ্গবন্ধু বঙ্গোপসাগরের বিশালত্ব বুকে ধারণ করে বীরাঙ্গনা কন্যাদের পিতৃ¯ন্ডেœহে নিজ বুকে স্থান দিয়েছেন। পিতার স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও ঠিকানার জায়গায় ৩২ ধানমন্ডি লেখার কথা বলে তিনি নারীর প্রতি সমাজের কুসংস্কার ও সব ছকে বাঁধা ধারণা চ্যালেঞ্জ করেছেন। সামাজিকভাবে অবাঞ্ছিত যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনের জন্যও তিনি গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন উদ্যোগ। সমাজের ঘৃণা ও অবহেলা, অপমানের বিরুদ্ধে তিনি বীরাঙ্গনা নারীদের লড়াই করার মানসিকতাই শুধু গড়ে তোলার চেষ্টা করেননি, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার জন্য এদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এ ট্যাবু গুঁড়িয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নারীবান্ধব রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার শুভ সূচনা করেন নারীকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে। এ লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় ‘বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ (১৯৭২) ও পরবর্তীতে ‘মহিলা পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফান্ড’ (১৯৭৪)। শুধু তাই নয়, রাজনীতি নামক পুরুষতান্ত্রিক বলয়টিও তিনি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রথমবারের মতো নারীদের সংসদ সদস্য মনোনয়ন ও চেয়ারম্যান নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান নামক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রটিতে নারীর অবস্থান শুধু দ্বিতীয় লিঙ্গ ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যে কারণে পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে নারীর প্রবেশ ছিল বন্ধ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কোটা/সংরক্ষিত আসন চালু করে সংসদে নারীর প্রবেশ নিশ্চিত করেন, চাকরিতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন। লিঙ্গসমতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেন। আজ যে অন্তর্ভুক্তিকরণের শিক্ষাকে বৈশ্বিকভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধু তাঁর শিক্ষাদর্শনে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিকরণ শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের রথযাত্রাটির যে শুভ সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তার সারথি আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। রাজনীতি ম্যাজিক নয়, কিন্তু একজন রাজনীতিবিদই রাজনীতি ম্যাজিকে রূপান্তরিত করতে পারেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেই ম্যাজিশিয়ান রাজনীতিবিদ যিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নকে সমার্থক প্রপঞ্চ হিসেবে মূল্যায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের মহাসড়কে যাত্রা করেছেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী বিধায় নারী-পুরুষের সমান অংশীদারি ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

 

শেখ হাসিনার বার্তা তাই নারী-পুরুষের সমতা। রোকেয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ ধরনের বার্তা প্রদানই স্বাভাবিক। সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম করার প্রয়োজনে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ যে আবশ্যিক তা রোকেয়া তাঁর লেখনীতে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। সুতরাং রোকেয়ার ভাষায় ‘পুরুষের স্বার্থ ও আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে, একই। তাঁহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্যও তাহাই।’ মূলত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ঘোষণা করে নারীসমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে। নারী শিক্ষা প্রসার, নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বাল্যবিয়ে নির্মূলের জন্য বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ সালে প্রণয়ন করা হয়। মেয়েদের শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে অবৈতনিক, চালু হয়েছে বৃত্তি, উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি। এর মাধ্যমে কমেছে নারী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার, বেড়েছে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এসব সুরক্ষা বলয় কর্মসূচির ফলে তৃণমূল ও প্রান্তিক নারীরা ভেঙে ফেলতে শুরু করেছেন বহু প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, ট্যাবুর সংস্কার ও বেড়াজাল। বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি ও অসাধারণ সাফল্য এ বাস্তবতাকেই তুলে ধরে।

 

নারীর উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীবান্ধব সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার প্রণয়ন করেছে নারীবান্ধব বাজেট। নারীবান্ধব বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে, স্তরে ও সেক্টরে বর্তমান সরকার নারীকে সম্পৃক্ত করেছে। রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ, অর্র্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, খেলাধুলাসহ পেশাভিত্তিক সব ক্ষেত্রে আজ রয়েছে নারীদের গর্বিত পদচারণ। রোকেয়ার দৃপ্ত উচ্চারণ ছিল- ‘পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয় তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে লেডী কেরানী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডী ম্যাজিস্ট্রেট, লেডী ব্যারিস্টার, লেডী জজ সবই হইবই’ (স্ত্রী জাতির অবনতি)। শেখ হাসিনা রোকেয়ার সেই আকাক্সক্ষাকেই আজ পূরণ করে চলেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, উপাচার্য, বিচারকসহ সব পদেই নারীর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রই শুধু নয়, আধুনিকায়ন ও গণতন্ত্রায়নের মূল কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। অথচ সেই আমেরিকার বাসিন্দারা শ্বেতকায় ও ক্ষমতাধর নারী হিলারি ক্লিনটনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে গ্রহণ করেনি। বরং কৃষ্ণকায় পুরুষ রাষ্ট্রপতি ওবামাকে গ্রহণ করে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। নারী ও কৃষ্ণবর্ণের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী প্রান্তিক ও দ্বিতীয় শ্রেণির ‘নাজুক’ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হলেও নারীর অবস্থান যে আজও পুরুষের নিচে তা আমেরিকান সমাজ প্রমাণ করেছে। পক্ষান্তরে রাজনীতির পুরুষতান্ত্রিক বলয়টিতে কাঁপন ধরিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে নারী প্রধানমন্ত্রীগণ, এনেছেন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভিন্ন পরিবর্তন। আবেদনপত্র কিংবা যে কোনো ফরম পূরণের ক্ষেত্রে পিতার নামের সঙ্গে মায়ের নাম সংযুক্ত করে পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এক বিশাল পরিবর্তন এনেছেন শেখ হাসিনা। শুরুতে মায়ের নাম সংযুক্ত করায় এ সমাজের নারীবিদ্বেষী পুরুষেরা বিষয়টি নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ দৃঢ়চেতা অদম্য শেখ হাসিনাকে কেউ পিছু হটাতে পারেনি বরং তিনি আরও এগিয়ে গেছেন। তাঁর পৃষ্টপোষকতায় তৈরি হয়েছে মহিলা ফুটবল/ক্রিকেট বাহিনী যাদের গলায় শোভা পাচ্ছে পুরস্কারের বিভিন্ন মালা। নীরবতার সংস্কৃতি ও অচলায়তন ভেঙে তিনি বীরাঙ্গনা নারীদের দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, সামাজিক ইতিহাস ও গবেষণাকর্মে ‘অদৃশ্যমান’ নারীর ত্যাগ ও অবদানকে তিনি করে তুলেছেন দৃশ্যমান।

 

ইতিহাস, পাঠ্যবই ও গবেষণাকর্মে তাই লিপিবদ্ধ হয়েছে আজ তাদের ঐতিহাসিক অবদান ও আত্মত্যাগের কাহিনি। সব চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীকে স্থান করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা, যে কারণে আজ আমরা দেখেছি পাহাড় ডিঙানো নারী, এভারেস্ট-বিজয়ী নারী, স্কুটি চালানো নারী, বৈমানিক নারী, সৈনিক নারী, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তি মিশনে নারী। ‘সুলতানার স্বপ্ন’ উপন্যাসে রোকেয়া নারীর জন্য যে কল্পিত সমাজের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপায়িত করার চেষ্টা করছেন প্রাচীন ধারণা, ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। জল, স্থল, অন্তরিক্ষে ক্ষমতায়নের পথ ধরে বাংলাদেশের মেয়েরা এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এসেছে নতুন স্লোগান। ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’। স্বাধীনতার ৫০ বছরে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় কতটা পরিবর্তন এসেছে তা উপলব্ধির জন্য এটি একটি বিশেষ উদাহরণ। উত্তরাধিকার নির্বাচন ও পুরুষ সন্তান লাভের প্রবল আকাক্সক্ষা যে অনেকটাই আজ ম্রিয়মাণ হয়েছে উল্লিখিত স্লোগানটির মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়। শুধু একটি সন্তান নয়, একটি মাত্র কন্যাসন্তানকে গ্রহণের মানসিকতাও যে আজ পঞ্চাশোর্ধ্ব বাংলাদেশের সমাজ জীবনে গ্রহণযোগ্য হতে শুরু করেছে, তা-ও পরিষ্কার। মূলত বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের এ মডেলটি শুধু কেন্দ্রভিত্তিক নয়, এটি প্রান্তিক নারীর জন্যও তৈরি করেছে বেঁচে থাকার নতুন নতুন সড়কপথ। বস্তুত রোকেয়ার মতানুযায়ী ‘শিক্ষার অর্থ কোনো সম্প্রদায় বা জাতি বিশেষের অন্ধ-অনুকরণ নয়, বরং ঈশ্বরপ্রদত্ত স্বাভাবিক ক্ষমতাকে অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করার নামই শিক্ষা।’ রোকেয়া কর্তৃক সংজ্ঞায়িত এ শিক্ষাকে শেখ হাসিনা গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ বেঁচে আছে গার্মেন্ট নারীদের শ্রমের ঘামে, কৃষি ক্ষেত্রেও এগিয়ে এসেছেন নারীশ্রমিকরা। অপ্রাতিষ্ঠানিক বা ইনফরমাল সেক্টরেও আজ নারীর বিপুল উপস্থিতি লক্ষণীয়। মিস্ত্রি নারী, জোগালি নারী, সবজি বিক্রেতা নারী, আজ উপার্জনক্ষম নারী, স্বাবলম্বী নারীর মর্যাদায় অভিষিক্ত। ‘আমরা উপার্জন করিব না কেন? আমাদের কি হাত নাই, না পা নাই, না বুদ্ধি নাই? কী নাই? যে পরিশ্রম আমরা গৃহকার্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা কি ব্যবসা করিতে পারিব না?’ রোকেয়ার এ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে আজ বাংলাদেশের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নারী, ব্যবসায়ী নারী, উদ্যোক্তা নারী, সেলস গার্ল নারী। আজ বাংলাদেশের শপিং মলগুলোয় দোকানের নাম পর্যন্ত রাখা হয়েছে ‘কন্যা’; যা পুরুষতান্ত্রিক সংস্কারকে কশাঘাত করার মাধ্যমে ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার আরও একটি দৃষ্টান্ত। ক্ষুদ্রঋণ প্রদান, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কর্মজীবী হোস্টেল চালুকরণ, শিশু বিকাশ ও দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ‘ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’ ও সেল স্থাপন শেখ হাসিনা কর্তৃক গ্রহীত নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ। গার্হস্থ্য সহিংসতা রোধ ও নারীবান্ধব কর্মস্থল গড়ে তোলার প্রয়াসে পারিবারিক সহিংসতা আইন, বাল্যবিয়ে আইন (২০১৭), যৌতুক নিরোধ আইন (২০১০), শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন প্রণীত হয়েছে যুগপৎভাবে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় নারী রয়েছে আজও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ যেখানে নারীর অবস্থান রয়েছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রশমন, অভিযোজন ও দুর্যোগের প্রভাব হ্রাসকরণের বিষয়ে শেখ হাসিনা তাই অত্যন্ত উচ্চকণ্ঠী ও উপযুক্ত কৌশল প্রণয়নে বাস্তববাদী রাষ্ট্রনায়ক। এ কারণেই দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসকরণের কৌশল প্রণয়নে লিঙ্গ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো অনুধাবন ও অভিযোজনের ক্ষেত্রে তিনি নারী, কন্যা ও প্রতিবন্ধীদের একীভুক্তিকরণের বিষয়টিকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। কারণ নারী ও কন্যারা শুধু দুর্যোগ ও সংকটেরই শিকার হয় না, পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রেও সক্রিয় এজেন্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। দুর্যোগ প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যদি তাদের অর্থপূর্ণভাবে নিযুক্ত করা হয় তবে তারাই হয়ে ওঠেন আরও দক্ষ, সক্রিয় ও মানবিক।

লেখক : সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, প্রভোস্ট, রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত (২০২১)

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com